ব্যাকগ্রাউন্ড

ফেইসবুকে!

নামাজের ফজিলত বলতে গিয়ে ইমামসাহেব কী ভয়ংকরভাবে খুনীদের পক্ষ নিলেন!


 

নামাজের ফজিলত বলতে গিয়ে ইমামসাহেব কী ভয়ংকরভাবে খুনীদের পক্ষ নিলেন!
সাইয়িদ রফিকুল হক
 

গত জুম্মার পরে আবার একই মসজিদে নামাজআদায় করতে গেলাম।
ইমামসাহেব জুম্মার নামাজের আগে খুতবার আলোচনার নামে প্রকৃত-মুমীনদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে হঠাৎ খেই হারিয়ে ফেলে কিংবা উদ্দেশ্যমূলকভাবে রাস্তা পরিবর্তন করে অন্যদিকে সরে যাওয়ার পাঁয়তারা করতে-করতে তিনি বলতে লাগলেন, “মুসলমান ভাইয়েরা নামাজ পড়বেন। কখনও নামাজ ত্যাগ করবেন না। আর নামাজ ছাড়া কোনো গতি নাই। নামাজ হইলো আসল ইবাদত। নামাজ ছাড়া কিছুই হবে না। তাইলে আপনাদের একটা কথা বলি: আমাদের সমাজে মানুষখুনী আছে না? আছে, না নাই? কিন্তু তারা আর কত অপরাধী! এরচেয়ে বড় অপরাধী যারা নামাজ পড়ে না। একথা শুনে আপনাদের বিশ্বাস হচ্ছে না বুঝি? আপনাদের মনে হয়তো খটকা লাগছে?। তাইলে একটা সত্যিকারের ঘটনা বলি। এই ঘটনাটা কিতাবে আছে।”

এবার বেশ আয়েশ করে ইমামসাহেব বলতে লাগলেন:

“ঘটনাটা মুসা আ.-এর যুগের। একদিন মুসা আ. হয়তো কোথাও যাচ্ছিলেন। এমন সময় তার কাছে একটি মহিলা আসলো। একে ঠিক মহিলা বলা যায় না। সে ছিল যুবতী। সে মুসার কাছে এসে বললো, “হে আল্লাহর নবী, আমি একটি পাপ করেছি। এখন আপনি আল্লাহকে বলে আমার পাপমোচন করে দিন।”
একথা শুনে মুসা নবী সেই যুবতী মহিলাটিকে বললেন, “তুমি কী পাপ করেছো তা আগে আমাকে বলতে হবে।”
এতে সেই যুবতী মহিলা বললো, “আমি আমার পাপের কথা বলে আর-কাউকে সাক্ষী বানাতে চাই না। আমি আপনাকে একথা বলতে পারবো না।”
একথা শোনার পর মুসা নবী বললেন, “তাইলে আমি তোমার ব্যাপারে আল্লাহর কাছে কোনো সুপারিশ করতে পারবো না।”
অগত্যা উপায়অন্তর না দেখে সেই মহিলাটি মুসার কাছে তার নিজের পাপস্বীকার করে বলতে লাগলো: “হে আল্লাহর নবী, আমি যুবতী স্ত্রীলোক। তাই, কিছুকাল আগে আমি একজনের সঙ্গে অবৈধভাবে শারীরিকসম্পর্কস্থাপন করে গর্ভবতী হয়ে পড়ি। আর এতে আমি চিন্তিত হয়ে পড়ি। আর নিজেক মানুষের কাছ থেকে বাঁচানোর জন্য একটি জঙ্গলে চলে যাই। এর কিছুদিন পরে আমি সেখানে একটি সন্তান জন্ম দেই। কিন্তু এই সন্তান অবৈধ হওয়ায় আমি নিজের বিপদের কথা ভেবে ওই সন্তানকে হত্যা করে মাটিতে পুঁতে রাখি। তারপর আমি লোকালয়ে ফিরে আসি। কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছি এটি পাপকাজ। তাই, আমি এই পাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আপনার কাছে এসেছি। এখন আপনি মহান আল্লাহকে বলে আমার অপরাধ ক্ষমা করিয়ে দিন।”

স্ত্রীলোকটির কথা শুনে মুসা পয়গম্বর বললেন, “তুমি ভয়ানক পাপী। আর তুমি দুইটা বড় পাপ করেছো। একটা হলো তুমি জিনা(ব্যভিচার) করেছো। আর অপরটি হলো তুমি মানুষহত্যা করেছো। তোমার কোনো ক্ষমা নাই। আমি তোমার ব্যাপারে আল্লাহর কাছে কোনো সুপারিশ করতে পারবো না।”

কথা শেষ করে মুসা-নবী চলে যাচ্ছিলেন। এমন সময় মহান আল্লাহ ওহী নাজিল করে বললেন, “হে মুসা, তুমি কোথায় যাচ্ছো? এই মহিলার অপরাধের কথা শুনে তার জন্য তুমি আমার কাছে সুপারিশ না করে চলে যেতে পারো না। আর তুমি হয়তো জানো না এই মহিলার অপরাধ আমার কাছে কোনো অপরাধই না। আর তুমি কি জানো দুনিয়ার মধ্যে এইরকম হত্যাকারীর চেয়ে বড় অপরাধী কে?”
একথা শুনে মুসা-নবী বললেন, “হে আল্লাহ আমি জানি না। আর এব্যাপারে আপনি ভালো জানেন।”
তখন মহান আল্লাহ বললেন, “শুনে রাখো দুনিয়ার মধ্যে যেকোনো মানুষখুনীর চেয়ে বড় অপরাধী হলো যে নামাজ পড়ে না! তাই এই মহিলার অপরাধ আমি ক্ষমা করে দিয়েছি।”

পাঠক চিন্তা করে দেখুন: ইমামসাহেব কী বলতে চাইছেন? কোনো ব্যক্তি নামাজ-কালাম পড়ে মানুষহত্যা করলেও দোষনীয় নয়। এসব দোষের তেমন-কিছু নয়। কারণ, দুনিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় অপরাধী হলো সেই ব্যক্তি যে নামাজ পড়ে না! এব্যাপারে ইমামসাহেব কিতাবের কথা বলেছেন। কিন্তু কী সেই কিতাব—আর কেই-বা লিখেছেন এমন কিতাব?
একশ্রেণীর পশু কি এখন সাধে জঙ্গি হচ্ছে। এইসব মসজিদের ইমাম মিম্বরে বসে মানুষখুনীদের অপরাধকে সামান্য বলছে। আর যারা নামাজ পড়ে না তাদের সবচেয়ে বড় অপরাধী হিসাবে সাব্যস্ত করেছে। দুনিয়াতে আজ এতো-এতো জঙ্গিপনার মূলে এইসব ইমাম নামক পশু। এরা নামাজ দিয়ে নিজেদের সমস্ত অপকর্ম আজ ঢাকতে চাইছে।

ইসলামের নবী আমাদের নবী হজরত মোহাম্মদ সা. নবুওতীপ্রাপ্ত হয়েছেন ৪০বছর বয়সে। নবী হয়েই কিন্তু তিনি নামাজ শুরু করেননি। তিনি নামাজ-আদায় শুরু করেছেন ৫৩বছর বয়সে। অর্থাৎ, তাঁর নবুওতীর ১৩বছর পরে তিনি নামাজ-আদায় শুরু করেছেন।

দুনিয়াতে শুধু নামাজ পড়লেই সাতখুন মাফ! আমরা জানি, বাংলাদেশে একশ্রেণীর ‘নামাজী’ আর ‘হাজী’ সবচেয়ে পাজী, আর বড় অপরাধী। এরা তাদের লোকদেখানো নামাজ ও লোকদেখানোসহ সামাজিক প্রতিপত্তিবৃদ্ধির হজ্জ দিয়ে নিজেদের সমস্ত শয়তানীকর্মকে আড়াল করতে চাইছে। তাই দেখুন না বাংলাদেশে নামাজী আর হাজীরা কত পাজী! এদেরই কয়েকজন হচ্ছে, নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাতখুনের হাজী নুর হোসেন, রাজধানীর আগারগাঁওয়ের মাদকসম্রাট নুরু হাজী, আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি নামাজী-হাজী মকবুল হোসেন, মিরপুরের সাবেক বিএনপি নেতা হাজী এসএ খালেক, মিরপুরের কুখ্যাত সন্ত্রাসী ও বাংলা সিনেমার খলনায়ক হাজী মনোয়ার হোসেন ডিপজল ইত্যাদি। আরও বলতে হবে? তারপরও এরা নামাজের ভুলব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে গোমরাহ বানাচ্ছে, আর জঙ্গিও বানাচ্ছে। এইসব ইমাম এখন সত্যিকারের নামাজ বাদ দিয়ে অপরাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত।

এইসমস্ত নামাজী-হাজী শয়তানের পাশে একজন নিরীহ-গোবেচারা বেনামাজী কতটা খারাপ হতে পারে? তা একবার আপনারাই চিন্তা করে দেখতে পারেন। আসলে, এসবই এদের বানানো গালগল্প। এভাবে এরা নামাজের মাধ্যমে সবকিছুকে জায়েজ করে নিতে চাচ্ছে। ধিক্ এই কুলাঙ্গারদের ধিক্।

সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।
১৫/০৪/২০১৭

ছবি
সেকশনঃ সাম্প্রতিক বিষয়
লিখেছেনঃ সাইয়িদ রফিকুল হক তারিখঃ 24/04/2017
সর্বমোট 1817 বার পঠিত
ফেসবুকের মাধ্যমে কমেন্ট করুণ

সার্চ

সর্বোচ্চ মন্তব্যকৃত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন