ব্যাকগ্রাউন্ড

ফেইসবুকে!

দ্বীপান্বিতা-৯

 
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণু-পরমাণুগুলো ভেঙে ভেঙে তৈরী হয় বস্তুর পরিপূর্ণ রূপ। পরিবর্তিত হচ্ছে পৃথিবী প্রতিনিয়ত। মঙ্গল-গ্রহে আজ পানির সন্ধান, মাটির সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। মানুষের বাসযোগ্য হয়ে উঠছে মঙ্গল গ্রহ বিজ্ঞানীরা গবেষণায়, পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এমনটিই ধারণা করে যাচ্ছেন। বদলে যাচ্ছে পৃথিবী, বদলে যাচ্ছে সময়। বিবর্তিত হচ্ছে মানুষের জীবন। দ্বীপান্বিতার জীবনও থেমে নেয়। প্রতিনিয়ত সংগ্রামে-বিপ্লবে সময় পাল্টে যাচ্ছে তার। বদলে যাচ্ছে প্রেক্ষাপট। সময়-দুঃসময়ের দোলাচলে দ্বীপান্বিতা কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। অনুভবে অস্পর্শ দুরের সময়। এইত বৎসর তিনেক পূর্বেও দ্বীপান্বিতার অবস্থান ছিল চরম উত্থানের মোহনায় স্বদেশে সগৌরবে।
দ্বীপান্বিতা চেচল্লিশ কি সাতচল্লিশের দুয়ারে কড়া নাড়ছে। বাবার শেষ আশির্বাদ, না বলা কথার নীরব ভাষা বুকে নিয়ে দ্বীপান্বিতা আবারো ফেরে আমেরিকায়। এবার  ডালাসে। স্বপ্ন, স্বপ্ন, স্বপ্ন দ্বীপান্বিতা ঘুমাতে পারেনা, তাকে তাড়া করে ফেরে সময়।  নুতন জীবনের নুতন পরিবেশে নিজেকে তৈরী করার  ঘাত-প্রতিঘাতে  কেটে যায় দিনের পর দিন । যখন হন্যে হয়ে ছুটছিল আমেরিকার কঠিন সময়ের সাথে দীপান্বিতা, কেবল একটু দেশে ফেরার তাগিদে ঠিক তখনি বৎসর ঘুরতে না ঘুরতেই , বিনামেঘে বজ্রপাতের মতো হঠাৎ বাবাকে হারায় দ্বীপান্বিতা। বাবার সাথে আর দেখা হলনা। বাবার জন্য কিছু করার সময় সুযোগ দ্বীপান্বিতার হয়ে উঠলনা আর। এই প্রথম দ্বীপান্বিতা হারালো বড় কিছু, অতি কাছের আপন কাউকে। ঠিক তারই দিন বিশ-পঁচিশ পর আবারো এক দূর্ঘটনা। কার এক্সিডেন্ট। সাক্ষাত মৃত্যুর দুয়ার থেকে একেবারে অক্ষত ফিরে পায় নিজেকে। বলতে গেলে এই গাড়িটিই ছিল আমেরিকাতে তার সবকিছু। খুঁড়া, অন্ধ লোকের যেমন লাঠি। গাড়িটির অবস্থা তথৈবচ। গাড়িটি চলে যায় Junk Yard এ। সকল দুঃসময়ের দূর্বিপাকের ঘূর্ণি হাওয়া মাথায় নিয়ে দীপান্বিতা ফিরে যায় পড়ন্ত সময়ের নিঃস্ব মায়ের কাছে স্বদেশের বুকে। টানা তিনমাস। তিনটি মাসের প্রতিটি দিন দীপান্বিতা অনুভব করে একজন বাবার অনুপস্থিতিতে পরিস্থিতি, সময় কিভাবে পাল্টে যায়। সময় দ্বীপান্তিাকে কানে কানে বলে যায় বুকে কেমন করে পাথর বাঁধতে হয়, কেমন করে সময়ের পথ মাড়িয়ে দুঃসময়কে পরাজিত করতে হয়, কেমন করে নিজেকে নিজের সামলে নিতে হয়। কঠিন সময়ের প্রান্তে দাঁড়ায়ে শক্ত মনোবলে দ্বীপান্বিতা আবারো ফিরে আসে ডালাসে। সময়টি তখন বাংলাদেশের বসন্ত আমেরিকার আসন্ন স্প্রিং ইংরেজী মার্চ।
আমেরিকার ডালাসে তখন চকচকে রোদে হালকা শীতের আনাগোনা। ঘাসগুলো তখনো সজীবতা ফিরে পায়নি, ধূসর হলুদ পড়ে আছে। গাছগুলোতে তখনো পত্রপল্লবের আনাগুনা হয়নি, দু’একটিতে হালকা পাতলা পত্রপল্লবের দেখা সাক্ষাত মিলেছে মাত্র। দ্বীপান্বিতা দেখতে পায় প্রকৃতির সাথে মানুষের জীবনের সাদৃশ্যতা, এঁকে যায় মনের ক্যানভাসে  এক জলছবি। কাল সকাল থেকে আবারো শুরু হবে দ্বীপান্বিতার স্বেচ্ছায় স্বশ্রম কারাদন্ডের জীবন।  দ্বীপান্বিতা চায়ের মগে চুমুক দিতে দিতে এসে দাঁড়ায় বোনের সুসজ্জিত বাসার আঙিনায় বা ( Back Yard) এ। হেডফোনে বাজছে গুরদেব-” তুই ফেলে এসেছিস কারে মন মনরে আমার-”। দ্বীপান্বিতার বুকের ভেতরটি  হু হু করে উঠে নীরব কান্নায়। মনে পড়ে অসহায় মায়ের মুখ,বোনদের জীবন, তাদের আদর ভালবাসা। মনে পড়ে বন্ধু, সহকর্মী, প্রিয় স্বদেশ। অনুভবে তাড়িত জীবন। দ্বীপান্বিতার ফিরতে হবে মানুষের কাছে। তাড়িত সময় বিচলিত করে তুলে তাকে।  দু’চোখ ভরা স্বপ্ন সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গ তুলে দ্বীপান্বিতার প্রাণে। হঠাৎ একটু শূন্যতার নিঃশ্বাস ছেড়ে দ্বীপান্বিতা ঊর্ধ্বপানে তাকায়। নীল আকাশপানে তাকিয়ে ভাবে আহা জীবন! পথের শেষ কোথায়! মনের কুঠরে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায় প্রকৃতি, মানুষ, জীবন। ফুল,পাখি, শিশু পত্রপল্লব। মনে তার অনুভূত হয়, আহা! ছোট্ট সময়ে জীবন কত বড়, পৃথিবীটা বিস্ময়, জীবন কত সুন্দর। দ্বীপান্বিতা চায়ের পেয়ালায় শেষ চুমুক দেয়, শূন্য পেয়ালা হাতে ঘরে ঢুকে সে। অন্তরতলে পড়ে থাকে দূরের সময়।
০৩/০২/১৭/
ডালাস
ইউএসএ

ছবি
সেকশনঃ অন্যান্য
লিখেছেনঃ মম তারিখঃ 26/05/2017
সর্বমোট 629 বার পঠিত
ফেসবুকের মাধ্যমে কমেন্ট করুণ

সার্চ

সর্বোচ্চ মন্তব্যকৃত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন