ব্যাকগ্রাউন্ড

ফেইসবুকে!

বিবাহ লইয়া এক বা দুই স্নিপ-০০৩।

তো পরিবারের সবার চোখে সমকামী হওয়ার অভিযোগ থেকে মুক্তি পেয়ে ভাবলাম বেঁচে গিয়েছি এ যাত্রা! কিন্তু কিসের কি, মুড়িঘন্টে ঘি! আমি সমকামী না জেনে বাসার সবাই চারগুন উৎসাহে মেয়ে খোঁজা শুরু করে দিল! দুনিয়ায় যত আত্মীয়-স্বজন, লিংক আছে সবার কাছে বলা সারা আমার জন্য মেয়ে খোঁজার কথা! এক হুলস্থূল লেগে গেল পুরো পরিবারে, বংশের বড় ছেলের বিয়ে বলে কথা! তো অনেক খোঁজাখুঁজির পর, অনেক মিলিয়ে এক পরিবার পাওয়া গেল, মেয়েও ভাল লেগেছে বাসার সবার। আমার কাছে জিজ্ঞেস করে আব্বা-আম্মা যেয়ে মেয়ে দেখে এসেছে, মেঝ আপুও মেয়েকে দেখে এসেছে- এখন আমাকে কথা বলতে হবে মেয়ের সাথে! তো ফেসবুকে মেয়েকে এড করলাম, মেসেজ দিলাম মেসেঞ্জারে, মেয়েও রিপ্লাই দিল। কথা বললাম এক সপ্তাহ মেসেন্জারে। ভালোই লাগলো, তারপর শুরু করলাম ফোনে কথা। মেয়ের বাসায় গ্রামীনের নেটওয়ার্ক ভালো না, প্রথমদিনের পরেই তাই এয়ারটেল (018- নাম্বার এখন এয়ারটেল তো নাকি?) একটা নাম্বার কিনলো। আরো এক সপ্তাহ ফোনে কথা বলে, বাসায় বললাম, তারা আগাতে পারেন। বাসায় তো একদম উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে গেল। এর মাঝে মেয়ের মামাতো বোন, খালাতো বোনেরা ফেসবুকে আমাকে এড করে, ফেসবুক মেসেঞ্জারে গ্রূপ খুলে ধুন্দুমার মেসেজিং অবস্থা, জিঁজু-জিঁজু বলে মুখে ফেঁনা তুলে ফেলার অবস্থা! এনগেনজমেন্টের সকল প্রস্তুতি শুরু হলো, মেয়ের এনগেজমেন্টের ড্রেসের মাপ নিয়ে অর্ডার দিল মেঝ আপু। ঐদিনই সন্ধ্যায় দেখি মেয়েকে মেসেজ পাঠাই ফেসবুকে, ফোন দেয় মোবাইলে কোন রেসপন্স নাই। মেয়ের মামাতো বোনকে দিলাম ফোন, কি অবস্থা উনার বোনের, কোনো সমস্যা হলো কিনা! মেয়ের বোনের দেখি থমথমে, ঠান্ডা গলা। বললো, আমরা আপনার সম্বন্ধে কিছু কথা শুনেছি, আমরা ফারদার ইনভেস্টিগেশন করছি। আমি তো পুরোই বেকুব বনে গেলাম! বলে কি?

 

পরে মেয়েকে ফোন দিলাম, দেখি কান্নাকাঁটি করে মেয়ের অবস্থা খারাপ! বললাম, কি হয়েছে, সমস্যা কি? তখন দেখি মেয়ে বলা শুরু করেছে, আমার ৮ বছর আগে এক মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল, সে সম্পর্কের কথা তারা জেনেছে বাইরের মানুষের কাছ থেকে, আর আমি তাকে এই সম্পর্কের কথা বলি নাই কেন? আমার বাবা-মা’ই বা কেন এই কথা লুকালো! আমি তো পুরাই বেকুব বনে গেলাম! বলে কি মেয়ে! এমন সম্পর্ক তো দেশ ছাড়ার আগে, সেই ছোটবেলা থেকেই আমার ছিল, এবং সৌভাগ্যক্রমে আমার মেয়েবন্ধুও কম না, বরঞ্চ ছেলেবন্ধুদের চেয়ে মেয়েবন্ধুর সংখ্যাই কোন কারণে আমার বেশি! এমন তো না যে আমার এর আগে বিয়ে হয়েছে, আর সেই বিয়ের কথা আমি বা আমার পরিবার লুকিয়ে রেখেছি। আর তার সাথে তো আমার তার কোন পুরোনো সম্পর্ক বা আমার কোন পুরোনো সম্পর্কের কথাও উঠে নাই! সেখানে লুকানোর আছেটা কি! আর সবচেয়ে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল, মেয়ে আমার বাবা-মা’র দিকে দোষারোপের আঙ্গুল ওঠাচ্ছে দেখে! এই জিনিস তো আমি কখনোই মেনে নেবো না, তবুও মেয়েকে দুইদিন সময় দিলাম, ব্যাখ্যা দিলাম আগের সকল সম্পর্কের ব্যাপারে, আর বললাম এবার চিন্তা করতে কি করবে, বা কি সিদ্ধান্ত নেবে।

 

এরমধ্যেই ঐদিন রাতেই আমার দুই খালাকে ডাকায়ে নিয়ে তারা যা না তা বলে কথা শুনিয়ে দিয়েছে, খালাম্মারা সেই রাত ১১টাতেই গিয়ে পেটভরে শুনে এসেছে তাদের উল্টাপাল্টা কথা! আমার তো মেজাজ অলরেডি সপ্তমে! আমার কোন দোষে আমি কথা শুনলে আমার কোন বিকার হয় না, কিন্তু আমার জন্যে কেন আমার পরিবারের মানুষজন কথা শুনবে! তারপরেও দুইদিন পরে ফোন দিয়েও একই প্যাঁচাল আবার শুনে মেজাজ গেল ধাম করে বিগড়ায়ে! বললাম, ভাই! দেখেন আপনার দরকার নাই আমাকে বিয়ে করার, কিন্তু আমার বাবা-মাকে দোষারোপ করলে আমি ছেড়ে কথা বলব না। এবং তখন আমার যে চেহারা দেখবেন, সেটা সহ্য হবে না। এরকম মুখ কালাকালি করার আগে ভালো যে আমরা দুইদিকে সরে যাই। আম্মাকেও বলে দিলাম, আম্মা আর আগাইয়ো না! ওনাদের মেয়েকে ওনারা সাধু-দরবেশ টাইপ ছেলের সাথে বিয়ে দিক, আমার মতো খ্রাপ ছেলের কাছে বিয়ে দিতে হবে না! তো এরপর ওনারা খুবই অবাক হয়ে গিয়েছে! এক সপ্তাহ-দুই সপ্তাহ পরেও আমরা যোগাযোগ না করায়, আবার খালাম্মাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করেছে, আমরা কোন যোগাযোগ করলাম না কেন? মানে তারা আশা করেছিল, আমরা যেহেতু এত আগ্রহ দেখিয়েছি, তাহলে তো আমরা তাদের পায়ে যেয়ে পড়ব তাদের মেয়ের সাথে আমার বিয়ের জন্য- সেটা না হওয়ায় তারা খুবই অবাক হয়ে গিয়েছে।

 

তো এই ঘটনা আজ থেকে আরো আট-নয় মাস আগের কথা! এরমধ্যে তারাও অনেক ছেলে দেখেছে, আমার বাবা-মাও মেয়েদের সিভি দেখতে দেখতে হয়রান! তো এই সপ্তাহে শুনি আম্মা বলতেছে, তারা নাকি আবার যোগাযোগ করতে চাচ্ছে! তাদের মেয়ে নাকি আমাকে ছাড়া অন্য কোন ছেলেকে পছন্দই করতে পারছে না! আম্মা বললেন, কি করি বাপ্ বলতো! আমি আম্মাকে সাফ জানায় দিলাম, আম্মা আমাকে নিয়ে প্রশ্ন উঠাতো, আমি একদম মাইন্ড করতাম না, কিন্তু আমার বাবা-মা’কে নিয়ে প্রশ্ন তুলে তারা আমার আত্মায় হাত দিয়েছে, এখানে তো আমি কিছুতেই বিয়ে করবো না! আমার কোর্টে  বল ঠেলে দিও না! একদম জবাব দিয়ে দাও, এমন পুনপুনানি করা পরিবারে আমি বিয়ে করতে পারবো না, আমি এখনো একজন নোবডি, তাতেই বাইরের মানুষের কথা শুনে তারা এমন হম্বিতম্বি শুরু করে দিয়েছে, তাও আবার বিয়ের আগেই, আর সামনে তো আমার পুরো জীবন পরে আছে! তখন তো আমার লাইফ কালাকালা করে দেবে এরা! তো আমার বিয়ের তোড়জোড় শুরু হওয়ার পর এটাই ছিল একমাত্র এবং প্রথম অফিসিয়াল মেয়ে দেখা ও একবারেই পছন্দ করা! সেখানেই ধাক্কা খেয়ে কিছুটা স্তিমিত হলো বাসার সবার মেয়ে খোঁজাখুঁজি! কিন্তু এরপরে আমাদের জন্য যে সারপ্রাইজ বাকি ছিল, তার জন্যে প্রস্তুত ছিলাম না আমরা কেউই!

 

দ্বিতীয় পর্ব পড়তে পারবেন এখান থেকে ।
প্রথম পর্ব পড়তে পারবেন এখান থেকে। 

ছবি
সেকশনঃ কৌতুক
লিখেছেনঃ বটতলার উকিল তারিখঃ 04/02/2018
সর্বমোট 2579 বার পঠিত
ফেসবুকের মাধ্যমে কমেন্ট করুণ

সার্চ

সর্বোচ্চ মন্তব্যকৃত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন