ব্যাকগ্রাউন্ড

ফেইসবুকে!

পথশিশু

আমাদের অবহেলা পথশিশুদের ঠেলে দিচ্ছে অন্যায়ের পথে। স্বাধীন দেশে এ পথশিশুদেরও সমান সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বড় হওয়ার অধিকার আছে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা এ মৌলিক চাহিদাগুলো যথোপযুক্তভাবে পাওয়ার অধিকার তাদেরও আছে। উন্নত দেশগুলোতে দেখা যায়, প্রত্যেকটি শিশুর দায়িত্ব রাষ্ট্র কোনো না কোনোভাবে পালন করে। বেশি খেয়াল রাখা হয় প্রত্যেক শিশুর সুস্থ জীবনযাপনের প্রতি। গড়ে দেওয়া হয় প্রত্যেক শিশুর ভবিষ্যৎ বিভিন্ন সুন্দর পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে, কোনো শিশু যেন অবহেলার শিকার না হয়।

অথচ দুর্ভাগ্যের বিষয়, আশঙ্কাজনক হারে বাংলাদেশে বেড়ে চলেছে পথশিশুর সংখ্যা। মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে দেশের ১০ লাখেরও বেশি পথশিশু। এদের বেশির ভাগই অপুষ্টি, যৌনরোগ ও মাদকের নেশায় আক্রান্ত। সর্বনাশা মাদকের বিষে আসক্ত হয়ে পড়েছে হাজার হাজার পথশিশু। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য মতে, পথশিশুদের ৮৫ ভাগই কোনো না কোনোভাবে মাদক সেবন করে। এর মধ্যে ১৯ শতাংশ হেরোইন। ৪৪ শতাংশ ধূমপান, ২৮ শতাংশ বিভিন্ন ট্যাবলেট ও আট শতাংশ ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে নেশা করে থাকে।

সংগঠনটির তথ্যানুযায়ী ঢাকা শহরে কমপক্ষে ২২৯টি স্পট রয়েছে যেখানে নয় থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুরা মাদক সেবন করে। পথশিশুরা সাধারণত গাঁজা, হেরোইন, ঘুমের ওষুধ, ডাণ্ডি, পলিথিনের মধ্যে গামবেল্ডিং দিয়ে এবং পেট্রোল শুঁকে নেশা করে। প্রতিবেদন অনুযায়ী ২১টি স্পটে সূঁচের মাধ্যমে মাদক গ্রহণ, ৭৭টি স্থানে হেরোইন সেবন এবং ১৩১টি স্থানে গাঁজা ও গ্লোসিন সেবন করা হয়।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট সূত্র মতে, ঢাকা বিভাগে মাদকাসক্ত শিশুর প্রায় ৩০ শতাংশ ছেলে এবং ১৭ শতাংশ মেয়ে। মাদকাসক্ত ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সী ছেলে এবং মেয়ে শিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রচণ্ড ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। পথশিশুদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন জানায়, মাদকাশক্ত ৮০ শতাংশ পথশিশু মাত্র সাত বছরের মধ্যে অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যায়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক গবেষণা জরিপের মাধ্যমে জানা যায়, মাদকাসক্ত শিশুদের ড্রাগ গ্রহণ ও বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত ৪৪ শতাংশ পথশিশু, পিকেটিংয়ে জড়িত ৩৫ শতাংশ, হাইজ্যাকের সঙ্গে ১২ শতাংশ, ট্রাফিকিংয়ে ১১ শতাংশ, আন্ডারগ্রাউন্ড সন্ত্রাসীদের সোর্স হিসেবে পাঁচ শতাংশ ও অন্যান্য অপরাধে জড়িত ২১ শতাংশ, বোমাবাজির সঙ্গে জড়িত ১৬ শতাংশ পথশিশু। চাল-চুলা ও ঠিকানাহীন এসব শিশু সারা দিন কাগজ কুড়িয়ে, বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে বা শ্রমবিক্রি করে পারিশ্রমিক হিসেবে যা পায় তা দিয়েই চলে এদের মাদক সেবন। নকটিন, সিলিকসিন ও সোনালি নামের নেশার ট্যাবলেট খায় এরা। এছাড়া নিয়মিত স্টিক (গাঁজা দিয়ে বানানো সিগারেট) খায় সবাই।

আগামীর বাংলাদেশকে সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে নিতে হলে এসব শিশুর কল্যাণে একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা তৈরি করা প্রয়োজন। যেখানে একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা থাকবে এবং সেই কর্মপন্থার আলোকে পথশিশুর অধিকার নিশ্চিত করা, আইন প্রণয়ন, প্রকল্প গ্রহণ ও বরাদ্দ, পথশিশুর সংজ্ঞা যুগোপযোগী, গবেষণা, পথশিশুর তথ্য হালনাগাদ এবং পথশিশুর পথে আসার যে প্রবণতা সেটি বন্ধের একটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকবে। তা না হলে নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত এ পথশিশুদের ভবিষ্যৎ যদি এভাবে অনিশ্চয়তার মধ্যে প্রতিনিয়ত চলতে থাকে, তাহলে তাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা ক্রমেই বাড়বে।

ছবি
সেকশনঃ সাম্প্রতিক বিষয়
লিখেছেনঃ ইমরান খান রাজ তারিখঃ 25/05/2017
সর্বমোট 871 বার পঠিত
ফেসবুকের মাধ্যমে কমেন্ট করুণ

সার্চ

সর্বোচ্চ মন্তব্যকৃত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন