ব্যাকগ্রাউন্ড

ফেইসবুকে!

হেইয়াউ নরবলি, ইনডেমনিটি ও ৩রা নভেম্বর!


নরবলি হলো দেবতাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে বা ঐশ্বরিক অনুগ্রহ প্রাপ্তির আশায় কিংবা ক্রুদ্ধ দেবতাকে শান্ত করার লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে মানুষ হত্যা। নরহত্যা ও নরবলি এক নয়। নরবলি হলো পুণ্যের উদ্দেশ্য প্রাচীন সমাজের একসময়ের সামাজিকভাবে অনুমোদিত আনুষ্ঠানিক মানুষ হত্যা যার কোন বিচার নাই। অন্যদিকে নরহত্যা হলো মানুষ হত্যা যা সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। এটি একটি অপরাধ এবং বিচারিক কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত।

কার্থেজ, এট্রুস্কান, মেসোপটেমিয়া, অ্যাজটেক, ইনকা, ফিজি, ডাহোমে, মায়া ইত্যাদি সভ্যতা ও ভূখণ্ডে একসময়ে নরবলির প্রচলন ছিল। দেবতার আশীর্বাদের নামে নরবলিকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহার করা হতো।

স্রষ্টার মনোরঞ্জনের তকমা লাগিয়ে শ্যাং রাজবংশের শাসনামলে প্রাচীন চীনে নরবলিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে খতম করার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো। প্রাচীন হাওয়াইয়ের অধিবাসীরা দেবতাকে তুষ্টির নাম করে প্রতিপক্ষ গোত্রের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিকে বন্দী করে নরবলির মাধ্যমে হত্যা করত। এই নরবলিকে তারা বলতো ‘হেইয়াউ’।

রাজনৈতিক দেবতার ছদ্মবেশে অপদেবতার রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল এবং দেবতাতুষ্টির নামে নিজেদের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ ও স্থায়ী করার মতলবে আমাদের ভূখণ্ডেও পরিকল্পিতভাবে নরহত্যা হয়েছে। নরহত্যাকে ইনডেমনিটি নামক আইন বানিয়ে তার বিচারিক প্রক্রিয়া রুদ্ধ করা হয়েছে। এটির বৈধতা দিয়ে নরহত্যার অপরাধকে নরবলির আনুষ্ঠানিকতা দিয়ে মোড়ানো হয়েছে। এই বর্বর ঘটনাগুলি প্রাচীনকালে নয়, ঘটেছে কলিকালে, পঁচাত্তরের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে। প্রাচীন হাওয়াইয়ের নরবলির ‘হেইয়াউ’ শব্দটিকে পঁচাত্তর পট-সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক অপদেবতারা ‘ইনডেমনিটি’ নামক শব্দ দিয়ে প্রতিস্থাপন করেছে।

পনেরোই আগস্ট, তেসরা নভেম্বর, সাতই নভেম্বরের হত্যাকাণ্ডগুলি একসূত্রে গাঁথা। ধারাবাহিক অপকর্মের ক্রমধারায় এই দিনগুলিতে অপদেবতারা দেবতার আসনে বসার জন্য দেবতা বলি দিয়েছে। নরবলির মাধ্যমে রাজনৈতিক দেবতা বলির রক্ত দিয়ে অপদেবতারা নিজেদের অর্ঘে নিজেরা পূজো নিয়েছে। এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডকে বৈধ ও মহিমান্বিত করার জন্য তারা কিছু তরতাজা যুতসই শব্দ বানিয়ে তা জোরেশোরে প্রচার করেছে। দিয়েছে খুন ও খুনির বৈধতা। নরবলি থেকে সৃষ্টি হওয়া সেই জঘন্য শব্দগুলির মধ্যে একসময়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা শব্দগুলি হচ্ছে “বহু দলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক”এবং “বিপ্লব ও সংহতি দিবস”।

আজ জেলহত্যা দিবস। নরবলির সাথে সম্পৃক্ত এবং সেই ধারার স্বপক্ষের সকল রাজনৈতিক অপশক্তির অবসান ঘটানো হোক সেটাই প্রত্যাশা।

ছবি
সেকশনঃ সাধারণ পোস্ট
লিখেছেনঃ যুক্তিযুক্ত তারিখঃ 04/11/2018
সর্বমোট 2553 বার পঠিত
ফেসবুকের মাধ্যমে কমেন্ট করুণ

সার্চ

সর্বোচ্চ মন্তব্যকৃত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন