ব্যাকগ্রাউন্ড

ফেইসবুকে!

একটি অসম্পূর্ন চিঠি

নীহারিকা,

চিঠির কোন নিয়মতান্ত্রিকতা না মেনেই তোমায় আমার মনের অস্ফুট কিছু কথা বলব বলে সাদা কাগজ আর কলম হাতে তুলে নিয়েছি, কি করব বল। ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর বাংলা লিপি আবিষ্কার করার পর থেকে, তুমি,আমি, আমরা মনের অভিব্যক্তি প্রকাশে এটাই অদ্বিতীয় পন্থা হিসেবে গ্রহন করেছি, কিন্তু আমি মূর্খ, তার দেওয়া লিপি আমি হয়ত কখনও সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে পারিনি। তাই আমার মনের কথা তোমাকে বোঝাতে বারবারই ব্যার্থ। ব্যার্থ হব জেনেও, আজও এই কাগজ কলমের প্রচেষ্টা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারলাম না, তাই খুব কষ্ট হলেও একবার পড়ো। কোন সাড়া বা উত্তর পাওয়ার অধিকার কখনও আমার ছিল না, সে আশায় বুকও বাধিঁনা।

তোমার কাছে হয়ত অনন্তকালের জন্য অজানা রয়ে যাবে যে, যে প্রেম আমার ছিল না, তাকেও খুব কাছ থেকে অনুভব করেছিলাম আমি। ছুঁয়ে দেখেছিলাম তোমার জরাক্রান্ত মনকে আর হৃদয়ের কাঁটাতার ভেদ করে তোমার গভীরে লিখে এসেছিলাম কিছু মূল্যবান শব্দ। যে রাতে তোমার শব্দরা খসে পড়েছিল আমার কবিতা লেখা খাতার ভাঁজে, তখনও অভিমানে অজস্র শব্দ দিয়ে তোমায় আঘাত হানিনি। সূর্যটা খুব নিষ্ঠুর, দিনের আলোয় আমার চোখের জল শুকিয়ে দেয়, কাঁদতে পারিনা। তুমি ভেবেছ হয়তো সবই আমার মিথ্যা অভিনয়, কিন্তু ভোররাতের জোনাকিরা আমাকে দেখেছে ভিজতে, তাদের আলোয় চিকমিক করে উঠেছিলো আমার শুকনো মুখটা। মনে পড়ে তোমার? একসাথে মির্জাপুর মরা নদীর পাড়ে আমরা সূর্যাস্ত দেখেছিলাম? আজ থেকে অনেক বসন্ত পেরিয়ে কোনও এক মৃত বিকেলে নদীর ধারে যখন তুমি কানে মোবাইলটা ধরবে, অন্য কোন নতুন বন্ধু অথবা স্বামীর প্রেমের সিক্ত জালে তনু মন সবই ভাসিয়ে দেবে। এই নিষ্ঠুর সূর্য তখন তোমায় হয়ত মনে করিয়ে দেবে না, পুরনো সেই স্মৃতিগুলো। হয়ত মোবাইলের সামান্য আঘাতে কানের গয়নার ঝুনঝুন শব্দ হবে, সে শব্দ আমার কাছে চির অচেনা ছিল, আর অচেনা থেকেও যাবে। হয়ত তোমার শোবার ঘরের আয়নায়ও তোমার অপরাধ প্রমানে ব্যার্থ হবে। হয়ত শেষ বিকেলের অল্প আধাঁরেও অতচ অদ্ভূত ঝাপসা আলোয় দেখতে পাবে না আমার অসহ্য প্রতিচ্ছবি। এমন বিকেল কেউ কখনও আশা করেছে বলে আমার জানা নেই।

নীহারিকা, তুমি হয়ত কখনও জানবে না, যখন একাকিত্বের মাঝে আমি হারিয়ে যাই, সেই সময় গুলোতে শুধু তোমার কথা আর ভালবাসা খুঁজে ফিরি। এখন শুধুই তোমার পথ চেয়ে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে নিস্তব্দতার মৃদু পরশে নিজেকে ভাসাই আর চিন্তা করি কি এমন কারনে, আজ আমার এই পরাজয়, কেন এই গ্লানি।

নিহারীকা, তুমি কি আমায় কখনো ভালবেসেছিলে?
আজ এমনও হাজার প্রশ্ন আমাকে আঘাত করে, আর হৃদয়টাকে কুড়ে কুড়ে খায় ব্যার্থতার শকুনিগুলো। কিছুতেই স্বাভাভিক হতে পারিনা। কারণ তোমার কাছ থেকে দুরে থাকা কতটা কষ্টের তা তুমি বুঝবে না আর কখনো জানতেও চাওনা,আমি কেমন আছি? আমি তোমাকে নিয়ে যে স্বপ্ন তিলে তিলে গড়েছি তা সময়ের ব্যবধানে খুবই তুচ্ছ তোমার কাছে। জানি না! তুমি কতটা নিজেকে বুঝতে পার? আমার মনে হয় তুমি তোমাকে আজও ঠিকভাবে জানতে পার নি। কারণ ভালবাসার অর্থই হল নিজের মাঝে প্রিয়াকে খোজা। আজ প্রতিটি প্রহর অনিদ্রার সঙ্গী আমি। বলতে পার? আর কত প্রহরকে সঙ্গী করলে তোমার উত্তর পাব? তুমি কি জান? কিছু কিছু মানুষ সত্যি খুব অসহায়। তাদের ভালোলাগা মন্দলাগা, ব্যথা বেদনা গুলো বলার মত কেউ থাকে না। তাদের কিছু অবাক্ত কথা মনের গভীরেই রয়ে যায়, আর কিছু কিছু স্মৃতি - এক সময় পরিনত হয় দীর্ঘশ্বাসে। আমি আজ তাই অসহায় আত্ম সমার্পন করে তাদের দলেই ভিড় করেছি।

আমি উম্মাদ হয়ে তোমাকে ভালবেসেছি তাই মনে হয় তুমি ভাবছ এ কষ্টটা আমার প্রাপ্য ছিল। সত্যিই যদি ভালবাসা মুছে যায় বিপরীত কি ঘটবে জানি না।

প্রতিটা মানুষের জন্যই কখনো না কখনো জয় আসে, আজ তুমি যাকে হারাবে, কখনো না কখনো তার কাছেই তোমার হারতে হবে, প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে। প্রকৃতি কাউকে কখনো ঠকায় না !!!
প্রকৃতির নিজের নিয়মে তার প্রতিশোধ নিয়ে নেবে, এই মনুষ্য জাতি ক্ষমা করলেও, কোন অপরাধির প্রকৃতির প্রতিশোধ থেকে মুক্তি মিলবে না। আজ তাই, যে দীর্ঘশ্বাসের বীজ আমাতে তুমি বপন করেছো, সে দীর্ঘশ্বাস থেকে নিসৃত অভিশাপ, আমি কোন ভাবেই রুখতে পারছি না। মনকে বুঝিয়ে চলেছি, কিন্ত দীর্ঘশ্বাস, সেতো আজ আমার কথা শোনে না।

মনে পড়ে তোমার? শরৎ শুভ্রতা যখন প্রকৃতির আকাশ বাতাসে। দশভূজার আগমনের পদধ্বনি ছিল প্রকৃতির সর্বত্র। আজ থেকে দশটি বছর পূর্বে এমনি একটা দিনে, সোনালি রোদের ঝলমলে সকালে, তোমার স্বহস্তে লেখা চিরকুট খানি তুমি আমায় দিয়েছিলে আর লজ্জায় লাল হয়ে মুখটা লুকিয়েছিলে, লিখেছিলে আমিও তোমায় ভালবাসি। জানি, সবই আজ তোমার ঝেড়ে ফেলা অতীত। সবই বিস্মৃতি।

তুমি জান নিহারীকা, আমি অনেক চেষ্টা করেছি, তোমাকে ভূলে থাকার কিন্তু তোমার ফেলা আসা বিস্মৃত অতীত আমাকে সর্বাঙ্গ গ্রাস করেছে, রাহু যেমন চাঁদকে গ্রাস করে। চোখের পাতাগুলো ভিজে আসে, কষ্ট লুকোনোর ব্যার্থ করে চলি কিন্তু পারিনা। হৃদয়ের অগ্নিৎপাতের দহনে, দহনে, চোখ দুটোর কাছে আমি আজ বড়ই অসহায়।

নিরন্তর দুঃচিন্তার স্রোত টাকে থামাতে পারিনা, সেই ব্রীজ, সেই শত বছরের বটবৃক্ষ, সেই মরা নদী, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, তারা সবই আছে আগের মতন। শুধু তুমি নেই, নেই তোমার ভালবাসা। মনে কি পড়ে না সাথী, সেই যে নদীর কূলে বসে বলতে আমায়! কখনও দুঃখ দিও না তুমি, তাহলে বাঁচব না আমি। তুমি কি জান? ওরা আজ সবাই আমার দিকে করুনার দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। কিন্তু আমি তো কখনও কারও করুনা নিয়ে বাঁচতে চাইনি।

তুমি হয়ত জান না, আমার যৌবনের প্রবেশ পথে তুমি দাড়িয়েছিলে একা, যৌবনবতী হয়ে। তোমার নিষ্কলুষ হাসি, ডালিম ফুলের রং এ রাঙ্গানো ঠোঁট, শাঙন মেঘের মত চুল, গোলাপি আভায় রাঙ্গায়িত আঁখি। এমন কোন সৌন্দর্য নেই, যা সেদিন তোমার লাবণ্যে অনুপস্থিত ছিল। পৃথিবীর সব রং, সব সৌন্দর্য নিয়ে কড়া নেড়েছিলে আমার মনের দরজায়। সাদা পাল তোলা নৌকা নিয়ে নোঙ্গর করেছিলে আমার হৃদয় বন্দরে, নতুন পোতাশ্রয়ের খোঁজে। জানিয়েছিলে তোমার আমার ভাবনা অভিন্ন।

জানি, এসব আজ তোমার কাছে নিস্তব্দতার অন্ধকারে ডুবে যাওয়া পঁচা অতীত। কেন জানি না আমি আজও হাতড়ে ফিরি। আজ আমি অশ্রু সিক্ত না অশ্রু রিক্ত তা বুঝে পারিনা। তবে বুকের ভেতরটায় ব্যাথার তীব্রতা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। সে ব্যাথা অশ্রুকে আটকে রাখার। বাস্তবতা এতই কঠিন যে কখনও কখনও বুকের ভিতর গড়ে তোলা বিন্দু বিন্দু ভালবাসাও অসহায় হয়ে পড়ে। তেমনি আমার ভালবাসাও আজ বাস্তবতার নগ্ন স্রোতে বিপর্যস্ত। ক্ষনে ক্ষনে বুকের ভিতর টা হাহাকার করে ওঠে। পুরনো কাঠের বাক্সের ভিতর থেকে ফিরে ফিরে আসে আমার পুরনো অতীত। জরা, অবসাদগ্রস্ত, বয়সের ভারে ক্লান্ত, ঘুনে খেয়ে ফেলেছে তার প্রায় সর্বাঙ্গ, অসংখ্য নতুন ঘুন পোকা জন্ম নিয়েছে তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে। অহর্নিশ কুড়ে কুড়ে খেয়ে চলেছে তার দেহাবশেষ। তবুও বাক্সটা তোমার স্মৃতিমাখা ৯৬৭টি চিঠির একটাও মলিন হতে দেয়নি।

নীহারিকা, তুমি এমন কেন করলে? এ প্রশ্নের উত্তরটা জেনে যেতে পারলে, অঘোম সত্য, মৃত্যুতেও আমার পরম শান্তি মিলত। তাই, আমি আরও কিছুদিন বেঁচে থাকতে চাই, তোমার উত্তর পাওয়ার আশায়। জানি, তুমি ছাড়া এক মুহূর্ত এ পৃথিবীতে বেঁচে থাকা মানে মৃত্যুর কাছাকাছি থাকা।

দিনে দিনে হাই ব্লাড প্রেসার, হাই ব্লাড সুগার বেড়েই চলেছে, চোখের নিচের কালসিটে লুকাতে পারছি না। আজ সব আমার নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছে। হয়ত মুহূর্তের শেষ যাত্রাই সঙ্গী হবে আমার। হয়ত, তোমার উত্তর পাওয়ার জন্য এই দেরী........

যেদিন তোমার উত্তর পাব। সেদিন সম্পূর্ন চিঠিটাই লিখব। এটা তোমার উদেশ্যে লেখা আমার একটা অসস্পূর্ন চিঠি। অনেক কিছু পেয়েছি আমি এই জীবনে তোমার থেকে, যেখানে প্রাপ্তীর চেয়ে অপ্রাপ্তীর খাতাটাই বেশী পরিপূর্ন। তোমার উত্তর দিয়ে প্রাপ্তীর ফাঁকা অংশটা কিছুটা পূর্ন কর। এটাই আমার অন্তিম চাওয়া।

জানো, আজ রুদ্র মুহম্মদের কথাটা বারবার মনকে জানান দিচ্ছে,
"বিদায়ের সানাই বাজে নিয়ে যাবার পালকি এসে দাঁড়ায় দুয়ারে, সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে, এই যে বেঁচে ছিলাম, দীর্ঘশ্বাস নিয়ে যেতে হয় সবাইকে অজানা গন্তব্যে, হঠাৎ ডেকে ওঠে নাম না জানা পাখি অজান্তেই চমকে উঠি জীবন, ফুরালো নাকি! এমনি করে সবাই যাবে, যেতে হবে..................."

ভাল থাকো, সুখে থেকো, নীহারিকা।
ইতি
মহাশূন্য

ছবি
সেকশনঃ অন্যান্য
লিখেছেনঃ সৌরভ সরকার তারিখঃ 16/03/2017
সর্বমোট 8188 বার পঠিত
ফেসবুকের মাধ্যমে কমেন্ট করুণ

সার্চ

সর্বোচ্চ মন্তব্যকৃত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন