ব্যাকগ্রাউন্ড

ফেইসবুকে!

আশা ও ভয়

পাখিরা নীড়ে ফিরছে। রাখাল গরুর পাল নিয়ে মাঠ থেকে ফিরছে। হুঁট হুঁট আওয়াজ তুলে অবাধ্য গরুগুলোকে সে সাবধান করে দিচ্ছে। মৃৎপাত্রের মতো সবাই যার যার ফিকির ফেলে নিজ গৃহে চলে যাচ্ছে। এসব সন্ধ্যা হওয়ার লক্ষণ। তাই দেখে আমার বুকটা বেশ রনরনিয়ে উঠল। নাড়িতে বেজে উঠল চঞ্চলের পদধ্বনি। এ সময় সাধকের তপোভঙ্গ করায়ে কে যেন উচ্চহাস্য- অগ্নিরসে ফাল্গুনের সুরাপাত্র এনে দিয়েছে। জীবন মৃত্যুর পবিত্র তীরে এখন বিরাট পরিবর্তন সাধিত হবে। এখনি দূর মসজিদ থেকে আযানের মঞ্জুল ধ্বনি উচ্চরবে শোনা যাবে। ঝংকারমুখর এ পৃথিবীর কটিভূষণ আর লক্ষ করা যাবে না। আমি কোন ভণিতা না করেই মসজিদের পানে দৌড় দিলাম। আল্লাহ আমাকে ডাকছেন। অথচ 'লাব্বায়েক' 'লাব্বায়েক' বলে আমি তাঁর ঘরে হাজির হচ্ছি না। বড়ই লজ্জার কথা এটা। আমি উত্তমরূপে ওযু করে খুব তমিজের সাথে মসজিদে প্রবেশ করলাম। আমি এ নিয়ত করলাম যে, ১) আমি পুলসেরাতের ওপর দাঁড়িয়ে আছি। ২) আমার ওপরে মৃত্যু দূত আছেন। ৩) আমার সামনে বিশ্বপ্রভু আছেন। ৪) আমার ডানে-বামে দু'জন ফেরেশতা আছেন। ৫) আমি আমার জীবনের শেষ নামাজ পড়ছি। সুতরাং অন্য কোন চিন্তা আমার মনে কস্মিনকালেও উদয় হতে পারবে না। তবু আমার ভয় হচ্ছে আল্লাহ আমার নামাজ কবুল করবেন কি না৷ কেননা আমি যে তাঁর বড় পাপী বান্দা। মনে এ আশা ও রাখছি, আল্লাহ তো রাহমানুর রাহিম। তিনি আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। নামাজ সাঙ্গ করে আমি বাড়ির পথ ধরে হাঁটতে থাকলাম। কেননা আমি আমার মাকে কথা দিয়েছি। তিনি আমার জন্য অপেক্ষা করবেন। আমি হাঁটছি। পথের ধারের টেলিফোনের খামগুলোকে মনে হচ্ছে যেন অন্ধকারের বিরাট প্রতিমূ্র্তি। সহসা এক কালো জিপ গাড়ি আমার পাশ দিয়ে সাঁ সাঁ আওয়াজ তুলে চলে গেল। কে যেন হাত নেড়ে আমাকে অভ্যর্থনা জানানোর চেষ্টা করছে। আমি তাকে চিনলাম না। আর এ অন্ধকারে চেনার কোন ফুরসত ও পাওয়া গেল না৷ আমি পাথরের মতো নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম। ঐ দূর পাহাড়ের গায়ে নিবু নিবু আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কারা যেন দিনের ভাটার শেষে রাতের জোয়ারেতে তারাফুল নিয়ে এসেছে অন্ধকার গিরি তটতলে। আমি ভাবতে থাকলাম যদি ঐ গাছের আড়ালে কোন ডাকাত লুকিয়ে থাকে আর আমাকে আক্রমণ করে বসে তাহলে আমি কোথায় গিয়ে লুকোব। যেন ব্যক্ত- অব্যক্ত হরেক রকম ধ্বনিগুলো পুঞ্জ অন্ধকারে গুমরে উঠল। আমি নিস্তব্ধ এ রাতে সে ধ্বনিগুলো মন দিয়ে শুনলাম। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে একেবারে কাঠ হয়ে গেল। আমার সাথের লোকটা আমাকে নানা অভয় বাণী দিলেন। কিন্তু আমার ভয় কোনমতে ছাড়ছে না৷ অথচ সে দিব্যিসুখে হেঁটে যাচ্ছে আর গাইছে, You can blow out the candle but you can't put out the fire. আমি মনে আশার বল সঞ্চার করতে থাকলাম। আর পড়তে থাকলাম 'লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নী কুনতু মিনাজ জোয়ালেমীন'। সহসা কোথা থেকে এক অজানা জিপ গাড়ি এসে আমাদের পাশ দিয়ে চলে গেল। বলা দরকার আমার পাশের লোকটি ছিল সরকারি ব্যাংকের ম্যানেজার। কিন্তু গাড়ির চালক তাকে কোন অভ্যর্থনা জানানোর প্রয়োজন মনে করে নি। উল্টো পিষে ফেলতে চেয়েছিল( আমরা জঙ্গলের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া এক রাস্তা ধরে হাঁটছিলাম। অবশ্য জঙ্গলটি আয়তনে বেশ ছোট। কিন্তু ভয়ংকর। এটি পেরুলেই আমার গ্রাম।)। 'চেনেন নাকি ঐ গাড়ি চালক বা তার মালিককে?' জিজ্ঞেস করলাম আমি। ম্যানেজার স্মিতহাস্যে আমাকে না' শুনাল। অন্তত দু'বার বলতে বাদ রাখে নি। এমনিতেই আমি ভয়ে জবুথবু হয়ে গেছি। তাছাড়া ঐ অজানা গাড়ি আমার ভয় আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। তবু আমি আশার হাল ছাড়ি নি। সূরা ইউনুসের বেশ ক'টি আয়াত যতটুকু মনে পড়ে হরদম পড়ে যাচ্ছি। সামনেই ত্রি রাস্তার মোড়। ম্যানেজার আমাকে see you tomorrow, goodnight বলে হনহন করে তার বাড়ির পথ ধরে হাঁটতে থাকলো। আমি শুধু চেয়ে চেয়ে তার চলে যাওয়া দেখলাম। ভীষণ একা বোধ করছি এখন। তবু মনকে প্রবোধ দিলাম। বাকিটা পথ আমার সঙ্গী হবেন রাতের হরেক রকম ধ্বনি, ভারতের খাসিয়া পুঞ্জির নিবু নিবু আলো, জোনাকি পোকা, জেরিমায়া এবং আরো অনেকে............।

ছবি
সেকশনঃ গল্প
লিখেছেনঃ তালাল উদ্দিন তারিখঃ 14/09/2021
সর্বমোট 1914 বার পঠিত
ফেসবুকের মাধ্যমে কমেন্ট করুণ

সার্চ

সর্বোচ্চ মন্তব্যকৃত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন