ব্যাকগ্রাউন্ড

ফেইসবুকে!

বাংলাদেশবিরোধীদের পৃষ্ঠপোষকতায় কওমীমাদ্রাসাগুলো দেশবিরোধী-শত্রু পয়দা করছে
IMAGES

বাংলাদেশবিরোধীদের পৃষ্ঠপোষকতায় কওমীমাদ্রাসাগুলো দেশবিরোধী-শত্রু পয়দা করছে
সাইয়িদ রফিকুল হক

বাংলাদেশে সাধারণতঃ দুই প্রকারের মাদ্রাসা রয়েছে। এগুলো হলো—(১) আলিয়া-মাদ্রাসা ও (২) কওমীমাদ্রাসা। বর্তমানে আলিয়া-মাদ্রাসাগুলো সরকারি-আইনকানুন মেনে চলতে বাধ্য। এরা সরকারি-নিয়মকানুন মেনেই শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ ভৌত-অবকাঠামো-উন্নয়নের যাবতীয় অর্থ সরকার-কর্তৃক পেয়ে থাকে। পক্ষান্তরে, এই দেশেরই একশ্রেণীর লোকের ব্যক্তিগত দানের উপর নির্ভর করে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে, উঠছে নামসর্বস্ব হাজার-হাজার কওমীমাদ্রাসা। এর মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি এখন বিশাল-আকৃতিধারণ করেছে।

বাংলাদেশের কওমীমাদ্রাসাগুলো দেশের কোনো আইনকানুন মানছে না। এরা বর্তমানে নিজের ইচ্ছেমতো যা-খুশি তা-ই করছে। এদের পিছনে রয়েছে এই দেশেরই বড়-বড় দেশবিরোধীর সমন্বয়ে একটি গুপ্তঘাতকচক্র। এরা আজন্ম-আমৃত্যু বাংলাদেশরাষ্ট্রের শত্রু। এদের বীজ সংগৃহীত হয়েছে পাকিস্তানী-নষ্টবীজ থেকে। আর এখনও এদের মধ্যে সেই নষ্ট-বীজের বৈশিষ্ট্যসমূহ বিদ্যমান। বাংলাদেশে কওমীমাদ্রাসাপ্রতিষ্ঠায় এযাবৎ যারা আর্থিকভাবে সর্বপ্রকার সাহায্য-সহযোগিতা করাসহ সর্বপ্রকার পৃষ্ঠপোষকতাদান করেছে, এবং এখনও করছে—তারা হলো:

১. দেশবিরোধী-শিল্পপতি-নামধারী একটি অসৎশ্রেণী। এরা অবৈধ উপায়ে অর্থোপার্জন করেছে, করছে, আর এই টাকাকে হালাল করার মানসে ও পরকালে দোজখের আজাব থেকে বাঁচার জন্য আখেরাতের পাথেয়স্বরূপ কওমীমাদ্রাসাসৃষ্টি করছে, আর এর পিছনে অর্থ ঢালছে। এরা দেশের বিভিন্ন গ্রুপ-অব-কোম্পানির মালিক। আর এদের অধিকাংশেরই পূর্বপুরুষ ছিল পাকিস্তানের চিরস্থায়ী দালাল ও গোলাম—মুসলিম-লীগার।

২. দেশের চিহ্নিত একটি অসৎব্যবসায়ীশ্রেণী। এরা নিজেদের পাপকে ধামাচাপা দেওয়াসহ আখেরাতে জাহান্নামের আজাব থেকে বাঁচার জন্য নিজেদের পাপের অর্থ থেকে একটি অংশ কওমীমাদ্রাসায় দান করছে। এদের এই দূষিত বিশ্বাসগুলো এদেশে ব্যাঙের ছাতার মতো কওমীমাদ্রাসাপ্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা রাখছে।

৩. দেশের অসৎ এমপি, মন্ত্রী, পাতিমন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতা-নামধারী-লুটপাটকারীচক্র রাষ্ট্রীয় অর্থ হাতিয়ে নিয়ে পরকালের মুক্তির ‘উসিলা’ হিসাবে কওমীমাদ্রাসাপ্রতিষ্ঠায় চক্রান্ত করেছে, করছে। এরা মনে করে: এভাবে অবৈধভাবে মসজিদ-মাদ্রাসাপ্রতিষ্ঠা করলেই তার সমস্ত গোনাহপাপ মওকুফ হয়ে যাবে! তাইতো দেখা যায়, এদেশের অনেক মসজিদ-মাদ্রাসার সভাপতি-সেক্রেটারি হয়ে বসে আছে এমপি-মন্ত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতা-নামধারী কতকগুলো দেশদ্রোহী। আর এদেরই পাপের ফসল আজকের হাজার-হাজার কওমীমাদ্রাসা।

৪. দেশের ঘুষখোর কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মনে করে থাকে, ঘুষের টাকা জায়েজ করার জন্য এর একটা অংশ থেকে কিছু মসজিদ-মাদ্রাসায় দান করতে হবে। আর তাই, এরা এখন পাড়ায়-পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায়, আর ঢাকা-শহরের অলিগলিতে মসজিদ-মাদ্রাসা গড়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
৫. সর্বস্তরের একশ্রেণীর ভণ্ড (লম্পট, চিরস্থায়ী-লম্পট, ব্যভিচারী, কামুক, ক্ষেত্রজ, পারজায়িক, ভূমিদস্যু, রক্তচোষা-সুদখোর, বেশ্যার দালাল, চোরাকারবারি ইত্যাদি) নিজেদের পাপমোচনের জন্য অতিসহজে বেহেশতের আশায় কওমীমাদ্রাসার পৃষ্ঠপোষকতায় আত্মনিয়োগ করেছে।

সাম্প্রতিককালে দেশের প্রায় সব কওমীমাদ্রাসার অবস্থান বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। এরা খায়-দায়-পরে বাংলাদেশের—কিন্তু গুণগান গায় ওদের পিতৃভূমি-পাকিস্তানের! তাদের কার্যকলাপে আজ তাই-ই প্রমাণিত হয়েছে। আর এরা (কওমীমাদ্রাসার পাতিহুজুর ও শিক্ষার্থীরা) এখনও—

১. বাংলাদেশরাষ্ট্রকে মনেপ্রাণে স্বীকার করে না, ভালোবাসে না ও শ্রদ্ধা করে না। এমনকি এখনও বাংলাদেশরাষ্ট্রকে ন্যূনতমও মানে না, স্বীকারও করে না।
২. বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত গায় না, এটি মানে না, বিশ্বাস করে না, আর শ্রদ্ধা করে না।
৩. বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাকে সম্মান করে না, এটি মাদ্রাসায় প্রদর্শন করে না, বিশ্বাস করে না, আর দেশের পতাকা হিসাবে মানেও না।
৪. বাংলাদেশের জাতীয় দিবসগুলো—২১-এ ফেব্রুআরি-মহান শহীদদিবস, ২৬-এ মার্চ স্বাধীনতাদিবস, ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোকদিবস, ১৬ই ডিসেম্বর বিজয়দিবস ইত্যাদি পালন করে না, বিশ্বাস করে না, মানে না, এবং এগুলোকে সম্মানও করে না।
৫. বাংলাভাষাকে নিজেদের ভাষা হিসাবে বিশ্বাস করে না, স্বীকার করে না ও সম্মান করে না।
৬. বিজাতীয় উর্দুকে মাতৃভাষা মনে করে থাকে। নিয়মিত উর্দুভাষা-চর্চা করে থাকে। যেহেতু, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু। এই বিজাতীয় উর্দুকেই নিজেদের মাতৃভাষা মনে করে থাকে।
৭. বাংলা সাহিত্য মানে না, অধ্যয়ন করে না, এগুলো বিশ্বাসও করে না। তবে পাকিস্তানপন্থী গোলাম মোস্তফা, ফররুখ আহমেদ, সৈয়দ আলী আহসান ও আল মাহমুদ-দের বইপুস্তক পড়ে থাকে।
৮. সাম্প্রদায়িক-অপশক্তি। অন্য ধর্মাবলম্বীদের সহ্য করতে পারে না।
৯. বাংলাদেশরাষ্ট্রের সংবিধান মানে না। আর এর বিরুদ্ধে সবসময় বিষোদগার করে থাকে।
১০. বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ বিশ্বাস করে না, মানে না, এর ইতিহাস পড়ে না, এগুলো বিশ্বাস করে না।

কওমীমাদ্রাসার পাতিহুজুররা বাংলাদেশের সবকিছুতে হিন্দুয়ানি খুঁজে পায়। আর পাকিস্তানী সবকিছুতে আবিষ্কার করে ইসলাম। সেই হিসাবে এরা পাকিস্তানের মদ্যপায়ী জেনারেলদেরকে এখনও নবী-রাসুলের চেয়ে বেশি মান্য করে—ভক্তি করে থাকে। এদের ঈমানের মূলস্তম্ভ পাকিস্তান। আর একমাত্র পাকিস্তানই এদের জীবনের সকল সুখ-আহ্লাদ। এরা জীবনের সর্বক্ষেত্রে পাকিস্তানকে ভালোবেসে এখনও পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখে। তাই, এদের কাছে বাংলাদেশের কোনোকিছুই ভালো লাগে না। এরা কওমীমাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সেই পাকিস্তানী বিজাতীয়-অপআদর্শে অমানুষ করছে।

কওমীমাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ চেনে না, ভালোবাসে না, বিশ্বাস করে না, এমনকি মানেও না। তবুও এরা বাংলাদেশে বুকফুলিয়ে বসবাস করছে, আর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে লেগে আছে। এরা দিনের-পর-দিন নিজেদের ধৃষ্টতাপ্রদর্শন করে চলেছে। আর বর্তমানে এদের প্ল্যাটফর্ম ‘হেফাজতে শয়তান’ রাজনৈতিক অপশক্তি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করায় এদের দেশবিরোধী দম্ভ, বেআদবি, ঔদ্ধত্য ও ধৃষ্টতা বেড়েই চলেছে। এরা নিজেদের শক্তিমত্তাপ্রদর্শনের আরও সুযোগ খুঁজে বেড়াচ্ছে।

কওমীমাদ্রাসাগুলো নিঃসন্দেহে বাংলাদেশে জঙ্গিউৎপাদনের কারখানা। এগুলো জঙ্গির আঁতুরঘর। আসুন, দেখি জঙ্গি কাকে বলে?

যারা মানুষের প্রচলিত বিশ্বাস, ধর্মীয় রীতিনীতি ও রাষ্ট্রীয় আইনকানুন মানে না, বিশ্বাস করে না, নিজদেশ মানে না, দেশের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, এবং ধর্মের প্রচলিত ব্যাখ্যাকে বাদ দিয়ে বা পাশ কাটিয়ে নিজেদের মনগড়া ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের সাহায্যে সমাজে-রাষ্ট্রে ধর্মভিত্তিক আদিমরাষ্ট্র কায়েম করতে চায়—তারাই জঙ্গি। সেই হিসাবে আমাদের দেশের কওমীমাদ্রাসার প্রতিটি পাতিহুজুর ও তাদের অনুগত শিক্ষার্থীরাও একেকটি জঙ্গি, আর ন্যূনতম আধাজঙ্গি। বাংলাদেশে ‘হেফাজতে শয়তান’-এর ১৩-দফা ও তাদের ২০১৩ সালের ৬ই এপ্রিল ও ৫ই মে’র তাণ্ডবলীলা সরাসরি জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। হেফাজতে শয়তানের শয়তানী১৩-দফা মানুষ আর মানবতার জন্য হুমকিস্বরূপ।

জঙ্গি প্রধানত দুই প্রকার:

১. সক্রিয় জঙ্গি। এরা সবসময় সশস্ত্র ও ভয়ানক উগ্র। আর এরা যেকোনো জঙ্গিসংগঠনের দ্বারা সংগঠিত, এবং এদের নিজস্ব-সংগঠনের প্রতি সদাসর্বদা আস্থাশীল। এরা আমাদের দেশসহ পৃথিবীর বিভিন্নস্থানে নানারকম ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। যেমন, ২০১৬ সালের রমজান-মাসে হলি আর্টিজানে এরা নারকীয় ঘটনার জন্ম দিয়েছে। এই প্রকারের জঙ্গির সংখ্যা কম হলেও এদের কার্যকলাপ খুব বেশি ও তা ভয়ংকর।
২. নিষ্ক্রিয় জঙ্গি। এরা বর্তমানে সুপ্তঅবস্থায় রয়েছে। কিন্তু যেকোনোসময়ে উগ্র হয়ে উঠতে পারে। এরা ঘুমন্ত-আগ্নেয়গিরির মতো। তাই, যেকোনোসময়ে অগ্ন্যূৎপাত ঘটাতে পারে। এদের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। বিশেষতঃ বাংলাদেশে এদের অবস্থান অনেক বেশি।

এছাড়াও আরেক প্রকার জঙ্গি রয়েছে। এরা হলো মানসিক-জঙ্গি। এদের সংখ্যা সর্বাধিক। আমাদের দেশে মানসিক-জঙ্গির সংখ্যাই বেশি। এই দেশে এরা জঙ্গি ও জঙ্গিবাদের সমর্থক ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক। এদেরই আশ্রয়প্রশ্রয়ে জঙ্গিরা আজ দেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।

আমাদের দেশের কওমীমাদ্রাসাগুলোতে এই তিনপ্রকারের জঙ্গিই রয়েছে। আর মাদ্রাসাগুলো এভাবে নিয়মিত জঙ্গিউৎপাদন করে চলেছে। বাংলাদেশে জঙ্গি পয়দা করার জন্য বাংলাদেশবিরোধী একটি পশুশক্তি দেশের ভিতরে কওমীমাদ্রাসাপ্রতিষ্ঠা করছে, এগুলোর পৃষ্ঠপোষকতাদান করছে, এবং অপরাজনৈতিক ক্ষেত্রে এদের ব্যবহার করছে।



এখানে, ঢাকার লালবাগের ‘জামেয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা’র কয়েকটি শিক্ষার্থীর দেশের ‘জাতীয় পতাকা’ ও ‘জাতীয় সঙ্গীত’সম্পর্কে তাদের অকপটে বলা কথাগুলোর ভিডিওলিংক তুলে ধরা হলো:
https://youtu.be/seIzXUcspLg
https://youtu.be/seIzXUcspLg

একবার ভাবুন: এরা কতবড় দেশদ্রোহীগাদ্দার! আর কতবড় সাম্প্রদায়িকপশু! এরা দেশ-জাতির কোন কাজে লাগবে?

আর যারা দেশ মানে না,
জাতি মানে না,
জাতীয় পতাকা মানে না,
জাতীয় সঙ্গীত মানে না,
আর যারা সাম্প্রদায়িকপশু,
তাদের এই দেশে বসবাসের কোনো অধিকার নাই।

জাতির কাছে আজ আমাদের এই প্রশ্ন।



সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।
১২/০৫/২০১৭

ছবি
সেকশনঃ ইতিহাস
লিখেছেনঃ সাইয়িদ রফিকুল হক তারিখঃ 24/05/2017
সর্বমোট 3744 বার পঠিত
ফেসবুকের মাধ্যমে কমেন্ট করুণ

সার্চ

সর্বোচ্চ মন্তব্যকৃত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন