ব্যাকগ্রাউন্ড

ফেইসবুকে!

এই বাঙালি-মুসলমান কবে ভদ্র হবে আর একটু মানুষ হবে?
IMAGES

এই বাঙালি-মুসলমান কবে ভদ্র হবে আর একটু মানুষ হবে?
সাইয়িদ রফিকুল হক

আর-কিছুকাল পরে মনে হয় এই দেশে ভদ্রতা খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। দেশের মানুষের আচার-আচরণ, বেশভূষা ও সর্বোপরি মানবাত্মার সার্বিক পরিস্থিতি দেখে আজকাল তাইতো মনে হচ্ছে। মানুষ এখন বদলে যাচ্ছে। আর সে বদলে যেতেই পারে। মানুষ পরিবর্তিত হবে—এটাই স্বাভাবিক। মানুষের এই পরিবর্তন হতে হবে ইতিবাচক বা কাঙ্ক্ষিত। কিন্তু আজকাল সে বদলে গিয়ে ভালো কিংবা মানুষ হচ্ছে না। সে নির্দ্বিধায় হচ্ছে—আপাদমস্তক-ভণ্ড আর চিরায়ত-পশু। এজন্য তার মনে কোনো আফসোস নাই—দ্বিধা-দ্বন্দ্ব বা অনুশোচনাও নাই। সে হাসিমুখে নিজের জন্য পশুত্বকে বরণ করে নিচ্ছে।

আগে মানুষ পরিবর্তিত হতো—আর দিনে-দিনে একটু-একটু করে আরও ভালো হতো। আর আরও ভালো হওয়ার চেষ্টা করতো। আর এখন মানুষ রাতারাতি পরিবর্তিত হয়ে সরাসরি অমানুষে পরিণত হচ্ছে। আরও বেশি পশু হচ্ছে। মানুষ এখন নিজেকে পশুত্বের দিকে ধাবিত করে পশুতে রূপান্তর করছে। নেশাগ্রস্তের মতো মানুষ এখন নিজের উন্নতির দিকে ছুটছে। এখন তার অন্য কোনোদিকে তাকাবার কোনো সময় নাই। মানুষের এই আত্মোন্নয়ন এখন নেশায় পেয়ে বসেছে। আর তার এই মরণনেশা—বাড়ি, গাড়ি, জায়গাজমি, টাকাপয়সা, সুন্দরীস্ত্রীসহ যাবতীয় পার্থিব বস্তুর জন্য। আসলে, এর নাম হচ্ছে—লোভ। মানুষকে এখন লোভে পেয়ে বসেছে আর পাপে ধরেছে।

এই দেশে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানের সংখ্যা একেবারে কম। আর এটি তো এখন মুসলমানপ্রধান দেশ। তবে এখানে কেন ভদ্রতার এতো অভাব! অধিকাংশ বাঙালিই তো এখন মুসলমান। তবুও এদের জীবনে শিষ্টাচার ও সৌজন্যের বড়ই অভাব। এরা মুখে-মুখে ধার্মিক। আসলে, এরা ধর্মের কিছুই মানে না। এখানে, সস্তা ও লোকদেখানো মুসলমানের ছড়াছড়ি। এরা এমন কোনো জঘন্য কাজ নাই যা করছে না। আজ মুসলমান নিজের স্বার্থে নেশা করছে, মানুষহত্যা করছে, নিয়মিত মানুষখুন করছে, ব্যভিচার করছে, ধর্ষণ করছে, বেশ্যালয়ে গমন করছে, ব্যবসার নামে মানুষের সঙ্গে কিংবা অপর মুসলমানের সঙ্গে ধোঁকাবাজি করছে, প্রতারণা করছে, মওজুদদারি করছে, চোরাকারবারি করছে, চুরি-ডাকাতি করছে, ছিনতাই করছে, রাহাজানি করছে, ঘুষ খাচ্ছে—এককথায় সকল অপকর্মই করছে। তবুও এদের মুখে-মুখে ধর্মের নামে বড়াই!

মানুষ এখন খুব বেশি স্বার্থপর হয়ে উঠছে। আর এই মানুষ এখন নিজের স্বার্থ ষোলোআনা ব্যতীত আর-কিছুই বোঝে না। স্বার্থনেশায় একশ্রেণীর অমানুষ এখন ভয়ানক অন্ধ। এদের কাছে নিজের লাভ ছাড়া আর কোনো কথা নাই। এই অমানুষের দল এখন চেনে শুধু অর্থসম্পদ, টাকাকড়ি, আর সীমাহীন ভোগ-বিলাসিতা। স্বার্থনেশায় ডুবে এরা এখন রাষ্ট্র চেনে না, সমাজ চেনে না, জাতি চেনে না, মানুষ চেনে না—আর মানুষের মন বোঝে না। এরা আজ এমনই এক ভয়াবহ পশুতে পরিণত হয়েছে। আজ এদের কাছে শুধু নিজের স্বার্থই সবচেয়ে বড়!

একশ্রেণীর মানুষ এখন দিন-দিন লোভী-ইতর হয়ে উঠছে। সে যে আর মানুষ নাই—এই বোধও এখন তার মধ্যে নাই। সে শুধু চেনে টাকাপয়সা, ধনদৌলত, যুবতীনারী আর জায়গাজমি। আর শুধু পরের জমিজমার উপর তার লোভ সর্বাধিক। এই অমানুষগুলো এতো জঘন্য আর এতো ইতর হয়ে উঠছে যে, এদের কাছে আজ দেশ, মানুষ, মানবতাসহ জাগতিক মনুষ্যত্বের ভাবনাসমূহ আজ সম্পূর্ণ তুচ্ছ ও উপেক্ষিত। আজ এদের ভদ্রতা শেখার সামান্য আগ্রহও নাই। এমনকি ভদ্রতার প্রতি এদের বিন্দুমাত্র আকর্ষণও নাই। আর তাই, এই অমানুষগুলো ভদ্রতা শিখবে কোত্থেকে?

কথাগুলো মিথ্যা বলছি না। অদূর-ভবিষ্যতে ভদ্রতা খুঁজতে আমাদের হয়তো ইতিহাসের পৃষ্ঠা ঘাঁটতে হবে। আর দেখতে হবে—ভদ্রতা কাকে বলে! আজকাল রাস্তাঘাটে, অফিস-আদালতে, স্কুল-কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে, মসজিদ-মাদ্রাসায় সর্বত্র এখন বেআদবির ছড়াছড়ি। এ যেন এখন—কে কতবড় বেআদব হতে পারে তারই প্রতিযোগিতা চলছে। আজ গুরুজনের প্রতি অনেকের ন্যূনতম ভক্তিশ্রদ্ধা নাই, শিক্ষকের প্রতি সামান্য আনুগত্য নাই, পিতামাতার প্রতি পরিপূর্ণ ভক্তিভাব নাই, গরিব-দুঃখীমানুষের প্রতি যথার্থ সহানুভূতি নাই, আর ছোটদের প্রতি বিশেষ স্নেহ নাই। সবখানে আজ শুধু নাই আর নাই। এর ভিতরে ভদ্রতা আসবে কোত্থেকে? একশ্রেণীর মানুষ-নামধারী অমানুষের হৃদয়ভূমি থেকে মনুষ্যত্ব ও ভদ্রতা এখন পালিয়ে যাচ্ছে। এদের হৃদয়ে নাই স্নিগ্ধ-সতেজ অনুভূতি। এদের হৃদয়ের পলিমাটি ক্ষয়ে-ক্ষয়ে সেখানে গড়ে উঠেছে পাথুরে কয়লার নতুন সংসার। আর সেই সংসার সর্বদা লোভ, হিংসা, অহংকার, লাম্পট্য, চাতুর্য, দুশ্চরিত্র, দুর্বিনীতভাব, দুর্নীতি, মূর্খতা ইত্যাদিতে পরিপূর্ণ। তাই, এখানে ভদ্রতার ফুল ফুটবে কীভাবে? আর এখানে, ভদ্রতার পরিবর্তে সম্পূর্ণ বেআদবির চাষাবাদ হচ্ছে!

আজকাল বাসে উঠলে দেখা যায়, বেআদব কতরকমের। আর বেআদব কাকে বলে! এখন তো বাসের ভিতরে বেআদবিপ্রদর্শন রীতিমতো একটা ‘স্টাইলে’ পরিণত হয়েছে। একশ্রেণীর ছোকরা-বেআদব বাসের একটা সিটদখল করার জন্য আশেপাশের একজন বয়ঃজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে দ্রুত পাশ কাটিয়ে, কখনও-কখনও সজোরে ধাক্কা মেরে, গুতা মেরে, ঠেলে চ্যাপ্টা বানিয়ে ছুটে চলেছে। তবুও এদের একটা সিটদখল করা চাই! এরা আজ একঘণ্টাও দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। এদের কোমরের জোর আজ বুঝি একেবারে নিঃশেষ হয়ে গেছে! এদের হাবভাব দেখলে মনে হয়—এরা একেকটা শিংভাঙ্গা গণ্ডার। আফসোস, এরা একজন বয়োবৃদ্ধকে আজ সম্মান করতে জানে না! অথচ, এই বাঙালি একদিন বয়ঃজ্যেষ্ঠদের কী সম্মানটাই না করতো! সেই বাঙালি আজ কোথায় গেল!
আপনি ইউরোপে যান—দেখবেন, সেখানেও এরকম কোনো বেআদব লোকজন নাই। সেখানে খ্রিস্টানদের মধ্যেও ধর্ম আছে, ভদ্রতা আছে, আর মনুষ্যত্ব আছে। অথচ, বাংলাদেশে আজ প্রায় সবাই মুখে-মুখে বিরাট-বিরাট মুসলমান! এরা সবখানে আজ ইসলামের দোহাই দিচ্ছে! কিন্তু এদের কার্যকলাপ পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট। একদিন আধুনিকবিশ্বের কোনো মানুষ এদের চেহারা দেখলে আঁতকে উঠবে। এরা নিজেরা পুরাপুরি অধার্মিক আর ভণ্ড—কিন্তু নির্বিচারে গালি দেয় ইহুদী-খ্রিস্টানদের! বাঙালি-মুসলমানের কী অদ্ভুত ধর্মজ্ঞান!

আগে বাঙালির ধর্ম ছিল বয়ঃজ্যেষ্ঠকে সম্মান করা—আজ এটিও উঠে যেতে বসেছে! এখন শুধু সবাই লোকদেখানো-নামাজী। আর জুম্মার দিন এলে দেখা যায়, কতকগুলো নরপশু একেবারে পাগল হয়ে উঠছে। এরা কার আগে কে মসজিদে ঢুকবে! এরা বাইরে নামাজী কিন্তু ভিতরে-ভিতরে একেকটা ভয়ানক পাজী! এরা আজও একটি দুষ্কর্ম পরিত্যাগ করেনি। এরা আগে-পরে-এখনও মিথ্যা বলছে, মানুষের ক্ষতি করছে, পরের জমি দখল করছে, খাসজমি হাতিয়ে নিচ্ছে, প্রতিদিন নিয়মিত ঘুষ খাচ্ছে, কাজের মেয়েকে গর্ভবতী করছে, পারজায়িক হচ্ছে, এতিমের সম্পদ দখল করে নিচ্ছে, ব্যভিচার করছে, বেশ্যার দালালি করছে, রাজনীতির নামে মানুষের ক্ষতি করছে, সরকারি অর্থ লুটপাট করছে, গরিব-মানুষকে ঠকিয়ে সুদ খাচ্ছে—আবার লোকদেখাতে একদৌড়ে মসজিদেও যাচ্ছে! হায়রে ভণ্ড! এই আছে তোদের মনে? বাঙালি-মুসলমানের এই সীমাহীন ভণ্ডামি আজ জাতিকে বিপদের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছে। তবুও এদের বোধোদয় হচ্ছে না। এরা কবে জাগবে? আর কবে একটু মানুষ হবে?

বাঙালি-মুসলমানের ঘুষ খেতে এখন বিন্দুমাত্র লজ্জাবোধ করে না। এমনকি অনেকে এই ঘুষখাওয়াটাকে সওয়াবের কাজ বলে মনে করে। তাইতো দেখা যায়, রমজান-মাস এলে অনেক অর্থলোভী-ঘুষখোর-কুকুর আগের মতো চোখবন্ধ করে নিয়মিত ঘুষ খেয়ে যাচ্ছে! আবার এই কুকুরটা দিনের বেলা রোজা রেখে ঘুষ খেয়ে রাতে দৌড়ে যাচ্ছে মসজিদে—তারাবিহ’র নামাজ পড়তে! তাও আবার খতমে তারাবিহ—যেখানে ‘হাফেজ’ রেখে ধারাবাহিকভাবে কুরআনতিলাওয়াত করে নামাজ পড়া হয়! কুরআনে কি ঘুষ খেতে নিষেধ করা হয়নি? তবে কেন তাদের এই ধর্মপ্রেমের অভিনয়? এই দেশে আজ পর্যন্ত ধার্মিকের চেয়ে মুসলমান-পদে অভিনয়কারী তথা অভিনেতার সংখ্যা বেশি। এই হলো এই দেশের একশ্রেণীর তথা অধিকাংশ মুসলমানের চরিত্র। এরা ভদ্র হবে আর কবে? আর কবে এদের মনুষ্যত্ব জাগবে? কবে এরা মানুষ হবে?

এই দেশের ব্যবসায়ীদের মতো অভদ্র পৃথিবীতে আর আছে কিনা সন্দেহ। এদের মানুষ বললে পশুরা হাসবে আর নয়তো কাঁদবে। রমজান-মাস এলে (রমজান-মাস আসার আগে থেকেই) এরা মদমাতালের মতো সাধারণ জনগণের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে—দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধির আগুন নিয়ে। এইসময় এরা যে যে-ভাবে পারে দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি করে মানুষকে নির্যাতন করতে থাকে। এই নরপশুরা মাথায় ধর্মের টুপি দিয়ে সাধারণ ভোক্তাদের গলায় ছুরি চালাতে থাকে। অথচ, সমগ্র ইউরোপে গিয়ে দেখেন—সেখানে, বড়দিন আসার আগেই সব জিনিসের দাম ২৫%—৭৫% পর্যন্ত কমিয়ে দিচ্ছে! এই হলো মানুষ। এই হলো তাদের ভদ্রতা। আর এই হলো তাদের ধর্মজ্ঞান। পক্ষান্তরে, আমাদের দেশের একশ্রেণীর মুসলমানের মতো প্রতারক পৃথিবীতে আর নাই। আমাদের দেশের মুসলমান-নামধারী-নরপশুরা কবে মানুষ হবে—আর কবে একটু ভদ্র হবে? কবে এদের অনাচার থেকে দেশটা একটু রক্ষা পাবে?

ভণ্ডামি আর অসভ্যতা একইরেখায় আর সমান্তরালভাবে চলাফেরা করে। দেশে এখন ভয়ানকভাবে ভণ্ডের সংখ্যা বাড়ছে। তাই, আজ শিল্পপ্রতিষ্ঠানে শিল্পপতি-নামধারী ভণ্ড, রাজনীতিতে ভণ্ড, ব্যবসায়ীগোষ্ঠীতে ভণ্ড, ইসলামের নামে রাজনীতির দাবিদারদের ষোলোআনাই ভণ্ড, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভণ্ড, বেসরকারি কিংবা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভণ্ড, আলিয়া মাদ্রাসার পাতিহুজুর ভণ্ড, আর কওমীমাদ্রাসাগুলো শিকড়সুদ্ধ ভণ্ড! দেশে ভদ্রতা এখন সংকটের মুখোমুখি। সব ভণ্ডই অসভ্য। আর এদের জীবনের কোথাও কোনো—ফাঁকফোকড়ে সামান্য ভদ্রতার চিহ্ন নাই।

আরেক শ্রেণীর কুখ্যাত বেআদব বাসের ভিতরে সিগারেট ধরিয়ে টানতে থাকে। এদের সামান্যতম লজ্জাশরম আজ আর অবশিষ্ট নাই। এরা একেবারে চশমখোর। আর এরা মনে হয়—বহু আগেই পশুতে পরিণত হয়েছে। আবার দেখা যায়, হঠাৎ বৃষ্টির হাত থেকে কতকগুলো মানুষ একটা নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। এই মানুষের মধ্যে নারী, পুরুষ, শিশু, যুবক, বৃদ্ধ সবাই রয়েছে। আর সেখানে এতগুলো মানুষের মাঝে দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছে এই পৃথিবীর একটা জীবন্ত লম্পট। মানুষের প্রতি আজ এদের সামান্য সহানুভূতি নাই। আর এদের মধ্যে সাধারণ ‘সিভিক-সেন্স’ পর্যন্ত নাই! এদের বোধোদয় হবে কবে? আর কবে এরা একটুখানি মানুষ হবে?

বাসের মধ্যে মহিলা ও শিশু যাত্রীদের জন্য আলাদা সিট-বরাদ্দ করা রয়েছে। অধুনা, প্রতিবন্ধীদের জন্যও এই সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে, পারতপক্ষে কারও বসাটা অশোভন ও অনৈতিক। তা সত্ত্বেও একশ্রেণীর নরপশু, আর পুরুষ-নামধারী জংলী এখানে বহাল তবিয়তে বসে থাকে। আর মহিলা-যাত্রী বাসে উঠলে এরা সিট ছাড়তে চায় না। এতে কেউ-একজন প্রতিবাদ করলে এরা মহিলার সিটে বসে নিজেদের পৌরুষ জাহির করার জন্য উক্ত প্রতিবাদীর দিকে তাকিয়ে দাঁতমুখ খিঁচিয়ে নেড়ীকুত্তার মতো ঘেউ-ঘেউ করে ওঠে। এই হলো আমাদের দেশের কিছুসংখ্যক মানুষ-নামধারী নরপশুদের অতীব সুন্দর স্বভাব-চরিত্র! এরা ভদ্রতা শিখবে কোত্থেকে?

সামান্য একটা রিক্সা! মানুষ-টানা একটি ত্রিচক্রযান। এতে বড়জোর দুইজন মানুষ চড়তে পারে। আর এতেই উঠছে এখন তিন-চারটা কিংবা চার-পাঁচটা প্রাণী! রিক্সাওয়ালা যে মানুষ—এরা যেন চিরতরে ভুলে গেছে! গায়ে খাটা একজন রিক্সাওয়ালার কাঁধে এতোগুলো প্রাণীর চেপে বসতে একটুও লজ্জা করে না। আজ সামান্য ভদ্রতার লেশমাত্র এদের মধ্যে নাই।

একশ্রেণীর নরপশু এখন রাস্তা ছেড়ে ফুটপাতের উপর দিয়ে পূর্ণগতিতে মোটরসাইকেল (হোন্ডা) চালাচ্ছে! একবার চিন্তা করে দেখুন তো, এরা কতবড় পশু! এরা একদিকে আইন-অমান্য করে ফুটপাতের উপর দিয়ে হোন্ডা চালাচ্ছে—আবার সেখানকার পথচারীদের সরে দাঁড়াবার জন্য তীব্রশব্দে হর্ন বাজাচ্ছে! আশা করি, এই পশুদের চরিত্র বুঝতে কারও কষ্ট হচ্ছে না। সামান্য কিংবা ন্যূনতম ভদ্রতার অবশিষ্ট এদের কারও মধ্যে নাই। এই অমানুষগুলো সামান্য একটা হোন্ডার মালিক হয়ে আজ ফুটপাত থেকে শুরু করে মানুষের পায়ে হাঁটার খুব সংকীর্ণ রাস্তা, অলিগলি, কাঁচাবাজারের দোকানগুলোর মাঝখানের একেবারে সরুরাস্তা পর্যন্ত দখল করে নিচ্ছে! এদের বিবেক কবে জাগ্রত হবে? আর এরা কবে একটু ভদ্র হবে?

বাঙালি-মুসলমানের এখন অর্থনেশায় পেয়ে বসেছে। সে এখন অর্থ নিয়ে মশগুল। আর সে এখন দু’হাতে, চারহাতে কিংবা দশহাতে অর্থ কামাতে ব্যস্ত। এদিকে তার দেশ উচ্ছন্নে যাচ্ছে—তবুও এতে কারও কোনো ভ্রুক্ষেপ নাই। অনেকের দেশপ্রেম আজ একেবারে তলানিতে ঠেকেছে—শূন্যের কোঠায়! তবুও তার মধ্যে কোনো অনুশোচনা নাই। সে এখন ব্যস্ত কীভাবে আরও অবৈধ অর্থোপার্জন করবে! এভাবে মনুষ্যত্ব হারিয়ে আজ অনেকে ধার্মিক সেজেছে! কারণ, সে জানে, এই দেশে ধার্মিক হওয়া একেবারে সহজ। তাই, সারাজীবন ঘুষ খেয়ে কেউ যদি একবার মক্কাশরীফে গিয়ে হজ্জ করে এসে মুখে কয়েকগোছা দাড়ি রাখতে আর মাথায় একটা টুপি পরতে পারে—তাহলে, সে একচান্সে বিরাট ধার্মিক! আর এর সঙ্গে গায়ে একখান সাদা-পাঞ্জাবি রাখলে তো কথাই নাই—তখন সে নিজেকে পয়গম্বরও দাবি করে বসতে পারে! এই দেশে এখন ভণ্ড, বেআদব আর মূর্খের চাষ হচ্ছে।

বাঙালি-মুসলমানের একটি বিরাট অংশ আজ নারীনির্যাতনে খুব পটু। আর এটিকে তারা ধর্মজ্ঞান করে খুব সহজে বেহেশতের আশায় পথ চেয়ে বসে আছে! এরা নারীকে এখনও মানুষ মনে করে না। তাই, সর্বক্ষেত্রে নারীকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে থাকে। এরা নারীকে ধর্ষণ করবে—আবার ধর্ষিতার বিচার চাওয়ার ও পাওয়ার অধিকার থেকেও বঞ্চিত করতে চাইবে! এরা ধর্ষক-লম্পটকে বীরপুরুষ মনে করে থাকে। আর ধর্ষিতাকে অপরাধী জ্ঞান করে। অধিকাংশ বাঙালি-মুসলমানই আজ অন্যায়ের পক্ষে। এরা সবসময় সতর্কতার সঙ্গে অন্যায়কে দৃঢ়ভাবে বুকে ধারণ করে ন্যায়কে এড়িয়ে চলে। এদের মধ্যে সামান্যতম চক্ষুলজ্জা কিংবা ভদ্রতা নাই। জীবনের সর্বক্ষেত্রে এরা নারীকে ঠকিয়ে নিজেদের বাহাদুর ভাবে। এদের বাহাদুরিপ্রকাশের একমাত্র ক্ষেত্র হলো নারীমহল!

বাঙালি-মুসলমানের একটি অংশ আজ জঙ্গি। আমরা শুধু বাইরের গুটিকতক জঙ্গিকে দেখি। কিন্তু ভিতরে-ভিতরে কতকজন ভয়ানক জঙ্গি হয়ে বসে আছে—আমরা তার খোঁজখবর রাখি না। এই ভণ্ডগুলো ধর্মের বাণীকে অপব্যাখ্যা করে আজ জঙ্গিবাদকে নিজেদের স্বার্থে একেবারে জায়েজ করে তুলেছে! আবার এই পশুগুলোই নিজেদের মুসলমান ভাবছে! আরে, এই পশুগুলো যদি মুসলমান হয়ে থাকে—তাহলে, শয়তান কী দোষ করেছে? দেশবিরোধীজঙ্গি-নরপশুদের সমর্থন দিতে কিংবা তাদের পাশে দাঁড়াতে আজ অনেক বাঙালি-মুসলমানের কোনোপ্রকার লজ্জা করে না। এরা এতোটাই অসভ্য! এই অসভ্যগুলো ভদ্রতা শিখবে কোত্থেকে?

বাঙালি-মুসলমানের একটা অংশ এখনও রাস্তায় দাঁড়িয়ে মূত্রত্যাগ করছে। আর তাও যত্রতত্র। এদের মনে শিষ্টাচারের কোনো চিহ্ন পর্যন্ত নাই। এদের অপকর্ম দেখে কেউ যদি বলে, “ভাই, রাস্তায় দাঁড়িয়ে এভাবে...?” তাহলে, সে-ই মূত্রত্যাগকারী সরোষে বলবে, “আপনার কী তাতে?” এই হলো তাদের ধর্মজ্ঞান। এদের শিষ্টাচার আজ সর্বত্র নিম্নমুখী।

বাংলাদেশের পরিবহণ-সেক্টর পৃথিবীর সর্বকালের সর্বকুখ্যাত অসভ্যদের দ্বারা পরিচালিত। এরা জীবনের সর্বক্ষেত্রে আপাদমস্তক-ভণ্ড। এদের নিয়ন্ত্রিত যেকোনো বাস-মিনিবাসের ড্রাইভার, হেলপার আর কন্ডাক্টরের ব্যবহার এতোটাই নিম্ন যে, এদের সঙ্গে তুলনা করার মতো পৃথিবীতে কোনো জঘন্য প্রাণী আর নাই। আমাদের দেশের বাসে চড়লে বোঝা যায়—বেআদব আর অসভ্য কাকে বলে! এখানকার প্রায় প্রতিটি ড্রাইভার, হেলপার আর কন্ডাক্টর অতিশয় নরপশু। আর এদের মুখের ভাষা শুনলে পৃথিবীর যেকোনো সভ্য-দেশের মানুষ আঁতকে উঠবে। এদের মধ্যে আজ ন্যূনতম মনুষ্যত্ব কিংবা ভদ্রতা অবশিষ্ট নাই। আর এদের মধ্যে কখনও ভদ্রতা বলতে কোনোকিছু ছিল কিনা তা আজ গবেষণার বিষয়। রাজধানী ঢাকা-শহরের বাসের হেলপার-কন্ডাক্টরের ব্যবহার দেখলে মানুষ আঁতকে ওঠে। তবুও এর কোনো প্রতিকার নাই। এগুলোর নিয়ন্ত্রকও আজ অসভ্য! অথচ, আপনি ইউরোপে গিয়ে দেখেন, সেখানকার বাসের লোকগুলো কত ভদ্র আর কত সভ্য! তারা খ্রিস্টান। আর এই দেশের একশ্রেণীর অমানুষ আজ মুসলমান হয়ে পশুত্বকেবরণ করেছে! এই লজ্জা রাখার জায়গা কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।

দেশের স্বাধীনতার এতো বছর পরও সরকারি-অফিসগুলোতে আজও ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না! কী নির্মম সত্যবাণী আর ভয়াবহ দুর্ঘটনা! এই দেশের একদল পশু এখনও পাকিস্তানীদের রক্তবহন করছে। আজ তারা ঘুষ ছাড়া কিছুই বোঝে না। অথচ, এই রাষ্ট্রের জন্ম দিতে গিয়ে বাংলা-মা হারিয়েছে তার ত্রিশলক্ষ সন্তানসন্ততি। আজ অসভ্যগুলো সবজায়গায় কর্তৃত্বপ্রদর্শন করছে। দেশ থেকে এরা ভদ্রতা, মনুষ্যত্ব আর সভ্যতা তুলে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে। এর প্রতিকার কে করবে? আর কে ফিরিয়ে আনবে বাঙালির জীবনে সেই ভদ্রতা!

বাঙালি ভদ্র-জাতি। কিন্তু এর মধ্যে একশ্রেণীর আগাছা এখন বাঙালির এই জাতিসত্তাবিনষ্টের ষড়যন্ত্র করছে। এদের শনাক্ত করে চিরতরে নির্মূল করতে হবে। তবেই আমাদের রাষ্ট্রকে আমরা পুরাপুরি মানুষের বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে পারবো।




সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।
১২/০৫/২০১৭

ছবি
সেকশনঃ ইতিহাস
লিখেছেনঃ সাইয়িদ রফিকুল হক তারিখঃ 24/05/2017
সর্বমোট 4771 বার পঠিত
ফেসবুকের মাধ্যমে কমেন্ট করুণ

সার্চ

সর্বোচ্চ মন্তব্যকৃত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন