কোথাও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কোন চিত্র প্রদর্শনীর খবর পেলেই আমি সেখানে ছুটে যাই। অনেক লম্বা সময় ধরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ছবিগুলি দেখি। অস্পষ্ট ছবিগুলি আরও বেশি করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি। এভাবে আমি আমার হারিয়ে যাওয়া বাবাকে খুঁজি।
একাত্তরের চৌদ্দই আগস্ট রাজাকার ও পাকসেনারা সেই যে বাবাকে তুলে নিয়ে গেল, আমার বাবা তো আর ফিরে এলো না! এমন তো হতে পারে কোন একটা ফটোগ্রাফে ধরা পড়েছে আমার বাবার লাশের ছবি! ছবিতে আমি অন্তত দেখতে পাবো আমার হারিয়ে যাওয়া পিতার লাশ। হোক তা ক্ষতবিক্ষত, তবু তো বাবার লাশ। আমার জন্মদাতা পিতা, প্রচলিত স্বীকৃতিহীন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।
ছোটবেলায় আমার মাকে দেখেছি কোথাও কোন পাগলের কথা শুনলে তিনি সেখানে ছুটে যেতেন। মা বলতেন- "শুনছি মেলেটারিরা ধইরে নিয়ে কেউরে কেউরে পাগল বানাইয়ে ছাড়্যে দেছে। আবার মাথায় বাড়ি-টাড়ি খাইয়েও তো পাগল-টাগল অইয়ে বাঁইচে থাকতি পারে। আল্লা যদি বাঁচায় রাকতি চায় তলি কতভাবেইতো বাঁচায় রাকতি পারে।" আটত্রিশ বছর ক্লান্তিহীন জীবনযুদ্ধ করে বাবার ফেরার আপেক্ষায় নিরন্তর চোখের জল ফেলে বিগত হয়েছেন আমার মা। আর আমি আজও খুঁজে ফিরছি। আমি খুঁজতেই থাকব...
মাঝে মাঝে মনটা কেন যেন ভীষণ বিষণ্ণ হয়ে যায়। নিজের অজান্তে ডুকরে কেঁদে ফেলি। বাবার কথা খুব মনে পড়ে। জানি না কেন এতোটা খারাপ লাগে, কেন এমন হয়। যে বাবার স্মৃতি আমার প্রায় মনেই নেই, সে বাবাকে মনে পড়ে এতো বছর পরেও কেন এমন লাগে! এতোটা মানসিক চাপ কেন অনুভব করি।
খেয়াল করেছি, পাকিস্তানকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে দেখলে আমার মনের উপরে এই চাপটা ভয়াবহ রকম বেড়ে যায়। শুধু এই কারণেই হয় সেটা না-ও হতে পারে। তবৃও শুদ্ধতার যুদ্ধ আমাদের চালিয়ে যেতে হবে।