ব্যাকগ্রাউন্ড

ফেইসবুকে!

এইটা মসজিদের ইমাম নাকি ডাস্টবিনের আবর্জনা?




















এইটা মসজিদের ইমাম নাকি ডাস্টবিনের আবর্জনা?

সাইয়িদ রফিকুল হক

 
শীতকালে ওয়াজ-নামের ‘আওয়াজ’ জমে ভালো। তখন শীতের রাতে গুটিসুটি মেরে বসে থাকা অকর্মণ্য মানুষগুলোকে ভালোমত ধোলাই করতে পারে মোল্লারা। এরা একেকটা সাধারণ মানুষের মগজধোলাইবিশারদ। মূলত শীতকালেই পাতিহুজুরদের চাপাবাজি আর ধর্মবেচার ভাঁওতাবাজি জমে ভালো। কিন্তু আজকাল সময় বদলেছে। এরা যখন-তখন ওয়াজের নামে আওয়াজ করে চারপাশের মানুষের কানঝালাপালা করে দিচ্ছে। আর এরা কুরআন-হাদিসের নামে ওয়াজ শুরুর কথা বললেও সেটি এদের ওয়াজ-ব্যবসার সাইনবোর্ড মাত্র। এখানে, ওয়াজের নামে এরা সবসময় নিজেদের মনগড়া, বানোয়াট, ভিত্তিহীন, আজেবাজে, আলতুফালতু, কাল্পনিক, উদ্ভট ও মিথ্যা চিন্তাভাবনা পরিবেশন করে থাকে। আর একশ্রেণীর অশিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত প্রাণি এগুলো খাওয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে। তাইতে বাংলাদেশে এখনও ওয়াজ-নামের ইসলামবিরোধী আওয়াজকাওয়াজ এখনও টিকে আছে। আর এই ওয়াজ-আওয়াজসমূহ মোল্লাদের টাকা কামানোর অন্যতম প্রধান হাতিয়ার।
 
মিরপুর এলাকার চারপাশে এখন ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে কওমীমাদ্রাসা। এগুলোর আইনগত কোনো ভিত্তি নাই। কিন্তু এদের আইনগত কোনো ভিত্তি না থাকলেও এরা ইসলামধর্মের নামে সাধারণ-মূর্খ-মুসলমানদের মগজধোলাই করে চারপাশে নিজেদের ষোলোআনা স্বার্থসিদ্ধির আস্তানা গেড়ে বসেছে। আর এদের আশ্রয়প্রশ্রয় দিচ্ছে রাজনীতির নষ্টপুত্ররা।
 
সেদিন জুম্মার নামাজের আগে এলাকার মসজিদের ইমাম সংক্ষিপ্ত ওয়াজের জন্য ধরে এনেছে আরেক মসজিদের ইমামকে। সে নাকি খুব বড় আলেম! তার সম্পর্কে মসজিদের বর্তমান ইমামের বয়ান শুনে আর তার ভাবখানা দেখে মনে হলো—ওই আরেক মসজিদের ইমামের বেহেশতো যেন আগে থেকেই ঠিক হয়ে আছে—সে যেন এমনই এক দামি মানুষ!
 
যাই হোক, সেই ইমাম-নামধারী লোকটি মুসল্লীদের বিরক্তির মধ্যেই তার ঘ্যানঘ্যানানি আর প্যানপ্যানানি শুরু করে দিলো। আর কিছু গৎবাঁধা দোয়াকালামের পর সে বলতে লাগলো: “মুসলমানের জন্য খেলাধুলা সম্পূর্ণ নাজায়েজ! আর সর্বপ্রকার খেলাধুলা নাজায়েজ। তাই,  মুসলমান কোনোপ্রকার খেলাধুলা করতে পারবে না। আপনাদের যাদের খেলাধুলার প্রতি ঝোঁক আছে কিংবা বদখেয়াল আছে—তারা আজকের পর এসব ছেড়ে দিবেন। আর জেনে নিবেন মুসলমানদের জন্য কোন ধরনের খেলাধুলা বা ক্রীড়া জায়েজ আর নাজায়েজ। বর্তমানে প্রচলিত সবধরনের খেলাধুলা একেবারে নাজায়েজ। আর এগুলো শয়তানের ওয়াসওয়াসা! মুমীন-মুসলমান ভাইয়েরা আমার, একথা আমার নয়। একথা বলেছেন জনাবে মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা.।... তবে আপনারা আমার কথা শুনে নিরাশ হয়েন না। জনাবে মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা. আমাদের জন্য সর্বোত্তম খেলাধুলার ব্যবস্থা করে গেছেন। তিনি বলেছেন: তিনটি ক্রীড়া বা খেলাধুলা মুসলমানের জন্য সবসময় জায়েজ। আর এগুলোর দ্বারা আমাদের দেহমনের আনন্দও যেমন হবে তেমনিভাবে সওয়াবও হবে। এতে আমাদের শারীরিক ও মানসিক শান্তি আসবে। আর এতে দোজাহানের অশেষ নেকিও হাসিল হবে। এবার আপনেরা মুসলমানের জন্য যে তিনটি খেলা জায়েজ ও সওয়াবের তা জেনে নিন। মনে রাখবেন: এই খেলাগুলো পবিত্র ও হালাল।
আর খেলা তিনটি হলো:
 
১. জিহাদ। আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। দ্বীনইসলামকে দুনিয়ার বুকে প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ! আর এটি মুসলমানদের জন্য শ্রেষ্ঠ ক্রীড়া। এই ক্রীড়া আমাদের বেহেশতো এনে দিবে।
এরপর হলো:
২. স্ত্রীসহবাস বা স্ত্রীসঙ্গম বা নিজের বিবির সঙ্গে অবাধে মেলামেশা—মানে, যৌনকর্ম করা। এই ক্রীড়ায় কোনো বাধা নাই। যত খুশি করেন! এমনকি এটি যত করবেন তত সওয়াব পাবেন!
৩. নিজের বিবির সঙ্গে কিছু খেলাধুলা করা জায়েজ আছে। এই যেমন ধরেন, নিজের বিবিদের সঙ্গে পর্দাপুশিদার সহিত দৌড়াদৌড়ি করা—মানে, গোল্লাছুটের মতো—কিন্তু পুরাপুরি গোল্লাছুটও নয়।
 
জনাবে মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা. এই তিন ধরনের খেলাধুলা করেছেন। আমার-আপনের এই বাইরে যাওয়ার কোনো পারমিশন নাই।”
এই পর্যন্ত বলে ইমাম-লোকটা কী যেন একটু ভাবলো। তারপর আবার বলতে লাগলো:
 
“তবে একটা কথা এখন না বলে পারছি না। আমাদের দেশসহ সারাবিশ্বে এখন যে-ভাবে ক্রিকেট খেলা জনপ্রিয় হয়েছে—তাতে মানুষকে তো আর ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। আর ক্রিকেট খেলাটা ছতর ঢেকে খেলা হয় বলে এটিও জায়েজ আছে। তবে বেশি দেখবেন না। মাঝে-মাঝে আরকি! আমি নিজেও মাঝে-মাঝে ক্রিকেট খেলা দেখি। তবে পাকিস্তানের খেলা ছাড়া আমি আর কোনো খেলা দেখি না। কারণ, পাকিস্তান মুসলিম কান্ট্রি! আর পাকিস্তানের সব খেলোয়াড় মুসলমান! তাই, ভাইয়েরা আমার, খেলাধুলা করা বা দেখার ব্যাপারে খুব সাবধান।”

পাকিস্তান এখনও এদের বাপ! তাই, এদের পাকিস্তান-বাপের খেলা দেখাটা সবসময় জায়েজ! আর পাকিস্তানের সব খেলোয়াড় নাকি মুসলমান! আর সে বুঝিয়ে দিয়েছে: বাংলাদেশের টিমেও হিন্দু  আছে। আর তাই, ওদের কলজে জ্বলে! আসলে, ওদের ‘কিবলা’ পাকিস্তান। ওরা কাবাঘরমুখী নয়, ওরা সবসময় পাকিস্তানমুখী।
 
কয়েকজন লোক আমার দিকে তাকালেন। বুঝলাম, তারাও বিরক্ত। নামাজপড়ানো বাদ দিয়ে এই ইমাম নামক লোকটি নিজের মনগড়া কথা বলছে। তার যে কোনোপ্রকার মন্যুষত্ব নাই—তা বুঝতে আমাদের কারও বাকী নাই। কিন্তু মূর্খদের কারও কোনো সাড়াশব্দ নাই। এরা চুপচাপ ইমামের কথা গিলছে। আর হয়তো এখনই যৌনক্রীড়ায় ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য তৈরি হচ্ছে।
 
মসজিদের মধ্যে মারামারি বা হাতাহাতি শোভনীয় ব্যাপারস্যাপার নয়। তাই, আমরা কয়েকজন চেপে গেলাম। রাষ্ট্র যেখানে এদের বিষয়ে একেবারে উদাসীন, সেখানে আমরা গোলযোগসৃষ্টি করলে উল্টা ঝামেলা হতে পারে ভেবে আমার সঙ্গের লোকজন নিশ্চুপ থাকার পক্ষে রায় দিলো। আর অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তা-ই মেনে নিলাম। তবে আমাদেরও দলেবলে জেগে উঠতে হবে। আর এই শয়তানদের শক্তহাতে মোকাবেলা করতে হবে।
 
এই ইমাম-লোকটা সরাসরি জঙ্গি। সে দেশে জঙ্গিবাদপ্রতিষ্ঠার জন্য ঘুরিয়েফিরিয়ে রসুলের হাদিসকে বিকৃত করে নিজের মনমতো পরিবেশনসহকারে তার দলের রাজনৈতিক ফায়দা লুটছে। এরা নিজেদের স্বার্থের জন্য সবকিছু করতে পারে। ১৯৭১ সালে, এই শয়তানগোষ্ঠীই আমাদের দেশের নারীধর্ষণকে ‘গনীমতের মাল’ বলে অভিহিত করেছিলো! এদের শয়তানী এখনও থামেনি। আর এদের শয়তানী থামবে না কখনও। তাই, এদের শয়তানী চিরতরে থামাতে হবে।
 
পাঠকবন্ধুগণ, একবার ভেবে দেখুন: এরা কতবড় হারামজাদা! জিহাদের নামে নিরপরাধ ও সাধারণ মানুষকে ‘হত্যা’ করাটাকে এরা খেলাধুলা বলছে! এরা মানুষ না নরপশু? তাই বলছিলাম: এগুলো মসজিদের ইমাম নাকি ডাস্টবিনের আবর্জনা?
 
 
 
 

সাইয়িদ রফিকুল হক
পূর্বরাজাবাজার, ঢাকা,
বাংলাদেশ।
১৩/০৭/২০১৭

ছবি
সেকশনঃ ইতিহাস
লিখেছেনঃ সাইয়িদ রফিকুল হক তারিখঃ 13/07/2017
সর্বমোট 5257 বার পঠিত
ফেসবুকের মাধ্যমে কমেন্ট করুণ

সার্চ

সর্বোচ্চ মন্তব্যকৃত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন