ব্যাকগ্রাউন্ড

ফেইসবুকে!

পুজার থ্রিলার :সোনালী রিভলভার।

সোনালী রিভলভার টার ওজন অস্বস্তিকর মনে হয় । এর মানে এ নয় যে এটা সুমিতের । এটা ওয়াসিম ভাইয়ের । প্রয়োজন পড়লে কারো -এটা ভাড়ায় যায়। কমিশন বাবদ যা থাকে তা দিয়ে সুমিতের খরচ চলে। অবশ্য ওয়াসিম তাকে দিয়ে দুটা মেশিন তত্বাবধান করায়! দুটা সোনালী –একটা সোনালী রিভলবার আরেকটা জলজ্যান্ত মানবী।এই মানবীকে সোনালী ডানার মনে হয়।দুটোয় তাকে ঝুঁকির জীবনে নিয়ে গেছে। সে আনমনে ভাবলুলতা এলে জীববনানন্দের কবিতা পড়ে’হায় চিল!সোনালী ডানার চিল!’
গত পরশু দিন রিভলভারটা ভাড়া নিয়ে গিয়েছিল ফিরিঙ্গি বাজারের ছোট ভাইয়েরা । চার হাজার টাকায় –ওয়াসিম ভাই কে তিন হাজার দিবে।কিন্তু ছেলে গুলি একটা বিচি খরচ করে ফেলেছে। বিচি খরচ করা মানে টিকটিকি লাগা। আর মার্ডার হয়ে গেলে আরেক ঝামেলা। অল্প বয়সী ছেলে গুলোকে দেয়া ঠিক হয়নি। না দিলে আবার প্রয়োজনে ওদের পাওয়া যাবেনা।
সুমিত কয়েক দিন শহরের বাইরে চলে যাবে কী!পরিস্থিতি শান্ত হোক তারপর না হয় ফিরবে। কিন্তু এখন ইনকামের সময় !সামনে কোরবানি এরপর দূর্গাপুজা।এই সময়ে শহর গরম থাকে। সবাই ধান্দায় ব্যস্ত হয়ে উঠে। সামনে মোহছেন আউলিয়ার ওরশ ;গ্রূপের ছেলেদের নিয়ে যেতে হবে। সুমিতের এখন শহর ছাড়া ঠিক হবে না।
সুমিত মুনার জন্য অপেহ্মা করছে শিল্পকলার গেইটে বাইকটায় হেলান দিয়ে । মুনা আসবে সি এন্ড বি কলোনী থেকে। মুনা ওয়াসিম ভাইয়ের শালিকা।ওয়াসিম ভাই ডাকে শালিক। লম্বা পাঁচ আটের সুমিতের সাথে মুনা পাঁচ ফিট নিয়ে পাল্লা দেয়।তারা যাবে খুলশীতে । আজ সোহেল ভাইয়ের বাচ্চার আকিকা।মাঝখানে কোরববানির গরুর হাট আর গরুর চামড়ার ভাগ নিয়ে সোহেল ভাইয়ের সাথে ঝামেলা হয়েছিল। সোহেল ভাই ‘ডান্ডির পোঁয়া’বলে গালি দিয়ে সুমিতকে থাপড় দেয়। ওয়াসিম ভাই মীমাংসা করে দেয়। আবার এদিকে শহরের কাগজের সাংবাদিক গুলো তাকে নিয়ে উল্টা-পাল্টা খবর ছাপছে।এটার জন্য সুনীলদার কাছে যাবে।কিন্তু এইসব দালাল প্রকৃতির লোকগুলো উপকারের চেয়ে অপকার করে বেশী। তাই সে যাচ্ছেনা।
মুনা সিএন্ডবি কলোনী বাসা থেকে বের হয়ে রিকশায় উঠে। বড় বোন প্রেগনেন্ট তাই যেতে পারছেনা।সাদা জামাটা সদ্য স্যানমার শপিং থেকে কেনা।সুমিত সাদা পোশাক পছন্দ করে। সে সুমিত কে নিয়ে ভাবে ।ছেলেটা মেডিকেল থেকে ড্রপ আউট হওয়া। সে নিজে অবশ্য নাসিরবাদ ওমেনে একাউন্টিং পড়ছে এবং দুলা ভাইয়ের বাসায় ভাল আছে।তার কী সুমিতের সাথে জড়িয়ে পড়া ঠিক হচ্ছে,তাছাড়া সুমিতরা হিন্দু।সে যাক পরেরটা পরে দেখা যাবে!
সুমিত বিপ্লবদের বাসায়। সে তাদের বাসায় থাকেনা। ড্রপ আউট হওয়ার পর হতে তার বাসায় থাকলে ঘুম হয়না। বিপ্লবের মা বলছিল আজ মহালয়া। তার কানে অমনি ঢাকের আওয়াজ ভেসে এলো। দু চোখের বন্ধ পাতার ভেতর মনিতে ভেসে আসল কাশ ফুল। নাকে শিউলি ঘ্রাণ। সে রাত্রিতে সিরাপের রেশে ঘুম নেমে আসার আগে সে ভাবল মুনাকে এবার পুজা দেখাতে নিয়ে যাবে।
পুজায় শহরে  তিনদিন যানজট লেগে থাকে।তারপরও সাদা আর লাল পাড়ের শাড়ি পড়িয়ে মুনাকে নবমীর সকালে তাদের বাসায় নিয়ে যায়। তার মা স্বাভাবিকভাবে মুনাকে পায়েস লুচি খাওয়ায়। যদিও মুনা অনেক ভয়ে ভয়ে বের হয়েছে।ওয়াসিম ভাইয়ের সাথে সুমিতের বোঝা পড়া ভাল যাচ্ছেনা। সে জানে ওয়াসিম ভাইয়ের অনেক আর্মস সুমিত তত্বাবধান করে। তার মধ্যে একটা সোনালী রিভলভার সুমিত দুলা ভাইকে দিচ্ছেনা।তারপরও মুনা সুমিতের  সাথে  পুজা দেখে -জে এম সেন হল,পাথরঘাটা,হাজারীলেই্‌ন ,পাহাড়তলী।
আজ দশমী !সবাই কর্ণফুলী থেকে বির্সজন দিয়ে  ফিরে অলস নেশায় নীরব সময় পার করছে।সুমিত তাদের বাসায় যাচ্ছিল। অনেকদিন পর সে রাতে বাসায় থাকবে। নন্দনকানন এক নম্বর গলি থেকে দু নম্বর গলির যাওয়ার মাঝামাঝিতে লিটন ,উত্তম,আনোয়ার তার পথ আটকায়।রাত এগারটায় নীরব শহরের অন্ধকার রাস্তায় নেশার ঘোরে সুমিত বুঝতে চেষ্টা করে এই মৃত্যু কিসের জন্য?সোনালী রিভলভারটা-যেটা সে ওয়াসিম ভাইকে ফেরত দিয়ে দিয়েছে !নাকি মুনা –সোনালী ডানার চিল!হতে পারে অনেক দিন পর সে বাসায় রাত কাটাবে।এক চিলতে সোনালী ফ্যাকাশে সোডিয়াম বাতির মৃত আলো রক্তাত দেহে ভুতুরে আবহ তৈরি করে সুমিতের আপন শহরে।
আমরা যারা সুমিতের সেই সোনালী রিভলভারটা কাজে নিতাম ;তারা সুমিত যে মেডিকেল থেকে ড্রপ আউট হয়েছিল তার লাশ ঘরে সুমিতের ফর্সা শরীরে এক ফালি সোনালী রোদ খেলা করতে দেখি!কিংবা বলুয়ার দীঘির শশ্মানের ধোঁয়া সোনালী মনে হয়।শহরের শীর্ষ কাগজ গুলোর সাইড লাইনে ছোট হা করা মৃতের ছবি নিচে ‘নগরীতে সন্ত্রাসী হত্যা’হেড লাইনের নিচে  লিখে ‘মাদক ব্যবসায়ী-অস্ত্র কেনা বেচা –ছিনতাই-চাদাঁবাজির সাথে জড়িত সুমিত দাশ অজ্ঞাত দের গুলিতে মারা গেছে।‘
আর মুনা!সেই সোনালী ডানার চিলকে আমরা আর শহরে দেখিনি। তবে এখনও মাঝে মাঝে সুমিতকে মনে পড়ে যখন আমাদের একটা রিভলভার দরকার হয়।
 
 

ছবি
সেকশনঃ সাধারণ পোস্ট
লিখেছেনঃ Likhon Chowdhury তারিখঃ 27/08/2018
সর্বমোট 1104 বার পঠিত
ফেসবুকের মাধ্যমে কমেন্ট করুণ

সার্চ

সর্বোচ্চ মন্তব্যকৃত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন