ব্যাকগ্রাউন্ড

ফেইসবুকে!

অযৌক্তিকভাবে নারীকে হেয় করে শর্ট ফিল্ম ভাইরাল ফেসবুকে

'I Want 2 Love U' একটা facebook পেইজে নারীদের অসম্মান করে এবং নারীদের হেয় করে একটা ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। যেখানে পজেটিভ নেগেটিভ দুই ধরনের কমেন্টই আসছে।তবে বেশীর ভাগই ভিডিওকে সমর্থন করে এবং অনেক মেয়েও সমর্থন শেয়ার করেছে।ভিডিওটির লিংক দেওয়া হলো। লিঙ্ক

যাই হোক, প্রথমেই বলবো ভিডিও কনসেপ্ট পুরুটাই ভুল।যেটায় আমি কোন কথারই যৌক্তিক কারণ খুজে পেলাম না।

এখন আসি প্রথম পয়েন্ট থেকেই।আমি একজন চেইন স্মোকার। কিন্তু এর মানেই সিগারেট খাওয়া কোন আধুনিকতা না কিংবা ভালো কোন কাজ না। আর পাবলিক প্লেসে অনেক দেশের এবং বাংলাদেশের কিছু কিছু জাগায় স্মোক করা নিষেধ। সে সব জাগায় কড়াকড়ি থাকার কারণে আলাদা স্মোকিং জোন থাকে।কারণ সিগারেট খাওয়া অবৈধ নিয়ে যেহেতু কোন আইন নাই সেহেতু খেতে পারবে তবে নির্দিষ্ট জাগায়। আর উন্নত রাষ্ট্রে পাবলিক প্লেস কেন নির্দিষ্ট জোন ছাড়া খেতে পারবে না এমনও আছে। সে কথা বলে লাভ নাই। এখন আসি আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট হিসাবেই। আমাদের দেশে পাবলিক প্লেসে সিগারেট খাওয়া নিয়ে হয়তো আইন নাই, কিন্তু যারা বিবেকবান তারা খায় না। কারণ যে খায় তার থেকে বেশী ক্ষতি হয় পাশের জনের। সেখানে একজন ছেলে কিংবা মেয়ে কারও পাবলিক প্লেসে খাওয়া উচিত না। যদিও আমি খাই পাবলিক প্লেস,রাস্তায় সব জাগায়। এখন আমি যদি খেতে পারি আর এটা যদি বৈধ হয় তাহলে মেয়েদেরটাও বৈধ অন্যথায় দুইটাই অবৈধ। এখানে স্মার্ট বা গাইয়া বলে কোন কথা নাই। কারণ ছেলে মেয়ে যাই খাক সবার জন্যই সমান ক্ষতি। সেহেতু এখানে স্মোক নিয়ে যেভাবে বলছে সেটা পুরুটাই ভুল কনসেপ্ট। যেহেতু ছেলেটা পাবলিক প্লেসে সবার সামনে সিগারেট খেতে পারবে কিন্তু মেয়ে পারবেনা বলে দাবি করেছে। যদি সে তার বন্ধু এবং মেয়েকে সিগারেটের ক্ষতিকারক দৃষ্টিভঙ্গি বুঝাইতো এবং পাবলিক প্লেসে কাওকে সিগারেট খাওয়া উচিত না তাহলেই কেবল ঠিক ছিলো। সেহেতু এইটুকু ফ্লপ খেলো।

এখন আসি ২য় পয়েন্টে। ছেলেটা বললো ছেলেটা গায়ের জামা খুলে ঘুরতে পারবে পাবলিক প্লেসে মেয়েটা পারবেনা। এখানে এটা পুরাই অযৌক্তিক কথা। কারণ দৃষ্টিভঙ্গি বদলান,তারপরেই পারবে। কি অবাক হলেন, ফ্যামিনিজম নিয়ে সামান্য ধারণাটা নাই যেহেতু তাই এমন মনে হতে পারেই। যাই হোক,নারীবাদ নিয়ে না সাধারণ যুক্তিতেই আসবো সহজভাবেই। পারলে প্রশ্ন করবেন,তারপর কেও ত্যানা পেচাবেন আমার সাথে। যাই হোক, ছেলেটা যা বলছে এবং মেয়ে যেটা বলছে দুইটাই ঠিক আছে। কিন্তু আধুনিকতা কি আর সভ্যতা এবং মানবিকতা কিংবা বিবেক কি সেটাই আমরা জানিনা।কারণ ছেলেটা যদি বলতো আমি প্যান্ট খুলে এখানে পাবলিক প্লেসে হাটতে পারবো আপনি পারবেন কিনা তাহলে কিছুটা যৌক্তিক হতো। তাছাড়া ভুল কনসেপ্ট আমার কাছে মনে হবে। কারণ এভাবে কেও প্যান্ট এবং পায়জামা খুললে মানুষ তাদের পাগল বলবে আমাদের দেশ এবং কালচার হিসাবে। অন্যদিকে, এখন চলে যাবো উন্নত কান্ট্রির দিকে এই ব্যাপারে অল্প কথায় বুঝানোর জন্য।আমরা বিভিন্ন সিনেমা কিংবা খবর কিংবা বিদেশী পর্যটন কিংবা সমুদ্র সৈকতে মেয়েরা ব্রা-প্যান্টি পরে হাটছে,বসে আছে দেখে থাকি পর্দায়। কিন্তু কোন ছেলে ফিরেও তাকায় না। কারণ আপনার আমার মতো তাদের পচনধরা মস্তিষ্ক না। এখন বলবেন তাদের ফ্রি সেক্স দেশ,যখন তখন সেক্স করে। তার আগে বলবেন ফ্রি সেক্স সম্পর্কে কোন আইডিয়া আছে? আপনি নিজের দৃষ্টিভঙ্গি যদি ঠিক করতে পারেন তাহলেই উত্তরটা আশা করি পেয়ে যাবেন। আমাদের দেশে ব্রা পেন্টি না, যেখানে মেয়েদের ছালোয়ার কামিজের উপর দিয়েই পাছা থেকে শুরু করে বুক মাপা হয় সেখানে দোষটা আপনার না মেয়েদের?আশা করি যারা ত্যানা পেঁচাবেন তারা আগে এই উত্তর দিবেন। আর যদি দিতে না পারেন তাহলে একটা মেয়েও জামা খুলে হাটতে পারেনা আপনার মত ধর্ষকের জন্যই। উন্নত রাষ্ট্রে ফ্রি নিপল ডে পালন করে। সেই দিন ব্রা পরে না,পার্ক রাস্তা কিংবা পাবলিক প্লেসেও জামা খুলে হাটা চলা আড্ডাবাজি করে। তাহলে দোষটা কাদের বুঝতে পারছেন আশা করি। এভাবেই অযৌক্তিক কারণ দেখিয়ে মেয়েদের দাবিয়ে রাখার অবৈধ চেষ্টা করা হয় শুধু পুরুষতান্ত্রিক সমাজে।

এখন আসি ৩য় পয়েন্টে। বাসে মেয়েদের জন্য সিট বরাদ্দ রাখা হয় কেন সেটার প্রশ্ন নিজেকে করেন পেয়ে যাবেন। আচ্ছা আমি বলি, একটা মেয়ে যেখানে রাস্তায় হেটে গেলে ইভটিজিং করা হয় সেখানে আমাদের দেশে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে যাবে ছেলেদের সাথে সেখানে কি হতে পারে নিজেই বলুন না হয় প্রশ্ন করুন নিজেকে। আচ্ছা, কখনো ছেলে মেয়ে একসাথে দাঁড়িয়ে কোন অনুষ্ঠান দেখেছেন স্কুল ,কলেজের কিংবা যেকোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মাঠে দাঁড়িয়ে? যদি দেখে থাকেন তাহলে সেখানে মেয়েদের সাথে কি হয় জানেন অবশ্যই? আর বাসে মেয়েদের সিটে মেয়েরা বসার পরেও পিছন থেকে আপনার আমার মতোই এবং এই ভিডিওর নায়কের মত ছেলেরা সুযোগ পেলেই মেয়েদের শরীরে পা দিয়ে কিংবা হাত দিয়ে স্পর্শ করে থাকে। এইতো কিছুদিন আগেও মেয়েদের জামা পায়জামা কেটে দিলো বাসে যেটা নিয়ে অনেক হৈ চৈ হলো। এখন আপনি বলুন কেন তাদের জন্য সিট বরাদ্ধ করা হয়েছে?আপনার আমার মত পুরুষদের জন্যই। অন্যদিকে উন্নত রাষ্ট্রে দেখুন মেয়েদের জন্য কোন সিট বরাদ্দ নাই। কারণটা কেন এবং হিসাবটা এবার নিজেই মিলান।

এখন আসি মেয়েদের স্কলারশিপ নিয়ে কথায়। আচ্ছা মিনা কার্টুনতো সবাই দেখছেন আশা করি। সেটা দেখলেই এই উত্তরটা পেয়ে যাবার কথা।যাই হোক তারপরেও বলি,একটা মেয়ে এবং একটা ছেলেকে বাবা-মা কেমন দৃষ্টিতে দেখে? একটা ছেলেকে পড়াশুনা করার জন্য নিজের ভিটামাটি সব বিক্রি করে দিতে পারে কিন্তু মেয়ের পিছনে খরচ করতেই যতো অসুবিধা। মেয়েরা পড়াশুনা করে কি করবে,বিয়ের পর তাদের স্বামীর সংসার করতে হবে। এই হলো আমাদের চিন্তাধারা। মেয়ে পয়দা হবার সাথে সাথেই চিন্তা তাকে কবে বিয়ে দেওয়া হবে, আর চেহারা ভালো না হলে যৌতুকের জন্য আলাদা চিন্তা নিয়েই বাবা মা ভোগে। কিন্তু ছেলেটার ক্ষেত্রে তার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করে মূর্খ বাবা মা পর্যন্ত। তাকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য। আর মেয়েদের বলে এতো পড়াশুনা করে কি হবে , শিক্ষিত পরিবারেও এমন কালচার দেখা যায়। তার থেকে সংসারী কাম কাজ করাই অনেক ভালো। যেন পরের বাড়ি গিয়ে কোন ঝামেলা পোহাতে না হয় সংসার সামলানোর জন্য।অর্থাৎ পুরুষতান্ত্রিক সমাজ সবসময় নারীদের দাসী বানিয়ে রাখতে চায়। বিশ্বাস হলো না,আপনার মার প্রতি আপনার বাবার ব্যবহার কথার ধরণ দেখুন উত্তর পেয়ে যাবেন। মেয়েরা যখন এভাবেই পিছিয়ে পড়তে শুরু করলো এবং যুগের পর যুগ পিছিয়ে আছে তখন কিন্তু সরকার তাদের স্কলারশিপের ব্যবস্থা করলো। বাবা মারা তখন সেই স্কলারশিপের টাকার লোভে এবং নিজেদের খরচের টাকা বেচে যাওয়ায় এরকম সুযোগ হাত ছাড়া করলো না এবং মেয়েদের স্কুলে যেতে দিলো এবং মেয়েরা কিছুটা হলেও এগিয়ে যেতে লাগলো। তারপ্রমান এখনকার নারীদের প্রায় সর্বক্ষেত্রে বিচরণ। আবার দেখুন, আর একটা উদাহরণ দেই ছেলেরাও এই সুযোগ নিচ্ছে গ্রামের গরীব ঘরের সন্তানেরা। এখন বলবেন কিভাবে? সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ছেলে মেয়ে সকলের জন্য স্কলারশিপ আছে। কারণ গ্রামের মানুষ ছেলেদের ৫ম শ্রেনী পাস না করার আগেই বিভিন্ন কাজে ঢুকিয়ে দিতো কিংবা ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানোর থেকে বাবার সাথে কাজ করতে নিয়ে যায় মাঠে। কিন্তু যখন ফ্রি বই এবং স্কলারশিপ পাওয়া শুরু করলো তখন অনেক ছেলেমেয়ে স্কুলমুখী হলো। এই গেলো প্রাইমারী লেভেল।

এখন আসি হাই স্কুল, কয়েক বছর আগেও হাই স্কুলে উঠার পর বই কিনে পড়তে হতো।অনেক বাবা-মা ছেলে-মেয়েদের বই কিনে দিতে চাইতো না টাকার অভাব কিংবা এতো পড়াশুনা করার থেকে কাজ করলেই টাকা ইনকাম করে সংসারে হেল্প করতে পারবে। এই কারণে আবার অনেকের সাধ আছে কিন্তু সামর্থ্য নাই। তাই অনেকের লেখাপড়াই শেষ হয়ে যেতো সেখানেই। মানে ছেলে মেয়ে সবাই পিছিয়ে থাকলো। আর এই অবস্থায় মেয়ে হলেতো পড়াশুনার কথা চিন্তাই বাদ। সরকার বিনামূল্যে যখন বই দেওয়া শুরু করলো এসব চিন্তা করেই,তখন আর বই কিনার চিন্তা নাই অনেকের। অনেক গরীব ছেলে মেয়েই এবং সবাই এখন বইয়ের চিন্তামুক্ত। গরীব ছেলে মেয়েরা প্রাইভেট না পড়ে নিজ চেষ্টায় এগিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া দেখুন ছোট বাচ্চাদের আগে ফ্রি দুধ বিস্কুট দিয়েও গ্রামের স্কুল গুলাতে স্কুলমুখী করা হয়েছে। বাবা-মা মানা করেও মানাতে পারে নাই স্কুলে যাওয়ায়। যারা গ্রামের তারা এসব ভালো বলতে পারবে। আর স্কলারশিপ শুধু মেয়েরা না ছেলেরাও পায় হাই স্কুল কলেজে এবং ভার্সিটিতেও। যাদের আর্থিক অবস্থা দূর্বল এবং মেধাবী।সেহেতু এই বালখিল্য যুক্তি কোথায় পেলো সে নিজেই জানে। তাকে রাম ভোদাই ছাগু ছাড়া আর কিছু বলবো না আমি।

লাস্ট পয়েন্টে আসি,সে চুরী করে মেয়েটার সিগারেট খাওয়া ভিডিও করে যেটা ফেসবুক লাইভে এসে ভাইরাল করলো সেটা মূলত একটা অন্যায়।কারণ অন্যের প্রাইভেসী অনুমিত ব্যতীত কিছু করা এটা গুরুতর অপরাধ। সে নিজে এই অন্যায়টা করলো এবং অন্যদের উৎসাহ প্রদান করলো। শুরু থেকে প্রতিটা পয়েন্ট ধরেই বর্ননা করছি আমি, এরপর যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে বলবেন। আর এই ছেলেটাকে আমার উত্তর গুলা এবং আমার যুক্তি খণ্ডাতে বলেন। যেটা আমার চ্যালঞ্জ রইলো তার প্রতি। বিশদ আলোচনা করবো এব্যাপারে। ছাগলামীর সীমা আছে,এর বেশী করলে তাকে থাপরানো উচিত জনসন্মূখে।নিজে অপরাধ করলো এবং অন্যকে উৎসাহ প্রদান করলো।আধুনিকতা কি সেটাই জানেনা,আবার আসছে ভিডিও বানিয়ে জ্ঞান দিতে।

আগে নিজে বদলান,রাষ্ট্র সমাজ দুইটাই বদলাবে।

ছবি
সেকশনঃ ব্লগরব্লগর
লিখেছেনঃ বিজয় তারিখঃ 13/01/2018
সর্বমোট 3701 বার পঠিত
ফেসবুকের মাধ্যমে কমেন্ট করুণ

সার্চ

সর্বোচ্চ মন্তব্যকৃত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন