ব্যাকগ্রাউন্ড

ফেইসবুকে!

শেখ মুজিব-সম্পর্কে কটূক্তি করলেই বড় হওয়া যায় না



শেখ মুজিব-সম্পর্কে কটূক্তি করলেই বড় হওয়া যায় না

সাইয়িদ রফিকুল হক

 
আজকাল অনেকে একটু সুযোগ পেলেই শেখ মুজিবকে নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া করে থাকে। হ্যাঁ, আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথাই বলছি। এরা মনে করে থাকে: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বুঝি তাদের সমগোত্রীয় লোক! তাদের যে লেভেল বা তারা যে লেভেলে চলাফেরা করে থাকে—তাঁকে তারা সেরকমই মনে করে থাকে! সেখান থেকে ভালোকিছু হওয়া সম্ভবও নয়। আজকাল অনেকে শর্টকার্টে বড় কিছু হওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে টার্গেট করে সবসময় তাঁকে নানাকারণে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে থাকে। তারা মনে করে থাকে—এভাবে অগ্রসর হলেই বুঝি সে একচান্সে খুব বড় হয়ে যাবে! আসলে, তা নয়। এরা সারাজীবন শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সমালোচনা কিংবা নগ্নসমালোচনা করেও কিছুই করতে পারবে না। বরং নিজের ভিতরের দুর্গন্ধটাকে আরও প্রকটভাবে বিকশিত ও প্রকাশিত করতে থাকবে। কারও নগ্নসমালোচনায় কিংবা গালিতে শেখ মুজিব ছোট হয়ে যাবেন না। কারণ, তিনি ইতিহাসের বরপুত্র। আর তাঁকে ঘিরেই এই স্বাধীন বাংলার ও সমগ্র বাঙালি-জাতির সুদূরপ্রসারী ইতিহাস নির্মিত হয়েছে। ইতিহাস ধন্য হয়েছে তাঁর নামে। আর তাঁর নামেই খুলে যায় ইতিহাসের সকল দরজা।
 
বড় হওয়ার অনেক পথ আছে। আর বড় হওয়ার জন্য চাই—মনের দিক থেকে বড়মানুষিভাব। তবেই না বড় হওয়া সম্ভব। কাউকে আক্রমণ করেই যদি বড় হওয়া যেত—তাইলে, দুনিয়ার সব মানুষ এতোদিনে বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব বা মনীষীদের পিছনে আদাজল খেয়ে লাগতো। বড় হতে হলে সবার আগে বড়ধরনের মনমানসিকতা গড়ে তোলা অপরিহার্য। অন্যথায়, আপনি কখনো বড় হতে পারবেন না। বড় হওয়া কি এতোই সহজ নাকি? সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিস্টটল, শেক্সপীয়ার, রবীন্দ্রনাথ, নিউটন, আইনস্টাইন, কাল মার্কস, লেনিন, চার্চিল, মহাত্মা গান্ধী ও আমাদের বঙ্গবন্ধু নিজের প্রতিভাবলে বিশ্ববিখ্যাত হয়েছেন। ইতিহাসে তাঁদের অবস্থান অনড় ও অটল। সামান্য সমালোচনা, নগ্নসমালোচনা কিংবা কারও দুই-চারটা গালিতে এঁদের ভিত্তি-মহীরুহ ও রাজকীয় সিংহাসন কখনো উল্টে যাবে না। বরং যারা কোনোকিছু না-বুঝে কিংবা বুঝেও শেখ মুজিবকে ছোট করার অপচেষ্টা করে যাচ্ছে—তাদের গণেশ উল্টে যাবে, এবং এরা নিজেরা আরও ছোট হতে থাকবে। আর এই পৃথিবীর মানবজাতির ইতিহাস তা-ই বলে।
 
স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরও এই জাতির একটা অংশ নিজের সমালোচনা না করে জাতির পিতার সমালোচনায় ব্যস্ত! কতটা অকৃতজ্ঞ ও নিষ্ঠুর হলে এটি করা সম্ভব! আমি বলছি না যে, বঙ্গবন্ধু সমালোচনার উর্ধ্বে একজন মানুষ। তিনি রাজনীতি করেছেন এবং কিছুদিন দেশও পরিচালনা করেছেন। এজন্য তাঁর ভুলত্রুটি হওয়াটা খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। কিন্তু সেজন্য গঠনমূলক সমালোচনা হতে পারে। তাই বলে, জাতির পিতার জন্য নগ্নসমালোচনার দরজা খুলে আরও কাউকে এইসব অযাচিত ও অনভিপ্রেত দুষ্কর্মে আহ্বান করাটা অত্যন্ত অশালীন ও ধৃষ্টতা। আপনি মানেন আর না-মানেন—বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আমাদের জাতির পিতা। তাঁর সম্পর্কে অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ শব্দ ও বাক্য ব্যবহার করাটা বেআদবি। মনে রাখবেন: ব্যক্তি শেখ মুজিবের সমালোচনা করাটা পাপ, অপরাধ আর বেআদবি। আপনি তাঁর রাজনীতি ও শাসনের গঠনমূলক সমালোচনা করুন। এতে কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু কখনো ব্যক্তিগত আক্রোশে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশে, নিজেদের স্বার্থচরিতার্থ করার মানসে, আর তাঁকে খাটো করার অভিলাষে সমালোচনা করবেন না।
পাকিস্তান-আমলে রবীন্দ্রনাথের নাম মুছে ফেলার জন্য সামরিকজান্তারা কতরকম জঘন্য ও শয়তানী চক্রান্ত করেছিল! কিন্তু বাঙালির কবিকে কোনো চক্রান্তকারী শতচেষ্টা করেও মানুষের হৃদয় থেকে মুছে ফেলতে পারেনি। বরং এই পাপীরা মানুষের হৃদয় থেকে বিলীন হয়ে গেছে। মানুষ এখনও সেইসব সামরিকজান্তাদের ঘৃণা করে। শেখ মুজিবকেও একইভাবে আক্রমণ করা হয়েছে। কিন্তু তাঁর ভিত্তি এতোটাই শক্ত ছিল যে, বছরের-পর-বছর কারও-কারও প্ররোচনায় তাঁর নামের সবকিছু মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র করেও কেউ সফল হয়নি। শেখ মুজিব সামান্য মোমবাতি কিংবা কোরোসিনের প্রদীপ নয় যে, তাঁকে একফুঁয়ে মুছে ফেলা যাবে। তিনিই বাঙালির স্বাধীনতার সূর্য।
 
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অত্যন্ত সচ্ছল ও ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান ছিলেন। তিনি রাজনীতি করেছেন দেশ, মাটি ও মানুষের জন্য। এখনকার অনেকের মতো দুই-চার পয়সা কামানোর কিংবা রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার জন্য রাজনীতিতে নাম লেখাননি। ইতিহাস তাঁকে রাজনীতিতে টেনে এনেছে। আবারও বলছি: কারণ তিনি ইতিহাসের বরপুত্র। তিনি ইতিহাসের সন্তান। এই বাঙালির ইতিহাস থেকে শেখ মুজিবকে মুছে ফেলা বা বাদ দেওয়া কারও পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদের দেশে সেই অপচেষ্টাও কম করা হয়নি। বাঙালির ইতিহাসে দুই সামরিকজান্তার (জিয়াউর রহমান ও হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ) আমলে শেখ মুজিব ছিলেন একেবারে নিষিদ্ধ, অপাংক্তেয়, উপেক্ষিত ও তাদের চরম রোষানলের শিকার। তবুও তারা শেখ মুজিবকে মানুষের হৃদয় থেকে মুছে ফেলতে পারেনি। তাঁর স্থান যে মানুষের হৃদয়। আর আপনি এখন বসে-বসে তাঁর বিরুদ্ধে ‘অতিসস্তা বা ফেসবুকীয় নোংরা লেখা’ লিখে তাঁকে আঘাত করার চেষ্টা করছেন! আপনাদের মুরোদ আমার জানা আছে। একটি আদর্শ প্রবন্ধ বা নিবন্ধ লেখার যোগ্যতাও আপনাদের নাই। শুধু শেখ মুজিবের বিরোধিতা করতে শিখেছেন বংশপরম্পরায়।
 
আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমালোচনা করতেন ডক্টর আহমেদ শরীফের মতো জ্ঞানতাপস ব্যক্তিবর্গ। তাঁদের সমালোচনাও ছিল জ্ঞানগর্ভ। আর এখন, একশ্রেণীর নিকৃষ্ট, জ্ঞানহীন ও নিম্নস্তরের গদ্য-পদ্য লিখিয়েরা আসে শেখ মুজিবের সমালোচনা করতে!
 
১৯৭১ সালে, সব বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়নি। একটা বিশেষশ্রেণী তখন আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। আর এদের বংশধররা তা এখনও করছে। এরা এখনও শেখ মুজিবকে সহ্য করতে পারে না। এটা তাদের হীনমানসিকতা। ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কোনো অপরাধে দোষী নন। তিনি জাতির পিতা। তাঁর কোনো ভুল হয়ে থাকলে পুত্র হিসাবে তা আমাদের ক্ষমাসুন্দরদৃষ্টিতে দেখতে হবে। কিন্তু এরা নিজের দীনতা ও হীনমন্যতাকে বঙ্গবন্ধুর ঘাড়ে চাপানোর অপচেষ্টা ও অপকৌশল করছে। এই দেশে এখনও অনেক রাজাকার আছে। আপনাদের মনে আছে? ১৯৭১ সালে, গোলাম আযম সগর্বে বলেছিল, তার অধীনে ৬০ হাজার রাজাকার আছে! এরা নাকি ‘মুক্তিবাহিনী’কে নিশ্চিহ্ন করে দিবে! এরা সেই চেষ্টা এখনও করছে।
 
মূর্খতার একটা সীমারেখা থাকে। সবজায়গায়-সবখানে একইকথা, একইসুর আর একইচিন্তা সবসময় গ্রহণযোগ্য হয় না। যিনি বাঙালি-জাতিকে নিজের জীবন-উৎসর্গ করে দেশ ও জাতিকে চিরতরে শাপমুক্ত ও রাহুমুক্ত করেছেন—আজ তাঁকেই সমালোচনা! এই বিপথগামীশ্রেণীটির বোধোদয় হোক। এদের হৃদয় আলোকিত হোক অনন্ত জ্ঞানের ছোঁওয়ায়। এরা মানুষ হোক।
 
দেশে সমালোচনা করার মতো কতকিছু রয়েছে। আপনি যুক্তি দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, আর মেধা খাটিয়ে তার গঠনমূলক সমালোচনা করুন। আমরাও তার পাশে এসে দাঁড়াবো। আমরা তো এই দেশের মঙ্গলই চাই। আর আমাদের জাতির পিতা দেশ, জাতি ও মানুষের জন্য নিজের জীবন-উৎসর্গ করে মাঙ্গোলিক কাজ করে গিয়েছেন। আজকাল অযথা কেন তাঁর এতো সমালোচনা করছেন?
 
একশ্রেণীর লোক ইনিয়েবিনিয়ে, প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে, প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ও নানান অপকৌশলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমালোচনা করে থাকে। আবার অনেকে শেখ হাসিনার ওপর রাগ ঝাড়তে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে আক্রমণ করে বসে! এগুলো মূর্খতা। শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধু কখনো এক নন। আমাদের বঙ্গবন্ধুর স্থান সবার উপরে। মনে রাখবেন: বড়মানুষের সমালোচনা করতে গেলে নিজেও বড় হতে হয়। ফেসবুকের ন্যায় সামান্য একটা পোস্ট দিয়ে বঙ্গবন্ধুর মতো বিশাল মাপের নেতার সমালোচনা করা যায় না। ‘জাতীয় বীর’ শেখ মুজিবের সমালোচনা মানে তাঁকে কটাক্ষ করে নয়। আরও একশ্রেণীর বেকুব আছে—এরা আওয়ামীলীগকে আঘাত করতে গিয়ে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করার অপচেষ্টা করে থাকে। এরা অকাট মূর্খ। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির নমস্য। তাঁদের আঘাত করার অধিকার কারও নাই।
 
অনেকে গালি দিয়ে বড় হতে চায়। কিন্তু গালি দিয়ে কি বড় হওয়া যায়? শেখ মুজিবকে গালি দিলেই বড় হওয়া যায় না। শেখ মুজিব-সম্পর্কে কটূক্তি করলেই বড় হওয়া যায় না। আর শেখ মুজিবকে নগ্নভাবে সমালোচনা করেও বড় হওয়া যায় না। বড় হওয়ার জন্য প্রয়োজন আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো দেশপ্রেমের মনোবল, মহানুভবতা, সাহসিকতা, ক্ষমাসুন্দরদৃষ্টি আর সর্বোপরি ত্যাগী-চরিত্র।
 
সকলের মধ্যে শুভবুদ্ধির উদয় হোক।
 
 
 
সাইয়িদ রফিকুল হক
২২/১২/২০১৯

ছবি
সেকশনঃ ইতিহাস
লিখেছেনঃ সাইয়িদ রফিকুল হক১ তারিখঃ 23/12/2019
সর্বমোট 2361 বার পঠিত
ফেসবুকের মাধ্যমে কমেন্ট করুণ

সার্চ

সর্বোচ্চ মন্তব্যকৃত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন