ব্যাকগ্রাউন্ড

ফেইসবুকে!

বড় অদ্ভুত চারকোণা স্ক্রিনের এ জগত

"আপু প্রায়ই দেখতাম বালিশে মাথা রেখে কান্না করতো ... মাঝে মাঝে বারান্দায় দাড়িয়ে কি যেন ভাবতো ... মাঝে মাঝে যখন বৃষ্টি হতো, আবার লুকিয়ে লুকিয়ে কান্না করতো কেউ কাছে আসলে চোখের পানি মুছে ফেলতো !! 



ব্যাপারগুলো কেউ বুঝতে পারতো না ... কখনো আপুর কাছে জানতে চাইতাম না কি হয়েছে আপুর ... ভাবতাম আপুর কাছে যদি জানতে চাই তাহলে আপুর হয়তো মন খারাপ হয়ে যাবে আরও বেশি ... কিন্তু সত্যি বলতে কি আমার অনেক জানতে ইচ্ছা করতো কি হয়েছে আপুর ??



আমার সাথে আপুর বয়সের খুব ব্যাবধান ছিলো না ... আপুকে যখন কাঁদতে দেখতাম তখন আমার অনেক কান্না পেতো কেন যেন নিজের অজান্তে আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তো আপনজন কাউকে কাঁদতে দেখলে বেশি খারাপ লাগে ... আর আমার পরিবারে আপুই আমাকে সবচেয়ে বেশি আদর করতো ... তাই আপুর প্রতি আমার বিশেষ মায়া ছিল ... আমি যা চাইতাম আপু আমাকে তা কিনে দিতো আমি যদি খুব দামি কোন খেলনা চাইতাম আপু নিজের টাকা জমিয়ে জমিয়ে আমাকে কিনে দিতো ... এক কথায় ধরতে গেলে আপুই আমার পৃথিবী ... কিন্তু আপুর হঠাৎ এই চুপচাপ ভাবে থাকাটা আমার সহ্য হচ্ছিল না ... আগে আপু কত হাসতো এখন আমার কথায় উওর হ্যা হু-এর মধ্যে সীমাবন্ধ করে রাখছে আপু ... আগের ঘুমানো সময় আপুর কাছে গল্প শুনে ঘুমাতে যেতাম ... এখন গল্প শুনতে বললে আপু বলে,”আমি গল্প ভুলে গেছি” !! 



মন খারাপ করে ঘুমাতে যেতাম ... আর ভাবতাম আপুর কি হয়েছে ?? আমার এতো ভালো আপুটার কি হয়েছে ?? বাসার অন্য সবার সাথে আপু এতো বেশি মিশত না । সারা দিন নিজের বাসায় পিসি সামনে বসে থাকতো না হলে পড়াশুনায় মগ্ন থাকতো !! 



একদিন আমি ক্লাস থেকে বাসায় আসলাম ... আপুর জন্য ডেইরী মিল্ক নিয়ে এসেছিলাম ... আপু চকলেট খেতে অনেক বেশি পছন্দ করে ...  তাই ভাবলাম চুপি চুপি আপুর রুমে গিয়ে বালিশের নিচে চকলেট রেখে দিবো ...  আপু যখন দেখবে তখন অবাক হয়ে যাবে ... তাই আমি আস্তে আস্তে আপুর রুমে গেলাম ... দরজা একটু ফাকা করতে দেখি আপু পিসিতে বসে আছে ... আমি আস্তে আস্তে দেখলাম আপু ফেসবুকে কাউর সাথে চ্যাট করছে ... আমি আবাক হয়ে দেখলাম আপু কী-বোর্ডে লিখছে আর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে ... আমার আসার শব্দ শুনে আপু তাড়াতাড়ি রুমাল দিয়ে চোখে মুছে বলে,” ওহ তুই ??” এরপর তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে চলে গেল ... যাওয়ার সময় আপু ফেসবুক থেকে লগআউট হয়নি ...  আমি এই সুযোগে আপুর ফেসবুকে দেখলাম একটি ছেলের সাথে চ্যাট করছে ... ছেলেটি নাম লিখা “নীল রহমান “ আমি চ্যাট গুলো পড়া শুরু করলাম !!



সবশেষে লেখাটি আপু লিখছেঃ তুমি কি সত্যি আমাকে রেখে চলে যাবে ?? চলে যাবে তাহলে কেনো আমাকে এই মিছে মিছে স্বপ্ন দেখালে ... কি অপরাধ ছিলো আমার ... এমন তো হওয়ার কথা ছিলো না ...  আমি মেনে নিতে পারতেছিনা,  একদম-ই না !!



নীলঃ তোমার সাথে আমার হচ্ছে না আর ...  আমি আর পারবো না, হ্যা আজ থেকে আমাদের ব্র্যাক-আপ !!



আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না আসলে কী হয়ছে ... আপুর মন খারাপের কারণ তাহলে এটা ... হঠাৎ আপু চলে আসলো এবং আপু বুঝে ফেললো আমি আমার ফেসবুকে চ্যাটগুলো পড়েছি ... আমার আমার কাছে এসে আমাকে একটা চড় দিয়ে বললো , “যা বাগ এখান থেকে” !! 



আমি আপুর চোখ দু’টোর দিকে তাকালাম আপুর চোখ দু’টো লাল হয়ে আছে ... দেখিই বুঝা যাচ্ছে আপু অনেক কান্না কাটি করছে ... আপু এই প্রথম আমাকে মারলো ...  কখনো আমার গায়ে হাত দেয়নি আপু ...  সত্যি আমার অনেক খারাপ লাগলো ...  নিজের রুমে এসে অনেকক্ষন কাঁদলাম ... একটা ছেলের জন্য আপু আমাকে মারলো, আমি কি এতো খারাপ ইত্যাদি ইত্যাদি কত কিছু মাথায় আসা শুরু করলো ... সেই দিনের পর থেকে আপুর সাথে আমার দুরত্ব বাড়তে থাকল !!



এর দু’মাস পরের ঘটনা ..... 



আগে আপুর জন্য বিয়ে দেখলে আপু বলতো আমি এখন বিয়ে করবো না ...  আগে পড়াশুনা শেষ করি ... আমার কি কোন পছন্দ থাকবে না ইত্যাদি টাইপের কথা বলত ... কিন্তু এখন আপু সেই রকম কোন কথা বলে না ... আম্মু – আব্বু যদি বলে আজ তোকে ছেলে দেখতে আসবে আপুর দেখতাম কোন ফিল ছিলো না ... বলতো ,”ওহ আচ্ছা”।



এর কিছুদিন পর আমার আপুটির বিয়ে হয়ে গেল ব্যাংকার একটা ছেলের সাথে ... বাবা -মা যা বলছে তাই করেছে ... কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছি আপুর চোখে –মুখে সেই আনন্দ মাখা অনুভূতিটা নেই !! 



এখনো মনে আছে বিয়ের আগের দিন রাতে আপু কিছু সময়ের জন্য ফেসবুকে বসেছিলো এবং ফেসবুক থেকে উঠে আপু ওয়াশরুমে গেল ..  বুঝতে বাকি রইল না আমার ...  সবার সামনে কান্না করার ভয়ে ওয়াশরুমে গেল ... ওয়াশরুম থেকে বের হওয়ার পর আমি দেখি আপুর দু’চোখ লাল হয়ে আছে ... সত্যি সেই দিন অনেক খারাপ লাগলো ... আপু সেই কান্না মাখে মুখটা আমি আজও ভুলতে পারব না ...  আপু তখন কিভাবে নিজেকে সামলিয়ে নিয়েছিলো শুধু সেই জানে !!



এরপর যথারীতি আপু চলে গেল অন্যের বাড়িতে ... আমি বাসায় একা ... আপুর সাথে মাঝে মাঝে ফেসবুকে কথা হয় ... কিন্তু কখনো জানতে চাই না...  বুঝতে পেরেছে ফেসবুকে কাউকে আপু খুব বেশি ভালবাসতো সেই ছেলেটির জন্য বেশি আফসোস হচ্ছে আমার আপুটির মত একজন ভালো মানুষকে হারাল ... আমার সেই আগের আপুটিকে ফিরে পেতে চাই এখনো ... যে আপুটি আমাকে গল্প বলে ঘুম পাড়াবে ...  আমার জন্য টাকা জমিয়ে খেলনা এনে দিবে ... বাবা বকা দিলে আমার চোখের পানি মুছে দিবে .... যখন রেজাল্টা খারাপ করতাম আপুর কাছে এসে হাউমাউ করে কান্না করতাম ... আর আপু চোখের পানি মুছে দিয়ে বলতো দূর বোকা কাঁদতে হয় নাই ... পরের বার ভালো করবি !! 



- এই ফেইসবুকের ঘটনা কেমন করে যেনো আপুকে আমার কাছে থেকে দূরে নিয়ে গেলো .... .... 



উফফফ,  শুধুই মেয়েরাই পারে নিজের কষ্টগুলোকে খুব নীরবে রাখতে, বিশ্বাস করুণ, মেয়েরা খারাপ না, একটা মেয়ের ভিতরের লুকিয়ে থাকা কষ্টগুলো কেউ দেখতে পারে না কেউ না !!



ফেইসবুক কি খারাপ জায়গা ?? এই চারকোণা স্ক্রিণের ভার্চুয়াল জগত টা কি তাহলে মিথ্যে ?? কেনো এমন হয় ... আপুর মতো শত-সহস্র মেয়ের-ই না জীবন এভাবে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে ... আবার কেউ কেউ সুইসাইডের পথ খুঁজে নিচ্ছে !!



বড় অদ্ভূত এ জগত ... দিনশেষে এই জগতে চারকোণা স্ক্রিনটাই টিকে থাকে ... চারকোণা স্ক্রিন কে ঘিরে তিলতিল করে গড়ে তোলা স্বপ্নগুলোই ভেঙ্গে যায় !!



বি:দ্র : লেখাটা লিখার সময় অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে  ... যদিও গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক ... আল্লাহ তুমি এইরকম আপুদের কে  ভালো রেখো ... আর সবাইকে অনুরোধ চারকোণা স্ক্রিণের এই জগতে প্রেম করার আগে একটু ভেবে নিবেন, একটু হলেই হবে ... নিজের ভাবনাটা কখনো মিথ্যে হয় !!"

ছবি
সেকশনঃ অনুবাদ গল্প
লিখেছেনঃ আব্দুল্লাহ আল তানিম তারিখঃ 20/05/2018
সর্বমোট 2290 বার পঠিত
ফেসবুকের মাধ্যমে কমেন্ট করুণ

সার্চ

সর্বোচ্চ মন্তব্যকৃত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন