ব্যাকগ্রাউন্ড

ফেইসবুকে!

মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ধারাবাহিক উপন্যাস: মুক্তিযুদ্ধ এখনও শেষ হয় নাই (প্রথম খণ্ড—পঞ্চম পর্ব)



















মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ধারাবাহিক উপন্যাস:
মুক্তিযুদ্ধ এখনও শেষ হয় নাই
(প্রথম খণ্ড—পঞ্চম পর্ব)
সাইয়িদ রফিকুল হক

 

 

পরদিন আবু কায়েস আবার তার দলবল নিয়ে অধ্যাপক লিটু মিয়ার বিশেষ দরবারে উপস্থিত হলো।  গতকালের সবাই আজকেও উপস্থিত হয়েছে। তাদের চোখেমুখে আরও-কিছু জানার বিরাট আগ্রহ দেখে লিটু মিয়া যারপরনাই আনন্দিত হলেন। আজ তার আরও বেশি ভালো লাগছে।
লিটু মিয়া ওদের যথেষ্ট সমাদর করে বসতে বললেন। ওরা আগের দিনের মতো সুশৃঙ্খলভাবে গোল হয়ে মেঝেতে বসে পড়লো। অধ্যাপক লিটু মিয়াও বসলেন ওদের সামনে।
তারপর তিনি আবু কায়েসের দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন, “এবার বলো তো, আজ আবার কী মনে করে এসেছো?”
এতে অধ্যাপক আবু কায়েস বিনীতভঙ্গিতে বললো, “স্যার, গতকাল আপনার কথায় আমাদের মনের চাহিদা যথেষ্ট মিটেছে। কিন্তু আমরা আপনার মুখ থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আরও শুনতে চাই। বিশেষ করে বর্তমান-বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনীতি নিয়ে আজ কিছু বলুন।”
অধ্যাপক রায়হান কবির বললো, “স্যার, বাংলাদেশে এতো-এতো রাজনৈতিক দল থাকলেও মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি দল। আর বাদবাকী সব রাজনৈতিক দল পাকিস্তানের পক্ষে এখনও উলঙ্গ-নৃত্য প্রকাশ করে চলেছে। এর কারণ কী, স্যার? যদি একটু ব্যাখ্যা করে বলতেন!”
 
একথা শুনে অধ্যাপক লিটু মিয়া সকলের দিকে সুতীক্ষ্নদৃষ্টিতে তাকিয়ে খুব মোলায়েম হাসিতে সবার মন ভরিয়ে দিলেন। তারপর বলতে লাগলেন:
বাংলাদেশে অনেক রাজনৈতিক দলের কথা আমরা শুনতে পাই। আবার দৈনিক পত্রিকার বিজ্ঞপ্তিতে ও প্রচারণায় দেখি, প্যাডসর্বস্ব অসংখ্য রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব রয়েছে আমাদের এই ছোট্ট দেশটাতে। কিন্তু আসলে কী? আসলে, আমাদের বাংলাদেশে মাত্র দুইটি রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব রয়েছে। আর এই দুইটিমাত্র রাজনৈতিক দলের নাম হলো: ১. বাংলাদেশআওয়ামীলীগ এবং ২. অ্যান্টি-আওয়ামীলীগ বা আওয়ামীলীগবিরোধী। এর বাইরে বাংলাদেশে আর-কোনো রাজনৈতিক দল নাই বা থাকতে পারে না। কারণ, আমি সেকথা পূর্বেই বলেছি। বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে, দুইটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ছিল: একটি আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশআওয়ামীলীগ ও তাদের সমমনা দল। আর অপরটি ছিল জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের নেতৃত্বাধীন ও চীনপন্থীদের ছোট-বড় সকলের প্ল্যাটফর্ম। এর বাইরে তখন কোনো রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব ছিল না। আর এখনও নাই।
এখনও এই বাংলাদেশে একক বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ। আর এদের সঙ্গে আজকাল যুক্ত হয়েছে আরও কয়েকটি দল। এদের নিয়ে আমরা ১৪দলীয় মহাজোটের অস্তিত্ব দেখতে পাচ্ছি। এখানে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির সম্মিলন ঘটেছে। তবে বর্তমান ১৪দলীয় জোটে একসময়কার স্বৈরাচার এরশাদের ‘জাতীয় পার্টি’ও অর্ন্তভুক্ত হয়েছে। এতে তোমাদের কারও-কারও মনে হয়তো বিরাট একটা প্রশ্ন জাগতে পারে, আওয়ামীলীগ জেনেশুনে কেমন করে এমনটি করেছে? আসলে, আওয়ামীলীগ বাংলাদেশের ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারীসংগঠন। অনেকে মনে করতে পারে, আওয়ামীলীগ এমনটি করে ঠিক কাজ করে নাই! কিন্তু তারা কারা? এরা আসলে, জন্মজন্মান্তরে আওয়ামীলীগবিরোধী-অপশক্তি। এদের ভোট নাই, জনবল নাই, আর জনসমর্থনও নাই। তবুও মুখে শুধু বড়-বড় কথা। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির এখনও একটা জনসমর্থন ও ভোটব্যাংক রয়েছে। তাছাড়া, জাতীয় পার্টিকে আওয়ামীলীগ আশ্রয়প্রশ্রয় না দিলে এরা স্বাধীনতাবিরোধীদের ফুসলানির মায়াজালে আটকিয়ে যেতে পারে, এবং তাদের খপ্পরেও পড়তে পারে। তাই, বাংলাদেশআওয়ামীলীগ অনেক ভেবেচিন্তে এরশাদের জাতীয় পার্টিকে মুক্তিযুদ্ধের প্ল্যাটফর্ম—১৪দলীয় জোটে যোগদান করিয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী-অপশক্তির হাত থেকে বাংলাদেশরাষ্ট্রকে সুরক্ষার জন্য এটা আওয়ামীলীগের একটি কৌশলমাত্র।
 
আমরা আবার মূলআলোচনায় ফিরে আসি। বর্তমানে বাংলাদেশে মাত্র দুইটি রাজনৈতিক দল: একটি আওয়ামীলীগ আর অপরটি অ্যান্টি-আওয়ামীলীগ বা আওয়ামীলীগবিরোধী-অপশক্তি। আওয়ামীলীগবিরোধী-অপশক্তির তালিকায় রয়েছে: বাংলাদেশের প্রথম স্বৈরাচার জিয়ার বিএনপি, স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান, পাকিস্তানের মুসলিম-লীগ, রাজাকারদের নেজামে ইসলাম পার্টি, রাজাকার চোরমোনাইয়ের পীরের ইসলামীশাসনতন্ত্র-আন্দোলন, রাজাকারদের ইসলামী পার্টি, ইসলামী মোর্চা, এলডিপি, কল্যাণ পার্টি, জাগপা ইত্যাদি। এসম্পর্কে ইতঃপূর্বে তোমাদের একটা ধারণা দিয়েছি। গতকাল বাংলাদেশবিরোধী সকল জারজসংগঠনের নামধাম তোমাদের সামনে পেশ করেছি। যাতে, তোমরা এই শয়তানদের খুব সহজে চিনে নিতে পারো।
আজকাল রাষ্ট্রক্ষমতার স্বার্থেও অনেকে আওয়ামীলীগের বিরোধিতা করছে। নইলে, মুক্তিযোদ্ধা-নামধারী কাদের সিদ্দিকীর পর্যন্ত মাথানষ্ট হয়ে গিয়েছে! তার বর্তমান কার্যকলাপ খুবই হাতাশাজনক। বর্তমানে কাদের সিদ্দিকীদের মগজ মাথা থেকে আজ হাঁটুতে নেমে গিয়েছে। বঙ্গবন্ধু-মন্ত্রীসভার সদস্য ড. কামাল হোসেন রাষ্ট্রক্ষমতার লোভে একেবারে দিশেহারা। বর্তমানে সে রাজাকারদের ভাষায় কথা বলায় তার সাম্প্রতিক কার্যকলাপ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের মতো। সে নিজে ও তার পুরা পরিবার একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের সেবাদাস ও দালাল। তার একমাত্র কন্যা ব্যারিস্টার সারা হোসেন একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের দালাল, ইংল্যান্ডের নাগরিক ও শয়তানের জারজপুত্র ডেভিড বার্গম্যানকে বিবাহ করেছে শুধু টাকার জন্য। আর  এই ড. কামাল হোসেনের এই মেয়ের জামাই ওরফে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের অন্যতম প্রধান মুখপাত্র, শয়তানের জারজপুত্র ডেভিড বার্গম্যান আমাদের দেশে শুরু হওয়া একাত্তরের চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্য এদের নিকট থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ খেয়ে এদের পক্ষে দেশে-বিদেশে নানারকম শয়তানী করেছে, এবং এখনও করছে। আর এব্যাপারে ভিতরে-ভিতরে তাকে সর্বাত্মক সাহায্য-সহযোগিতা করছে তার শ্বশুর। তার কারণ, ড. কামাল হোসেন সরাসরি তো আর একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিতে পারে না। তাই, সে নিজকন্যা ও জামাতাকে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের মুক্ত করতে তাদের সেবায় নিয়োজিত করেছে। আর এই কামাল হোসেন এখন মাঠে-ময়দানে দেশপ্রেমের পক্ষে গলাবাজি করে বেড়াচ্ছে। এরা সব ভণ্ড। আর পরাজিত শয়তান। এরা জেনেশুনে, বুঝেশুনে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের দালাল। এরা জানে, একাত্তরের শকুন তথা  যুদ্ধাপরাধীদের হাতে আছে হাজার-হাজার কোটি টাকা! আর এই টাকার লোভেই আজ কামাল হোসেনদের মাথাখারাপ হয়ে গিয়েছে। এরা এখন বাংলার জাতীয় পাগল ও জাতীয় শয়তানে পরিণত হয়েছে। তোমাদের কাছে আরও একটি তথ্য দিচ্ছি: এই ড. কামাল হোসেন ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুসহ নিহত সকলের বিচারের পক্ষে দাঁড়ায়নি। সে ১৫ই আগস্টের খুনীদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করতে অস্বীকার করেছিল! আর সেও এখন রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে গলায় গামছা দেওয়া একটা ‘গামছা-সিদ্দিকী’র সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর জন্য মায়াকান্না দেখিয়ে কতরকম গলাবাজি করছে! কারণ, এটা বাংলাদেশ। এখানে, সর্বস্তরের ভণ্ডদের বিচরণ রয়েছে। এটা ভণ্ডের চারণভূমি। তোমরা, এইজাতীয় সমস্ত ভণ্ডদের নিকট থেকে সদাসর্বদা নিরাপদ-দূরত্বে অবস্থান করবে।
 
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভণ্ডের আনাগোনা খুব বেশি। যুগে-যুগে, সবসময় এখানে জন্ম নিচ্ছে একটা কুচক্রী, ষড়যন্ত্রকারী খন্দকার মোশতাক আহমেদ। এইজাতীয় পশুদের চেহারা এখন রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে বড় বেশি দেখা যাচ্ছে। এরা সকালে একরকম আর বিকালে আরেকরকম। এই পশুদের কোনো চরিত্র নাই, ধর্ম নাই, মনুষ্যত্ব নাই, মানবতা নাই, বিবেক নাই, আর কোনো আদর্শ নাই। এরা বাংলাদেশের চিরশত্রু। আসলে, বাংলাদেশ এখনও রাজাকারমুক্ত হয়নি। আর দেশে নব্যরাজাকারের সংখ্যাও বাড়ছে। স্বাধীনবাংলাদেশে রাজাকারি অপআদর্শে জন্ম নেওয়া দলগুলোর লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কর্মসূচি কখনও ভালো ছিল না। আর এখনও ভালো নয়। এদের জন্মই হয়েছে রাজাকারি করার জন্য। এজন্য বাংলাদেশে ব্যাঙের ছাতার মতো একশ্রেণীর রাজনৈতিক দল গড়ে উঠেছে। কিন্তু এদের কোনো আদর্শ বা চরিত্র নাই। এরা পাকিস্তানের স্বার্থরক্ষা করার জন্য পয়দা হয়েছে। তাই, বাংলাদেশে এতো-এতো রাজনৈতিক দল থাকা সত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলে হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি। আর বাদবাকী সবই রাজাকারের উত্তরাধিকারী। এরা পাকিস্তানীদের বশংবদ ও বংশধর।”
 
এমন সময় বিপ্লব হঠাৎ সটান দাঁড়িয়ে বললো, “স্যার, রাজাকারসম্পর্কে আমাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন। দেশে এখন কতরকম রাজাকার! কিন্তু আমরা খুব সহজে রাজাকারদের চিনবো কীভাবে? দেশের বহুরূপী রাজাকারদের চেনার সহজ একটা পন্থা আমাদের বলে দিন। আমরা দেশের শত্রু রাজাকারদের চিনতে চাই।”
 
অধ্যাপক লিটু মিয়া একটু হেসে বললেন, “গতকালের বক্তৃতায় আমি স্বেচ্ছায় রাজাকারদের কয়েকটি পরিচিত লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করেছি। আজ যেহেতু তোমরা আরও বিস্তারিতভাবে শুনতে চাচ্ছো তবে শোনো। আমার এই কথাগুলো তোমরা সবসময় মনে রাখবে। আমি দীর্ঘদিন যাবৎ অনেক চেষ্টা ও গবেষণা করে রাজাকারদের চেনার কতকগুলো পন্থা আবিষ্কার করেছি। আজ তোমাদের সামনে তা অকপটে বলবো। তাহলে, এবার তোমরা জেনে নাও: রাজাকারের সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য ও প্রকারভেদ, এবং স্বাধীন-বাংলাদেশে অতিসহজেই রাজাকার ও নব্যরাজাকার চেনার ত্বরীকা বা উপায়সমূহ:
 
উর্দু শব্দ ‘রেজাকার’ থেকে বাংলায় ‘রাজাকার’ শব্দটির প্রচলন। আর ১৯৭১ সালেই সর্বপ্রথম ভারতীয় উপমহাদেশের ‘বাংলাদেশে’ এই শব্দটির সঙ্গে মানুষের পরিচয় ঘটে। এর আগে এই শব্দের প্রচলন আমরা দেখিনি।
এর অর্থ ‘স্বেচ্ছাসেবক’ বা ‘সাহায্যকারী’ বা ‘সহযোগিতাকারী’। মানে, এরা হলো পাকিস্তানের সাহায্যকারী। মূলত ১৯৭১ সালে পৃথিবীর ‘শয়তানরাষ্ট্র’ পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে, পাকিস্তানীদের যুদ্ধে জেতানোর জন্য, এবং পাকিস্তানকে সর্বপ্রকার অনৈতিক ও অন্যায় সহায়তাদানের জন্য যারা স্বেচ্ছায় ‘পাকিস্তানী’ হানাদার-নরপশুদের ‘সহযোগী’ বা ‘সাহায্যকারী’ হয়েছিল—তারাই ছিল সেই কুখ্যাত রাজাকার। আর এখনও যারা জেনেশুনে ও বুঝেশুনে নির্লজ্জের মতো  এসব করছে—তারাও একজাতীয়-সমজাতীয় রাজাকার। এদের চরিত্র আর কখনও বদলাবে না। এরা কোনোদিনও ভালো হবে না। চিরদিন এরা আমাদের স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রকৃত শত্রু।
 
পাকিস্তানীশয়তানগোষ্ঠী রাতের আঁধারে হিংস্র-হায়েনার মতো আমাদের উপর অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আমাদের ‘বাংলাদেশকে’ ও বাংলাদেশের মানুষকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছিল। আর এই শয়তানী কাজে সবকিছু জেনেশুনেও, যারা বাংলাদেশের মানুষ হয়েও ১৯৭১ সালে পাকিস্তানকে ‘বাপ’ ডেকে ‘পাপ’ করেছিল, এবং তারা তাদের সেই বাপকে বাঁচানোর জন্য তাদের ‘বাপে’র নির্দেশে ‘বাঙালি’ হয়েও সমগ্র বাঙালি-জাতির বুকে-পিঠে ‘ছুরি’ মেরেছিল, তারাই আজ ঘৃণিত রাজাকার। কিন্তু বাংলাদেশে এখনও যে রাজাকারের জন্ম হচ্ছে! দেশের বুকে এখনও যে রাজাকার ও নব্যরাজাকার দেখতে পাচ্ছি! কিন্তু তা কীভাবে?
 
আজকের দিনে রাজাকারের সংজ্ঞা তাই নতুনভাবে দিতে হচ্ছে। এখনও দেশে একের-পর-এক রাজাকারের জন্ম হচ্ছে। ১৯৭১ সালের রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তিকমিটি’র পাপের বীজ দেশে এখনও বিদ্যমান। আর তাই, দেশের বুকে এখনও একেকটা রাজাকার গুয়েশ্বর রায় ও রাজাকার রিজভী আহাম্মকদের জন্ম হচ্ছে। এ-তো মাত্র দুই-একটার উদাহরণ। এইরকম ছদ্মবেশী, বর্ণচোরা-শয়তান ও জীবন্ত রাজাকার এই দেশে আরও অনেক আছে। এরাই এখন সগৌরবে পাকিস্তানের নামে বংশবিস্তার করছে।
 
এবার আমি ‘রাজাকারে’র আধুনিক সংজ্ঞা ও এর প্রকারভেদ নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করবো। আশা করি, তোমাদের ভালো লাগবে।
 
রাজাকারের আধুনিক সংজ্ঞা:
এখনও যারা মনেপ্রাণে পাকিস্তানকে ভালোবাসে, ভিতরে-ভিতরে আবার পাকিস্তান-কায়েমের স্বপ্ন দেখে, কিংবা যারা পাকিস্তান-কায়েম করতে চায় তাদের সমর্থন করে, তারা বাংলাদেশের আধুনিক রাজাকার। এরা ১৯৭১ সালের রাজাকারদের প্রকৃত-উত্তরসূরী। আর এরা একাত্তরের রাজাকারদের মতোই সমান অপরাধী ও ভয়ংকর। এদের হাত থেকে আমাদের বাংলাদেশরাষ্ট্রকে বাঁচাতে হবে। এরা কোনোদিনও একটু ভালো হবে না আর মানুষও হবে না। মনে রাখবে: পশু কখনও মানুষ হয় না। তাহলে, জঙ্গলের হায়েনা, শিয়াল, শুয়োরও লোকালয়ে বাস করতে পারতো। কিন্তু এই রাজাকার নামক মনুষ্যাকৃতির পশুগুলো গায়ের জোরে আমাদের দেশের লোকালয়ে বসবাস করছে। ওরা দেশ ও জাতির জন্য চিরদিন হুমকিস্বরূপ। বাঙালিমাত্রেই ওদের চিরদিন ঘৃণা করতে হবে।
বাংলাদেশরাষ্ট্রকে এখনও যারা মনেপ্রাণে ভালোবাসে না, আর ভিতরে-বাইরে সবসময় পাকিস্তানী, কিন্তু লোকদেখানোর জন্য বাংলাদেশের কথা বলে তারা একনিষ্ঠ নব্যরাজাকার এবং পাকিস্তানের নব্যদালাল।
বাংলাদেশে এখন একশ্রেণীর কুলাঙ্গার জেনেশুনে পাকিস্তানের মূত্রপান করছে। এব্যাপারে এদের সামান্যতম লজ্জাশরম বলতে কোনোকিছুই নাই। এরা পাকিস্তানের প্রতি চিরআনুগত্যশীল। জীবনে-মরণে এরা শুধু পাকিস্তানের সাপোর্টার। এদের বিবেক-বিবেচনাবোধ খুবই নিম্নমানের। এরা পাকিস্তানের ক্রিকেট খেলা দেখলে পাগল হয়ে যায়। আর হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে আবোলতাবোল বকতে শুরু করে দেয়। পাকিস্তানের নামে এরা উলঙ্গ হতেও পিছপা হয় না। এদের পাকিস্তানীইসলামে নিজেদের স্বার্থে নগ্ন হলেও তা জায়েজ। এরা নিজেদের স্বার্থে ধর্মের নামে রাজনীতির বেশ্যাবৃত্তিকেও হালাল মনে করে থাকে। এই পশুদের বিবেক নামক যন্ত্রটা চিরতরে রুদ্ধ হয়ে আছে। এরা চিরদিন বদ্ধহৃদয়ের অমানুষ। এরা বাংলাদেশে বসবাসকারী পাকিস্তানীআবর্জনা। এরা দেশস্বাধীনের এতকাল পরেও বাঙালি হতে পারেনি।
 
আধুনিক-রাজাকারদের কতিপয় বৈশিষ্ট্য:
পাপ কখনও গোপন রাখা যায় না। তাই, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী ও তাদের বংশধররা কখনও তাদের পাপকে ঢেকে রাখতে পারেনি। এই বিষয়ে তারা অনেক ষড়যন্ত্র ও শয়তানী করেছে, কিন্তু সফলকাম হয়নি। মানুষের সম্মুখে তাদের পাপরাশি দিবালোকের ন্যায় পরিস্ফুট হয়ে উন্মোচিত হয়েছে। আর তাদের পাপের ইতিহাস জেনে ও পড়ে এই বাংলার মানুষ শিউরে উঠেছে। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীরা এই পৃথিবীতে এমন কোনো পাপ বাকী রাখেনি। আজও তাদের ও তাদের বংশধরদের কথাবার্তায় সেইসব পাপের চিহ্ন রয়ে গেছে। এদের চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে কিছু-কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। যাদের কথাবার্তায় নিম্নে বর্ণিত বৈশিষ্ট্যসমূহ বা এর যেকোনো একটি বৈশিষ্ট্য ধরা পড়বে, আমাদের সঙ্গে-সঙ্গে বুঝে নিতে হবে: এরা একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী কিংবা একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বংশধর। আধুনিক-রাজাকারদের বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে:
১. এরা বলবে: বাংলাদেশের ‘জাতীয় সঙ্গীত’ একজন হিন্দুর লেখা। ওরা তাই বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতকে মানে না, বিশ্বাস করে না, ভালোবাসে না, এবং তা কখনও গায় না। আসলে, এরা বাংলাদেশের চিহ্নিত জারজসন্তান। এদের রক্ত পাকিস্তানী-বীজ থেকে উৎসারিত। এই অমানুষ-সাম্প্রদায়িকশ্রেণীটি সবসময় সমাজজীবনে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে। এদের থেকে তোমরা সবসময় দূরে থাকবে। এরা সাম্প্রদায়িক-নরপশু এবং বাংলার কুলাঙ্গার।
২. ওরা সবসময় বলবে: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একজন হিন্দু! আর কোনো হিন্দুকে বিশ্বকবি বলা ঠিক নয়! হিন্দুর লেখা পড়া ঠিক নয়!’ আসলে, ওদের বাপ পাকিস্তানের কবি ইকবাল। একটা বাল ওদের কাছে সবসময় প্রিয়। ওরা এভাবে চিরদিন বালমুখী। এই বালের বাইরে ওদের আর-কিছু নাই।
৩. ওরা বলবে: হিন্দুর লেখা ‘জাতীয় সঙ্গীত’ গাওয়া ঠিক নয়। আরও বলবে: ‘রবীন্দ্রনাথের গান জাতীয় সঙ্গীত হতে পারে না। রবীন্দ্রনাথ মুসলমান নয়।’ আর ওরা একাত্তর সালে নারীধর্ষণ করে খুব মুসলমান!
৪. ওরা বলবে: বাংলাদেশের ‘জাতীয় পতাকা’ ইসলামী-পতাকা নয়! পাকিস্তানের পতাকা ইসলামী-পতাকা! পূর্বেই বলেছি, আসলে, ওদের রক্তই দূষিত। তাই, বাংলাদেশের কোনোকিছু ওদের ভালো লাগে না। ওরা সবখানে শুধু হিন্দুয়ানী খুঁজে বেড়ায়। এগুলোকে বরাহ বা বরাহশাবক বলাই শ্রেয়।
৫. এরা কথায়-কথায় শুধু ভারত আর রাশিয়াকে আক্রমণ করে কথা বলবে। কিন্তু কখনও এদের গঠনমূলক সমালোচনা করবে না। আর ‘ভারত’ ও ‘রাশিয়া’র নাম শুনলে এদের কলিজা যেন আগুনে পুড়তে থাকে! কারণ, একাত্তরে এই দুইটি দেশের সহযোগিতায় বীর-বাঙালি ‘পাকিস্তান’ ধ্বংস করেছে। পাকিস্তানকে কবর দিয়েছে। আর বাংলাদেশ কায়েম করেছে। সেই থেকে ওদের এতো ক্ষোভ। এরা চিরদিন পাকিস্তানের গু-মুত খাবে কিন্তু ভারতের ভালোকিছুও সহ্য করতে পারবে না। এদের মতো হিংস্র-নরপশু পৃথিবীর কোথাও খুঁজে পাবে না।
৬. এরা বলে: ‘মুক্তিযুদ্ধ তো শেষ! এখন এসব নিয়ে আলোচনা করে লাভ কী?’ (ওদের বলতে হবে: তোর জন্ম তো হয়ে গেছে, সব ঝামেলা শেষ! এখন, তুই তোর বাপের নাম দিয়ে আর কী করবি! তাই, আজ থেকে তুই তোর বাপের নাম আর লিখিস না! এসবের আর-কোনো প্রয়োজন নাই। তখন দেখবে, এই নরপশুগুলো কেমন তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে!)
৭. ওরা একাত্তরের পরাজয় কখনও ভুলতে পারে না। তাই, একাত্তরে আমাদের সাহায্যকারী দুই বন্ধুরাষ্ট্র: ভারত ও রাশিয়াকে সবসময় দোষারোপ করতে থাকে। ওরা কখনও এই দুই রাষ্ট্রের প্রশংসা করবে না। এমনকি আমাদের দেশের এই রাজাকাররা ‘ইবলিশ শয়তানে’র প্রশংসা করতে রাজী, তবুও ভারত আর রাশিয়ার কোনো প্রশংসা করবে না। কারণ, ওদের বাপ পাকিস্তান একাত্তরে ভারত আর বাংলাদেশের সেনাপতির কাছেই অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণ করেছে। সেই লজ্জা ওরা আজও ভুলতে পারে না।
৮. ওরা বলবে: ‘বামপন্থীরা সব নাস্তিক! কম্যুনিস্টরা নাস্তিক!’ আসলে, ওরাই সবচেয়ে বড় শয়তান। আর ওরা বামপন্থীদের ‘মেধা ও মননে’র সঙ্গে এঁটে উঠতে না পেরে এইসব শয়তানী-কথাবার্তা বলে থাকে। ওরা বুদ্ধিতে সাধারণ যেকোনো মানুষের সঙ্গে না পারলে তাকেও বামপন্থী বা কম্যুনিস্ট বলে আঘাত করবে। আর যারা সত্যিকারের কম্যুনিস্ট তাদের সঙ্গে যুক্তিতর্কে হেরে গেলে জনসমাজে তাদের হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য এই রাজাকাররা তাদের সরাসরি ‘নাস্তিক’ বলে ঘায়েল করতে চায়। এরা নিজেদের স্বার্থে সবসময় ধর্মকে ব্যবহার করবে।
৯. ওরা বলবে: ‘শহীদমিনারে কিংবা স্মৃতিসৌধে যাওয়া নাজায়েজ!’ আসলে, এই পৃথিবীতে ওরাই সবচেয়ে বড় নাজায়েজ। আর এই নাজায়েজগুলো আজ আমাদের দেশ মানে না! জাতি মানে না! দেশাচার মানে না! সমাজ, সংস্কৃতি ও রাষ্ট্র কোনোকিছুই মানে না! তবুও এরা নাকি বাংলাদেশের নাগরিক!
১০. বাংলাদেশের সার্বজনীন-উৎসব: পহেলা বৈশাখ বা বাংলা-নববর্ষকে কটাক্ষ করে ওরা বলবে: ‘পহেলা বৈশাখ পালন করা জায়েজ নাই। এসব হিন্দুয়ানী! এগুলো অপসংস্কৃতি!’ কিন্তু ওদের কাছে সবসময় পাকিস্তানী-মদ জায়েজ! পাকিস্তানী-কায়দায় খুন-ধর্ষণ জায়েজ! পাকিস্তানী-সংস্কৃতি জায়েজ! ওদের শুধু সহ্য হয় না বাংলাদেশের সংস্কৃতি। 
১১. ওরা বলবে: ‘রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য ইসলামবিরোধী! আর ফররুখ আহমেদ, আল মাহমুদ ইসলামী রেনেসাঁর কবি!’ এরা এমনই রাজাকার আর সাম্প্রদায়িক নরপশু। এই পশুগুলো আসলে সাহিত্য, ধর্ম ও সংস্কৃতি কোনোটাই বোঝে না। এরা শুধু বোঝে পাকিস্তানী-কায়দায় বিবিধ শয়তানী।
 
১৯৭১ সালের পবিত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস পর্যালোচনা সাপেক্ষে আমি দেখতে পেয়েছি যে, আমাদের বর্তমান বাংলাদেশে প্রধানত দুই ধরনের রাজাকার রয়েছে। যথা:
১. স্থায়ী-রাজাকার: এরা জন্মলগ্ন থেকে পাকিস্তানপন্থী, পাকিস্তানের দালাল ও চিরদিনের জন্য পাকিস্তানের কেনা গোলাম। গোলাম-ই-পাকিস্তান। আর এরা জীবনে-মরণে, শয়নে-স্বপনে, ধ্যানে-জ্ঞানে ও চিন্তাভাবনায় সবসময় পাকিস্তানকে ভালোবাসে। এদের জীবনের চালিকাশক্তি পাকিস্তান। এরা এখনও পাকিস্তানের কথায় কানধরে ওঠাবসা করে থাকে। আর একমাত্র পাকিস্তানই এদের ভরসা। এই স্তরের রাজাকারদের উদাহরণ হলো: গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, শর্ষিণার পীর আবু জাফর ছালেহসহ দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, দি ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম, দৈনিক আমার দেশ পাকিস্তান পত্রিকার মালিক ও সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ইত্যাদি। 
২. অস্থায়ী-রাজাকার: এরা বিভিন্ন সময় স্বার্থগত কারণে রাজাকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। এদের মনোভাবের কখনও-কখনও সামান্য পরিবর্তনও ঘটে। এরা সরাসরি পাকিস্তানপন্থী নয়। তবে এরা নীরব-ঘাতক। এরা নিজেদের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি দাবি করেও লোভ ও লাভের আশায় রাজাকারদের সঙ্গে হাত মিলাতে কালবিলম্ব করে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একজন বিশ্বাসঘাতক মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক পাতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা: ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ড. এমাজ উদ্দিন আহমেদ, জাতীয় লম্পট ড. আসিফ নজরুল, কাজীজাফর মীরজাফর, আইনজীবী-নামধারী জাতীয় শয়তান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের দালাল ব্যারিস্টার সারা হোসেন, জাতীয় বেআদব ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনাবিরোধী একজন ড. তুহিন মালিক, সংবিধান বিশেষজ্ঞ-নামধারী একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের মুখপাত্র: ড. শাহদীন মালিক, ‘সুজনে’র নির্বাহী পরিচালক ড. বদিউল আলম মজুমদার, টিআইবি’র চেয়ারম্যান-পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, সাংবাদিক-নামধারী কুখ্যাত ষড়যন্ত্রকারী ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ইত্যাদি। আর এইজাতীয় রাজাকারগুলো সবসময় কোনো-না-কোনো জোটে ঘাপটিমেরে থাকে। আর এইজাতীয় লোকেরা আমাদের বর্তমান বাংলাদেশের চিহ্নিত সুশীল-রাজাকারশ্রেণী, এবং এইজাতীয় শয়তানরা সবসময় বর্ণচোরা-আমের মতো। এরা এই বাংলার বুকে চিরকাল শুধুই মাকাল-ফল! এই চিহ্নিত পাপীদের চক্রান্তে ও ষড়যন্ত্রে ২০০৬ সালের ১১ই জানুআরি বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম সামরিক-তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়েছিল। আর সেই সময় এই সরকারের একটা উপদেষ্টা হয়েছিল সবসময়ের জন্য কুচক্রী ও বাংলাদেশের জাতীয় কালপিট ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। সে শেখ হাসিনাকে পর্যন্ত কথিত ১/১১-এর সময় বিষপ্রয়োগে হত্যার চেষ্টা করেছিল। তার বিভিন্ন শয়তানী-কার্যকলাপের দায়ে পরে তাকে ওই সামরিক তত্ত্বাবধায়ক-সরকারের উপদেষ্টাপদ থেকে বাদ দেওয়া হয়। তাই, বলছিলাম, এই লোকগুলো সমাজের আত্মস্বীকৃত-বুদ্ধিজীবী। এদের কাজই হলো দেশে গণতন্ত্রের কথা বলে আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার করা। আরেকটি কথা: বাংলাদেশের ইতিহাসে এই ১/১১-এর সামরিক-তত্ত্বাবধায়ক-সরকারের অন্যতম প্রধান কুশীলব ছিল দৈনিক প্রথম শয়তানের আলো পত্রিকার কথিত সম্পাদক মতিউর রহমান, দি ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম ও জাতীয় গিরগিটি ড. কামাল হোসেন। এরা এখনও আওয়ামীলীগ ও দেশের বিরুদ্ধে যারপরনাই চক্রান্তে ও ষড়যন্ত্রে নিয়োজিত রয়েছে। স্বার্থের জন্য এরা কখনও মুক্তিযোদ্ধা সাজে আবার কখনও রাজাকার সাজে, এবং রাজাকার হয়েই থাকে।
 
স্থায়ী-রাজাকার আবার আট শ্রেণীতে বিভক্ত। মূলত বাংলাদেশে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলেমিশে আটপ্রকারের রাজাকার রয়েছে। বাঙালি-জাতির বৃহত্তর স্বার্থে নিম্নে সংক্ষেপে এদের পরিচয় তুলে ধরা হলো:
১. প্রথম শ্রেণীর রাজাকার: এরা আজন্ম-আমৃত্যু পাকিস্তানের বিশ্বস্ত গোলাম:
এরা ১৯৭১ সালে সরাসরি রাজাকারি করেছে। আর কায়মনোবাক্যে পাকিস্তানের গোলামি করেছে। এরা সরাসরি ‘রাজাকারবাহিনী’ কিংবা ‘আলবদরবাহিনী’ কিংবা ‘আলশামসবাহিনী’ কিংবা ‘শান্তিকমিটি’র সক্রিয় কর্মী-নেতা-সদস্য ছিল। এরা এখনও বাংলাদেশ আর আওয়ামীলীগের নাম শুনলে ক্ষেপে যায়। আর গালিগালাজ করে। আর একটু সুযোগ পেলেই রাজনৈতিক ফায়দা-লুটতে এরা আওয়ামীলীগকে সবসময় ‘ধর্মহীন’ ও ‘নাস্তিক’ বলে গালিগালাজ করে থাকে। আর সবসময় পাকিস্তান-ভাঙ্গার জন্য ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’কে দোষারোপ করে তাঁকেও প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে গালিগালাজ করে থাকে। এরা বাংলাদেশের সবচেয়ে ভয়াবহ রাজাকার, এবং এই জাতিরাষ্ট্রের জন্য এখনও হুমকিস্বরূপ। কারণ, এরা ভিতরে-বাইরে এখনও একেকটা ‘পাকিস্তানী-হানাদার’। এরা এখনও ‘জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের’ অংশীদার। আর নয়তো এখনও তারা পাকিস্তানের দালাল-পার্টি: নেজামে ইসলাম, মুসলিম-লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, মুজাহিদ পার্টি, হেফাজতে শয়তান, খেলাফত আন্দোলন, খেলাফত মজলিশ, ইসলামিক পার্টি ইত্যাদির সক্রিয় সদস্য।
২. দ্বিতীয় শ্রেণীর রাজাকার: এরা এখনও ভিতরে-বাইরে পাকিস্তানী: এরা ১৯৭১ সালের অবসরপ্রাপ্ত রাজাকারদের পুত্র-কন্যা-স্ত্রীসহ সকলপ্রকার আত্মীয়স্বজন ও বংশধর। এরা এদের পিতা, ভ্রাতা, পিতামহ, মাতামহ, চাচা, মামা, খালু, ফুপা, দুলাভাই, শ্বশুর ও অন্যান্য জ্ঞাতিবর্গের নিকট থেকে পাকিস্তানী ‘অমৃত-বচন’ শ্রবণ করে-করে আজ একটা ‘সেমি-পাকিস্তানী’। তবে এদের কেউ-কেউ এখন ভিতরে-ভিতরে একেবারে পুরাপুরি পাকিস্তানী। আর এদের ‘পাকিস্তানী-ঈমান-আকিদাহ’ এতোই মজবুত যে, এরা দেশের ইতিহাস চোখের সামনে জাজ্বল্যমান অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও সীমাহীন অন্ধ-আনুগত্যে ‘পাকিস্তানকে’ ভালোবেসে যাচ্ছে। এরা ‘বঙ্গবন্ধু’ ও ‘আওয়ামীলীগকে’ একদম সহ্য করতে পারে না। আর দেশের ভিতরে একটা-কিছু হলেই এরা ‘আওয়ামীলীগ’ ও ‘বঙ্গবন্ধুকে’ আক্রমণ করে কথা বলতে ভালোবাসে। এরা কখনও বীর-বাঙালি-জাতির মুক্তিযুদ্ধকে ভালোবাসে না, এবং শ্রদ্ধাও করে না। কিন্তু তারা সবসময় লোকদেখানোভাবে বাংলাদেশের জন্য কতো দরদ দেখায়! আর এরা এখন দেশের জন্য ‘মায়াকান্না’ দেখাতে খুব ব্যস্ত। কারণ, এর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশে ‘রাজনৈতিক-ফায়দা-লুটতে’ চায়। জীবনে কখনও এই শ্রেণীর রাজাকারকে বিশ্বাস করবে না। এমনকি এদের সঙ্গে কখনও মিশবেও না। এরা পায়খানার চেয়েও নিকৃষ্ট কোনো বস্তু।
৩. তৃতীয় শ্রেণীর রাজাকার: একমাত্র পাকিস্তান এদের জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য: এরাও ১৯৭১ সালের ‘পাকিস্তানী-হানাদারবাহিনীর’ সক্রিয়-সদস্যদের ভাবাদর্শ দ্বারা এমনভাবে আলোড়িত ও তাড়িত হয়েছে যে, এদের এখন ‘পাকিস্তান’ ছাড়া আর-কিছু ভালো লাগে না। এদের কারও-কারও জন্ম মুক্তিযুদ্ধের আগে বা পরে। কিন্তু এরা পাকিস্তানকে এখনও ‘ইসলামী-রাষ্ট্র’ ভেবে তাকেই জীবনের সর্বক্ষেত্রে ঠাঁই দিয়েছে। এরা বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চেষ্টাও করছে। আর এদের আদর্শের প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে: ‘পাকিস্তানী-বীজের’ ফসল ‘বিএনপি’ ও তার অধীনস্ত দলসমূহ। যেমন, আজকের কথিত ‘বিশদলীয়-আঠারোদলীয়-জোট’, বিগত চারদলীয়-জোট’, বিভিন্ন ইসলামীমোর্চা’ ইত্যাদি। এরা সবসময় এই রাজাকারদলীয়-জোট ও রাজাকারবৃত্তের মধ্যে বসবাসের চেষ্টা করে থাকে। এরা শয়নে-স্বপ্নে-ধ্যানে-জ্ঞানে দিনরাত শুধু পাকিস্তানকে দেখতে থাকে। আর এদের একমাত্র আশা-ভরসা ও নেশা: পাকিস্তান। এরা পাকিস্তানকে এত ভালোবাসে যেন পাকিস্তানই ওদের বাপ-মা-প্রভু। আর তাই, এদের কাছে পাকিস্তানের ‘মদও’ এখন সম্পূর্ণ জায়েজ তথা হালাল বলে মনে হয়। মূলত পাকিস্তানের সবকিছুই এদের কাছে সবসময় জায়েজ ও হালাল।
৪. চতুর্থ শ্রেণীর রাজাকার: বংশগত-রাজাকার: এরা স্বাধীনতাপরবর্তী-প্রজন্মের একাংশ। কারণ, আমাদের দেশের নতুন-প্রজন্মের বেশিরভাগই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। কিন্তু এই ‘একাংশ’ দেশের ভিতরে তাদের পাকিস্তানী-বাপের জন্য দিনরাত হইচই করছে। আর ‘পাকিস্তানী-বীজ-রোপণ’ করার জন্য সবসময় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরা ‘জীন’গতভাবে পাকিস্তানীদের উত্তরসূরী। এদের বেশিরভাগই দেশের রাজাকারদের প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন ‘প্রাইভেট-বিশ্ববিদ্যালয়ে’ অধ্যয়নরত। এরা বাংলাদেশের জন্য আগাছা-পরগাছা-পরজীবী ছাড়া আর-কিছু নয়। আর বাংলাদেশের অন্যতম জাতীয় অভিশাপ হলো: রাজাকারদের প্রতিষ্ঠিত এইসব ‘প্রাইভেট-বিশ্ববিদ্যালয়’। এখানে, কোনোপ্রকার ভালো বা জ্ঞানের কোনো বিষয় নাই। এইসব বিকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের কোমলমতী-শিক্ষার্থীদের দিনরাত মগজধোলাই করা হচ্ছে।
৫. পঞ্চম স্তরের রাজাকার: পাকিস্তানই এদের পথিকৃৎ আর পাকিস্তানই এদের একমাত্র কিবলা: এরাও ‘জীন’গতভাবে পাকিস্তানের ধারক-বাহক হওয়ার চেষ্টা করছে। আর সেই মোতাবেক জীবনযাপন করে যাচ্ছে। এরা বাইরে ‘বাংলাদেশরাষ্ট্রকে’ ভালোবাসার ভান করে থাকে। আসলে, এরা প্রত্যেকে ভিতরে-ভিতরে কখনও-কখনও ভিতরে-বাইরে একেকজন খাঁটি-পাকিস্তানী। এরা সবসময় আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে কথা বলবে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে গালি দিবে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণাদানকারী ভারত ও রাশিয়াকে আক্রমণ করবে। আর এরা ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলতে-বলতে নিজেদের মুখে একেবারে ফেনা তুলে ফেলবে। ভারতের সমালোচনা করা কখনোই দোষের নয়। আর গঠনমূলক আলোচনা-সমালোচনা আমরা সবসময়ই করতে পারি। কিছুক্ষেত্রে বা কোনো স্পর্শকাতর বিষয় ব্যতীত সবকিছুরই আমরা কূটনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রেখে সমালোচনা করতে পারি। কিন্তু আমাদের দেশের এই শ্রেণীর রাজাকার-নরপশুগুলো অহেতুক ভারতবিদ্বেষী-মনোভাব পোষণ করে থাকে। তবে এক্ষেত্রে তারা ১৯৭১ সালের কথা মনে করে আক্রোশবশতঃ ভারতের সমালোচনা করে থাকে। কিন্তু পাকিস্তান এদের পিতৃভূমি। তাই, পাকিস্তানকে ‘বাপ’ ডাকতে এদের কোনো লজ্জাশরম নাই। এদের পাকিস্তান-বাপের কোনো অপরাধও নাই! এরা একেবারে বিশ্ববেহায়া। এগুলো জাতির জীবনে কালসাপ।
৬. ষষ্ঠ স্তরের রাজাকার: জনসমক্ষে ধরা পড়ার ভয়ে এরা সবসময় মুখোশধারী: এরা বলছে ‘আমরাও বাংলাদেশের উন্নয়ন চাই। তবে তা দুর্নীতিমুক্তভাবে।’ এরা আসলে, এসব কথা বলে আওয়ামীলীগকেই ঘায়েল করে দেশের ভিতরে আবার রাজাকারি-শাসন কায়েম করতে চায়। এরা কথায়-কথায় আওয়ামীলীগ, ভারত, রাশিয়া, বঙ্গবন্ধু, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ইত্যাদি নিয়ে মারাত্মক অশালীনভাষায় ও কুরুচিপূর্ণভাবে বক্তব্যপ্রকাশ করে থাকে। এদের মধ্যে অনেক সার্টিফিকেটধারী-পশুও রয়েছে। যেমন, এরা বাংলাদেশে টিকে থাকার স্বার্থে এখন তাদের নামের আগে ব্যারিস্টার, অ্যাডভোকেট, অধ্যাপক, ইঞ্জিনিয়ার, সাবেক ভাইস-চ্যান্সেলর, ডাক্তার, সাংবাদিক, আইনজীবী, অর্থনীতিবিদ, মিডিয়া-ব্যক্তিত্ব, পরিবেশবিদ, কলামনিস্ট, সিএ-এফসিএ, ড. অমুক-তমুক, বিশিষ্ট-শিল্পপতি ইত্যাদি সম্মানজনক খেতাব ও পদবী ব্যবহার করছে। এরা আসলে বর্ণচোরা এবং এই দেশের একনাম্বার শত্রু। আর এইজাতীয় কিছুসংখ্যক রাজাকার ‘বর্তমানে আওয়ামীলীগের’ মধ্যেও ঘাপটিমেরে আছে। এরা খুব শয়তান! এরা পানির মতো। আর তাই, এরা সবজায়গায় যখন-তখন মিশে যেতে পারে।
৭. সপ্তম স্তরের রাজাকার: নব্যশিক্ষিত রাজাকারশ্রেণী: এরা পাকিস্তানের ধুতুরা-ফুল। এদের দেখতে বাঙালি কিংবা বাংলাদেশীর মতো মনে হলেও আসলে এরা একেকটা সম্পূর্ণ পাকিস্তানী। এরা ভিতরে-ভিতরে পাকিস্তানী। কিন্তু তা সহজে মানুষকে বুঝতে দিতে চায় না। এরা একটু সুযোগ পেলে দেশের মুক্তিযুদ্ধ, আওয়ামীলীগ, বঙ্গবন্ধু, ভারত, রাশিয়া, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ইত্যাদিকে সবসময় আক্রমণ করে থাকে। এছাড়া এদের আর-কোনো বিদ্যাশিক্ষা নাই। এরা জন্মের পর থেকে ‘বঙ্গবন্ধু, ভারত ও আওয়ামীলীগকে’ গালি দিতে শিখেছে। এইস্তরের রাজাকাররা খুবই ঘৃণিত ও ভয়াবহ। এরা ভদ্রবেশীশয়তান। দেশের বহু ‘ব্যারিস্টার-নামধারী’ জানোয়ারও সরাসরি এই শ্রেণীভুক্ত। আর এখন বাংলাদেশ থেকে ‘এক ব্রিফকেস’ টাকা নিয়ে ‘পাপের শহর’ লন্ডনে একবার যেতে পারলে অল্প-কিছুদিনের মধ্যেই তার নামের আগে ঝুলবে একটা ‘ব্যারিস্টার’-ডিগ্রী! আর সে তখন সমাজের একটা রেডিমেট বুদ্ধিজীবী হয়ে মাঝে-মাঝে বিভিন্ন প্রাইভেট-টিভি-চ্যানেলে নিয়মিত টকশো-ফকশো করতে পারবে!
৮. অষ্টম স্তরের রাজাকার: আদর্শহীন-লোভী-শঠশ্রেণী: এরা এখন নব্যরাজাকার। এরা পতিত-বামপন্থী, পতিত-চীনপন্থী, পতিত-জাসদ, পতিত-বাসদ, পতিত-ন্যাপ-ভাসানী, পতিত-যেকোনো সমাজতান্ত্রিক দলের সদস্য, পতিত-আওয়ামীলীগার, বহিষ্কৃত-আওয়ামীলীগার, আর নষ্ট-পচা-গলা জাসদ-বাসদের ‘কমিউনিস্ট’ ইত্যাদি। এরা সরাসরি বঙ্গবন্ধুকে গালি না দিলেও তাকে নিয়ে ইনিয়েবিনিয়ে নানারকম শয়তানী-কথাবার্তা বলতে ভালোবাসে। আর এদের প্রায় সবাই ‘পাকিস্তানী-রাজাকারদের’ মতো সবসময় ‘আওয়ামীলীগ, ভারত, রাশিয়ার বিরুদ্ধাচরণ করে থাকে। আবার কখনও-কখনও এই শ্রেণীটি ‘আওয়ামীলীগ, ভারত, রাশিয়া’র সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের সমালোচনা করতেও একপায়ে খাড়া। আর এরাও দেশের জন্য আজ ভয়ানক আপদবিপদ। এইসব ডিগবাজি খাওয়া নষ্ট বামপন্থীদের আসলে কোনো চরিত্র নাই। এরা দেশে সবসময় খাল কেটে কুমির আনতে চায়।
 
এক্ষেত্রে বিশেষ একটি জরুরি কথা তোমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে: আর এই কথাটা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। যে-কেউ চাইলে ভারত, রাশিয়া ও আওয়ামীলীগের গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারবে। আর গঠনমূলক সমালোচনায় কোনো দোষ নাই। কিন্তু সম্পূর্ণ অসৎ-উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বা ১৯৭১ সালের প্রেক্ষাপটে ‘বাংলাদেশসৃষ্টি’র জন্য ভারত, রাশিয়া ও আওয়ামীলীগকে আক্রমণ করে আক্রোশবশতঃ এদের যারা সমালোচনা করবে তারা রাজাকার। আর আমাদের ‘বঙ্গবন্ধু’কে যারা গালি দেয় তারা ১০০% রাজাকার। এই কুকুরদের যেন বাংলায় কখনও ঠাঁই না হয়।
 
স্বাধীন-বাংলাদেশে অতিসহজেই রাজাকার ও নব্যরাজাকার চেনার ত্বরীকা বা উপায়সমূহ:
আজকাল দেশে অনেকে পশু হওয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। আর তাদের ভাবখানা এমন যে, কে কত তাড়াতাড়ি পশু হতে পারে! আর পশু হলেই যেন অনেক লাভ! তাই, জেনেশুনে পশু হওয়ার এমন জোগাড়-যন্ত্র। এরা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান শত্রু। যাক, আর কথা না বাড়িয়ে আজকের প্রধান আলোচনায় ফিরে আসি। দেশে এখন যে-ভাবে নব্যরাজাকারের জন্ম হচ্ছে বা পূর্বের নব্যরাজাকারগুলিই একেকটা নতুনরূপে আমাদের সামনে হাজির হচ্ছে, তাতে আমরা কিছুটা শংকিত না হয়ে পারছি না। আর এদের এখনই প্রতিরোধ করতে হবে। এদিকে দিনে-দিনে অনেক বেলা গড়িয়েছে। রাজাকাররা আবার ঘাঁটি বানিয়েছে আমাদের বাংলায়। এদের চেহারা আগের মতোই। এদের কেউ-কেউ বাইরে একটুখানি ভদ্রতা দেখায় কিন্তু ভিতরে এদের সেই পৈশাচিক হাসি! এরা আজও আমাদের বাংলাদেশরাষ্ট্রকে ভালোবাসে না। এর চেয়ে বড় দুর্ঘটনা এই বাংলাদেশে আর কী আছে? এদের প্রতিরোধ করতেই হবে। এরা আসলে ছদ্মবেশী। আর ছদ্মবেশেই ওরা মানুষের মন ও মগজকে বিষিয়ে তুলছে। এদের বাড়াবাড়ি অনেকটাই বেড়ে গেছে। এসব এখন আমাদের সহ্যের বাইরে। যারা একাত্তরে বাংলাদেশ চায়নি তারা কেন স্বাধীনবাংলাদেশে রাজনীতি করবে? চিরতরে এর অবসান ঘটাতে হবে। আর তো সহ্য করা যায় না। আবার জেগে উঠতে হবে বাংলার তরুণসমাজকে, রুখে দাঁড়াতে হবে সর্বস্তরের দেশপ্রেমিক যুবসমাজকে, প্রতিবাদী হতে হবে রাজাকারবিরোধী দেশের সকল মানুষকে। দেশের স্বার্থে ও প্রয়োজনে আজ মানুষকে জেগে উঠতেই হবে। জয় আমাদের হবেই হবে, ইনশা আল্লাহ। জয়-বাংলা। জয়-বঙ্গবন্ধু।”
 
অধ্যাপকসাহেবের আবেগঘন কথাগুলো শুনে সামনে উপবিষ্ট শ্রোতামণ্ডলীও সমবেতকণ্ঠে বলে উঠলো, “জয়-বাংলা। জয়-বাংলা। জয়-বাংলা। জয়-বঙ্গবন্ধু।”
 
অধ্যাপক লিটু মিয়া আবার বলতে লাগলেন, “একটু আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলাম। আসলে, রাজাকারদের আমি কখনও সহ্য করতে পারি না। আমার মতে, এরাই আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু। এখন তোমাদের সামনে রাজাকার ও নব্যরাজাকারের কয়েকটি সুনির্দিষ্ট লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্যসমূহ তুলে ধরা হলো:
 
১. যে বা যারা বলবে: ‘কবে কোন্ মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, তার জন্য এখন আবার একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী-বিচারের নাটক কেন? এতকাল পরে ‘কে রাজাকার’ আর কে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ তা নিয়ে প্রশ্ন করা ঠিক নয়।’ এরা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার রাজাকারদের মতোই ভয়ানক দুশ্চরিত্রবান। আর এরা লোকদেখানো দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়ে তাদের শয়তানী-মতবাদের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চায়। এরা এখনও পাকিস্তানকে তাদের ঈমানের অংশ বলে মনে করে থাকে। আর এই লোকগুলোই সবসময় আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ধৃষ্টতা প্রদর্শন করে থাকে। এই নরপশুদের চামড়া দিয়ে আমাদের দেশের অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের জুতা বানিয়ে দেওয়া উচিত। এদের কঠিন শাস্তি দিতে হবে।
 
২. যারা বলবে: ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা ঠিক নয়। এতে দেশের ভিতরে সংঘাতসৃষ্টি হবে। এসব এখন বাদ দেওয়াই ভালো। আর এসব বাদ দিয়ে এখন দেশের উন্নতির কথা ভাবা উচিত।’ এরা একাত্তরের সরাসরি রাজাকার আর নয়তো এই রাজাকারদেরই উত্তরসূরী। আর এরা ১৯৭১ সালের রাজাকারদের চেয়েও ভয়ংকর। সবসময় এরা দেশবিরোধী শয়তানী ও নাশকতায় লিপ্ত। এরা কোনোভাবেই বাংলাদেশী নয়। বাংলাদেশের প্রতি এদের কোনো মায়া-দয়া নাই। এরা উত্তরাধিকারসূত্রে পাকিস্তানী। আর এরা নব্যরাজাকার। এই নব্যরাজাকারশ্রেণী এইসব আবোলতাবোল কথা বলে থাকে।
৩. যারা বলবে: ‘এতকাল পরে অহেতুক মুক্তিযুদ্ধের সময়কার রাজাকারদের বিচারের নামে দেশের সম্পদ বিনষ্ট করা হচ্ছে। আর শেখ মুজিবই তো রাজাকারদের ক্ষমা করে দিয়েছে!’ এরা অত্যন্ত দক্ষ রাজাকার। এরা বঙ্গবন্ধুর ‘সাধারণ ক্ষমা-ঘোষণা’র আদেশটির ভুলব্যাখ্যা দিয়ে সত্যকে আড়ালে করার অপচেষ্টা করছে। এরাও অতীব ঘৃণিত নব্যরাজাকার।
 
৪. যারা বলে: ‘আওয়ামীলীগই তো যুদ্ধাপরাধীদের এতদিন বিচার করে নাই! এখন আবার নতুন করে এই বিচার করার মানে কী?’ এরাও সত্যকে পাশ কাটিয়ে চলতে অভ্যস্ত। আর এরা মহাসত্যকে আড়াল করতে চায়। অথচ, ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুই ‘দালাল-আইন’ প্রণয়নসহ এই বিষয়ে অধ্যাদেশ-জারী করে একাত্তরের দালালদের বিচারের কাজ শুরু করেছিলেন। আর এতে অনেকের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিও হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালের পরে বাংলার মীরজাফর: জিয়াউর রহমান এদের ছেড়ে দিয়েছিল। আর এই শ্রেণীটি এখন পরিকল্পিতভাবে তা অস্বীকার করছে। জিয়া এদের ধর্মবাপ হয় যে! এরাও নব্যরাজাকার। জিয়াসম্পর্কে একটি ঘটনা বলছি: ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু-হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৬ সালে ঢাকা-কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জিয়ার নির্দেশে ছাড়া পায় কুখ্যাত রাজাকার ও বিচারাধীন আসামী শর্ষিণার কুলাঙ্গার পীর-নামধারী পাকিস্তানের পা-চাটা-কুত্তা মৌলোভী আবু জাফর ছালেহ। এতেই বুঝতে পারছো, রাজাকারদের বিচার কারা চায় না, এবং কারা এসব এতদিন আটকিয়ে রেখেছিল, আর তা বানচাল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল। এরাই এখন জিয়ার আদর্শের বিএনপি।
 
৫. যারা বলবে: ‘বাংলাদেশে কোনো যুদ্ধাপরাধ হয়নি। এসব বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।’ তারাও নব্যরাজাকার। আর এসব শয়তান পাকিস্তানের জারজপুত্র। এরা বাংলার আত্মস্বীকৃত-জারজসন্তান। এই জারজরা একাত্তরে পাকিস্তানীদের সর্বপ্রকার সাহায্য-সহযোগিতা করেছিল বলে ওদের শায়েস্তা করতে আমাদের নয়টি মাস লেগেছিল। আর আমাদের এত রক্ত দিতে হয়েছে। নইলে, আমরা আরও আগে স্বাধীন হতে পারতাম। এরা পাকিস্তানের চিরদালাল। এদের বাংলাদেশে বাঁচিয়ে রাখা ঠিক নয়।
 
৬. যারা বলবে: ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় শেখ মুজিব আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানে চলে গিয়েছিল।... পালিয়ে গিয়েছিল।’ এরা ভয়ানক রাজাকার ও নব্যরাজাকার। আর এদের মতো অকৃতজ্ঞ ও নৃশংস জারজসন্তান দেশে খুব কমই আছে। আর এদের মধ্যে ন্যূনতম মানবতাবোধ ও মনুষ্যত্ব নাই। এই শ্রেণীটি এখনও ১৯৭১ সালের পবিত্র মুক্তিযুদ্ধকে স্বীকার করে না, এবং বাংলাদেশকে রাষ্ট্র হিসাবে মানে না। এদের বুকের ভিতরে শুধু পাকিস্তান-আর-পাকিস্তান। তাই, এরাই হলো বাংলাদেশে বসবাসকারী পাকিস্তানের প্রকৃত জারজসন্তান।
 
৭. যারা বলবে: ‘বাংলাদেশ ইসলামী রাষ্ট্র নয়, এটা ধর্মহীন-ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের রাষ্ট্র কিংবা বাংলাদেশ, পাকিস্তানের মতো ইসলামীরাষ্ট্র নয়!’ এরা বংশীয় তথা বংশানুক্রমে রাজাকার! আর রাজাকারি করতেই এদের ভালো লাগে। এরা পবিত্র ইসলামধর্মের কোনোকিছুই বোঝে না, এবং পালনও করে না। কিন্তু রাজনৈতিক ফায়দা-লুটতে মুখে-মুখে শুধু ইসলাম-ইসলাম করে থাকে। এরা মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের চিরদুশমন। এরা ধর্মের কিছুই বোঝে না। কিন্তু ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক ফায়দা-লোটার জন্য সবসময় একপায়ে খাড়া। এরা মানুষও না, এরা মুসলমানও না। এরা যুগজামানার সাক্ষাৎ শয়তান।
 
৮. যারা বলবে: ‘পাকিস্তান থাকলে এতোদিনে দেশটা কত এগিয়ে যেত! আর আমরা হতাম পারমাণবিক শক্তির অধিকারী রাষ্ট্র!’ এরা ঘৃণিত রাজাকার। এই মূর্খগুলো এখনও জানে না যে, বর্তমানে বাংলাদেশ সবদিক দিয়ে পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বুকে উন্নয়নের একটা দৃষ্টান্তমূলক রোল-মডেল। আর পাকিস্তান শুধু বিশ্বের বুকে হত্যা, খুন, ধর্ষণ ও জঙ্গিবাদে এগিয়ে রয়েছে। ধিক্ এই কুলাঙ্গারদের ধিক্।
 
৯. যারা বলবে: ‘একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ-ট্রাইব্যুনাল আন্তর্জাতিকমানের নয়, এটি প্রতিহিংসামূলক!’ তারা বাংলাদেশের অভিশপ্ত-রাজাকার। এরা বংশানুক্রমে এইসব শয়তানী-কথাবার্তা বলে দেশের ভিতরে একটা অরাজকতাসৃষ্টি করতে চায়।
 
১০. যারা বলবে: ‘আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ-ট্রাইব্যুনাল-এর একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার কোনো এখতিয়ার নেই। এখানে ন্যায়বিচার নেই!’ তারা বংশানুক্রমিক-রাজাকার। আর এরা যতদিন বাংলাদেশে থাকবে ততদিন বাংলাদেশের ক্ষতি করবে। এরা আমাদের জাতীয় জীবনে শুধুই আগাছা-পরগাছা-পরজীবী জঞ্জাল মাত্র। এদের চেয়ে বনের শুয়োরও অনেক ভালো। তার কারণ, এইসব জঙ্গলের শুয়োর আমাদের কোনো ক্ষতি করে না। ওরা এখন অনেক ভদ্র। কিন্তু এই রাজাকাররা কখনও ভদ্র হবে না।
 
১১. যারা বলবে: ‘ভারতের চক্রান্তে পাকিস্তান ভাঙ্গা হয়েছে। আর ভারতই চক্রান্ত করে পাকিস্তান ভেঙ্গেছে। পাকিস্তান ভাঙ্গা ঠিক হয় নাই।’ তারা এখনও একাত্তরের রাজাকারদের মতো ভয়াবহ আপদ। এগুলোর মানুষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নাই। অধিকন্তু, এগুলো দিনের-পর-দিন আরও ভয়ংকর পশু হয়ে উঠবে।
 
১২. যারা বলবে: ‘ভারত আমাদের শত্রুরাষ্ট্র, আর পাকিস্তান আমাদের ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ বা বন্ধুরাষ্ট্র! পাকিস্তান মুসলমানের দেশ!’ তারা চিরদিনের ঘৃণিত রাজাকার। এদের, এই দেশ থেকে বের করে দিতে হবে। এই জানোয়ারদের দেশে রাখার কোনো মানে হয় না। এগুলো পাকিস্তানের পাপসন্তান।
 
১৩. যারা বলবে: ‘একজন মুসলমান হিসাবে ক্রিকেট-খেলায় আমাদের পাকিস্তানকে সাপোর্ট করতে হবে। আমরা পাকিস্তানের সাপোর্টার!’ তারা সরাসরি একাত্তরের রাজাকার ও তাদের বংশধর। এরা যে জাতির ইতিহাসে পুরাতন শকুন তাতে কোনো সন্দেহ নাই।
 
১৪.   যারা বলবে: ‘পাকিস্তানীরা সৌদি-আরবের সঙ্গে একই দিনে ঈদউৎসবপালন করে থাকে। এটাই সঠিক। আর আমাদের বাংলাদেশেও সৌদি-আরব ও পাকিস্তানের সঙ্গে ঈদ করতে হবে। এরা জন্মগতভাবে রাজাকার, আর চরম বেআদব। এরা ইসলামের নামে ধোঁকাবাজ। এরাই প্রকৃত ধর্মব্যবসায়ীচক্র।
 
১৫.   যারা বলবে: ‘৭২-এর সংবিধান ইসলামবিরোধী!’ তারা সত্যিকারভাবে মানুষ ও মানবতার শত্রু। আর তারা পাকিস্তানের দালাল।
 
 
১৬. যারা বলবে: ‘ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ মানে ধর্মহীনতা, নাস্তিকতা।’ তারা পাকিস্তানের বংশধর। আর তারাই প্রকৃত ইসলামবিরোধী-অপশক্তি।
 
১৭. যারা বলবে: ‘একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া স্বচ্ছ হতে হবে।’ এরা এখনও পাকিস্তানীঘাতক। আর দেশের কুখ্যাত রাজাকার।
 
১৮. যারা বলবে: ‘দেশে চাকরিক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের ও তাঁদের সন্তানসন্ততিদের জন্য কোটা রাখা বা কোটা-সংরক্ষণ-পদ্ধতির কোনো প্রয়োজন নাই’—তারাও অতিমাত্রায় বিষধর ও রাজাকার এবং নব্যরাজাকার। এরা আসলে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান বা ভক্তিশ্রদ্ধা দেখাতে নারাজ। এরা রাজাকারবংশের প্রকৃত উত্তরাধিকারী। এরা নিরাপদ বাংলাদেশের জন্য সবসময় হুমকিস্বরূপ।
 
১৯. যারা বলবে: ‘চাকরিবাকরি ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা একাত্তরে যুদ্ধ করেছিল’—তারা সম্পূর্ণ রাজাকার আর জাতির জীবনে সর্বাপেক্ষা বড়সড় কুলাঙ্গার এবং সাড়ে হারামজাদা। এরা আসলে পাকিস্তানপন্থী। এদের মতো শুয়োরের এদেশে বসবাস করার আইনগত কোনো অধিকার নাই।
 
২০. যারা বিদ্রুপ করে বলবে: ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাজ, চেতনাধারী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-কারবারি, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি!’—তারাও অতিমাত্রায় রাজাকার। আর এরা নব্যরাজাকার, এবং রাজাকারবংশের প্রকৃত উত্তরাধিকারী। ঘৃণা এই নরপশুদের জন্য।
 
আমাদের দেশের সকল রাজনৈতিক দল যদি কায়মনোবাক্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হতো—তাহলে, দেশে এতদিনে একটা রাজাকারও থাকতে পারতো না। এখানে, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী দলগুলো বারবার রাষ্ট্রক্ষমতাদখল করে রাজাকারদের আশ্রয়প্রশ্রয় দিয়েছে। এরা সবসময় দেশবিরোধী এই লোভী বানরদের ভালোবেসে মাথায় তুলেছে। আর এরা এখন পাকিস্তানী-কায়দায় আবার ইসলামের নামে অপরাজনীতি শুরু করেছে।
আমাদের দেশের বর্তমান আদর্শবিহীন রাজনৈতিক দলগুলো শুধুই নিজেদের স্বার্থের অপরাজনীতিতে নিয়োজিত রয়েছে। এক্ষেত্রে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া একটা বিএনপি এখন পুরাপুরি রাজাকারদের দোসর ও তাদের সমমনা। এর নেতৃত্বে রয়েছে একশ্রেণীর নষ্ট লোক। এরা সবসময় বাংলাদেশবিরোধী মনোভাবের অধিকারী। এরা একাত্তরের রাজাকারদের বগলদাবা করে রাজনীতি করছে। রাজাকারি-অপশক্তির প্রতি এদের আস্থা ও ভরসা বেশি। এই বিএনপিরা একটু ভালো হলে দেশের কত মঙ্গল হতো! কিন্তু তা কি আদৌ সম্ভব? এদের সঙ্গে জোটবদ্ধ রয়েছে একাত্তরের পরাজিত শকুন ও যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান ও তাদের বাংলাদেশী রাজাকার-ব্রিগেড ইসলামী-ছাত্রশিবির। এগুলো কোনো রাজনৈতিক দল নয়। এরা ধর্মের খোলসে শুধু রাষ্ট্রক্ষমতার মুখাপেক্ষী। আর দেশে যত বামপন্থী আছে এদের কোনো নীতি ও আদর্শ নাই বলে এরা এখন পুরাতন কাপড়ের মতো ছিন্নভিন্ন ও শতধাবিভক্ত। নিজেদের অহমিকা আর লোভ-হিংসার কারণে এরা এখন জনবিচ্ছিন্ন। এদের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস কোনোটাই এখন নাই। অথচ, দেশে আওয়ামীলীগের পাশাপাশি আরও দুই-একটি আদর্শবাদী দলের প্রয়োজন। দেশে এখন সত্যিকারের, শক্তিশালী ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিরোধী রাজনৈতিক দল নাই। আমাদের দাবি হচ্ছে: ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদল উভয়ক্ষেত্রে সবসময় মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশে থাকতে হবে। এর বাইরে বিশ্বাসঘাতক কোনো রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব এদেশে থাকতে পারবে না।
 
দেশে পাগল-ছাগলের সংখ্যা যে-ভাবে দিনের-পর-দিন বাড়ছে, তাতে আগামীদিনগুলোতে অক্ষতশরীরে ঘরে ফিরা যাবে কিনা, তা-ই বসে-বসে ভাবছি। আগে আমরা শুনতাম: পাগলাকুকুরে কামড়ায়। আর পাগলে দাবড়ায়।
এখন দেখছি সবই উল্টা। এখন রাস্তাঘাটে পাগলাকুকুর তেমন একটা চোখে পড়ে না। আর সত্যিকারের পাগলের সংখ্যাও কমে গেছে। তবে এখন দেশে একশ্রেণীর ‘নতুন-জাতের’ পাগলছাগলের উদ্ভব ঘটেছে। এদের চেহারা মানুষের মতো হলেও এরা আসলে বাইরে মানুষ, আর ভিতরে সম্পূর্ণ পশু। আর এদের পশুত্বের শেষ নাই। এরা বাংলাদেশের নতুন জাতের পশু। এরা সবসময় মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনার বিরোধী। এরা ভয়ংকর স্বার্থপর। তাই, রাজনীতির নামে এরা সদাসর্বদা  আজেবাজে, আলতুফালতু ও আবোলতাবোল কথা বলতে ভালোবাসে। এই জানোয়ারদের বিরুদ্ধে আমাদের এখনই রুখে দাঁড়াতে হবে। আর কালবিলম্ব না করে এইজাতীয় পাগল-ছাগলদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে এড়িয়ে চলবে। মনে রাখবে: এই দেশের সর্বাপেক্ষা বড় শত্রু হলো—রাজাকার ও তাদের দোসর স্বার্থপর রাজনীতিক ও ঘুষখোর আমলাশ্রেণী। এই তিন প্রজাতির শুয়োরদের হাত থেকে আমাদের সোনার বাংলাকে বাঁচাতে হবে। আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধুও এই তিন শ্রেণীর শুয়োরদের সবসময় ঘৃণা করতেন। তাই, তিনি দেশবিরোধী এই  দুর্নীতিবাজদের চিরতরে উৎখাত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই সুযোগ ওরা তাঁকে দেয়নি। তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট দেশবিরোধী-রাজাকার-অপশক্তি তথা দুর্নীতিবাজদের হাতেই শহীদ হয়েছেন।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বর্তমানে দুর্নীতিবাজরা খুবই প্রভাবশালী। এরা প্রত্যেকে প্রচুর পরিমাণে কালোটাকার মালিক। এজন্য দেশের আইন, বিচার ও প্রশাসন এদের হাতের মুঠোয়। এরা কালোটাকার জোরে দেশের নদী-নালা, খাল-বিল, হাওড়, জলাশয়, পাহাড়পর্বত, খাসজমি থেকে শুরু করে সরকারি-রাস্তাঘাট পর্যন্ত আজ দখল করে নিচ্ছে! এদের নামের আগে আছে শিল্পপতি, সিআইপি, ভিআইপি, ভিভিআইপি, ব্যবসায়ী, অমুক-তমুক গ্রুপের মালিক, বিভিন্ন গ্রুপ-অব-ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক ইত্যাদি। এরা বর্তমান-সমাজের এলিটশ্রেণী! এদের দাপটে রাজনীতির মাঠে দেশের সৎ, বিশ্বস্ত, নীতিবান, আদর্শবান, ভদ্রলোক, মানবপ্রেমিক ও দেশপ্রেমিক রাজনীতিকরা কিছুতেই টিকতে পারছেন না। সবখানে আজ টাকার জোরে উড়ে এসে জুড়ে বসছে এই নষ্টচরিত্রের ধনিকশ্রেণী। আজ আমার বলতে কোনো দ্বিধা নাই যে, এই কালোটাকার ধনিক-লম্পটশ্রেণীও রাজাকার। আর এদের একেকটা ভয়ংকর দেশবিরোধী-রাজাকার। এরাও দেশের প্রধান শত্রু। এদের হাত থেকে আজ আমাদের দেশ ও রাজনীতিকে বাঁচাতে হবে।”
 
দীর্ঘ বক্তৃতার পর অধ্যাপক লিটু মিয়া একটু থেমে সবার দিকে দৃষ্টিপাত করে বললেন, “তোমাদের সবার মনের আশা আমি পূরণ করতে পেরেছি কিনা জানি না। তবে আমি চেষ্টা করেছি। আমি দেশের স্বার্থে এতক্ষণ কথা বলেছি। আর যদি কাউকে মন্দ বলেও থাকি তবে তা শুধু দেশের স্বার্থে। আর দেশবিরোধীদের বিরুদ্ধে আমাদের সত্য বলতেই হবে। এতে কার স্বার্থে আঘাত লাগলো, আর না লাগলো তা দেখলে চলবে না। সে যেই হোক না কেন, আমাদের দেশের শত্রুকে সবসময় ঘৃণার চোখে দেখতে হবে।”
একথা শোনার পর অধ্যাপক আবু কায়েস বিনীতভঙ্গিতে বলতে লাগলো, “স্যার, আপনি এতক্ষণ যা বলেছেন তা এই তরুণদের জন্য পাথেয়। এই দেশে যে এত রকমের রাজাকার রয়েছে তা আমরা বুঝতেই পারিনি। আজ আপনার কাছ থেকে আমরা সব জেনে নিলাম। আমরা এ-ধরনের রাজাকারদের কথাবার্তা অনেক শুনেছি। এরা খুব বর্ণচোরা। কিন্তু এবার এদের চিনতে পেরেছি।”
তার কথার সুর ধরে সৌরভ, বিপ্লব, মাকিদ, রায়হান সহমতপোষণ করলো। আর প্রত্যেকের মুখ থেকে যেন স্বগতোক্তি বেরিয়ে এলো: এগুলো আমাদের আরও আগে জানা উচিত ছিল।
আর তরুণ মাকিদ ও বিপ্লব শপথ করলো যে, তারা এগুলো তার বন্ধুদের মাঝে ছড়িয়ে দিবে। দেশের সর্বস্তরের রাজাকারদের এবার চিনতে হবে।
 
দুপুর হয়ে এসেছিল। যার-যার বাসায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো ওরা কয়েকজন। কিন্তু অধ্যাপক লিটু মিয়া ওদের বাধা দিয়ে বললেন, “তোমরা আজ কিছুতেই যেতে পারবে না। দুপুরের জন্য ভুনাখিচুরি রান্না করা হচ্ছে। আমরা সবাই আজ একসঙ্গে খাবো। তারপর একটু বিশ্রাম নিয়ে আমরা বিকালে আরও কিছু দরকারি কথাবার্তা বলবো। আর বিকালের এই বিশেষ আলোচনাপর্বও হবে আরও সহজ প্রশ্নোত্তরপদ্ধতিতে। এতে তোমাদের মনের সকল দ্বিধাদ্বন্দ্ব আশা করি আজ দূর হয়ে যাবে। তোমরা আজ মনের মতো প্রশ্ন করবে।”
 
এতে সবাই খুশিতে হাততালি দিয়ে উঠলো। ওদের খুশি দেখে হেসে ফেললেন এই শতাব্দীর সর্বাপেক্ষা স্পষ্টবাদী-রাজনীতিক ও আধ্যাত্মিক সাধক অধ্যাপক লিটু মিয়া। মানবপ্রেমই তার ধর্ম। তিনি মানবপ্রেমিক ও দেশপ্রেমিক হওয়ার জন্য আজও আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এজন্য তার সাধনার কোনো কমতি নাই।
 
(চলবে)
 
সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।
রচনাকাল: ২০১৪ খ্রিস্টাব্দ
১৩/০২/২০১৯

 

ছবি
সেকশনঃ মুক্তিযুদ্ধ
লিখেছেনঃ সাইয়িদ রফিকুল হক১ তারিখঃ 13/02/2019
সর্বমোট 5271 বার পঠিত
ফেসবুকের মাধ্যমে কমেন্ট করুণ

সার্চ

সর্বোচ্চ মন্তব্যকৃত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন