বন্ধন
মোঃ এনামুল হক
পর্ব ৮
***************************************
হঠাৎ করে আসিফ সাম্মীকে নিয়ে আলমের বাসায় উঠে। মোতালীব সাহেব অসুস্থ ছিলেন। আসিফ সাম্মীকে বলেন সালাম করার জন্য। সে সালাম করে না। হঠাৎ করে আসিফ সাম্মীকে নিয়ে আলমের বাসায় উঠে। মোতালীব সাহেব অসুস্থ ছিলেন। আসিফ সাম্মীকে বলেন সালাম করার জন্য। সে সালাম করে না। বলল
অসুস্থ নানা রোগচীবাণু আছে। আমি অসুস্থ হয়ে পড়বো। আর অসিস্থ হলে আমার সবকিছু বন্ধ হয়ে যাবে। পার্টি টার্টি করতে পারবো অসুস্থ নানা রোগচীবাণু আছে। আমি অসুস্থ হয়ে পড়বো। আর অসিস্থ হলে আমার সবকিছু বন্ধ হয়ে যাবে। পার্টি টার্টি করতে পারবো না।
সাম্মী করছোটা কি ?
দেখো তোমার বাবা আমি তো মানা করছি না। আর ভাবী আপনি কেন এসব জঞ্জাল ঘরে রেখেছেন। ঘরটাকে দূষিত করছেন। বাবুটাকে রোগে মারছেন।
নীলিমা বললেন
ছোটবেলা ধর্মশিক্ষা বইয়ে নিশ্চয় পড়েছো যে মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত। আর বাবা হলেন বেহেশ্তের দরজা। কথা বলতে বলতে তিনি মোতালেব আর আমেনাকে সালাম করে দাড়ালেন। সাম্মী বলল
এটা নিজের মা বাবার জন্য। ইনারা শ্বশুড়।শ্বাশুড়ি। তাদের বেলা হবে কেন?
এই হচ্ছে আমাদের সমস্যা। কেননা নিজের মা বাবার কথা আমরা ভাবী। কিন্তু যে পুরুষের পরিচয়ে আমার পরিচয়, যে আমার সকল দায়িত্ব নিয়েছে সে পুরুষের পরিবারের দায়িত্ব কেন আমি নিতে পারবো না।
আরে ভাবী নিজে বাঁচলে বাপের নাম হবে।
বিয়ের পর আসল পরিচয় হলো স্বামী। একনামে আসতে হয় চৌকাঠের ভেতরে আর একনামে বের হতে হয়। তবে না ঘরের বৌয়ের আসল মর্যাদা। যা করেছেন আমার মা চাচীরা।
ছোটলোকের বাচ্ছাকে বলেছিলাম আসবো না। আমাকে ডেকে নিয়ে এলো। এখন নীতিবাক্য শুনাচ্ছে।
আমি আমার মা বাবা চাচা চাচী কারো কাছ থেকে এমন শিক্ষা পাই নি যে স্বামীকে গালাগাল করবো। ধনীর দুলালিরা কত কিছু করে।
এই ছোটলোকের বাচ্ছা তোদের এদের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে হবে। চল এখান থেকে।
পরিবারের বন্ধনের কাছে সে এসেছে।
পরিবার। এটা পরিবার।
একটা বেহেস্তের কারখানা।
দোযখ।
আচার আচরণ আর দায়িত্বের বন্ধন। হারানোর ভয় নেই।
একটা নোংরা পরিবেশ।
বিশ্বাসের পরিবেশ।
রোগ জীবানুর কারখানা।
বন্ধনের বাধন।
চল এখান থেকে ।
মা বাবা যা শিখিয়েছে তাই শিখবে। শোন স্বামীকে যে মেয়ে অবহেলা করে সে কখনো জান্নাত পাবে না।
অদৃৃশ্য কে দিয়ে কি হবে ?
ঈমান আনো দৃশ্যত্ব দেখতে পারবে। আর মা বাবার মৃত্যুর পর যদি মা বাবার মতো খেদমত করতে চাও তবে আপন চাচা চাচীর সাথে সদব্যবহার করো। আমার কথা না। হাদীসের কথা।
হাদীস জানার দরকার নেই। আমার বর্তমান প্রয়োজন। এখানে এসে আমার সবকিছু নষ্ট হয়ে গেলো।
কবরকে ভাবো দেখবে দুনিয়া অন্ধকার। একদিন তুমিও বুঝবে মা হবার পর। যখন তোমার সন্তানকে তোমার সামনে তোমার সন্তানের বউ ছোটলোকের বাচ্ছা বলে গালি দিলে কেমন লাগে।
ঐ কালচারে বড় করবো না। আমার মা বাবা যেভাবে আমাকে শিক্ষা দিয়েছে আমিও তাকে শিক্ষা দেবো।
তোমার মা বাবা তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন যে বৃদ্ধ মানুষের সমাজে কোন দাম নেই। এরা খাবারখায় আর ঘর নোংরা করে। এদেরকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দাও। তাই না।
হ্যাঁ। আমিও তাই শিক্ষা দেবো।
তাই দেবে। ভেবে বলছো তো।
হ্যাঁ।
তারমানে তোমরা যখন বৃদ্ধ হবে তখন তোমাদের সন্তান তোমাদেরকে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসবে।
হ্যাঁ। না। মানে।
দুনিয়ার বিচার দুনিয়ায় হয়। তোমার মুখ থেকে এই কথাটা শুনতে চাইছিলাম।
সাম্মী আর কোন কথা না বলে চলে গেলো। বাহিরে গিয়ে অপেক্ষা করছে। নীলিমা বললেন
যখন কোন বিপদে পড়বে প্রথমে পরিবারের সদস্যদের কাছে এসো। সমস্যা সমাধান হবে। আর কোথাও হবে না।
আসি ভাবী।
আসিফ চলে গেলো। মোতালীব বললেন
বউ মা খুব সুন্দর কথাগুলো বলেছো।
বাবা আমাকে ক্ষমা করবেন।
আরে মা যে কথা আমি আর আমার স্ত্রী বলার কথা সে কথা তুমি বলেছো। দাদুভাই কোথায়।
আছে বাবা ঘুমুচ্ছে।
আরে আমি খেলবো কখন।
আপনার শরীর খারাপ এ অবস্থায় না খেললে হয় না।
আরে বৌমা ও কিছু না সেরে যাবে। তুমি আর তোমার শ্বাশুড়ি যে সেবা করছো তাতে ভাল হতে সময় লাগবে না।
বন্ধন
মোঃ এনামুল হক
পর্ব ৯
****************************************************
সাম্মী পুত্র সন্তানের মা হন। আর নীলিমা পুত্র আর কণ্যা সন্তানের জন্ম দেন। মোতালীব সাহেব নাতিনাতনিকে নিয়ে সু্ন্দর দিন কাটাতে থাকেন। সাগর যে স্কুলে ভর্তি হয় সেখানে আরিয়ান ও ভর্তি হয়। এরপর তন্নীও ভর্তি হয়।
কলিং বেলের শব্দে সাম্মী বাস্তবে ফিরে আসেন। আরিয়ানেন আয়া এসেছে। তার কাছে তার বসবাস। সাম্মী পার্টিতে যাবে বলে রেডি হলেন। কিছুক্ষণ পর আসিফ আসবে। সাম্মীকে নিয়ে বের হবে। আসিফ ফোন করলো। ফোন পেয়ে সাম্মী নেমে এলো। দুজনে পার্টির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন।
মোতালিব নাতি আর নাতনির সাথে কথা বলছেন। কেননা এইমাত্র তাদের বাংলা শিক্ষক পড়িয়ে গিয়েছেন। বিকেলে আরবী শিক্ষক আসবেন। মোতালিব বললেন
দাদু ভাই দাদুমনি পড়া শেষ।
হ্যাঁ দাদু।
আজ কি শিখলে দাদুভাই।
দাদু পড়ার কথা বাদ দাও। তোমাদের কথা বলো। গ্রামের কথাবলো। স্কুলের টিচার রা বলেন গ্রাম নাকি অনেক সুন্দর।
সুন্দর মানে। অসম্ভব সুন্দর।
কই একদিনতো দেখাতে নিয়ে গেলে না।
যাবো। এবার তোমাদের স্কুলের ছুটিতে বেড়াতে যাবো। এখন গেলে স্কুলের ক্ষতি হবে।
সত্যি যাবে তো।
যাবো।এবার তোমাদের পরীক্ষা নেবো।
কি পরীক্ষা দাদু ?
গতকাল তোমাদের কি শিখিয়েছি। বলতো। যে বলতে পারবে তার জন্য চকলেট আছে।
সাগর বলল
আমি বলতে পারবো।
তন্নী মনি।
আমিও পারবো।
তাহলে তন্নী মনি বলো।
গুরুজনে কর নতি। অর্থাৎ গুরুজনকে সম্মান করতে হবে। রাস্তায় বড়দের সাথে দেখা হলে সম্মান করতে হবে। তাদের সালাম দিতে হবে। বৃদ্ধ কাউকে দেখলে চলতে সাহায্যে করতে হবে। অসহায়কে সহায়তা করতে হবে। অন্ধকে পথ চলতে সহায়তা করতে হবে।
শিক্ষককে সম্মান করতে হবে। কেননা শিক্ষকের ঋণ কখনো শোধ করা সম্ভব নয়। মা বাবার সাথে ভাল ব্যবহার করতে হবে। তাদের সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করা যাবে না।বৃদ্ধ বয়সে তাদের দেখা শুনা করতে হবে। এমন আচরণ বা কাজ করবো না যাতে মা বাবার মনে কষ্ট লাগে।
ছোটদের সাথে ভাল ব্যবহার করবো। তাদের সাথে কোন খারাপ আচরন করবো না। তাদেরকে স্নেহ করবো। সম্মান করবো।
প্রতিবেশির সাথে কোন খারাপ আচরণ করবো না। তাদের কষ্ট দেবো না। কোন কাজে যেন প্রতিবেশির কষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ্যে রাখিবো। সকলে্ সাথে মিলেমিশে চলবো।
ইয়া আমরা পেরেছি দাদু ভাই। আমাদের চকলেট দাও।
এভাবে নৈতিক শিক্ষার মাঝে আনন্দে কাটতে থাকে মোতালিব আর আমেনা বেগমের দিন।
মোতালীব আর আমেনা বেগম মাঝে মধ্যে বেড়িয়ে পড়েন। আলম জানেন না তারা কোথায় যান। আলম কাজে বের হলেন। কি মনে করে আবার বাসায় আসছেন। দেখলেন দুজনে বের হচ্ছেন। তাদের দেখে তিনি আড়ালে চলে গেলেন। তারা বের হলেন। আলম ঘরে এসে বললেন
মা বাবা কোথায় যাচ্ছেন।
জানি না। প্রতি সপ্তাহে এই দিন কোথায় যান। তুমি দেখো না কোথায় যান।
এটা উনাদের ব্যাপার। আমার কৌতুহল হয়ে লাভ কি?
আমি জানি বাবা। সাগর বললো।
কোথায় যান।
পার্কে।
মানে।
সবুজ দেখবেন বলে পার্কে যান।
বাবা তোমার স্কুল কবে বন্ধ।
পড়শুদিন।
তাহলে পড়শুদিন আমরা গ্রামে যাবো।
সত্যি।
হ্যাঁ বাবা সত্যি।
সাগর খুশিতে নাচতে লাগলো সাথে তন্নী।
নীলিমা বলল
থাকবে কোথায় ?
আমার চাচাতো ভাই কাশেমের বাসায়।
এতোদিন পরে।
ও ব্যবসা নিয়ে ব্যাস্ত তাই আসতে পারে না। আর তার সাথে আমার ব্যবসা। সমস্যা কোথায়। যোগাযোগ আছে। এবার না হয় আরো বাড়বে।
হলো
বন্ধন
মোঃ এনামুল হক
পর্ব ১০
******************************************************
মোতালীব সাহেব ও আমেনা বেগম ফিরে আসার পর সাগর আর তন্নী আসে তাদের কাছে। সাগর বলে
দাদু আজও পার্কে গিয়েছো।
হ্যাঁ দাদু।
আমাদের নিয়ে গেলে না।
যাবো। তবে পার্কে নয়। গ্রামে যাবো। সেখানে তোমাদের অনেক কিছু দেখাবো।
আমরা গ্রামে যাবো। বাবা বলেছেন।
কবে যাচ্ছি।
পড়শু।
আমেনা বললেন
সত্যি দাদুভাই।
হ্যাঁ দাদী। পরশু দিন থেকে আমাদের স্কুল বন্ধ।
তোমার বাংলা আর আরবী শিক্ষকের কাছ থেকে ছুটিনিতে হবে। কি বলো ?
জ্বী দাদু।
বিকেলবেলা পড়তে বসে বাংলা আর আরবী শিক্ষকের কাছ থেকে ছুটি নিলেন। বেড়াতে যাবেন। গ্রামিন পরিবেশ উপভোগ করার জন্য।
আরিয়ান বায়না ধরেছে গ্রামে যাবে। কেননা সাগর আর তন্নী তাদের মা বাবা দাদা দাদী মিলে গ্রামে যাচ্ছেন বেড়াতে। কেননা স্কুলে গিয়ে সাগর আরিয়ানের সাথে দেখা করে। সাগরের চাচা আসিফ সাহেব তাদের দুজনকে পরবচয় করে দেন। আরিয়ান সাগরকে ভাইয়্যা বলে ডাকে। সাগর আরিয়ানকে বলল
আরিয়ান আমরা গ্রামে যাচ্ছি।
বেড়াতে।
হ্যাঁ। স্যাররা বললেন শুন নি। বাংলাদেশকে চিনতে হলে গ্রামে যেতে হবে।
তুমি খুব ভাগ্যবান। তোমার মা বাবা দাদা দাদী খুব ভাল। তোমার মনের আশা পূরণ করেন। আর আমার মা বাবা সারাদিন পার্টি অফিস এসব নিয়ে থাকেন।
চাচাকে বলো তোমাকে নিয়ে যেতে।
বলবো।
আসি তাহলে।
এসো।
বাসায় ফিরে সাম্মীকে অস্থির করে তুলেছে। সাম্মী ধমক দিয়ে তাকে শান্ত করেছেন। আসিফ আসার পর বলল
আচ্ছা তোমার ভাইয়ের ছেলেমেয়েদের কি কোন কান্ড জ্ঞান নেই।
কি হয়েছে?
তোমার ছেলে বায়না ধরেছে গ্রামে যাবে। সাগর আর তন্নী যাচ্ছে গ্রামে। তাদের মাবাবা আর বুড়ো বুড়ির সাথে।
সাম্মী সম্মান দিয়ে কথা বলো। উনারা আমার মা বাবা।
আরে রাখো তো। মা বাবা। আমার মা বাবাকে আমার কাছে রাখি নি। তোমাকে রেখেছি। আর তোমার মা বাবা। ডেট এক্সপেয়ার। শোন গ্রাম টেরাম দেখানো আর বেড়ানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
জানি।
নোংরা কাদা এসব দেখার বিষয় হলো। বলতো বাহিরে যাবে। লন্ডন, আমেরিকা, সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, এসব জায়গায় যাবে। দেখার কত কিছু আছে।
শেকড়। গ্রামটা হচ্ছে আমাদের সবার শেকড়। ওখা থেকে আমাদের সবকিছুর অস্থিত।
অশিক্ষিতের কারখানা। ধুলো কাদামাটি আর নোংরা পরিবেশের ছড়াছড়ি।
ঐ অশিক্ষিতের কারণে আমাদের মতো ততাকতিত মডার্ণ পরিবারগুলো খেয়েদেয়ে বেঁচে আছে। মাথার ঘাম পায় ফেলে ওরা ফসল ফলায়। আর তা দিয়ে বেঁচে আছে গোটা দেশ।
আমি লেখক নই কবি নই। কাজেই ওসব আমার দেখার দরকার নেই।
আরিয়া উঠে গিয়েছে। সে বলল
বাবা আমি গ্রামে যাবো।
বাবা আমার সময় নেই।
মা কে বললে মায়ের সময় নেই। তোমাকে বললে তোমার সময় নেই। তাহলে কার সময় হবে।
বাবা আমরা পার্টি ক্লায়েন্ট এগুলোতে জয়েন্ট না করলে ব্যবসা করা হবে না।
সবসময় করতে হয়। কতদিন যাওনা। তারপরও আমাকে সময় দাও না।
তর্ক করো না আরিয়ান। বললেন সাম্মী। দেখেছো তোমার ছোটলোক ভাইয়ের বাচ্ছাদের সাথে মিলে কেমন নষ্ট হতে চলেছে।
ওদেরকে এর মধ্যে টানছো কেন।?
বেশ করেছি।কতবার বলেছিলাম ওদের সাথে মিশতে দিও না। তাহলে ওরা ওকে নষ্ট করে ফেলবে। হলো তো এবার।
কথায় কথায় ছোটলোক বলে গালিগালাজ করবো কেন?
আমার খাবে আমার পড়বে আবার আমার আমার কাছে কৈফিয়ত।
কেন এমন করছো ।
তোর মতো ছোটলোক কে বিয়ে করে আমার লাইফটা বরবাদ করে ফেললাম।
ছোটলোকের বাচ্ছি সহ্যের একটা সীমা আছে। কথায় কথায়ছোট লোক ডাকিস। আমার ভাই ভাবী মা বাবা আর তাদের সন্তান তোর খায় নি। তোর পড়ে নি। সুতরাং ছোটলোকের বাচ্ছা তুই।
বা বাবা। আমার বিড়াল আমাকে বলে মিউ।
আরে অভদ্রের বাচ্ছা তোকে ভালবেসেছিলাম বলে আমার জীবনটা আজ নষ্ট। মা বাবার আদর্শ থেকে সরে এসে জীবনের সবকিছু ভুলে গিয়েছি। আর কি চাস তুই আমার কাছে।
এই ছোটলোকের বাচ্ছা আমাকে তুই তুই করে বলছিস কেন। আমার সন্তানের সামনে।
কেন আমার মা বাবা ভাই ভাবীর সামনে তুই করে বলেছিলি তখন আমার কেমন লেগেছিলো। আজ তোর যেমন লাগছে তেমনি আমার লাগতো।
ইতরের বাচ্ছা।
তুই ইতরের বাচ্ছা। তোর চৌদ্দগোষ্টি ইতরের বাচ্ছা। এতোদিন কিছু বলি নি। এখন থেকে সমানে সমান হবে।
কি করবি তুই?
তুই যেমন আচরণ করবি আমিও করবো। তুই করে আমাকে বললে আমিও বলবো। শরীরের চামড়া ফেলে দিলাম।
ষাড়ের আবার চামড়া হয় নাকি।
এবার দেখবি গন্ডারের চামড়া কেমন হয়।
আরিয়া তাদের ঝগড়া শুনে নিজের রুমে চলে যায়। ছোটছেলে প্রায় তাদের ঝগড়ার মধ্যে পড়তে হয়। সবসময় দেখে আসছে তাদের মাঝে সম্মান নেই। যে যেভাবে পারছে সেভাবে কথা বলছে। আরিয়ানের আয়া বাসায় ছিলো। সে এসে বলল
আপনারা ঝগড়া থামাবেন। বাচ্ছা একটা ছেলের সামনে আপনারা ঝগড়া করছেন। লজ্জাবোধ নেই।
এই ছোটলোকের বাচ্চা তুই আবার কি বলিস।?
যা সত্য তা বলছি। আমি আপনাদের চাকরী ছেড়ে দিলাম। আপনাদের বাচ্ছা আপনারা সামলাবেন। বাচ্চাটার আমাকে দরকার নয় দরকার তার একটা সুন্দর পরিবারের। একটা পারিবারিক বন্ধনের। যেখানে মা বাবা দাদা দাদী ভাই বোনের ভালবাসা থাকবে।
এসব কথা তোকে কে বলেছে?
আরিয়ান। কারণ সাগর আর তন্নী তার চাচাতো ভাই বোন। ওরা মা বাবা ভাই বোন দাদাদাদী নিয়ে একটা পারিবারিক বন্ধনে রয়েছে। যে বন্ধন ছিন্ন করা কোন সন্তানের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু আপনাদের মতো পরিবারের বন্ধনযে কঁন সন্তান যে কোন সময় পরিত্যাগ করতে বাধ্য।
জ্ঞান না দিলেও চলবে।
পারলে ছেলেকে সুস্থ পরিবেষ দিন নয়তো ছেলেকে হারাতে হবে। আসি।
আয়া চলে গেলো। যাবার সময় আরিযানকে দেখে চলে গেলো। সাম্মৌ আসিফকে বলল
দেখেছিস তোর জন্য আয়াটা চলে গেলো।
আমার জন্য না তোর জন্য। সারাদিন তো ছেলেদের সঙ্গ ছাড়া তোর মন ভরে না।
তুই তো মেয়ে ছাড়া কিছু বুঝিস না।
তুই ছেলেদের নিয়ে থাকলে আমি মেয়ে নিয়ে থাকলে সমস্যা কোথায়।
বাসায় নিয়ে এসে ফুর্তি করবো।
আমিও করবো।
তোর বাসা না।
আমারও।
এভাবে তাদের ঝগড়া চলতে লাগলো। একজন আরেকজনের চরিত্র নিয়ে কথা বলতে থাকে।
বেলকনিতে দাড়িয়ে আরিয়ান বাহিরের পরিবেশ দেখছে। হঠাৎ করে দেখতে পেলো তার বয়সি একটি ছেলে সিগারেট টানতে টানতে তাদের বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছে। তাকে বলল
এই ছেলে সিগারেট খাচ্ছ কেন?
মনের জ্বালা মিটাতে।
মানে।
মনে কষ্ট থাকলে তা ভুলা যায়। তোমার কষ্ট থাকলে খেয়ে নাও।
আরিয়ানের মনে কষ্ট রয়েছে। বুঝ হবার পর থেকে সে তার মাবাবাকে ঝগড়া করতে দেখছে। মা বাবা তাকে সময় দেন না। আর আজ একেকজন একেকভাবে একজনকে আক্রমন করছে। তারমনে পড়লো তার বাবা রুমেসিগারেট খান।মা বাবা দুজনে মিলে সিগারেট খান। আরিয়ান তাদের রুমে ঢুকলো। খুজতে খুজতে সিগারেট পেলো। পুরু প্যাকেট তার কাছে নিয়ে এলো। চলল সিগারেটের পালা।