ব্যাকগ্রাউন্ড

ফেইসবুকে!

বিশ্বজিতের বাবাকে বলছি: আপনার মামলা প্রত্যাহার করে নিন





















বিশ্বজিতের বাবাকে বলছি: আপনার মামলা প্রত্যাহার করে নিন

সাইয়িদ রফিকুল হক

 
এই সমাজে এখন বিচার চাওয়াটাই একটি বড়সড় অপরাধ। তা আরেকবার প্রমাণিত হয়ে গেল পুরানো ঢাকার আলোচিত-সর্বজনবিদিত ‘বিশ্বজিৎ-হত্যা’মামলার রায়ে। গত ০৬/০৮/২০১৭ তারিখ বিশ্বজিৎ-হত্যামামলার হাইকোর্টের রায় প্রকাশিত হয়েছে। আর এতে দেশের ‘দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে’র দেওয়া ৮ঘাতকের ফাঁসি রহিত করে মাত্র দুইটার ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। তাও এই দুইটার মধ্যে আবার একটি ঘাতক পলাতক। বাকীটাও হয়তো একসময় সুযোগমতো পালিয়ে যাবে।
 
এই অপ্রত্যাশিত রায় দেখে দেশবাসী লজ্জিত ও হতভম্ব। আর আমরা আতংকিত। এভাবে যদি খুনীরা পার পেয়ে যায় তাহলে দেশটা তো খুনীদের করতলে চলে যাবে। তখন কী হবে?
 
২০১২ সালের ৯ই ডিসেম্বর সকাল ৯ঘটিকায় প্রকাশ্যদিবালোকে ছাত্রনামধারী কিছুসংখ্যক কুকুর দম্ভভরে আইনশৃঙ্খলারক্ষাবাহিনীর সামনে পুরানো ঢাকার একজন তরুণ, নিরীহ, গরিব, দর্জিকে প্রথমে কিল-ঘুষি মেরে পরে লাঠিপেটা করে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে! আর এই ঘটনাটি দেখেছে বাংলাদেশের প্রায় সব মানুষসহ পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ। সেদিন ছাত্রনামধারী ১৪-১৫টি কুকুর বিশ্বজিৎ-কে অতর্কিতে ঘিরে ধরে তাকে বেদম প্রহার করতে থাকে। ছেলেটি বাঁচার জন্য কতবার বলেছে সে হিন্দু! তবুও ওই হামলাকারী-কুকুরগুলো তাকে ছাড়েনি। একপর্যায়ে ওই বেজন্মাগুলো, নিরীহ বিশ্বজিৎ-এর শরীরে নির্মমভাবে রড ঢুকিয়ে হত্যা করেছে। কী পৈশাচিক দৃশ্য! এমন ঘটনা পৃথিবীতে বিরল। তাই, দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারকগণ সবদিক পর্যালোচনা করে এই নারকীয় ঘটনার জন্য ৮টি কুকুরকে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত করে। এতবড় একটি জগন্য ঘটনার জন্য মাত্র ৮টি কুকুরের প্রাণদণ্ডের ঘটনাও কম। কারণ, এই ঘটনার সঙ্গে কমপক্ষে ১৪-১৫টি কুকুর জড়িত। আর এরা সরাসরি এই ঘটনায় একজন বিশ্বজিৎ-এর প্রাণসংহারক।
 
হাইকোর্টের রায় শুনে আমাদের মনে হয়েছে—এই দেশে মানুষের চেয়ে হত্যাকারী-কুকুরের দাম বেশি। একজন নিরীহ যুবক তার সংসারের হাল ধরেছিলো। কত কষ্ট করে সে সংসার চালাতো। তার পিতার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। সংসারের উপার্জনক্ষম সন্তানটি অকাতরে চলে গেছে।
 
বড় আশা নিয়ে বিশ্বজিৎ-এর বাবা মামলা-দায়ের করেছিলেন। আর আশা করেছিলেন: তিনি পুত্রহত্যার সুবিচার পাবেন। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি!
 
দেশবাসীর সঙ্গে বিশ্বজিৎ-এর অসহায় পিতার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। তিনি পুত্রহত্যার বিচার চেয়েছিলেন কিন্তু কোনো বিচার পাননি। তিনি হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা-দায়ের করেছিলেন কিন্তু তা আজ প্রহসনে পরিণত হয়েছে। তবে কী লাভ আছে এই মামলা রেখে?
 
এই দেশে এখন হত্যাকারীদের শক্তি বেশি। তারা এখন ধরা-ছোঁওয়ার বাইরে। তাদের কোনো শাস্তি হচ্ছে না। বিশ্বজিৎ-এর বাবাও যেন মামলা-দায়ের করে বড় অপরাধ করে ফেলেছেন। তিনি যেন কারও সাজানো বাগানে আগুন দিয়েছেন! আর কারও বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছেন! নইলে এমন হবে কেন? একজন বিশ্বজিৎ-কে প্রকাশ্যদিবালোকে ১৪-১৫টি কুকুর কুপিয়ে-কুপিয়ে বড় নির্মমভাবে হত্যা করেছে! এদের কি শাস্তি হবে না। এর আবার সাক্ষী কীসের? এর আবার প্রমাণের কী প্রয়োজন? এখানে, একটি ভিডিওই যথেষ্ট। আর এই ভিডিও দেখে দেশের প্রায় সব মানুষ। তারা ন্যায়বিচার চেয়েছিলেন। কিন্তু কেউই ন্যায়বিচার পাননি।
 
জয় হয়েছে খুনীদের। খুনীরাই এখন হোমরাচোমরা আর সবকিছুর হর্তাকর্তা।
 
বিশ্বজিৎ-এর বাবার চোখে জল দেখেছি, আমাদের চোখেও জল! আমরা আজ বড় অসহায়! আমরা বিচার পাচ্ছি না। খুনীদের দাপট ও রাজত্বই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে তাই হোক!
বিশ্বজিৎ-এর বাবাকে তাই বলছি: আপনি পুত্রহারা। আর আমরাও একটি ভাই হারা। মনে বড় ব্যথা। কিন্তু এখানে নাই কোনো বিচার। তবে এই মামলা রেখে লাভ কী? আর বিচারের নামে এই প্রহসন দেখে লাভ কী? তারচেয়ে কষ্ট করে আপনার মামলা নাহয় তুলে নিন। আর আমরা দু’চোখভরে আরও দেখি—লোভী, শঠ, আর পাগলাকুকুরদের উলঙ্গনৃত্য।
 
পরিশেষে জয় হোক মানবতার।
 
 



 
সাইয়িদ রফিকুল হক
পূর্বরাজাবাজার, ঢাকা,
বাংলাদেশ।
১০/০৮/২০১৭

ছবি
সেকশনঃ সাম্প্রতিক বিষয়
লিখেছেনঃ সাইয়িদ রফিকুল হক তারিখঃ 14/08/2017
সর্বমোট 2431 বার পঠিত
ফেসবুকের মাধ্যমে কমেন্ট করুণ

সার্চ

সর্বোচ্চ মন্তব্যকৃত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন