কিশোর বয়সে বলশেভিক বিপ্লবের মহান নায়ক ভ্লাদিমির উলিয়ানভ ইলিচের (ছদ্মনামঃ লেনিন) জীবনীগ্রন্থ পাঠকালে স্যেকুলারিজম কথাটা সর্বপ্রথম শুনেছিলাম। পরবর্তীতে ইতিহাস, দর্শন, রাজনীতি প্রভৃতি বিষয়ের সংশ্লিষ্টতত্ত্ব হিসেবে বার বার সামনে এসেছে। ভারতীয় উপমহাদেশে ( অংশ হিসেবে বাংলাদেশেও) সেক্যুলারিজম তত্ত্বটিকে সঠিকভাবে পাঠ করা হয় নি; স্বাভাবিকভাবে সাধারণ মানুষের কাছে সঠিক ব্যাখ্যাও পৌছে নি। এর দায় কার, তা নিয়ে আলোচনা করার চাইতে বরং সেক্যুলারিজমের সঠিক ব্যাখ্যাটা মানুষের কাছে পৌছানো দরকার ।
ইংরেজিতে "লস্ট ইন ট্রান্সলেশন" বলে একটা কথা আছে। বিদেশী শব্দ অনুবাদ করতে গিয়ে অনেক সময় পুরোপুরি একই অর্থ প্রকাশ করে এমন শব্দ খুজে পাওয়া যায় না। সেসব ক্ষেত্রে বিকল্প শব্দ ব্যবহার করে অনুবাদের ফলে মুল বিষয়টির কিছু অর্থ হারিয়ে যায়। সেক্যুলারিজমের বাংলা অনুবাদ করতে গিয়ে এমন ঘটনা ঘটেছে। ইহজাগতিকতা পুরোপুরি বদলে গিয়ে সেক্যুলারিজম এখন পৌছে গিয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতায়, অথচ উপমহাদেশে এর প্রকৃত অর্থ বদলে পড়া হয় "সকল ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধা প্রদর্শন"।
প্রকৃতপক্ষে সেক্যুলারিজম শব্দটির অর্থ সকল ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধা নয়, বরং সেকুলারিজম বা ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ হচ্ছে এমন একটি মতবাদ, চিন্তাধারা ও বিশ্বাস, যা পারলৌকিক ধ্যান ধারণা ও ধর্মের সাথে সম্পর্কহীনভাবে সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার কথা বলে । আমেরিক্যান হেরিটেজ ডিকশনারীতে secularism শব্দটির সংজ্ঞা এভাবে দেওয়া হয়েছে -
"The view that religious considerations should be excluded from civil affairs or public education"
"নিরপেক্ষ" শব্দের অর্থ কোনও পক্ষে নয় ৷ "ধর্ম-নিরপেক্ষ" শব্দের অর্থ, কোন ধর্মের পক্ষে নয় ৷ অর্থাৎ সমস্ত ধর্মের সাথে সম্পর্কহীন ৷ "Seculaism" শব্দের আভিধানিক অর্থ এরকম - এটি একটি মতবাদ, যা মনে করে রাষ্ট্রনীতি, শিক্ষাব্যবস্থা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রভৃতি বিষয় সর্বদা ধর্মীয় সংশ্লিষ্টতা থেকে মুক্ত থাকা উচিত ৷
অথচ ভারতের রাষ্ট্রপতি রাধাকৃষ্ণন পঞ্চাশের দশকে ঘোষনা করেন, "ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয় বরং সর্ব ধর্মের সহাবস্থান "। এমনকি বাংলাদেশের জাতির জনক, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি ব্যক্তিজীবনে একজন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি হয়েও সারাজীবন নিষ্ঠার সাথে অসাম্প্রদায়িকতার চর্চা করেছেন, তিনি বলেছেন -
"বাংলাদেশ হবে একটা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র । ধর্মনিরপেক্ষতা হল ধর্মহীনতা নয় । মুসলমান মুসলমানের ধর্ম পালন করবে, হিন্দু হিন্দুর ধর্ম পালন করবে । খ্রীস্টান তার ধর্ম পালন করবে । বৌদ্ধও তার নিজের ধর্ম পালন করবে । এ মাটিতে ধর্মহীনতা নেই, ধর্মনিরপেক্ষতা আছে ।"
এই বক্তব্য থেকে সেক্যুলারিজমের অর্থ হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা নয়, বরং অসাম্প্রদায়িকতা প্রতীয়মান হয়েছে । সকল ধর্মের সহাবস্থান ও সদ্ভাব নিশ্চিত হয়েছে । কিন্তু অসাম্প্রাদায়িকতা ধর্মনিরপেক্ষতার অনেকগুলো উপাদানের মধ্যে একটি তুলনামূলকভাবে সংকীর্ণ ধারণা । রাষ্ট্র নিজে অসাম্প্রদায়িক হতে পারে না, কারণ সে কোন সম্প্রদায়ভুক্ত নয় । মানুষ অসাম্প্রদায়িক হতে পারলেও রাষ্ট্র তা পারে না । অসাম্প্রদায়িকতার অর্থ হলো, সকল ধর্মকে একই দৃষ্টিতে দেখা । এই শাব্দিক দ্বন্দ্বের কারনে বাংলাদেশের সংবিধানের ১২ নং অনুচ্ছেদে ধর্মনিরপেক্ষতাকে (ধর্ম নিয়ে রাজনীতির সুযোগ রহিতকরণ) রাষ্ট্র পরিচালনার মুলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হলেও বাস্তবে রাষ্ট্র কর্তৃক এটাকে সকল ধর্মকে সমান মর্যাদা-দানের বিষয়ে পরিণত হয়েছে । পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালের অষ্টম সংশধোনীতে ইসলাম ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা করার পর ব্যাপারটা হাস্যকর রকম বৈপরীত্য প্রদর্শন করছে । একই সঙ্গে সেক্যুলারিজম ও রাষ্ট্রধর্মযুক্ত সংবিধান প্রসব করার কৃতিত্ব শুধুমাত্র বাংলাদেশি আইনপ্রণেতাদের । এসব আইনপ্রণেতাগণদের অনেকে কথায় কথায় সেক্যুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতার বুলি কপচালেও সেক্যুলারিজমের আসল বিষয়টার মর্মার্থ বোঝার মত তত্ত্বগত জ্ঞান অধিকাংশেরই নেই । যাদের রয়েছে, সঠিক ব্যাখ্যা দেওয়ার সৎসাহস তাদের নেই । প্রখ্যাত বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক ডঃ অভিজিৎ রায় এই ধর্মনিরপেক্ষতাকে ছদ্ম ধর্মনিরপেক্ষতা বা Pseudo Secularism বলেছেন ।
“ধর্মনিরপেক্ষতা বা সেকুলারিজম” শব্দটি ১৮৫১ সালে ব্রিটিশ লেখক জর্জ জ্যাকব প্রথম ব্যবহার করেন । জর্জ জ্যাকব ধর্মের কোনো রকম সমালোচনা ছাড়া, সমাজে শৃঙ্খলা আনয়নের জন্য তার এই ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণা প্রকাশ করেন । তিনি এই মতবাদকে আরো বিস্তৃত করেন এবং বলেন যে “ধর্মনিরপেক্ষতা খ্রীষ্টধর্মের বিরুদ্ধের কেনো মতবাদ নয় । এটি একটি স্বাধীন সত্ত্বা । ধর্মের অস্তিত্ব নিয়ে এটি কোনো প্রশ্ন তোলে না, কিন্তু অন্যদের ধর্মনিরপেক্ষ হতে উৎসাহিত করে।”
আসুন দেখে নেই, সেক্যুলারিজম সম্পর্কে যুক্তরাজ্যের National Secular Society (ন্যাশনাল সেক্যুলার সোসাইটী) তাদের ওয়েবপেইজে 'What is Secularism?' (সেক্যুলারিজম কী?) অধ্যায়ে যা বলা হয়েছে, তার পাঁচটি কথা মূল ইংরেজী-সহ বাংলায় অনুবাদ করা হলোঃ
(এক)
রাষ্ট্র থেকে ধর্মের পৃথকীকরণ
সেক্যুলারিজমের ভিত্তি হচ্ছে ধর্ম ও রাষ্ট্রের পৃথকীকরণ । রাষ্ট্রের ব্যাপারে ধর্মীয় গোষ্ঠীসমূহ এবং ধর্মীয় ব্যাপারে রাষ্ট্র যাতে হস্তক্ষেপ না করে, সেক্যুলারিজম তা নিশ্চিত করে।
Separation of religion from state
The separation of religion and state is the foundation of secularism. It ensures religious groups don't interfere in affairs of state, and the state doesn't interfere in religious affairs.
(দুই)
সেক্যুলারিজম ধর্মবিশ্বাসী ও ধর্মবিশ্বাসহীন উভয়কে রক্ষা করে
সেক্যুলারিজম সকল নাগরিকের ধর্মীয় বিশ্বাস ও চর্চার স্বাধীনতা রক্ষা ও নিশ্চিত করতে চায় । সেক্যুলারবাদীরা বিশ্বাসী ও বিশ্বাসহীন সকল ক্ষেত্রে সমানভাবে চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা সমানভাবে প্রয়োগ করতে চায় । তারা ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব করতে চায় না।
Secularism protects both believers and non-believers
Secularism seeks to ensure and protect freedom of religious belief and practice for all citizens. Secularists want freedoms of thought and conscience to apply equally to all – believers and non-believers alike. They do not wish to curtail religious freedoms.
(তিন)
ধর্মীয় স্বাধীনতা
সেক্যুলারিজম ধর্মীয় ও অন্যান্য বিশ্বাসের চূড়ান্ত স্বাধীনতা রক্ষা করতে চায় এবং এমভাবে ধর্মীয় বিশ্বাস প্রকাশের অধিকার রক্ষা করে যাতে অন্যের স্বাধীনতা ব্যাহত না করে । সেক্যুলারিজম নিশ্চিত করতে চায় যাতে ব্যক্তি-মানুষের ধর্মের স্বাধীনতার অধিকার সর্বদাই ধর্ম থেকে স্বাধীন থাকার অধিকার সাথে ভারসাম্যে থাকে ।
Religious Freedom
Secularism seeks to defend the absolute freedom of religious and other belief, and protect the right to manifest religious belief insofar as it does not impinge on the rights and freedoms of others. Secularism ensures that the right of individuals to freedom of religion is always balanced by the right to be free from religion.
(চার)
সেক্যুলারিজম হচ্ছে গণতন্ত্র ও ন্যায্যাতার বিষয়
সেক্যুলার গণতন্ত্রে পার্লামেণ্ট ও আইনের সামনে সকল নাগরিক সমান । কোনো প্রকারের ধর্মীয় বা রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা কোনো সুবিধা কিংবা অসুবিধা দেয় না এবং ধর্মে বিশ্বাসীরা অন্য যে কারও মতোই অভিন্ন অধিকার ও দায়িত্ব সম্পন্ন নাগরিক ।
Secularism is about democracy and fairness
In a secular democracy all citizens are equal before the law and parliament. No religious or political affiliation gives advantages or disadvantages and religious believers are citizens with the same rights and obligations as anyone else.
(পাঁচ)
সেক্যুলারিজম নাস্তিকতা নয়
নাস্তিকতা হলো ঈশ্বরের বিশ্বাসহীনতা । সেক্যুলারিজম কেবলই কেবলই একটি গণতান্ত্রিক সমাজের রূপকাঠামো যোগায় । সেক্যুলারিজম সমর্থন করার পেছেন নাস্তিকদের স্পষ্ট স্বার্থ আছে, কিন্তু সেক্যুলারিজম কোনো ধর্ম বা বিশ্বাসের মতকে চ্যালিঞ্জ করতে কিংবা তার কারও ওপর নাস্তিকতা চাপিয়ে দিতে চায় না ।
Secularism is not atheism
Atheism is a lack of belief in gods. Secularism simply provides a framework for a democratic society. Atheists have an obvious interest in supporting secularism, but secularism itself does not seek to challenge the tenets of any particular religion or belief, neither does it seek to impose atheism on anyone.
সুতরাং নিঃসন্দেহে বলা যায়, সেক্যুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতা রাষ্ট্রপরিচালনার সর্বোৎকৃষ্ট পদ্ধতি যা এমন একটি সাম্যবাদী ও গণতান্ত্রিক সমাজ গঠন করতে পারে, যেখানে ধর্মবিশ্বাসী, ধর্মে অবিশ্বাসী, ধর্মীয় সংখ্যালঘুসহ সকল নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ সুবিধা প্রাপ্য হয় । ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র ধর্ম, গোত্র, বর্ণ প্রভৃতি কারণে নাগরিকের প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করে না । এই রাষ্ট্রে ধর্মকে পুরোপুরি ব্যক্তিগতক্ষেত্রে ছেড়ে দেওয়া হয় । অর্থাৎ ধর্মীয় আচার-আচরণ পালনে রাষ্ট্র জনগণকে নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা দিয়েছে । এই রাষ্ট্রে সবাই প্রথম শ্রেণির নাগরিক । ধর্মে অবিশ্বাসী জনগণের মূলদাবী ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রগঠন হলেও ধর্মবিশ্বাসীদের জন্যও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র একই রকম সুবিধা প্রদান করে । মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র (নন-সেক্যুলার) বা ইসলামিক রাষ্ট্র যেমন পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সৌদী আরব বা ইরানে (যদিও শিয়া-সুন্নী দ্বন্দ্ব বিদ্যমান) মুসলিম জনগণ প্রথম শ্রেণির হলেও অন্য ধর্মাবলম্বীরা দ্বিতীয় শ্রেণির । এমনকি বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও কথাটা সত্য । ঠিক তেমনই ইসরায়েলে ইহুদী, ভারত-নেপালে হিন্দু, চীন-মায়ানমারে বৌদ্ধরা প্রথম শ্রেণির নাগরিক । সুতরাং দেখা যায়, পৃথিবীর একটি দেশে একই ধর্মীয় শ্রেণি ভাল অবস্থানে আবার অন্যদেশে তাদের অবস্থান অত্যন্ত নাজুক ।
এখানে উল্লেখ্য যে, প্রায় প্রত্যেকটি রাষ্ট্রেই (সেক্যুলার রাষ্ট্র ব্যতিত) ধর্মে অবিশ্বাসী জনগণ (নাস্তিকেরা) তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক । রাষ্ট্রীয় সুযোগসুবিধা লাভ এবং রাষ্ট্র পরিচালনা ও নেতৃত্বদানে প্রথম শ্রেণির নাগরিকেরা অধিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে থাকে । সেই সাথে নাস্তিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা সামাজিকভাবে নিগৃহিত, লাঞ্চিত ও বঞ্চিত হয় । ইতিহাসে দেখা যায়, ধর্মরাষ্ট্র বা নন-সেক্যুলার রাষ্ট্র তার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে পারে নি । ভুক্তভোগীরাও রাষ্ট্রকে আস্থায় ও নিতে পারে নি ।
পৃথিবীর সবগুলো রাষ্ট্র ধর্মনিরপেক্ষ হলে কোন রাষ্ট্রেই ধর্ম-গোত্র-বর্ণের কারণে কোন একটি শ্রেণির নাগরিককে বঞ্চিত এবং অন্য এক শ্রেণির নাগরিককে অধিক সুবিধাভোগী হওয়ার কোন উপায় থাকবে না । প্রকৃতপক্ষে সমতাভিত্তিক, ন্যায়বিচারপূর্ণ, বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য সেক্যুলার রাষ্ট্র গঠনের কোন বিকল্প নেই ।
বাংলাদেশে একজন সেক্যুলার ব্যক্তিকে সবসময় ধর্মে অবিশ্বাসী তথা নাস্তিক বলে অভিহিত করা হয় । তার অর্থ, মোটাদাগে সেক্যুলারিজমকে ব্যক্তিগতক্ষেত্রে ধর্মে অবিশ্বাস তথা নাস্তিকতা হিসেবে ধরে নেওয়া হয় । অথচ এটা চরম অগ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা । একজন সেক্যুলার ব্যক্তি হবেন তিনি, যিনি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সেক্যুলারিজমকে মুলনীতি হিসেবে গ্রহণের চুড়ান্ত সমর্থক । ব্যক্তিজীবনে উনি ধর্মবাদী হতে পারেন অথবা হতে পারেন নাস্তিক, তার সাথে সেক্যুলারিজমের কোন সম্পর্ক নাই । আবারও বলছি, সেক্যুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয়ক্ষেত্রেই বাস্তবায়নযোগ্য । একটি রাষ্ট্র ধর্মনিরপেক্ষ হতে পারে, ব্যক্তিও ধর্মনিরপেক্ষ হতে পারেন - কিন্তু দুটোই রাষ্ট্রীয়ক্ষেত্রে প্রয়োগের সাথে সম্পর্কযুক্ত, তার ব্যক্তিগত বিশ্বাস বা আচরণের সাথে কোনভাবেই সম্পর্কযুক্ত নয় ।
সুতরাং সময় এসেছে, সেক্যুলারিজমকে শুধুমাত্র অসাম্প্রদায়িকতা বা ধর্মীয় স্বাধীনতা হিসেবে ভুল ব্যাখ্যা করে সংখ্যাগুরু মুসলিম জনগণের আপাত সহানুভুতি আদায় না করে এর প্রকৃত স্বরুপ ব্যাখ্যা করে বাংলাদেশকে প্রকৃতপক্ষে একটি উৎকৃষ্ট সেক্যুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করার, সময় এসেছে সত্যিকার অর্থে বৈষম্যমুক্ত সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা করার, যেখানে দেশের সকল নাগরিক ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য ও সহমর্মিতার সাথে বসবাস করবে । বাংলাদেশকে সেক্যুলার রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এদেশের জনগণকে ব্যাপকভিত্তিক বুদ্ধিবৃত্তিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে । সিউডো-সেক্যুলারিজম বা ছদ্ম-ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবরর্তে প্রকৃত সেক্যুলারিজমকে রাষ্ট্র পরিচালনার মুলনীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে রাষ্ট্র গঠন করতে ব্যর্থ হলে, ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত হবে বাংলাদেশ, হেরে যাবে বাংলাদেশ ।
(কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ এই প্রবন্ধে ব্যবহৃত যুক্তরাজ্যের National Secular Society (ন্যাশনাল সেক্যুলার সোসাইটী) তাদের ওয়েবপেইজে 'What is Secularism?' অংশে উল্লেখিত পাঁচটি বিষয়ের অনুবাদ করেছেন মাসুদ রানা, ট্রাস্ট প্লাস ডেভালপমেন্ট ডিরেক্টর, সেইণ্ট পলস ওয়ে ট্রাস্ট স্কুল, লণ্ডন, যুক্তরাজ্য।)
সাতক্ষীরা
১০/০৭/২০১৮ খ্রীঃ