ব্যাকগ্রাউন্ড

ফেইসবুকে!

বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষা ও আন্দোলনে জাতি কি পেল?

বাংলাদেশ জন্মের পরই বিশেষ করে পচাত্তর পরবর্তী সময় থেকে এদেশে ইসলামকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল ও ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠন জোরেসোরে তাদের আন্দোলন শুরু করেছে। যা বর্তমানে চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে প্রত্যক্ষ করছেন রাষ্ট্র ও সমাজবিজ্ঞানীরা। এদেশের শিক্ষা ক্ষেত্রেও মাদ্রাসা শিক্ষা বেশ গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা-পার্টনার। শহর ছাড়াও গ্রামীণ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ‘জা’মিয়া’ (বিশ্ববিদ্যালয়) শ্রেণির উচ্চ ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দৃশ্যমান। ইসলামী গবেষণাগারও এদেশে কম নয় কোন অংশেই। সাম্প্রতিক হরতালগুলোতে ইসলামী দল ও সংগঠনগুলোর উত্তপ্ত কথাবার্তা (যেমন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ‘হাছিনা’ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ‘মগা আলমগীর’ বলে সম্বোধন) এবং কর্মতৎপরতা দেখে মনে হতেই পারে তারা ইসলামী দর্শন ও জ্ঞানে বেশ প্রজ্ঞাশীল। একুশ শতকের ইন্টারনেট ও স্যাটেলাইট টিভির কল্যাণে মানুষ এখন ঘরে বসেই দেখতে পারে ড. উইলিয়াম ক্যাম্পবেল ও ড. জাকির নায়েকের নিজ নিজ ধর্ম বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন ও পাল্টা যুক্তিতে তা খ-ন-চিত্র। বিশ্ব-ইজতিমা, ওয়াজ-নসিয়তের অনুষ্ঠানে উপস্থিত না হয়েও শিক্ষিত মানুষ এখন ঘরে বসেই পৃথিবীর তাবৎ ধর্মীয় জ্ঞান লাভ করতে পারে বর্ণিত সহজ টেলি-কমিউনিকেশন পদ্ধতিতে। বর্তমানে এদেশে কমপক্ষে ৫২৫০ কওমি মাদ্রাসা পরিচালিত হচ্ছে নানাবিধ যাকাত, ফিতরা, চাঁদা, অনুদান ইত্যাদির মাধ্যমে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রধান পাঠ্যক্রম হিসেবে ইসলাম ধর্মের পবিত্র কোরআন, হাদিস, তাফসির, ফিকাহ, আরবী কালাম, আরবী সাহিত্য, উর্দু ও ফার্সী ভাষার বিভিন্ন কিতাব অন্তর্ভুক্ত। কোন কোন কওমী মাদ্রাসায় অল্প-বিস্তর বাংলা, ইংরেজী, গণিত ইত্যাদি ‘অপ্রধান বিষয়’ হিসেবে পড়ানো হয়। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্যে সরকারী কোন সংস্থা, সংগঠন, বোর্ড বা কার্যক্রম নেই। সরকারী কোন অনুদানও গ্রহণ করেনা বর্ণিত মাদ্রাসাগুলো নিজেদের ‘স্বাধীনতা’ টিকিয়ে রাখার স্বার্থে। একটি সাংবিধানিক স্বাধীন দেশে অপর একটি ‘স্বাধীন’ সংস্থা হচ্ছে কওমী মাদ্রাসাগুলো! বর্তমানে বাংলাদেশে এই ধরণের কওমী মাদ্রাসাগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় কমপক্ষে ১৯-টি ব্যক্তিকেন্দ্রিক ‘শিক্ষা বোর্ডে’র মাধ্যমে। এর মধ্যে কোন কোন ‘বোর্ড’ জোটভুক্ত, আবার কোনটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায়। ১৯-টি স্বতন্ত্র বোর্ড দেখেই বোঝা যায় ধর্মকেন্দ্রিক এ শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যেও অনৈক্য কত প্রকট! দেশে বর্তমানে প্রায় ৫২৫০টি মাদ্রাসার তথ্যচিত্র নিম্নরূপ - তাকমীল বা কামিল স্তরের ৪০০টি, ফযীলত বা ফাজিল স্তরের কমপক্ষে ১৯৩টি, সানাবিয়া উলইয়া বা আলিম স্তরের ২৮৩টি, মুতাওওয়াসসিতাহ বা নিম্নমাধ্যমিক স্তরের ১৫৩০টি, হিফযুল কোরান ২০৯২টি। বর্ণিত মোট ৫২৫০টি মাদ্রাসায় তাকমীল বা কামিল পর্যায়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৬০০০, ফযীলত বা ফাজিল স্তরে শিক্ষার্থী সংখ্যা কমপক্ষে ৮৩০০০, সানাবিয়া উলইয়া বা আলিম স্তরে ৯২০০০, মুতাওওয়াসসিতাহ বা নিম্নমাধ্যমিক স্তরে ১২০,০০০, ইবতিদাইয়াহ স্তরে কমপক্ষে ৫৭৭,০০০ এবং হিফযুল কোরান বা সর্বনিম্ন স্তরে ৪,৭০,০০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এ সকল মাদ্রাসায় মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ, যা অনেক দেশের জনসংখ্যার সমান।

এ সকল মাদ্রাসায় কেবল নিজ ধর্ম তথা ইসলাম পড়ানো হয় কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য Theology বা ধর্মতত্ত্বে অধ্যয়নের জন্যে আজকের খ্রীস্ট সমাজে প্রথমে একজন শিক্ষার্থীকে সাধারণ শিক্ষা মানে ভাষা, গণিত, ইতিহাস, বিজ্ঞান, নৃতত্ত্ব, সাংবাদিকতা, উন্নয়ন, চিকিৎসা, প্রকৌশল, দর্শন, মনোবিদ্যা কিংবা আধুনিক জ্ঞানশাস্ত্রের যে কোন এক বা একাধিক বিষয়ে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের শিক্ষা অর্জন তথা স্নাতকোত্তর, এমফিল বা পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনের পর তাকে নির্বাচন করা হয় ধর্মতত্ত্ব তথা Theology অধ্যয়ন করার জন্যে। Theology বিষয়টি পড়তে গিয়ে কেউ অধ্যয়ন করে থাকে খ্রীস্ট ধর্ম, কেউ একেশ্বরবাদী অন্যান্য ধর্ম (যেমন ইহুদী বা ইসলাম), কেউবা বহুদেবতাবাদী ধর্ম কিংবা তুলনামূলত ধর্মতত্ত্ব। নাস্তাক্যবাদ সম্পর্কেও পাঠ্যক্রম নির্ধারিত থাকে Theology-তে। কমপক্ষে ৩-৪ বছরের এ পাঠ্যধারা সমাপ্তির পর প্রকৃতপক্ষেই একজন থিউলজিস্ট বুঝতে পারে নিজ ধর্ম ও অন্যান্য ধর্মের পার্থক্য। নিজ ও অপর ধর্মকে ব্যাখ্যা বিশেস্নষণের বিজ্ঞানভিত্তিক যোগ্যতা অর্জন করে সে নিজে। আধুনিক ইহুদী, বৌদ্ধ, শিন্টো ধর্মের শিক্ষাও অনেকটা বর্ণিত রূপে মাতৃভাষায় শিক্ষা দেয়া হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। কিন্তু আমাদের এদেশে উপর্যুক্ত অধিকাংশ কওমী মাদ্রাসায় আধুনিক জীবন সম্পৃক্ত শিক্ষা পদ্ধতি ও উপকরণ ব্যবহারের বদলে প্রাচীন পদ্ধতির মুখস্ত ও লেকচার নির্ভর নিজ ধর্মকেন্দ্রিক শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে যে মানব সম্পদ সৃষ্টি হচ্ছে, তা ‘না ঘরকা না ঘাটকা’। এখানের অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের পত্রিকা-জার্নাল পাঠ, রেডিও-টিভি দেখা, ইন্টারনেট জগতের বাইরে রেখে, খেলাধুলা, বিতর্ক-কো-কারিকুলার কার্যাবলীতে অংশ নিতে নিরুৎসাহিত করে মূলত এদের অনেককেই অনাধুনিক এক সমাজের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে ক্রমান্বয়ে। বর্ণিত শিক্ষা সম্পন্নের পর অধিকাংশ কওমি মাদ্রাসা পাস শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতামূলক আধুনিক বিশ্বে টিকতে পারছে না আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর অন্যান্য প্রতিযোগিদের সামনে। সমদক্ষতা অর্জনে তারা অদক্ষ থাকাতে পিছিয়ে পড়ছে সমাজ, রাষ্ট্র তথা গেস্নাবাল বিশ্বে, বিশ্বের আধুনিক জ্ঞানের রাজ্যে বিচরণ দেখছিনা তাদের। ইসলামের ‘সহি’ হিসেবে পরিচিত হাদিস গ্রন্থে কতিপয় হাদিস দৃশ্যমান, যা নিয়ে প্রশ্ন জাগে আমাদের মতো ‘অমাদ্রাসা পড়ুয়া’ ধর্মভীরু ডিগ্রীধারীদের মনে। আমাদের প্রত্যাশা প্রতি বছর এদেশের মাদ্রাসা গুলো থেকে যে লাখ লাখ ‘মুফতি-আলেম’ বের হচ্ছেন বিভিন্ন ডিগ্রী নিয়ে, তারা বিজ্ঞান, যুক্তি ও জ্ঞানের ভিত্তিতে ড. উইলিয়াম ক্যাম্পবেল ও ড. জাকির নায়েকের মতো ব্যাখ্যা প্রকাশ করবেন নিচের হাদিসগুলোর বিষয়ে :-

‘‘কোরান শিখিয়ে পারিশ্রমিক গ্রহণকে নবী আগুনের অঙ্গার বলেছেন (দাউদ-৩৩৮১); পুর্বপুরুষদের অহংকারীকে আল্লাহ জাহান্নামের কয়লায় পরিণত করে (তিরমিযী-৩৮৮৯); নবীর মৃত্যুর পর মদিনাবাসী আনসারদের মধ্য থেকে খলিফা নির্বাচনের দাবী উঠলে আবুবকর এই বলে তা প্রত্যাখ্যান করেন যে, কুরাইশরা অবস্থান ও বংশগত দিক দিয়ে যেমন গোটা আরবের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, তেমনি মর্যাদা ও প্রতিপত্তির দিক থেকেও সবার শীর্ষে (বুখারী-৩৩৯৫); মক্কা বিজয়ের দিন কুরাইশ নেতারা কা’বাঘরে জীবন রক্ষার্থে এসে নবীর কাছে বায়াত নেন (দাউদ-৩০১৪) [মক্কা বিজয়ের দিন সাধারণ ক্ষমায় জীবনপ্রাপ্তদের ‘তোলাকা’ বলা হতো]; কোরান কুরাইশী আরবীতে অবতীর্ণ হয়েছিল (বুখারী-৩২৪৩); নবী বলেছিলেন, আমরা (বনু হাশিমরা) যাকাতের দ্রব্য খাইনা (বুখারী-১৩৯৫); যতদিন পৃথিবীতে দু’জন লোকও অবশিষ্ট থাকবে, ততদিন শাসনভার চিরকাল কুরাইশদের হাতেই থাকবে (বুখারী-৩২০৪); ১২-জন আমীর হবেন যারা মুসলিম বিশ্ব শাসন করবে এবং সকলে হবে কোরাইশ বংশের (বুখারী-৬৭১৬); খিলাফত সব সময় কুরাইশদের মধ্যে বিরাজমান থাকবে, এমনকি তাদের মধ্যে ২-জন লোক অবশিষ্ট থাকলেও (বুখারী-৬৬৪১); রাজত্ব কুরাইশদের, বিচার বিধান আনসারদের, আযান হাবশীদের, আমানতদারী ইয়ামানীদের (তিরমিযী-৩৮৭১); লেখা হাদিস নবী (স.) মুছে দেন ও হাদিস লিখতে নিষেধ করেন (দাউদ-৩৬০৮); নবীর কাছে হাদিস লিখে রাখার অনুমতি চাইলে তিনি অনুমতি দেননি (তিরমিযী-২৬৬৫)।

নবী বলেছিলেন, সূর্য অস্ত গেলে তা আরশের নিচে পৌঁছে আল্লাহকে সিজদা করে এবং পুন. উদিত হওয়ার অনুমতি চায় (বুখারী-২৯৫৮), সূর্য ওঠে শয়তানের ২-শিংয়ের মাঝখান দিয়ে (বুখারী-৩০৩১); মেঘ বিষয়ক দায়িত্বশীল এক ফেরেস্তা হচ্ছে বজ্র। আগুনের বেতের সাহায্যে সে মেঘকে হাঁকিয়ে নিয়ে যায় (তিরমিযী-৩১১৭); শিঙ্গা লাগানো সর্বশ্রেষ্ঠ চিকিৎসা (দাউদ-২০৯৮); মিরাজের রাতে দেখা হওয়া সকল ফিরিস্তা নবীকে ও তার উম্মতকে সিঙ্গা লাগাতে বলেছেন (তিরমিযী-২০০৩); বাগানে প্রবেশ করে ফল খাওয়া যাবে কিন্তু পুটুলী বেঁধে নেয়া যাবেনা (তিরমিযী-১২২৪); ৩-বার মালিককে ডেকেও না পাওয়া গেলে তার অনুপুস্থিতে পশুর দুধ দোহন করে খাওয়া যাবে কিন্তু সাথে নেয়া যাবেনা (তিরমিযী-১২৩৩); সে জাতি কখনো সফলকাম হতে পারেনা যে তার রাষ্ট্রীয় কাজ কারবার সোপর্দ করে একজন মহিলার উপর (বুখারী-৪০৭৭); নারীদের জ্ঞান-বুদ্ধির ঘাটতির কারণে তাদের ২-জন স্বাক্ষীকে ১-জন পুরুষের সমান করা হয়েছে (বুখারী-২৪৬৬), স্ত্রীলোক, ঘর ও ঘোড়ার মধ্যে কুলক্ষণ আছে (বুখারী-৪৭২০); কোন ব্যক্তিকে [কিয়ামতে] তার স্ত্রীকে মারধর করার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে না (দাউদ-২১৪৪); কোন মুসলমানের কাছে সম্পদ থাকলে সে যেন তা অসিয়াত না করে ২-রাতও অতিক্রান্ত না করে (তিরমিযী-৯১৬); কেউ মারা গেলে তার মীরাস বা সম্পত্তি পাবে সমত্মান+স্বামী, আর দিয়াত বা রক্তমূল্য পরিশোধ করবে নিকটাত্মীয়রা (বুখারী-৬৪২৯); জ্বর ও বদনজর ছাড়া ঝাড়ফুঁক বৈধ নয় (তিরমিযী-২০০৯); নবী বলেছেন, নজর লাগা একটি বাস্তব সত্য (বুখারী-৫৩২০); নবী বলেছেন, দুধের পাত্রে মাছি পড়লে তা পুরো দুধে ডুবাতে হবে, কারণ তার এক ডানায় রোগ, অপর ডানায় নিরাময় (বুখারী-৫৩৫৭); সংক্রমণ বা ষ্পর্শ দ্বারা অপবিত্র বলতে কিছু নেই (তিরমিযী-১৫৬১); নবী বলেছেন, ছোঁয়াচে রোগ বলতে কোন রোগ নেই। একটি লোক বললো, তাহলে চর্মরোগে আক্রান্ত একটি উট আমাদের ভাল উটের মধ্যে এলে সব উটগুলো আক্রান্ত হয় কেন? নবী বললেন, তাহলে ১ম উটটির মধ্যে রোগ সৃষ্টি করলো কে? (বুখারী-৫২৯৯); কুষ্ঠরোগী থেকে তুমি এমনভাবে পলায়ন কর, যেমন তুমি সিংহ থেকে পলায়ন কর (বুখারী, ২য়খন্ড পৃ.৮৫০); হাঁচি আল্লাহ পছন্দ করে আর হাইতোলা শয়তানে (বুখারী-৫৭৮২-৫); কিয়ামতের দিন আসমান ভাঁজ করা থাকবে আল্লাহর ডানহাতে (কোরান-৩৯:৬৭); মৃত্যুর পর মেরুদ--র হাঁড় ছাড়া মানুষের সব কিছুই পচে গলে যাবে, এ হাঁড় দ্বারা তার গোটা দেহের পত্তন হবে (বুখারী-৪৪৫০); আদমের সমত্মানদের ৯৯% জাহান্নামে যাবে (বুখারী-৬০৭৯); আদমের সমত্মানদের মধ্যে হাজারে ৯৯৯-জন জাহান্নামে যাবে (বুখারী-৬০৮০); কিয়ামতের দিন যার হিসাব যাচাই করা হবে, শাস্তা তার অবধারিত (বুখারী-৬০৮৭); কিয়ামতের দিন নবীর উম্মতের অগ্রবর্তী দলের ৭০,০০০-এর কোন হিসাব ও আযাব হবে না (বুখারী-৬০৯০); বেহেসত্মী ও দোযখী নির্ধারণ করা আছে, আমল যাই করুক না কেন (তিরমিযী-২০৮৮); এক ক্রেতার উপর অন্য ক্রেতার দরাদরি করা হারাম (বুখারী-৬৪৭৯); শাসক পদ যে প্রার্থনা করে তাকে প্রদান করা ঠিক নয় (বুখারী-৬৬৫০); ৭ম আসমানের সিদরাতুল মুনতাহার গাছের একটি কুল হাজারা নামক স্থানের মটকির সমান বিরাট ও পুরু, এর শিকড়ে ৪টি প্রবাহমান নদীর দ’ুটো হচ্ছে ফোরাত ও নীল (বুখারী-২৯৬৭); মানতে তকদিরের কোন বদল হয়না (তিরমিযী-১৪৮০); দালান-কোঠা নির্মাণের ব্যয়ে কোন কল্যাণ নেই (তিরমিযী-২৪২৩); বায়তুল মুকাদ্দাসে পৌঁছে জিবরাইল একটি পাথর ছিদ্র করে তাতে বুরাককে বাধঁলেন (তিরমিযী-৩১৩২); আবিসিনিয়ার বাদশা নাজ্জাসীর কবরে সব সময় নুর দেখা যাবে (দাউদ-২৫১৫); কোন ক্রীতদাস তার মালিকের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করলে সে যেনাকারী হবে (দাউদ-২০৭৪); মুসলমানের দোষ-ত্রম্নটি গোপনকারীর দোষত্রম্নটিও আল্লাহ দুনিয়া ও কিয়ামতের দিন গোপন রাখবেন (তিরমিযী-১৩৬৫); ইসমিদ সুরমা ব্যবহারে চোখের জ্যোতি বাড়ে ও চোখের পাতায় লোম গজায় (তিরমিযী-১৭০১); অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া কোন মহিলার বিয়ে হলে তা বাতিল (তিরমিযী-১০৩৯); কোন লোক যেদিন ৭-টি আজওয়া খেজুর খাবে, সেদিন কোন রকম বিষ ও যাদু তার ক্ষতি করতে পারবে না (বুখারী-৫০৪২); বাড়ির মালিক বিশেষ কাউকে মেহমানদারী না করলে শক্তি প্রয়োগ করে মেহমানদারী আদায় করা যায় (বুখারী-৫৬৯৮); মানুষ দুনিয়াতে যে যাকে ভালবাসবে আখিরাতেও তার সাথেই থাকবে (বুখারী-৫৭২৮); যুল হুলায়ফা এলে নবী কোরবানীর পশুর গলায় জুতা ঝুলাতেন ও পশুর কুঁজ চিরে রক্ত প্রবাহিত করতেন (তিরমিযী-৮৪৯); কোরবানীর পশুগুলোর কুঁজ নবী কোরবানীর অনেক আগেই কেটে দিতেন (বুখারী-৩৮৪৪); পানি কখনো অশুচি হয়না (তিরমিযী-৬৫-৬); মুমিন কখনো অপবিত্র হয়না (তিরমিযী-১২১); পিতাকে খুনের জন্যে ছেলের কিসাস (হত্যা) হলেও, ছেলেকে খুনের জন্যে পিতার কিসাস হবে না (তিরমিযী-১৩৩৯-৪১); জনৈক প্রশ্নকারী ‘কিয়ামত কবে হবে?’ এমন প্রশ্ন করলে নবী জবাবে বলেছিলেন, ‘তোমার অকল্যাণ হোক’। এই সময় মুগীরার বালকপত্র সেখানে উপস্থিত হলে ছেলেটিকে দেখিয়ে নবী বললেন, ‘এই ছেলেটি বুড়ো হওয়ার আগেই কেয়ামত সংঘটিত হবে’ (বুখারী-৫৭২৭); হিজরতের পরপরই আবুবকর ও বিলাল জ্বরে আক্রান্ত হলে নবী বলেছিলেন, হে আল্লাহ, এখানকার জ্বরকে স্থানান্তর করে জুহফাতে নিয়ে যাও (বুখারী-৩৬৩৬); খন্দকের যুদ্ধে আহত ও পরবর্তীতে মৃত সা’দ ইবনে মু’আবের জানাযায় ৭০,০০০ ফেরেস্তা অংশগ্রহণ করে (বুখারী-৩৮১৬); গায়েবী খবর হিসেবে ‘মায়ের গর্ভে কি সমত্মান (সমত্মানের লিঙ্গ) আছে’, ‘আগামীকাল কি করবে’, ‘বৃষ্টি কখন আসবে’ কোন ব্যক্তি তা জানে না (বুখারী-৪২৬৬,৪৩৩৬); ক্রীতদাসী মনিব ছাড়া অন্য কারো সাথে যেনা করলে তাকে তিরস্কার, শাসানো ও দেশান্তর করা যাবেনা, দোররা মারতে হবে। পর পর ৩-বার যেনা+দোররার পরও সে না ফিরলে, তাকে বিক্রি করে দিতে হবে। মনিব ক্রীতদাসীর চরিত্রে মিথ্যা কলঙ্ক লেপন করলে, মনিবের শাস্তা হবে কিয়ামতের দিন চাবুক মারা (বুখারী-৬৩৬২-৩,৮১); মদীনার মেয়েদের খতনা প্রসঙ্গে নবী বলেন, মেয়েদের যৌনাঙ্গ বেশি গভীর করে কেটোনা, কারণ এটা পুরুষের কাছে খুবই প্রিয় (দাউদ-৫১৮১); জিহাদ পরিত্যাগ করে কৃষিকাজে নিমগ্ন থাকলে আল্লাহ তাকে অপমান করবেন (দাউদ-৩৪২৬); জ্বর জাহান্নাতের শ্বাস থেকে আসে (বুখারী-৩০২০); হাশরের ময়দানে সকলে নগ্নপা, উলঙ্গ অবস্থায় উত্থিত হলে, নবী ইব্রাহিমকে সর্ব প্রথম কাপড় পড়ানো হবে (বুখারী-৩১০১); উম্মে ওলাদ ঐ দাসীকে বলা হয়, যে দাসী মনিবের অধীনে থেকে তার ঔরসে সমত্মান জন্ম দেয় (বুখারী-৩৪৩২); কোন মুসলমান যিনাকারী কিংবা চোর হলেও কেবল আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করলেই সে জান্নাতে যাবে (বুখারী-২২১৩, ২৯৮২); মুতার যুদ্ধে ফেরেস্তারা সরাসরি অংশগ্রহণ করলেও, ঐ যুদ্ধে ৩-মুসলিম সেনাপতি যায়েদ বিন হারেস, জাফর তাইয়ার ও আবুদল্লাহ শহীদ হন। এ যুদ্ধে বীরত্বের জন্যে খালিদ-কে ইসলামের নবী ‘সাইফুল্লাহ’ খেতাব প্রদান করেন (বুখারী -১৮৫৯); নবীর প্রস্তাব অনুসারে নু’মান ইবনে শারাহীলের কন্যা উমাইয়ার ‘শাওত’ নামক খেজুর বাগানে ‘জাওনিয়া’কে বিয়ের কনে হিসেবে আনা হয়। নবী তার কাছে গিয়ে বলেন, ‘‘তুমি নিজেকে আমার জন্য হেবা [দান] কর’’। জাওনিয়া বললো, ‘‘কোন রাজকুমারী কি কোন বাজারী লোকের কাছে নিজেকে সোপর্দ করতে পারে’’? নবী জাওনিয়ার নিকটবর্তী হলে তিনি বললো, ‘‘আমি আপনার থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি’’। তখন নবী বললেন, ‘‘তুমি যেহেতু আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করেছো, অতএব নিজ পরিবারের কাছে চলে যাও’’ (বুখারী-৪৮৭০-১); নবী আবুবকরের কাছে ৬-বছরের আয়েশার বিয়ের প্রস্তাব দিলে আবুবকর বলেন, আমি তো আপনার ভাই! ভ্রাতৃষ্পুত্রীর সাথে কিভাবে বিয়ে হতে পারে? নবী বললেন, ‘‘আপনি আমার দ্বীনি ও কিতাবী ভাই, তাই আয়েশা আমার জন্যে হালাল’’ (বুখারী-৪৭০৮); ৬-বছর বয়সে নবীর সাথে আয়েশার বিয়ে হয়, ৯-বছর বয়সে নবী তার সঙ্গে বাসর করেন এবং আয়েশার ১৮-বছর বয়সে নবী ইমেত্মকাল করেন (বুখারী-৪৭৫৫,৪৭৭৮); হজ্জ সমাপন করে প্রত্যাবর্তনের প্রস্ততি গ্রহণ কালে নবীর স্ত্রী সাফিয়া নিজের তাবুর দরজায় বিষণ্ণমনে দাঁড়িয়ে নবীকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, ‘‘ন্যাড়া, তুমি নিশ্চিহ্ন হও’’ (বুখারী-৪৯৩৫); কোন দাস মনিবের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করলে সে ব্যভিচারী/যেনাকারী (তিরমিযী-১০৪৭/৮); নবী তরবারীর আঘাতের যখমে মেহেদি লাগাতে আদেশ দিতেন (তিরমিযী-২০০৫); চোখ উঠলে ঘৃতকুমারীর রস দাও (তিরমিযী-৮৯৪); জানাযায় উটের পিঠে সওয়ার যাত্রীদের দেখে নবী বলেন, তোমাদের কি লজ্জা নেই? ফেরেস্তারা পায়ে হেঁটে যাচ্ছে, আর তোমরা পশুর পিঠে? (তিরমিযী-৯৫১); ইবনুদ দাহ্দাহ’র জানাযায় উপস্থিত হতে নবী ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হয়েছিলেন (তিরমিযী-৯৫২); শয়তান বন্ধ দরজা, কলসীর মুখ ও পাত্রের মুখ খুলতে পারেনা (তিরমিযী-১৭৫৮); যে ব্যক্তি গাধায় চড়ে, চাঁদর পরিধান করে ও ছাগলের দুধ দোহন করে তার মধ্যে অহঙ্কারের লেশমাত্র নেই (তিরমিযী-১৯৫১); ফেরেস্তাদের ডানার ছায়া আছে (তিরমিযী-২৩৯৪); স্ত্রী ও দাসী ছাড়া সকলের নিকট সতর সংরক্ষণ করতে হবে (তিরমিযী-২৭৬৯); মদিনায় মৃত্যুবরণকারীর জন্যে নবী সাফায়াত করবেন (তিরমিযী-৩৮৫২); নবী মক্কার ভূমিকে পৃথিবীর সর্বোত্তম ভূমি বলেছেন (তিরমিযী-৩৮৬০); নবী বলেছেন, আরবের প্রতি বিদ্বেষপোষণই হচ্ছে আমার প্রতি বিদ্বেষপোষণ (তিরমিযী-৩৮৬২); নবী সিরিয়া, ইয়ামেনের জন্যে বরকতের দোয়া করেছেন, কেননা সিরিয়ার উপর ফিরিস্তারা ডানা বিস্তার করে থাকে (তিরমিযী-৩৮৮৮); নবী বলেছেন, গর্ভবতী বন্দিনীর সাথে সমত্মান প্রসবের আগে সহবাস করবে না (দাউদ-২১৫৪); আল্লাহর যমিনের মধ্যে বাছাইকৃত সর্বোৎকৃষ্ট স্থান হচ্ছে সিরিয়া (দাউদ-২৪৭৪-৫); ওজনে মক্কাবাসীর ও মাপে মদীনাবাসীর মাপই গ্রহণযোগ্য (দাউদ-৩৩০৭); নবী ক্রয়বিক্রয়ে বায়না নিষেধ করেছেন (দাউদ-৩৪৬৬); যে ব্যক্তি গ্রামাঞ্চলে বসবাস করে সে হয় কঠোর প্রকৃতির (তিরমিযী-২১০১); শহরবাসীর উপর গ্রামবাসীর স্বাক্ষী জায়েয নয় (দাউদ-৩৫৬৩); এক অবিবাহিত ব্যক্তি নবীর কাছে জনৈক মহিলার সাথে নিজের যেনার দোষ স্বীকার করলে নবী তাকে ১০০-বেত্রাঘাতের শাস্তা দেন কিন্তু মহিলা কসম করে তা অস্বীকার করলে, মহিলাকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয় ও অভিযোগকারীকে অপবাদ দেয়ার জন্য পুনরায় ৮০টি দোররা মারা হয় (দাউদ-৪৪০৮); বিষ মিশ্রিত বকরী প্রেরণকারী ইহুদী মুরাহ্হাব-র বোনকে নবী ক্ষমা করেন (দাউদ-৪৪৪৮); বিষ মিশ্রিত বকরী প্রেরণকারী ইহুদী মুরাহ্হাব-র বোনকে নবী হত্যার নির্দেশ দেন (দাউদ-৪৪৪৯); পুরুষের শুক্র সাদা ও নারীর হলুদ। পুরুষের শুক্র প্রাধান্য বিস্তার করলে সমত্মান ছেলে, আর নারীর শুক্র প্রাধান্য বিস্তার করলে মেয়ে হয় (মুসলিম-৬০৯); যুদ্ধবন্দীর গণিমাত হিসেবে প্রাপ্ত নারীদের (নন-স্ত্রী) সঙ্গে যৌনাচারে নবী সম্মতি দিয়েছিলেন (বুখারী-২০৭২); নবী বলেছেন, আমাকে ততক্ষণ পর্যন্ত কাফেরদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আদেশ দেয়া হয়েছে, যতক্ষণ তারা আল্লাহ ছাড়া কোন প্রভূ নেই, এ কথা স্বীকার না করে (বুখারী-২৭২৯); নবী নাজরানের খ্রীস্টানদের সাথে চুক্তি করেন যে, খ্রীস্টানদের গীর্জা ধ্বংস ও পাদ্রীদের বের করে দেয়া হবেনা কিন্তু বিনিমেয়ে নবীকে ১০০০-জোড়া কাপড় সফর মাসে ও ১০০০-জোড়া রজব মাসে খ্রীস্টানরা পাঠাবে; তা ছাড়া ৩০টি বর্ম, ৩০টি ঘোড়া, ৩০টি উট এবং সব ধরণের যুদ্ধোপকরণ ধার হিসেবে মুসলমানদের দেয়া হবে কিন্তু খ্রীস্টানরা সুদ খাওয়া শুরু করলে তাদেরকে নাজরান থেকে বহিস্কার করা হয় (দাউদ-৩০৩১); রণতরীতে যে সৈনিক মাথা ঘুরিয়ে বমি করে সে শহীদের মর্যাদা পায় (দাউদ-২৪৮৫); শক্তি অর্থ হলো তীরবাজি (দাউদ-২৫০৬); নবী মুসলমানদের বলেছেন, যে গ্রামে গিয়ে তোমরা থাকবে ও যেখানে যাবে, তার অংশ তোমাদের হয়ে যাবে (দাউদ-৩০২৬); মক্কা বিজয়ের দিন নবীর মাথায় কালো পাগড়ী ও চুলে ৪-টি বেণী ছিল (তিরমিযী-১৬৮০,১৭২৭), নবী ও তার সাহাবারা যখন বৃষ্টিতে ভিজতেন তখন তাদের শরীর থেকে ভেড়ার গন্ধ বের হতো (তিরমিযী-২৪২১); আল্লাহর আরশ পানির উপর অবস্থিত (বুখারী-৬৯০২); আসমান ও যমীনের দূরত্ব হচ্ছে ৭১/৭২/৭৩-বছরের রাস্তার সমান, ৭-আসমান ও ১-সমুদ্রের উপর ৮-বকরী দন্ডায়মান, যার খুর ও কাধের দূরত্ব ঐরূপ ৭১/৭২/৭৩-বছরের রাস্তার সমান, এই ৮-বকরীর পিঠের উপর আল্লাহর আরশ অবস্থিত (দাউদ-৪৬৪৮); আবু তালহা বাইরে থাকাকালীন তার এক অসুস্থ্য শিশুপুত্র মারা যায়, ঘরে ফিরে এলে স্ত্রী তাকে রাতের খাবার খেতে দেন ও তার সাথে যৌনমিলন শেষে স্বামীকে বলেন যে, শিশুটি মারা গেছে তাকে দাফন করে এসো (বুখারী-৫০৬৫); আযান হলে শয়তান ঐ স্থান থেকে এতো দ্রম্নত পালায় যে, তার পেছনের রাস্তা দিতে বাতাস বের হয়ে যায় (দাউদ-৫১৬)’’।

কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য বাংলাদেশে বর্তমানে অসংখ্য মাদ্রাসা ও অগণিত মুফতি-আলেম থাকলেও, উপরের হাদিসগুলোর যৌক্তিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা প্রদান করেননি আমাদের আলেম সমাজ। যাতে অন্তত সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গ বুঝতে পারে পবিত্র ইসলাম সম্পর্কে। তাহলে তাদের কাছে সাধারণ বাংলাদেশীর প্রশ্ন, যদি ড. উইলিয়াম ক্যাম্পবেল কিংবা ড. জাকির নায়েকের মতো যৌক্তিক ব্যাখ্যা না দিতে পারেন ইসলামের, তবে দেশে মাদ্রাসাগুলো রেখে কোটি টাকার অপচয় কেন এ গরিব দেশে?

ছবি
সেকশনঃ সাম্প্রতিক বিষয়
লিখেছেনঃ ড. লজিক্যাল বাঙালি তারিখঃ 05/06/2013
সর্বমোট 4603 বার পঠিত
ফেসবুকের মাধ্যমে কমেন্ট করুণ

সার্চ

সর্বোচ্চ মন্তব্যকৃত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন