ব্যাকগ্রাউন্ড

ফেইসবুকে!

দেশের সরকার কি হেফাজতে শয়তানের কথায় চলবে?



দেশের সরকার কি হেফাজতে শয়তানের কথায় চলবে?
সাইয়িদ রফিকুল হক
 
বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি ও মূল্যবোধকে সমূলে ধ্বংস করার জন্য ‘হেফাজতে শয়তানে’র জন্ম হয়। আর ২০১০ সাল থেকে স্বাধীনতার ৪২ বছর পরে পুনরায় একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হলে এটিকে সরাসরি বাধাগ্রস্ত করার জন্য এই বছর থেকেই ‘হেফাজতে শয়তান’ নুতনভাবে সংগঠিত হতে থাকে। আর সেই থেকে চলছে তাদের সীমাহীন শয়তানী, হুজ্জোতি, বজ্জাতি, বাঁদরামি, আর ধর্মের নামে নজিরবিহীন-ভণ্ডামি।
 
২০১৩ সালের ৬ই এপ্রিল আর ৫ই মে তারা ঢাকা-শহরে নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছিলো। ২০১৩ সালের মতিঝিলের শাপলা-চত্বরে তারা সাধারণ জনসভার কথা বলে এলাকার দালানকোঠায় ও রাস্তাঘাটে নাশকতা চালানো থেকে শুরু করে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক—বাংলাদেশ ব্যাংক লুটের পরিকল্পনা পর্যন্ত করেছিলো এই হেফাজত-শয়তানগোষ্ঠী। সেই সময় তারা বায়তুল মোকাররমের সামনে বইয়ের দোকানে আগুন দিয়ে শুধু বই পোড়ায়নি—তারা তখন পবিত্র কুরআন শরীফও আগুনে পুড়িয়েছিলো। এই হলো হেফাজতীদের ঈমান! আর এই হলো হেফাজতীশয়তানদের ধর্মবোধ! এরা প্রকাশ্য-দিবালোকে প্রিন্টমিডিয়া আর টিভি-ক্যামেরার উপস্থিতিতে বায়তুল মোকাররমসহ এর সামনে ও এর আশেপাশে কুরআনশরীফ পুড়িয়েছে। তারপর আবার এসব অস্বীকার করেছে। মূলত এদের মতো কাফের-শয়তান-জালেম-বদমাইশ আর দেশদ্রোহী এই বাংলাদেশে আর নাই।
 
হেফাজতে শয়তানের জন্ম ১৯৭১ সালে। সেই সময় হেফাজতে ইসলাম ওরফে হেফাজতে শয়তান পাকিস্তান-আর্মিদের পক্ষ নিয়ে সরাসরি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলো। হেফাজতে শয়তানের আমির শাহ আহমেদ শফী একাত্তরের একটা চিহ্নিত-যুদ্ধাপরাধী। আর সে আজন্ম-আমৃত্যু পাকিস্তানের দালাল। ১৯৭১ সালে, হেফাজতে শয়তানের প্রধান ঘাঁটি ছিল দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসা। এদের নেতৃত্বে সেই সময় এখানে আরও একটি দেশবিরোধীসংগঠনের জন্ম হয়েছিলো। এর নাম মুজাহিদবাহিনী ওরফে পাকিস্তান-মুজাহিদবাহিনী। আজকের হেফাজতে শয়তানের আমির শাহ আহমেদ শফী ছিল এই মুজাহিদবাহিনীর প্রধান।
 
অতিসম্প্রতি হেফাজতে শয়তান রাজধানীর বিভিন্নস্থানে ওয়াজের নামে ও মসজিদে-মসজিদে খুব হম্বিতম্বি করছে! এদের দাবি হলো: দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রীমকোর্ট-চত্বর থেকে মূর্তি-অপসারণ করতে হবে! কীসের মূর্তি! আসলে, এখানে কোনো মূর্তি নাই। এখানে, একটি ভাস্কর্য্যস্থাপন করা হয়েছে। আর এই ভাস্কর্য হলো ‘লেডি জাস্টিসে’র। আর এটি পৃথিবীর প্রায় সব সভ্য-দেশেই আছে। হেফাজতের পশুগুলো জানেও না কোনটি মূর্তি আর কোনটি ভাস্কর্য! এই হেফাজতীপশুগুলো দেশের সর্বোচ্চ আদালতপ্রাঙ্গণ থেকে আন্তর্জাতিকমানের ভাস্কর্য্য-অপসারণের জন্য সরকারকে নানারকম আল্টিমেটাম দিচ্ছে! আর এদের ধৃষ্টতা দেখে জাতি স্তম্ভিত! এইসব জাকাত-ফিতরা-সাদকাহখাওয়া লোকগুলো কী ভয়ংকর হয়ে উঠেছে, আর উঠছে! আর এদের মতো পশুদের লালনপালন করছে এই রাষ্ট্র! সরকার এদের জামাইআদরে বাংলাদেশে রেখেছে!
এখানেই শেষ নয়। হেফাজতীশয়তানগুলো আমাদের পাঠ্যপুস্তক নিয়ে নানারকম বিষোদগার করছে। আর এরা বলছে: অমুক-তমুক নাস্তিক-লেখক! এদের লেখা পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দিতে হবে!
আর দেশের অবিবেচক-সরকারও তা-ই করছে। এতে এদের মতো শয়তানদের ধৃষ্টতা দিন দিন আরও বেড়ে যাচ্ছে। এরা এই সুযোগে আরও বেশি বাঁদরামি করছে। আর এই বাঁদরগুলো জাতির ঘাড়ে চেপে বসার জন্য নানারকম ফন্দিফিকির করছে। এরা খুব শয়তানী জানে।
হেফাজতে শয়তানের সংগঠনে কোনো আলেম নাই। এমনকি এখানে কোনো আলেমের ছায়া পর্যন্ত নাই। এই হেফাজতীশয়তানগুলো ইসলামের চিরদুশমন এজিদপন্থীমুসলমান। মানে, এরা নামধারীমুসলমান। এরা আসলে ধর্মব্যবসায়ী।
 
পৃথিবীর অধিকাংশ মুসলিম দেশেই ভাস্কর্যশিল্পের ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়। আর এখানে, নিয়মিত ভাস্কর্যশিল্প গড়ে তোলা হয়। ইসলামের পুণ্যভূমি বলে খ্যাত সৌদিআরবেও নানারকম ভাস্কর্য রয়েছে। এমনকি মুসলমানদের পবিত্র নগরী মক্কা-মদীনাতেও রয়েছে কিছু ভাস্কর্য। এসব হেফাজতীশয়তানরা চোখে দেখে না? আর দেখলেও চুপ। কারণ, সৌদিআরব বলে কথা। সৌদিআরব তাদের বাপ হয়। আর হেফাজতীদের দৃষ্টিতে সৌদিআরবের জন্য সবকিছু জায়েজ। আর তাই, হেফাজতে শয়তানের কাছে ভাস্কর্য নাজায়েজ হয় শুধু বাংলাদেশে। আর আমাদের দেশের সুপ্রিমকোর্ট-চত্বরে যে ‘লেডি অব জাস্টিস’-এর ভাস্কর্যস্থাপন করা হয়েছে—তা পৃথিবীর প্রায় সব দেশের বিচারালয়ের সামনেই স্থাপন করা হয়েছে। শুধু বাংলাদেশের বেলায় হেফাজতীশয়তানদের চোখ টাটায়! এরা যে আপাদমস্তক-ভণ্ড তা এদের কার্যকলাপ পর্যালোচনা করলেই বুঝা যায়।
 
এবার দেখুন সৌদিআরবের একটি ভাস্কর্যের নমুনা বা দৃষ্টান্ত:


 
২০১৩ সালে হেফাজতীশয়তানদের ঠিকভাবে শায়েস্তা করা হয়নি। সেদিন হেফাজতের আমির বিশ্বশয়তান-লম্পট শাহ আহমেদ শফীকে বিশেষ বিমানে (হেলিকপ্টারে) করে পাকবাহিনীর অন্যতম সেরা ঘাঁটি চট্টগ্রামের হাটহাজারীমাদ্রাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। অথচ, রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে সেদিন শাপলা-চত্বরে প্রকাশ্যে শাহ আহমেদ শফীসহ তার সমস্ত চামচাদের ফাঁসি দেওয়া যেতো। ভুল শুধরানোর জন্য এখনও সময় আছে। দেশের সরকারকে মানুষের পক্ষ নিয়ে মানুষ, মানবতা আর ইসলামের চিরশত্রু হেফাজতীশয়তানদের এখনই ফাঁসি দিতে হবে।
 
হেফাজতীশয়তানদের দমন করতে সরকারের এতো টালবাহানা কেন? আর কীসের এতো ভয়? এইসব জাকাত-ফিতরা-সাদকাহখাওয়া কাটমোল্লাদের সরকার ভয় পায় নাকি? তাই, আজ জাতির মনে প্রশ্ন জেগেছে: সরকার জনগণের কথা শুনবে নাকি হেফাজতে শয়তানের কথায় চলবে?
জবাব পেলে খুশি হবো।
জয়-বাংলা।
 
সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।
১৬/০২/২০১৭



ছবি
সেকশনঃ সাম্প্রতিক বিষয়
লিখেছেনঃ সাইয়িদ রফিকুল হক তারিখঃ 22/03/2017
সর্বমোট 4953 বার পঠিত
ফেসবুকের মাধ্যমে কমেন্ট করুণ

সার্চ

সর্বোচ্চ মন্তব্যকৃত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন