ব্যাকগ্রাউন্ড

ফেইসবুকে!

চিকিৎসাসেবা

বেসরকারী হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা ঃ অসহায় জনগণের গলার কাঁটা মোঃএনামুল হক ★★★★★★★★★★★★★★★★★★ মানুষ সামাজিক জীব। বেঁচে থাকার জন্য সমাজে মানুষ একে অন্যের উপর নির্ভরশীল। মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদা মানুষ নিজে নিজে মেটাতে পারে না৷ ফলে সমাজ বদ্ধ হয়ে সমাজে বসবাস করতে হয়। পরষ্পর পরষ্পরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে হয়৷ তারপরও আমাদের সমাজ ব্যবস্থা আমাদেরকে আলাদা করে রেখেছে। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত তিনটি ধারায় আমাদের বিভক্ত করে রেখেছে। উচ্চবিত্তদের টাকা আছে। তাই তাদের পকেট থেকে টাকা বের করতে উচ্চবিত্তরা নানারকম পরিসেবা সৃষ্টি করে। মধ্যবিত্তদের গলাকাঁটার ব্যবস্থা থাকে এসব প্রতিষ্ঠানে। আর নিম্নবিত্তদের কথা মাথায় রেখে প্রতারণামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে উচ্চবিত্তরাই৷ যারা লেৎাপড়া করে মনুষ্যত্ব অর্জন না করে পশুত্বকে বরণ করে নেয়। রাজধানীসহ দেশের সব বড় বড় শহরে গড়ে উঠেছে নানারকম প্রতিষ্ঠান। এসকল প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ থাকে জনগণের সেবা করা। সরকার যেমন বলে থাকে আমরা জনগণের সেবা করতে সরকারে এসেছি। জনগণ আমাদের সরকার পরিচালনা করতে পাঠিয়েছে৷ সরকার জনগণের কোন সেবা করবে তা সরকার নিজেও জানে না৷ যোগাযোগ, আইন, শিক্ষা, কৃষি কোনটা করবে তা বলতে পারবে না। সেবা দেয়া আর সেবা গ্রহন করা দুটোর মধ্য ভিন্নতা রয়েছে৷ কিন্তু আমরা তা জেনেও অনেক সময় না জানার ভান করে থাকি৷ যা আমাদের জন্য ক্ষতিক্ষারক। প্রকৃতসেবা থেকে আমরা বঞ্চিত হই। অথচ আমরা জনগণ সরকারের সেবা পরিচালনার জন্য টেক্স দিয়ে থাকি। তারপরও আমরা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত থেকে যাই। মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার মধ্যে চিকিৎসা হচ্ছে একটি৷ রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার রয়েছে৷ আর তা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে৷ কিন্তু সরকার তা কতটুকু নিশ্চিত করছে। সরকারী হসপিটালগুলেতে সময়মতো নার্স নেই, ডাক্তারের অভাব রয়েছে৷ রয়েছে তাদের সুন্দর মানষিকতার অভাব৷ কেননা চিকিৎসার চাইতে তাদের কাছে সময় ক্ষেপন করা মুখ্য হয়ে উঠে৷ আমাদের দেশের মতো এতো ঢালাওভাবে চিকিৎসা কার্যক্রম বিশ্বের কোথাও নেই। আমাদের দেশে চিকিৎসার নামে সরাসরি ডাকাতি চলে৷ চিকিৎসা শুরো করতে পারে সবাই কিন্তু শেষ কবে হবে তা বলতে পারবে না৷ দিনের পর দিন তা ননষ্টপ চলতে থাকে। ডাক্তাররা যদিও শপৎ করে চাকরী যোগ দেন। কিন্তু তারা শপৎ এর কথা একদম ভুলে যান। ভুলে যান জনগণ তাদের সওদাগর। সত্যি আমাদের দেশ বড় বিচিত্র। আমাদের দেশে বিভিন্নরকম চিকিৎসা রয়েছে। এলোপ্যাথিক, হোমিওপ্যাথিক, কবিরাজ, বনাজী, পীরবাবা, নানারকম পদ্ধতি রয়েছে। বাজারে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হরহামেশা মার্কেটে আসছে নানারকম ঔষধ কোম্পানী৷ আর এসব ঔষধ কোম্পানী ডাক্তারদের টার্গেট করে বাজারে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারন করে থাকে। সরকারী হাসপাতালে জনগণের চিকিৎসা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের হাতে। উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্তসহ সকলে সমান চিকিৎসা সেবার সুযোগ সুবিধা পাবে৷ কিন্তু আমরা তা নিশ্চিত করতে পারছে না। জনগণের টাকায় পরিচালিত জনগণের হাসপাতাল সরকারী হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত হয় না। তাদের সময় সুযোগ আর তাদের একত্ববাদের জন্য সাধারণ জনগণ অসহায়ত্ব স্বীকার করে নেয়। সরকারী হাসপাতালের পরিচালকের কোন দায়িত্ববোধ দেখা যায় না। বরং তিনি কখন হাসপাতালে আসেন কখন ভিজিট করেন তা কেউ বলতে পারে না। অদৃশ্য থেকে যায়। সরকারী হাসপাতাল আর কমিউনিটি এবং আরবান হাসপাতালগুলো তৈরি হয়েছে মুলত্ব সকল নাগরিকের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য৷ কিন্তু একশ্রেণী উদাসীন৷ বাকি দুই শ্রেণীর ভরসা সরকারী হাসপাতালগুলো৷ ফলে স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা পেতে সাধারণ জনগণ ছুটে চলেন এসক হাসপাতালে। লম্বা লাইনে দাড়িয়ে টিকিট কাটার জন্য দাঁড়াতে হয়৷ টিকিট হাতে পেয়ে তারপর এন্ট্রি, এরপর ডাক্তারের চেম্বারে। সেখানেও লম্বা লাইন। একজন রোগিকে ডাক্তার সর্বোচ্চ ২ মিনিট সময় দেন। একমিনিটের মধ্য রোগে৷ হিষ্ট্রি আর দুই মিনিটের মাথায় প্রেশক্রিপশন। এই হলো সরকারী হাসপাতালের সেবার ধরণ৷ কখনো কখনো লাইনে দাড়িয়ে অপেক্ষন করতে হয় তিনি নাস্তা করছেন বা নাস্তা করতে পিয়নকে বাহিনর পাঠিয়েছেন বা নিজে নাস্তা খেতে গিয়েছেন৷ শপৎ নিয়ো শপৎ ভাঙ্গা আমাদের জন্য খুব সহজ৷ তাই করে থাকি৷ জনগণের সেবা করে জনগণের পাশে থাকার যে অঙ্গীকার নিয়ে পথ চলা শুরু তা আমরা দিব্বি ভুলে যাই। আমাদের ডাক্তাতদের ব্যস্ততা অন্যপাশে৷ যেখানে টাকা রয়েছে। সরকারী হাসপাতালে ডাক্তার প্রেশক্রাইভ করে দেন৷ সরকারীভাবে তিনদিনের ঔষধ দেবার কথা উল্লেখ রয়েছে। সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড সকল সরকারী হাসপাতালে ঝুলে থাকে। তারপরও অনেকসময় সকল ঔষধ পাওয়া যায় না। সেই দাদা বধিখা আমল থেকে এ প্রক্রিয়া চলে আসছে। সরকারী হাসপাতালগুলোতে রয়েছে নানারকম দালালচক্র। সেখানে বিভিন্ন ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, আর বেসরকারী হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাবার দালাল চক্র। তাছাড়া রয়েছে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা। প্রয়োজনে অনেকসময ডাক্তার গণ টেষ্ট প্রদান করেন৷ স্বল্পমূল্যে জনগণ এসব সুবিধা পাবার কথা। কিন্তু মিশিন বিকল আছে বা বাহিরে থেকে নিয়ে আসতে হবে এমন অযুহাত করা হয়। ডায়াগনষ্টিক সেন্টার পরিচালনা করার জন্য ডাক্তারের প্রয়োজন রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাঠকর্মী বা দালালরা যে কোনভাবে ডাক্তারদের সাথে যোগসাযোষ রাখেন৷ আর তা হচ্ছে কমিশন। কমিশনের বিনিময়ে ডাক্তারগণ বিভিন্ন সেন্টারে রোগী পাঠান। দরকারী বা বেদরকারী টেষ্ট প্রেসক্রাইভ করেন শুধুমাত্র কমিশনের আশায়। ফলে সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা করতে আসা রোগিরা হতভম্ব হয়ে পড়েন৷ এরপর রয়েছে ঔষধ কোম্পানী প্রতিনিধিরা৷ রোগির পত্তে তাদের কোম্পানীর একটি ঔষধ হলে লিখতে হবে৷ বিনিময়ে দেয়া হবে কমিশন। আর এ কমিশনের কারণে সাধারন জনগণ অতিরিক্ত ঔষধ কেনার প্রবণতায় পড়েন৷ বাড়ে চিকিৎসা ব্যয়৷ অনেক চিকিৎসক আছেন যারা ইচ্ছে করে হাসপাতালগুলোতে রোগী দেখতে চান না৷ প্রাইভেটে ভাল করে দেখার প্রতিশ্রুতি দেন । ডাক্তার নিজে অফার করেন অথবা তার দালালের মাধ্যমে অফার করেন। প্রাইভেট চেম্বারে বসে যে কোন ধরণের রোগি হোক না কেন তার পছন্দশীল ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে টেষ্ট করাতে হবে৷ যদিও সরকারী নীতিমালায় এ ধরণের কোন নীতি উল্লেখ নেই। কিন্তু তাই চলে। প্রেশক্রিমশনে উল্লেখকৃত ঔষধ কিনতে হবে। তানাহলে তার ব্যবসা হবে না। কমিশন বন্ধ হয়ে যাবে। শহরে বা গ্রামের সাধারণ মানুষগুলোর দূর্ভোগ চিন্তা করা যায় না৷ চিকিৎসাসেবা নাকি নিঃস্বহবার সেবা তা বোঝা যায় না। সরকারী হাসপাতালে ভর্তি হলে বিরাট সমস্যা। রোগী মরে যাবে তবুও হাত দেবে না। ওয়ার্ডবয়, আয়া, নার্স তাদের মেজাজ আরো চড়া। অসহায় মানুষগুলো তাদের কাছে অসহায়৷ কিন্তু টাকার কাছে এরা বিক্রি হয়ে যায়৷ টাকার বিনিময়ে কাজ করে থাকে। এমন অনেক নার্স আছেন যারা বলে থাকে নামে সরকারী কাজে বেসরকারী। বর্তমানে বলা হয়ে থাকে চিকিৎসা সেবা উন্নত হয়েছে৷ সরকারী হাসপাতালের মান বাড়ানো হয়েছে। প্রশ্ন থেকে যায়। মান বাড়ানো হয়েছে তবে উচ্চবিত্তরা কেন আসে না। সরকারী হাসপাতালে সেবা পাবার অধিকার সবকর রয়েছে কিন্তু সবাই সেবা নিতে আসে না। সরকারী হাসপাতালে যিনি দেখছেন বেসরকারী হাসপাতালে তিনি দেখছেন৷ তবে এখানে ব্যবহার ভিন্ন৷ সরকারী হাসপাতালে রোগীর কাপড় ধরলে রোগ জীবাণু আক্রমণ করে। আর বেসরকারীতে কোন অসুবিধা নেই৷ কেননা সেখানে টাকা কথা বলছে। দেশের আনাচে কানাচে বেসরকারী হাসপাতাল ব্যাঙ্গের ছাতার মতো দাঁড়াচ্ছে৷ কাদের জন্য৷ অসহায় সাধারণ জনগণের জন্য। না। একজন অসহায় জনগণ কখনো এতোটাকা ব্যয় করতে পারবে না। যেখানে নরমাল ডেলিভারীকে বেসরকারী হাসপাতালের খরচ একদিনে ৮০০০ টাকা। সবার জন্য তা সম্ভব নয়। সরকার বেসরকারী হাসপাতালগুলোকে ঢালাওভাবে লাইসেন্স দিচ্ছে চিকিৎসাসেবার জন্য৷ প্রকৃতপক্ষে কাদের সেবা করছে। সকল বেসরকারী হাসপাতালগুলো বলে থাকে সবার চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে আমরা আপনার শহরে। আসলে এরা কাদের টার্গেট করে আসে তা সরকার নজরদারীতে রাখে না। বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত হয় উচ্চবিত্তদের। লেখাপড়া জানুক বা নাজানুক তাতে কিছু যায় আসে না৷ সমাজের একজন শিক্ষিত প্রতিনিধি যখন টাকার জন্য বিকিয়ে দেয় তখন আফসোস ছাড়া আর কিছু তার জন্য করার থাকে না৷ দেশের আনাচে আনাচে গড়ে উঠা এসব েব সরকারী হাসপাতালের গুনের কথা অনেকে জানান তাদের স্বজনদের কাছে। ডাক্তারের কাছে একটু সুন্দর ব্যবহার সবাই পেতে চান। বেসরকারী হাসপাতালগুলো গড়ে উঠেছে শুধুমাত্র তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে। কোন গরীবরোগির পক্ষে সেবা পাওয়া কল্পনাতীত। অথচ সকলেই সমান সেবা পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। সরকারী হাসপাতালে সমান সুযোগ সৃষ্টি করা হলে, চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারলে বেসরকারী হাসপাতালের প্রয়োজন পড়তো না৷ অসহায় মানুষগুলো সরকারী হাসপাতাল থেকে অনেকসময় আসে বেসরকারী হাসপাতালে। আউটডোর ডাক্তার দেখাতে। ডাক্তার দেখিয়ে চলে যায়। যদি ভর্তি হতে হয় তাহলে তা তাদের কাছে গলায় কাঁটা লাগার মতো। কেননা এর ব্যয়ভার বহন করা তাদের সাধ্যের বাহিরে৷ বিদায় বাধ্য হয়ে ধরনা দিতে হয় সরকারী হাসপাতালে । জনগণের কর্মচারী সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসকগণ বা সকল সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীগণ৷ জনগণের সেবা নিশ্চিত করা তাদের পবিত্র দায়িত্ব৷ কিন্তু টাকার কাছে বিক্রি হয়ে এরা নিজেদের করছে বঞ্চিত আর সাধারণ মানুষ চিকিৎসাসেবা হতে হচ্ছে বঞ্চিত৷ সবার চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে সরকারকে প্রদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে৷

ছবি
সেকশনঃ সাধারণ পোস্ট
লিখেছেনঃ Md Enamul Huq তারিখঃ 11/10/2019
সর্বমোট 365 বার পঠিত
ফেসবুকের মাধ্যমে কমেন্ট করুণ

সার্চ

সর্বোচ্চ মন্তব্যকৃত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন