ব্যাকগ্রাউন্ড

ফেইসবুকে!

সাংবাদিকতা-০৩ : চিন্তাশক্তির বহি:প্রকাশই শক্তিশালী সংবাদ এবং সংবাদই বিনোদন

সংবাদ ও বিনোদন : "স্যার ইতা কি করেন?"
০১ : একদিন অনেক রাতে শোরগোল শুনে ঘটনাস্থলে গেলাম। গিয়ে দেখলাম. সবাই একটা ছিচকে চোরকে বেধরক পিটিয়েছে। ঘটনাটি কি ছিল?-লোকে যা বললো, ওই এলাকার বখাটে দুলাল রাতে হাসপাতাল এলাকার নব নির্মিত ভবনের ওপর উঠে লোহা এটা সেটা চুরি করছিল। সে সময় নির্মানাধিন ভবনের পাহারাদার আর এক দুলাল টর্চের আলোতে চোর দুলালকে দেখতে পেয়ে চিৎকার করে ও ধাওয়া করে। চোর দুলাল কোন রকমে সেখান থেকে লাফ দিয়ে প্রাচীর টপকে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করে। প্রাচীরের ওপারে ছিল জনাব রিয়াজুল ইসলাম মাষ্টারের বাড়ি। সে সময় রিয়াজুল মাষ্টারের ছেলে আর এক দুলাল বাড়ির বাহিরে প্রাচীর নিকট প্রস্রাবক করার জন্য বের হয়েছিল। ঠিক সে সময়ই চোর দুলাল প্রাচীর টপকিয়ে মাষ্টার সাহেবের ছেলে দুলালের সামনে পরলে, দুলাল চোর দুলালকে জাপটে ধরে। ওই একই সময়ে একটি চালকলের ম্যানেজার বাশবাড়ি এলাকার দুলাল সাইকেল নিয়ে সেই পথ দিয়ে বাড়ি ফিরছিল। আলো অন্ধকারের মধ্যে দুইজনের জাপটাজাপটি দেখতে সে সাইকেল ফেলে দিয়ে পাশ থেকে একটা বাঁশ নিয়ে দু-জনকেই পিটাতে শুরু করে। এরই মধ্যে চুরি করতে আসা দোলাল পালানোর কৌশল হিসাবে মাষ্টারের ছেলে দুলাকে পিটাতে শুরু করে। মিল ম্যানেজার দুলালও মনে করে যে মার খাচ্ছে, সেটাই বুঝি চোর। অন্ধকারের মধ্যেই মাষ্টারের ছেলে দুলাল কিছু লাঠির আঘাত খাবার পরে, যখন চিৎকার দিয়ে বললো, আরে আমি নয়, ওই দুলাল চুরি করে পালাচ্ছিল, তখন উল্টো চুরি করতে আসা দুলালকে বেধরক মাইর...। চার দুলালের এই কাকতালীয় ঘটনাটি পরের দিনের প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠার অন্যতম বিনোদন সংবাদ হয়, আর সংবাদ নিয়ে লোকজন হাসতে হাসতে..।
০২ : তখন বেলা ৩ টা। প্রচন্ড গরম। পশু হাসপাতালের বেলতলায় আমরা কয়েকজন বসে আছি। এ সময় হাসপাতালের দিক থেকে হৈ হুল্লোর শুনতে পেলাম। তাকাতেই দেখি, সাদা কাফনের মত কাপড় পরে এক লোক দৌড়ে পালাচ্ছে। আর তার পিছু নিয়েছে ডাক্তারগন, নার্স, আয়া সহ হাসপাতালের আরও লোকজন। পাশেই আবার গোরস্থান। ঘটনার আকস্মিকতায় কিছু বুঝতে না পেরে চিন্তা করলাম এই দিন দুপুরে আবার জ্বীন কোথ্বেকে এলো। (যদিও এসব অলৌকিকতায় আমার বিশ্বাস নাই)। ডাক্তার আর নার্সগন সাদা পোশাকের লোকটিকে যতই দৌড়ে ধরার চেষ্টা করছে, অন্যদিকে পথচারি, দোকানদার সবাই মনে করেছে একটা জ্বীন ভুত দৌড়াচ্ছে, তাই সেই লোকটিকে ধরবার আহ্বানে সাড়া না দিয়ে যে যেভাবে পারছে, অর্থাৎ কেউ দোকান ফেলে, আবার কেউ সাইকেল মোটরসাইকেল ফেলেই দৌড়ে পালাচ্ছে। এ যেন একটা সাময়িক সময়ের ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতা। অবশ্য থানার অদুরেই ডাক্তাররা লোকটিকে ধরে ফেলতে সক্ষম হন, আর সবাই মিলে তাকে পাজাকোলা করে ধরে আবার হাসপাতালে নিয়ে যান। ঘটনা যা জানা গেলো, তা হল, গ্রামের এই লোককে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মাঠ কর্মী হাসপাতালে এনেছিলেন বন্ধাত্বকরন অপারেশনের জন্য। অপারেশন থিয়েটারের বিছানায় লোকটাকে সাদা পোশাকে শুইয়ে, অবশ করার ইনজেকশন দিয়ে যেইনা ডাক্তার কাটাকুটি করা শুরু করেছেন। তখনই লোকটি মাথা উচু করে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলেন রক্ত। আর পায় কে, হাতে দেওয়া স্যালাইন আর আ্শপাশের ডাক্তার নার্সকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে, একটা হাত পেটের নিচে চাপা দিয়ে ধরে হাসপাতালের দোতলা থেকে দৌড় শুরু.....।
০৩ : কীটনাশক দিয়ে কোন অবস্থাতেই পোকা দমন করা যাচ্ছেনা, এমন অভিযোগ নিয়ে কৃষি অফীস ফেরত লোকজন দোকানদারকে এত বলছেন যে, কীটনাশক ভাল না। এতে করে কিছুতেই বুঝতে চাইছেন না কৃষি কর্মকর্তারা সহ কীটনাশক বিক্রেতা। বচসার এক পর্যায়ে ওই এলাকার কৃষক ও ইউপি সদস্য দোকানে ঢুকে ওই একই ধরনের কীটনাশকের প্যাকেট নিয়ে ছিড়ে একমুঠো কীটনাশক মুখে দিয়ে খেয়ে ফেললেন। ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই হতবাক ও ভীত হয়ে পরলেন। কীটনাশক খেয়েও কিছুই হলনা ওই ইউপি সদস্যের। অবশেষে "একমুঠো কীটনাশক খেয়ে ইউপি সদস্য প্রমাণ করলেন ভেজাল"।
০৪ : একটি গ্রামে কলের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এতে করে ২ দিনে ৫ জন লোক মারা গেছে, আরও অর্ধশতজন হাসপাতালে। কুসংস্কারাচ্ছন্ন গ্রামটিতে "দুখ" (শব্দটিকে হিন্দুরা অপদেবতা, মুসলমানেরা দুষ্ট জ্বীন বলে থাকেন) হানা দিয়েছে মর্মে, সন্ধার সময় ৩ শতাধিক পরিবারের বসবাসরত ওই গ্রামে একদিকে আজান অন্যদিকে উলুধ্বনী আর সব বাড়ির লোকজন থালাবাটি ও ঘরের টিনের চালে লাঠি দিয়ে শব্দ করে ক্রমাগত কয়েকদিন ধরেই দুখ তাড়ানোর চেষ্টা করে আসছিলেন। তবে, দুখ না পালালেও প্রতিদিন নতুন নতুন রোগি দিয়ে হাসপাতাল ভরে গেছে। তো, ৫ জনের মৃত্যু সংবাদ লেখা প্রায় শেষের দিকে, এখন প্রিন্ট দিয়ে ফ্যাক্স মেশিন নিয়ে টেলিফোন অফিসে গিয়ে ফ্যাক্ম করা বাকী। ঠিক এ সময় এক সাংবাদিক ছুটতে ছুটতে আসছেন। কি হয়েছে, তৎক্ষনাৎ থমকে গেলাম আমরা। কাছে এসেই ওই সাংবাদিক যা বললেন, "মামা, থামেন, আরও দুইজন লোককে ৬/৭ টি করে স্যালাইন দেয়া হচ্ছে। একটু পরেই এই ২ টা মরবে!" এ ঘটনায় এখন হাসবো, না কি করবো, তাকে থামিয়ে বললাম, তুমি বস ঠান্ডা হও, পানি খাও। অবশ্য শেষ পর্যন্ত আর কেউ মারা যাননি।
০৫ : এলাকার একজন শিক্ষকের এতটাই কাতুকুতু ছিল যে, যদি কেউ পাশ দিয়ে হেটেও যেতেন আর সে বাতাস যদি ওই শিক্ষকে লাগতো তবে তিনি, কোমরটা আকা বাঁকা করতেন। ঠিক যেন কেউ তার কোমরে হাত দিয়ে কাতুকুতু দিচ্ছে। একদিন নতুন একজন শিক্ষা কর্মকর্তা গেলেন স্কুল পরিদর্শনে, সে সময় তিনি শিক্ষকদের সাথে কথা বলছিলেন ও হাত দিয়ে স্কুলের বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসা সহ জানতে চেষ্টা করছিলেন। শিক্ষা কর্মকর্তা যেইনা হাত দিয়ে কিছু দেখানোর বা বুঝবার চেষ্টা করছেন, অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে সামনে ওই শিক্ষকও হাত নড়ানোর সাথে সাথে কোমর আকা বাঁকা করতে থাকলেন। বিষয়টি অন্যান্য শিক্ষকরা টের পেলেও শিক্ষা কর্মকর্তা বুঝতে পারলেন না। শেষ পর্যন্ত শিক্ষা কর্মকর্তার হাত নাড়ানোর বিষয়টিতে কাতুকুতুতে অতিষ্ট হয়ে ওই শিক্ষক বলেন উঠলেন, "স্যার ইতা কিতা করেন?" তাৎক্ষনিকভাবে শিক্ষা কর্মকর্তা বিষয়টি বুঝেননি। তবে, জানবার পরে, ওই বাক্যটি অনেকদিন টক অব দ্যা এলাকায় পরিনত হয়েছিল। আর পরেদিন প্রথম আলোর এক কলামের টক অব দ্যা বিনোদন সংবাদে পরিনত হয়। নাম প্রকাশ করছিনা-সংবাদপত্র অফিসে যিনি সংবাদটি সম্পাদনা করছিলেন, তিনিও নাকি ওই সময় কাতুকুতুতে অনেকটা আক্রান্ত হয়েছিলেন, আর অফিসশুদ্ধ বিষয়টি ওইদিনের হাসির খোড়াক হয়।
(চলমান-কন্টেন্ট বড় হয়ে যাচ্ছে, বিধায়, "চিন্তাশক্তির বহি:প্রকাশই শক্তিশালী" বিষয়টি আগামীকালের জন্য তুলে রাখলাম। সাথে থাকবার জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা।)

ছবি
সেকশনঃ সাধারণ পোস্ট
লিখেছেনঃ আত্মা তারিখঃ 12/05/2017
সর্বমোট 974 বার পঠিত
ফেসবুকের মাধ্যমে কমেন্ট করুণ

সার্চ

সর্বোচ্চ মন্তব্যকৃত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন