ব্যাকগ্রাউন্ড

ফেইসবুকে!

অধার্মিক আর শয়তানরাই এখন ধর্মের কথা বলে বেশি



















অধার্মিক আর শয়তানরাই এখন ধর্মের কথা বলে বেশি

সাইয়িদ রফিকুল হক

 
বহুকাল আগে এই দেশে ধার্মিকের একটা শ্বাশ্বত-সুন্দর চেহারা ছিল। আর তখন, এঁদের দেখলে সাধারণ থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের মনে বিরাট একটা ভক্তিভাবের উদয় হতো। আর এখন ধার্মিকের নাম শুনলে মানুষ আঁতকে ওঠে। কোনো হিংস্র-জন্তুজানোয়ারের নাম নিলেও মানুষ এতোটা আঁতকে ওঠে না—যতোটা এইসব ধার্মিকের নাম শুনে আঁতকে ওঠে!
 
ধার্মিকের চেহারা এখন পরিবর্তিত হয়েছে। আমরা এই পরিবর্তন লক্ষ্য করেছি ১৯৪৬ সালের হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার সময়, ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগের প্রেক্ষাপটে হিন্দুসম্প্রদায়ের দেশত্যাগের সময়, আর ধার্মিকের চেহারা সবচেয়ে বেশি দেখেছি ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়।
 
১৯৪৬ সালের ভয়াবহ দাঙ্গার সময় বাংলার মুসলমান-নামধারী-নরপশুরা পৃথিবীর ইতিহাসে ভয়ানক পাশবিকতায় লিপ্ত হয়েছিলো। সেই সময় একশ্রেণীর মুসলমান-নামধারী-জানোয়ার মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে হিন্দুনিধন করেছিলো। এরা সেই সময় হিন্দুর বাড়িঘর দখল করেছে, নগদ-অর্থসহ সোনাচান্দি যা পেয়েছে তা-ই হাতিয়ে নিয়েছে, আর হিন্দুসম্প্রদায়ের বউঝিদের ‘গনীমাতের মাল’ মনে করে তাদের ইচ্ছেমতো বেইজ্জতি করেছে। আমরা এই ধার্মিকের আরও ভয়ংকর চেহারা দেখেছি, সেই ছেচল্লিশের সেই দাঙ্গার সময়—তখন মুসলমান-নামধারীরা বেছে-বেছে টার্গেট করে ধনিকশ্রেণীর হিন্দুদের উপর স্মরণকালের ভয়াবহ আক্রমণ করেছিলো। তাদের উদ্দেশ্য ছিল এইসব অবস্থাসম্পন্ন হিন্দুদের কোনোরকমে একবার দেশত্যাগে বাধ্য করাতে পারলে তাদের যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি চিরদিন দখল করে ধনী হওয়া যাবে। আর সে-সময় এরা করেছেও তা-ই। এদের হাত থেকে অবস্থাসম্পন্ন কোনো হিন্দুই সেদিন রেহাই পায়নি। এমনকি দরিদ্রশ্রেণীর হিন্দুও তাদের জুলুমনির্যাতন এড়াতে পারেনি।
 
১৯৪৬ সালের দাঙ্গার সময় বাংলার একশ্রেণীর হিংস্র-মুসলমান ধর্ম, মনুষ্যত্ব আর মানবতাকে সম্পূর্ণরূপে জলাঞ্জলি দিয়ে হিন্দুনিধনে মেতে উঠেছিলো। তারা হিন্দুর ঘরবাড়ি, জায়গাজমি থেকে শুরু করে তাদের জমানো অর্থ, সোনাচান্দি, নারী ইত্যাদি নিজের মনে করে দখল করেছিলো। শুনেছি, ছেচল্লিশের দাঙ্গার সময় একশ্রেণীর মুসলমান রাতারাতি ধনী হয়ে গিয়েছিলো! আর তারা  হিন্দুদের ঘরবাড়ি থেকে লুটপাটের সম্পত্তিকে এতো বেশি জায়েজ মনে করেছিলো যে, সেই অর্থ দিয়ে পরে কেউ-কেউ বিশেষ পুণ্যহাসিলের জন্য মক্কায় গিয়ে হজ্জও করেছিলো! হায়রে ধার্মিক! হায়রে ধর্ম! হায়রে মুসলমান! এদের কে বোঝাবে ধর্ম মানে কী?
 
১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময়ও বাংলার মুসলমানরা একেবারে উন্মত্ত হয়ে যে-যেভাবে পারছে হিন্দুদের জায়গাজমি, ঘরবাড়ি, সোনাচান্দি ইত্যাদি নিজের বাপদাদার সম্পত্তি ও সম্পদ মনে করে দখল ও আত্মসাৎ করেছিলো। আর এরা সবাই ছিল ধার্মিক আর মুসলমান! কোথায় ধর্ম বলে:  কেউ বিপদে পড়লে তাকে সাহায্য করতে। আর বাংলার একশ্রেণীর মুসলমান বিপদগ্রস্ত মানুষকে আরও সর্বস্বান্ত করার চক্রান্ত শুরু করেছিলো।
 
১৯৭১ সালে, বাংলার মুসলমানদের একটি শ্রেণী শয়তানের জারজরাষ্ট্র-পাকিস্তান-রক্ষা করার জন্য আজান-ইকামত দিয়ে পাকিস্তানের পক্ষে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। নিজের দেশকে এরা পরের হাতে তুলে দিতে একটুও দয়ামায়া করেনি। নিজদেশের মাবোনকে পাকিস্তানীবেজন্মাদের হাতে তুলে দিতেও তাদের মনে এতোটুকু মায়াদয়াও জন্মেনি। এরা সবাই জন্মসূত্রে মুসলমান আর ধার্মিক ছিল আর এখনও তা-ই আছে। এখনও এদের মনোভাবের সামান্যতম পরিবর্তন হয়নি। পাকিস্তানের কথায় আর পাকিস্তানের জন্য এরা এখনও উলঙ্গ হয়ে বাংলাদেশরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে একপায়ে খাড়া! সংক্ষেপে এই হলো বাংলার ধার্মিকদের আদি-আসল চেহারা।
 
১৯৪৬ সালের সাম্প্রদায়িকদাঙ্গা তথা হিন্দুনিধনে ছিল একদল ধার্মিক-মুসলমান।
১৯৪৭ সালের সাম্প্রদায়িকদাঙ্গা ও দেশভাগেও ছিল একদল ধার্মিক-মুসলমান।
১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধেও বাংলাদেশবিরোধী ও পাকিস্তানের গোলাম ছিল একদল ধার্মিক-মুসলমান।
আর বর্তমানে বাংলাদেশবিরোধী-জঙ্গিবাদী একটি শ্রেণীও ধার্মিক-মুসলমান।
 
এরা কি আসলেই ধার্মিক? নাকি এরাই সবচেয়ে বড় অধার্মিক আর শয়তান?
 
 
এখনও এই বাংলাদেশে আমরা একশ্রেণীর মুসলমানের যে চেহারা দেখি তাতে আমাদের ভয়ানক লজ্জাবোধ হয়। মসজিদের ইমাম এখনও জুম্মার দিন মিম্বরে দাঁড়িয়ে নিজের মনগড়া কথা বলতেই ব্যস্ত। আর সে তার দলের প্রয়োজনে সাধারণ মুসল্লীদের বিভ্রান্ত করতে তাদের সামনে অহরহ মিথ্যাকথা বলছে। সে মসজিদে বসে কিংবা দাঁড়িয়ে তার তথাকথিত বয়ানের মাধ্যমে সাধারণ মুসল্লীদের সামনে অধর্মই প্রচার করছে। আর সে সবসময় তাদের এই অধর্মের দিকেই ধাবিত করার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে।
মসজিদের ইমামগুলো আজও বাংলাদেশকে ভালোবাসে না। এরা তথাকথিত ধার্মিক বলে এরা ভালোবাসে ধর্মভিত্তিক শয়তানের রাষ্ট্র পাকিস্তানকে—যদিও এই পাকিস্তানের কোনো ধর্ম নাই। এরা শুধু মুখে-মুখে বিরাট একখান ধার্মিক! মসজিদের ইমামগুলো স্বার্থের জন্য এখন বাংলাদেশকে ভালোবাসার নাটক করে থাকে। কিন্তু এই ইমামরা এখনও জঙ্গিমুসলমানদের বিরুদ্ধে কিছু বলে না। অধিকন্তু, এরা গায়ের জোরে বলে থাকে: জঙ্গিরা কেউই মুসলমান নয়! এইরকম মিথ্যাবাদী-ভণ্ডরাই এখন দেশে ইসলামীহুকুমাত তথা ইসলামীশাসন তথা ইসলামীরাষ্ট্র কায়েমের কথা বলছে! এদের হাতে ধর্মই আজ নিরাপদ নয়—তাহলে, রাষ্ট্রের ও মানুষের কী পরিস্থিতি হবে?
 
ঘুষখোর-সুদখোর আর জিনাখোর এখন সবার আগে মসজিদে যায়! আর তার দাড়ি দেখলে যেকেউই ভয় পেয়ে যাবে! সবসময় তার মাথায় থাকে টুপি। আর মুখে কয়েক ইঞ্চি পরিমাণে স্থায়ী দাড়ি! এখন কেউ-কেউ নামাজ পড়তে-পড়তেও জঙ্গি হচ্ছে। আগে নামাজ পড়ে ধার্মিক হতো। আর মানুষ চুপচাপ নামাজ পড়তো। আর এখন সবখানে ঢাকঢোল পিটিয়ে ধর্মপ্রচারের নামে অধর্ম কায়েমের ষড়যন্ত্র চলছে।
 
প্রতিদিন যে পাঁচ-ওয়াক্ত ঘুষ খায় সেও এখন নামাজে গিয়ে সবার আগে দাঁড়ায়। আর তাকে সবসময় আগের কাতারে দেখা যায়! আর সে এখনও ঘুষ খাওয়া বন্ধ করেনি! তার নামাজের উদ্দেশ্য হলো—আল্লাহ যেন তার ঘুষ খাওয়ায় অসন্তুষ্ট হয়ে আজাবগজব না দেয়! এই হলো বাংলার আধুনিক-ধার্মিকের নুরানীচেহারা!
 
সাধারণ মানুষের ধর্ম হলো: তার দেশপ্রেম, সততা, পিতামাতার প্রতি ভক্তি, ন্যায়নিষ্ঠা, শিষ্টাচার ও সৌজন্য, ভদ্রতা, সাধুতা, মহত্ত্ব, ন্যায়পরায়ণতা ইত্যাদি। আর ধার্মিকের ধর্ম হলো: লোকদেখানো নামাজ, রোজা, হজ্জ, জাকাত, আর নিজেদের স্বার্থ ও ধান্দাবাজির জিহাদ, মানুষহত্যা, খুন, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, গণহত্যা, সুদ-ঘুষ, ব্যভিচার ইত্যাদি।
এইসব ভণ্ডধার্মিকের চেয়ে সাধারণ মানুষগুলো অনেক ভালো। এদের ধর্ম এদের সৎচিন্তা, সৎবিবেক ও নীতিনৈতিকতা। কিন্তু ওইসব তথাকথিত ধার্মিকের কী আছে? ওদের লোকদেখানো নামাজ-রোজা, হজ্জ, আর সাইনবোর্ডসর্বস্ব দাড়ি-টুপি-জোব্বা ছাড়া তো আর-কিছুই দেখি না। আসলে, এরাই অধার্মিক। শুধু ধর্মীয় খোলসে এরা আজ ধার্মিক সাজতে চায়। কিন্তু এদের ভিতরে কোনোপ্রকার ধর্ম ও মন্যুষত্ব বলতে কোনোকিছুই নাই। ধর্মীয় লেবাসে এরাই সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রকৃত শয়তান। এরাই ধর্ম নিয়ে দেশে-দেশে বাড়াবাড়ি করে অশান্তিসৃষ্টি করে চলেছে।
 
একশ্রেণীর ধার্মিক-নামধারী-নরপশুরাই আজ আমাদের দেশটাকে জঙ্গি-আস্তানা বানাতে চায়। আর এদের সর্বপ্রকার সমর্থন ও সহযোগিতা করছে আরেকশ্রেণীর ধার্মিক বা মডারেট-মুসলমান। এরা সকলেই আসলে অধার্মিক আর পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট।
 
সাধারণ ভালোমানুষগুলো এখন ধর্মের কথা বলে বাড়াবাড়ি করে না কিংবা ধর্ম নিয়ে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক কোনোপ্রকার অপতৎপরতায়ও লিপ্ত হয় না।
 
আপনি ধার্মিক হলে নিশ্চিন্তে ও নীরবে আপনার ধর্মপালন করুন। কিন্তু খবরদার, ধর্ম নিয়ে কখনও বাড়াবাড়ি করবেন না। কারণ, এই ধার্মিক-নামধারী অধার্মিক আর শয়তানরাই এখন ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করে বেশি।
 
 
 
 
সাইয়িদ রফিকুল হক
পূর্বরাজাবাজার, ঢাকা,
বাংলাদেশ।
১০/১১/২০১৭

ছবি
সেকশনঃ ইতিহাস
লিখেছেনঃ সাইয়িদ রফিকুল হক তারিখঃ 18/11/2017
সর্বমোট 7171 বার পঠিত
ফেসবুকের মাধ্যমে কমেন্ট করুণ

সার্চ

সর্বোচ্চ মন্তব্যকৃত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন