"আজ আমি অনেক ব্যস্ত আছি ... কারণ আজ আমার অনেক কাজ ও অনেক দায়িত্ব ... কেনো জানেন ?? আজ তো আমার স্বামীর বিয়ে ... অবাক হওয়ার কিছু নেই ... কিছু কিছু বাস্তব এমনি হয় ... আর আমার স্বামীর বিয়ে তাও আমার ইচ্ছাই !!
ওহ, আমি তো আমার পরিচয় দিতেই ভুলে গেছি ... আমার নাম জোনাকি ... কোনো এক অন্ধকার রাতে আমার জন্ম ... কেনো জানি আকাশের চাঁদ সেদিন কোথায় জেনো লুকিয়ে ছিলো ... কিন্তু আব্বু বলতো আমি জোনাকি পোকার মতো এসেছি আর সেই থেকে-ই আমার নাম জোনাকি !!
এক অন্ধকার রাতে জন্মেছিলাম বলেই হয়তো আজ আমার ভাগ্যে শুধুই অন্ধকারের ঘনঘটা ... যে মানুষটার আজ বিয়ে সে আর কেউ নয়, সে আমার-ই স্বামী, তার নাম কাব্য ... আজ পুরো বাড়ি তার বিয়ের জন্য সাজানো ... ঠিক সে দিনের মতো যে দিন আমার সাথে কাব্যের বিয়ে হয় !!
আমাদের বিয়ের গল্পটা বলিঃ
কাব্য-রা আমাদের বাসায় আমাকে দেখতে আসছে .... কাব্যের চেহারার দিকে তাকালে বিয়েতে রাজি হওয়া না ছাড়া কোনো উপায় নাই ... সে হাসছে ... মোটামুটি আনন্দিত সে ... তার হাসিটা আমার বেশ ভালো লাগছিলো ... সেদিন তার হাসিটার প্রেমে পড়ে গেলাম ... হাসিমুখে সবার সাথে কথা বলছে ... আমার বেশ ভালোই লাগছিলো !!
দু-পরিবার মিলে আমাদের বিয়েটা দিন তারিখ ঠিক করে নিলো ... নিজের তো কতো-ই স্বঁপ্ন ছিলো ... পড়ালেখা করবো, অনেক বড় হবো কিন্তু না স্বঁপ্ন স্বঁপ্ন-ই থেকে গেলো ... কি আর করার আমি বাসার বাধ্য মেয়ে ছিলাম এজন্য নিজের স্বঁপ্নের কথা বাদ দিয়ে বিয়েটা তে রাজি হয়ে গেলাম !!
খুব ধুমধাম করে কাব্যের সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেলো ... বিশাল খাওয়া-দাওয়া হলো ... হাজার লোকের সমাগম ছিলো ... কাব্য-কে অসম্ভব রকমের রকমের সুন্দর লাগছিলো ... সবাই বলছিলো জোনাকি বর টা দেখতে দারুণ ... অবশ্য ছেলেদের বর সাজে রাজার মতো দেখতে লাগে !!
... ... ...
আমাদের বিয়ে হয়ে গেলো ... বছরখানেক কেটে গেলো ... বলে রাখি কাব্যের মতে, আমরা কোনো সন্তান নেই নি ... বেশ ভালোই চলছিলো আমাদের বিবাহিত জীবন ... উঁহু বেশ সুখে ছিলাম আমরা !!
কিন্তু কোথায় যেন শুনেছিলাম যে দুটি মানুষ একজায়গায় দীর্ঘ সময় থাকলে তাদের দুজনের প্রতি বিরক্তবোধ কাজ করে ... এই কথাটা আমার সত্যি ক্ষেত্রে না হলেও কাব্যের ক্ষেত্রে হয়ে গেলো ... আমার প্রতি কাব্যের একটা বিরক্তিবোধ কাজ করতে শুরু করলো ... ইদানীং কাব্য আমার সাথে কি রকম জানি অন্যরকম আচরণ করতে শুরু করলো ... কাব্যের আচরণ দেখে আমার মনে সন্দেহের সৃষ্টি হলো !!
আর তার কিছুদিন পর জানতে পারলাম তার কারণ হলো রিয়া নামের আমার জীবনে কালবৈশাখী ঝড় ... জানতে পারলাম আমার জায়গাটা দখল হয়ে গেছে ... জানি খুব কষ্ট হবে, কষ্ট হলে কি হবে ঝড় করে কিছু পাওয়া যায় না, আর পাওয়া গেলে তা কখনোই পাওয়ার মতো হয় না ... তাই ছেড়ে দিলাম নিজের জায়গাটা ... একরাশ কষ্ট নিয়ে সব মেনে নিলাম ... কারণ মেনে আমাকে নিতেই হবে ... কথা বললাম বাসায় !!
আমার বাপের বাড়ির কেউ-ই রাজী হচ্ছিলো না ... হবেই বা কেনো তাদের মেয়ের সংসার ভাংছে তারা কি আর রাজি হয় ... আমি সেদিন বাসার সবাইকে বুঝিয়েছিলাম, বুঝতে পারছিলাম যে আমার বুকের মাঝে সব দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে ... তবুও নিজেকে সামলে নিয়েছি !!
আমাদের বিয়ের পর কাব্য আমাকে বলছিলো বউ মানে একটা ভালো বন্ধু, হ্যা এখন আমি কাব্যের বউ না শুধুই ভালো একটা বন্ধু ... তাই বন্ধুর মতো সব দায়িত্ব পালন করছি ওর বিয়েতে !!
এইতো আর কিছুক্ষণ পর সবাই যাবে রিয়াদের বাসায় ... আমি একা একা বসে বসে বাসর ঘর সাজাচ্ছি ... খেয়াল করলাম আজ আমার সাজানো সংসার অন্য কারো হতে চলেছে ... তাই আর দেড়ি না করে সব কিছু ছেড়ে বাসা থেকে বের হলাম ... আজ আমি অনেক দূরে চলে যাবো ... কাব্যের চোখের আড়ালে !!
আমার জায়গায় অন্য মেয়ে হলে হয়তো এতো কিছু সহ্য করতে করতে পারতো না, কিন্তু আমি ঠিক-ই পেরেছি ... আব্বু ফোন দিলো কিন্তু আমি কথা বলার ভাষা খুজে না পেয়ে কেটে দিলাম আর মেসেজ করলাম সময় হলে ঠিক-ই বাসায় যাবো !!
চলে আসলাম একটা মেসে, মেস-এ থেকে কয়টা টিউশনি ধরলাম, এইতো চলছে দিন ... তবে কেউ জানে না আমি কোথায় আছি ... আজ খুব কান্না পাচ্ছে, হঠাৎ দেখি কাব্যের মেসেজ, লেখা ছিলো বন্ধুত্ব রক্ষা করার জন্য ধন্যবাদ ... মেসেজটা পড়ে ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি আর চোখে ছলছল জল নিয়ে বললাম BEST OF LUCK !!"
চোখ বুজে দুঃখ খুঁজেই সুখ পাই ... অনেক তো দুঃখ পেলাম ... অনেক তো আফসোস করলাম ... একটাবার নাহয় আকাশের দিকে তাকিয়ে বুকে হাত রেখে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে বলেই ফেলিঃ
"ভালো আছি ... বেশ আছি রে !!" :)