ভালবাসার ঘর
মোঃ এনামুল হক
ত্ং ২৮/১০/১৭ ইং
রাত বারোটা। কলিং বেলের শব্দে মিতু দরজা খুলল। আকাশ এসেছে। ইদানিং আকাশ দেরী করে আসে। যাহাতে খেয়ে সে ঘুমিয়ে পড়ে। আকাশ কে মিতু বলল
দেরি হলো যে।
কেন খুশি হও নি।
আগে তো এমন করতে না।
করি নি বলে করবো না এমন তো কথা ছিল না।
ভালভাবে কথা বলো।
আমি এখন ঘুমাবো।
আকাশ ঘুমিয়ে পড়ার ভান করে নিরব হয়ে শুয়ে পড়লো। আকাশ চলে গেছে পিছনের স্মৃতিতে।
নতুন বিয়ে হয়েছে দুজনের। একজনের প্রতি আরেকজনের ভালবাসার টান অন্যরকম। মিতু বলার সাথে সাথে সে তার ভালবাসার জন্য কত না করেছে। ঘুম থেকে দেরি করে উঠা। অফিস মিস দিয়ে বেড়ানো সব করেছে।
আকাশের বোন সীমা। বড়বোন। তার চাচাতো বোন। যার কারণে তার চাকরি। সীমা বাড়িতে এলেন।
আকাশ বাসায় ছিল। সীমা বলল
বেশ সুখে আছিস তাই না।
ভাল আছি আপু।
তা তোমাদের দেখে বোঝা যাচ্ছে।
তা চাকরী করবি না ছেড়ে দিবি।
যাবো।
কবে।
কাল থেকে।
মিতু চা নিয়ে আসলো। সীমা বলল
কি ব্যাপার মিতু। ওকে অফিসে পাঠাও না কেন?
আপনার ভাই যেতে চায় না। আমি রোজ সকালে উঠে ওকে বকাবকি করি।
ভাল আকাশ।
না জেনে আমাকে দোষারোপ করবেন না।
আকাশের মুখ কালো হয়ে গেল। কি বলবে সে ভেবে পাচ্ছে না। সীমা চলে গেল। মিতু আকাশকে জড়িয়ে ধরে বলল
কি হলো তোমার মন খারাপ করলে কেন ?
আপুর কাছে আমাকে খারাপ না করলে হত না।
আরে বাদদাও ওসব। কি থেকে কি বলেছি তা মনে রাখতে হবে। চলো আজ কোথাও থেকে বেড়িয়ে আসি।
আকাশ ছেড়ে দিল। কথামত ওরা বেড়াতে গেল। অফিসে নিয়মিত যেতে থাকলো। মাঝে আবার গ্যাপ করতে থাকে। সীমা কথা বলে এসে।
এসব কি আকাশ। তুই তো এমন ছিলি না। নিয়মিত অফিস করতি। কতদিন আমি রাখবো এভাবে।
আপু আর এমন হবে না।
এর আগেও আরেকবার বলেছিলি এমন। মীতু আসার পর বলল
মীতু তুমি ওকে পাঠাও না কেন?
আমি ওকে ধরে রেখেছি নাকি। আমার কথা শুনে।
শুনবে না কেন।
আমার কথা শুনে। রাতে দেরি করে ঘুমায়। মোবাইলে গেমস ফেইসবুক নিয়ে ব্যস্ত। সকালে উঠবে কখন।
তোমারও কিছু না কিছু দোষ আছে।
আমার দোষ দেখা লাগবে না। আপনার ভাইয়ের দেখেন।
আচ্ছা ঠিক আছে। অফিসে যাবি তো আকাশ।
হ্যাঁ। কাল থেকে সব আগের মতো হবে। তুমি দেখে নিও। তুমি আমাকে আগের মতো করে টেক কেয়ার কর আপু।
ওকে। ভাল থাকিস।
সীমা চলে গেল। আকাশ ভেতরে গেল। মীতু বলল
উনি বারবার আমার দোষ খোঁজেন কেন ?
আর খুঁজবে না।
আমি কারো ধার ধারি না। মনে রাখবে।
আমিও ধারি না। মনে রাখবে কথাটা।
ঝগড়া করবে নাকি।
না প্রয়োজন নেই। তুমি আমার বাবার বাবার বড়। ঝগড়া কে করবে।
মানে।
যা সত্য তাই বললাম।
আমি বাহিরে যাচ্ছি পরে আসবো।
দরকার কি ?
সব বলতে হবে নাকি।
অধিকার আছে।
হারিয়েছো।
আকাশ কথা না বলে বেড়িয়ে পড়লো। তারপর থেকে আকাশ অফিসে নিয়মিত। রাতে দেরি করে ঘুমালেও সে উঠতে পারে। সীমা তাকে তুলে দেয়। কখনো নাস্তা করে যায় কখনো করে না। কোন অভিযোগ করে না।
অফিসে বসে আছে আকাশ। সীমা ফোন করে বলল আসতে। ক্যার্টিনে গেল। বসার পর সীমা বলল
সমস্যা কোথায় ?
কেন?
মীতু মনে হয় আমাকে খারাপ ভাবছে।
কিছু বলেছে।
না।
খেয়েছিস।
না।
নাস্তা কর।
নাস্তা শোষ করে চলে এলো।
অফিসের কাজ শেষ করে দেরিতে বাসায় ফিরলো। মীতু দরজা খোলার পর ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল
আমার আপুকে কি বলেছো।
নালিশ করেছে নাকি।
না।
ওর জন্য আমার পরিবারে সমস্যা। আজ ওকে এমন অপমান করবো।
তাহলে আমি চলে যাবো।
মানে।
আমার বোনকে অপমান করবে। আর আমি তোমাকে নিয়ে থাকবো ভাবলে কি করে ?
আমার চাইতে সে আপন হলো।
হ্যাঁ। তুমি ভালবাসার মানে জানো না। স্বামীর সম্মান কিভাবে রাখতে হবে তা জানো না।
সে জানে।
জানে। জানে বলেই দুলাভাইকে কোনদিন পরিবারের কারো কাছে ছোট করে নি।
সব দোষ আমার।
তোমার মতো বুদ্ধিমান, জ্ঞানি মহিলা যার আছে তার অবস্থা আমার মতো হবে। তার চেয়ে লোকজন হাসাহাসি করার চেয়ে নিজেদের মতো যেভাবে আছি সেভাবে থাকা ভাল।
এভাবে থাকা যায়।
যাবে না কেন। কতজন মানুষ আছে ভালবাসায় ভরপুর। বেশিরভাগ মানুষতো এমন করে চলে। শোন আমার জন্য তোমাকে ভাবতে হবে না। সকালে উঠতে হবে না। খাবার নিয়ে বসে থাকতে হবে না। টেবিলে রেখে দিলে চলবে।
আকাশ ফিরে আসে তার অতীত থেকে।