ব্যাকগ্রাউন্ড

ফেইসবুকে!

শাহিদার গল্প

আমি ঢাকা থেকে একদিন হচ্ছে বাড়িতে ফিরেছি।কিন্তু গ্রামের আত্নীয় স্বজনের সাথে এখনো দেখা করা বা কথা হয়নি।গতকাল অনেক পথের জার্নি করে বিকালের দিকে বাসায় পৌছাই। খুব ক্লান্ত ছিলাম বিধায় বাসা থেকে না বের হয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম।উঠতে উঠতে সন্ধ্যা হয়ে যায়।তাই কারো সাথে দেখাও হয়নি, কথাও হয়নি।


রাত্রে মায়ের হাতে বানানো দারুন দারুন সব মজার খাবার খেতে হয়েছে।অনেকদিন পর বাসায় ফিরেছি বলে কথা।ছেলে থাকে দূরের দেশে। ঠিকঠাক মত খাওয়া দাওয়া করে কিনা!! কে জানে? মায়ের মনে এসব প্রশ্ন ঘোরাঘুরি করে।তাই গতরাত্রে যখন খাওয়ানোর সুযোগ পেয়েই গেছে হাতছাড়া করে কি করে!!


মায়ের হাতের সব খাবার খেয়ে, চশমাটা চোখে দিয়ে বিছানার উপর বসে মাসুদ রানা সিরিজের 'নকল রানা' বইটা হাতে নিয়ে পড়তে পড়তে কখন যে ঘুমিয়ে গেছিলাম বলতে পারি না।


ওহ হো নিজের পরিচয় না দিয়েই বকবক করে চলেছি। এটা আসলে আমার দোষ না, বাঙ্গালী জাতির দোষ।এ জাতি কোন কিছু ভালো করে শুরু করতে পারেনা।যদিও পারে সেটা ঠিক মত শেষ করার সামর্থ্য রাখে না।




আমি মির্জা ফারুক।ঢাকা শহরের একটা কর্পোরেট অফিসে চাকরী করি।বাংলা সাহিত্যের প্রতি আমার প্রবল আকর্ষণ সেই ছোট বেলা থেকেই।তাই বই পড়তে আমার ভীষন ভালো লাগে।ছোট বেলায় কবি, লেখক হওয়ার স্বপ্ন ছিল।কিন্তু আমার এ যান্ত্রিক জীবনে সময়টা পাই কখন??
তাই সে আশার গুড়ে বালি।বাসায় আসলে গ্রামের আত্মীয় স্বজন ও বয়জৈষ্ট বা মুরুব্বীদের
সাথে দেখা করা আমার অনেক বড় দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।তাই সক্কাল সক্কাল খাওয়া দাওয়ার পর্ব সেরে বের হয়েছিলাম সবার সাথে দেখা করতে।সবার সাথে দেখা করা হয়েছে।
শুধু বাদ আছে একজনের সাথে দেখা করা।
যে একজন আমার কাছে খুব স্পেশাল।তাই সে মানুষটার সাথে দেখা করার পর্বটা সবার শেষে রেখেছি।
গ্রামের শেষ প্রান্তে তার বাড়ি।



এই মুহুর্তে আমার একমাত্র উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ঐ বাড়িতে যাওয়া।এবং সে মানুষটার সাথে গল্প করা।আমি বাসায় আসলে মাস্ট এটা করি।
তাই সামনের দিকে চলতে শুরু করলাম।
সে বাড়ির টিনের চালা মরিচা ধরেছে।বৃষ্টি নামলে ঘরের ভেতরে পানি পরে কিনা সে মানুষটাই জানে।বাড়িতে মানুষ বলতে সে একাই।আমি উঠানের মধ্যে গিয়ে তাকে দেখতে পারলাম।
দেখলাম খেঁজুরের পাতা দিয়ে বানানো পাটিতে বসে আসে।পাশেই লাঠিটা রেখেছে।ঐ লাঠিটা ছাড়া ঠিকমত চলতে পারে না।
আমি সামনে গিয়ে বললাম,
এই যে বুড়ি কেমন আছো?বুড়ি আমার কন্ঠ শুনে আমার দিকে তাকালো।চোখে পানি থাকা স্বত্বেও হাসি দেবার চেষ্টা করলো।
আমি চোখে পানি দেখে বললাম,
কি বুড়ি তোমার চোখে পানি কেন?
বুড়ি আমার কথার কোন জবাব না দিয়ে বলল,
তুই কবে আইছুরে পাগল।
আমি বললাম, এইতো গতকাল।
গতকাল আইছু আর আজ দেখতে আইলি??বুড়ি বলল।
আমি বললাম,গতকালে বিকালে এসেছি।তাই এদিকে আসা হয়নি।তা বুড়ি তোমার চোখে পানি কেন?
বুড়ি বলল,এমনি চোখে পানি আইছে।তেমন কিছু হই নাইরে পাগল।



এই বুড়ি ও আমার সম্পর্ক সমন্ধে দুই এক কথা না বললেই নয়।বুড়ির বয়স আশির এর কাছাকাছি হবে।তিনি সম্ভবত গ্রামের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ।বুড়ির সাথে আমার সম্পর্ক ছোট বেলার। তিনি আমার
জন্মদান কালে ছিলেন।অর্থাৎ তিনি আমার দাইমা।তবে আমি তাকে ছোট বেলা থেকেই দাদি বলতাম।দাদির চেয়ে বুড়ি বলেই বেশি ডাকতাম।আমাকে খুব ভালো বাসতো।এখনো খুব ভালবাসে।আমিও তার মায়া ছাড়তে পারি না।বাসায় আসলে তার সাথে একবার না দেখা করিলে মনটাতে তৃপ্তি পাইনা।আমি আসার পর তিনি আমার বাড়িতে দিনে দশ পাক যে দেবে এটা খুব কমন বিষয়।গিয়ে বাড়ে বাড়ে খোঁজ নেবে মায়ের কাছে।
ডেকে বলবে,
কে গো মা,তোর পাগল ছেলেটা কই??
আমি বাসায় থাকলে গল্প হয়।না থাকিলে আবার নিজের বাড়ির দিকে পথ চলা শুরু করে।
যাই হোক।তার চোখের পানি দেখে আমার ভেতরে কেমন কেমন একটা বেদনাবোধ হতে শুরু করে।তাই আমি বাড়ে বাড়ে একই কথা জানতে চাইছি।তখন বুড়ি উচ্চ স্বরে কান্না করতে শুরু করে।
আমি জানতে চাইলে
বলে, ওরে পাগল রে।এই মাসটা কেন বারে বারে আমার জীবনে ফিরে আসে??যু্দ্ধের বাজনা ক্যান কাঁনে বাজতে থাকে??
বুড়ির জীবনে অনেক কষ্টের স্মৃতি রয়েছে।যে সব গল্প আমি অনেক আগেই শুনেছি।এগুলো তার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা একটাও কোন মিথ্যে গল্প নয়।

তার জীবনের গল্পের অসংখ্য স্মৃতি মাঝে এই মাসের স্মৃতি অর্থাৎ জুন মাসের স্মৃতি অত্যন্ত মর্মান্তিক স্মৃতিবহুল।জুনের বাস্তবতা বুড়ির কাছে শুনেছি ইতিপূর্বে।।সে কষ্টের কথাগুলো আপনাদের বলতে আমার সাধ জেগেছে।
শুনোন তবে,,







""""৭ই মার্চের শেখ মুজিবের চৌকশ একটা ভাষনে বাঙ্গালি জাতির মাঝে একটা নতুন উন্মদনা তৈরী হয়েছিল।
চারিদিকে যুদ্ধের একটা সমাগম পড়ে গিয়েছে।শেখ মুজিবরের আহব্বানে সবাই যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।এবার নিজের অধিকার আদাই করেই ছাড়বে।রক্তদিয়ে হলেও বাঙ্গালি অধিকার আদায়ে পিছ পা হবে না।বেতারে শেখ মুজিবের ভাষন সব সময় প্রচার করা হচ্ছে জনমনে সাহস উদ্দীপনা জাগিয়ে তোলার জন্য।শিক্ষিত সমাজ এ বিষয়কে(যুদ্ধটাকে) অধিকার আদায়ের উৎতম পথ হিসেবে দেখছে।
"মারো, না হয় মরো"
এমন উক্তি সবার সামনে চলে এসেছে।


২৫ মার্চের ভংঙ্কর কালো রাত্রি অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর বিষয়টা আরো জটিল হয়ে পড়ে।শেখ মুজিবকে আটক করা হয়।
তারপর দেশের মাঝে থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে থাকে।
গ্রামে গ্রামে,পাড়া মহল্লায়,শহরের অলিতে গলিতে যুদ্ধ চর্চা হতে থাকে।
যুদ্ধ করতে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেওয়া দরকার।কেননা সাধারন মানুষের সাথে সামরিরক বাহানীর যুদ্ধ।তাই দলে দলে গ্রামের মানুষেরা(যুবক,বয়স্ক সব বয়সেরই ছিল।তবে যুবকের পরিমান বেশি ছিল) সীমানা পার হয়ে ভারতে যাচ্ছে প্রশিক্ষণ নেবার জন্য।



শাহজাহানের গ্রামের সবাই দলে দলে যাচ্ছে। তারও দেশের জন্য যুদ্ধ করা উচিৎ।
কিন্তু বাড়িতে স্ত্রী(বুড়ি) আর দুইটা যুবতি মেয়ে।তাদের ফেলে রেখে যেতে পারে না।একটা মেয়ের বয়স ১৪ বছর।আরেকটা বয়স ১২ বছর।মুন্সি গোছের মানুষ।গ্রামের সবাই তাকে শাহজাহান মুন্সি বলে চেনে।পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে।আল্লাহু তালার একজন খাশ বান্দা।আল্লাহ করতে মানা করেছেন এমন কাজ তিনি কোন দিনই করেন নি।
কিন্তু দেশের এ অবস্থা।এখন দেশের জন্য কিছু করবে নাকি পরিবারের কথা ভাববে সেটা নিয়ে ভাবনায় মগ্ন হয়।শাহিদা(বুড়ি)
স্বামীর চিন্তার কারন বুঝতে পারে।এবং সে যুদ্ধে যাওয়া জন্য বলে।
শাহেদার এমন উদার মনমানসিকতার জন্য মুন্সি অনেক খুশি হয়ে যায়।
স্বদেশকে ভালবেসে স্বদেশের জন্য কিছু করা ইমানী দায়িত্ব।
নবী সাহেবেও স্বদেশের জন্য ভালবাসা দেখিয়েছেন।এসব ভেবে মুন্সি দেশের জন্য বেরিয়ে পড়েন।



কয়েকমাস পেরিয়ে গেছে।মুন্সির কোন খবর নেই।কলকাতা পৌঁছেই একখানা চিঠি লিখেছিল।তারপরে আর কোন চিঠি লেখেনি।
চিঠিতে লেখা ছিল,



""শাহেদা বেগম, আমি ভাল ভালোই পৌঁছে গিয়াছি।
এখানে ট্রেনিং নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে গিয়েছি।
তুমি আমার কলিজার টুকরা মাইয়াগুলারে দেইখা রাইখো""


চারিদিকে যুদ্ধের সমাগম।মে মাসের মধ্যে এলাকায় পাকবাহানীরা চলে আসে।খবর এসেছে নাটরের সুগার মিলে একসাথে ২০০জন কে হত্যা করেছে পাকবাহিনীর কুকুররা।
পাবনার এ অঞ্চলে ঢোকার খবর মিলেছে।


গ্রামে এখনো পাকিস্তানিদের পা পড়েনি।বোঝা যাচ্ছিল খুব শীঘ্রই চলে আসবে।কেননা পাহাড়তলি গ্রামের কয়েকজন শান্তি কমিটিতে নাম লিখিয়েছে।তাদের সাহায্যই চলে আসবে।


মে মাসের শেষ। জুন মাসের শুরু গ্রামে পা-কিদের পা পড়েছে।গ্রামের কে কে যুদ্ধে গিয়েছে তার তালিকা করে শান্তি কমিটির বদর মুন্সি পাকিস্তান কমান্ডারের হাতে ধরিয়ে দিয়েছে।সে তালিকা অনুযায়ী
বদরা বাড়িতে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে।
শাহিদার বাড়িতেও গিয়েছে দুদিন।কিন্তু একদিনও বাড়িতে কাওকে খুজে পাইনি।শাহিদার বাড়িতে ঘন কারনও আছে।
হেতুটা হলো,
বদরা কমান্ডারকে লোভ দেখিয়ে বলেছে,
"কমান্ডার সাব,শাহজাহানকা দুনো লাড়কি হে,
যোয়ান লাড়কি।"




এছাড়া শাহজাহানের পরিবারের উপর বেশি আক্রোশ থাকার কারন।সে মুন্সি, একজন মুসলমান হয়েও কেন?? কাফির,হিন্দুদের সাথে হাত মিলিয়ে পাকিস্তানীদের সাথে যুদ্ধ করবে।কমান্ডারের খোব বা রাগ শাহজাহান হলো,তাদের জাতী ভাই।সে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে। যার শাস্তি তাকে পেতেই হবে।



তাই ঘনঘন শাহিদার বাড়িতে আসার এগুলো অন্যতম হেতু।
শাহিদাও খুব চালাক মেয়ে।মিলেটারি আসার আগেই খবর পেয়ে যায়।বাড়ির পাশেই একটা বড় খাল আছে।খালের এপাশে তাদের বাড়ি।আর ওপারে বিশাল জঙ্গল। মিলিটারিদের আসার খবর পেলেই তারা সে জঙ্গলে গিয়ে পালাতো।তাই মিলেটারিরা বেশ কয়েকবার আসলেও তাদের খুঁজে পাইনি।ইতিপূর্বে যে কয়েকদিন এসেছে প্রত্যেকদিন দুপুরের দিকে এসেছে।তাই শাহিদা ও তার মেয়েরা ভেবেই নিয়েছিল।মিলেটারিরা আসলে দুপুরের দিকেই আসবে।



একদিন বিকালে শাহিদা উনানে ভাঁত তুলে দিয়েছে,ভাতের পাতিল থেকে ধোঁয়া উড়ে উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে।শাহিদা সে ধোঁয়ার দিকে তাকিয়ে শাহজাহানের কথা চিন্তা করছে,
"মানুষটা কোথায়, কেমন আছে আল্লাহ পাক ভালো জানে।"



ছোট মেয়ে শাঁকের ডোগা বেঁছে নিচ্ছে।আর বড় মেয়ে কলসি বগলে নিয়ে বাড়ির উঠানে পা রেখেছে।পাকবাহানীদের দৌড়ে আসতে দেখে বড় মেয়েটা হাতের কলস ফেলে চিক্কুর দিয়ে বলে ওঠে, ''ও মা গো"
দৌড়ে মায়ের কাছে যায়।

শাহিদা পিছনে তাকিয়ে দেখে দশ/পনেরোটা মিলেটারি।ছোট উঠানটা ভোরে গেছে।
ছোট মেয়েটা মাকে জোড়িয়ে ধরে আছে।


এবার বদরা সামনে এসে বলে,
"বাড়ে বাড়ে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান!!"
শাহিদা কিছুই বলে না।মেয়ে দুইটাকে কোলের মাঝে আকড়ে ধরে রাখে।


কমান্ডার সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বদরা বলে ওঠে,
" সাব,এ হে শাহজাহান কা বিবি,
আর এ ডুনো হারামখোর কা যোয়ান লাড়কি!!"

কমান্ডার দুজন সাধারন সৈনিককে আদেশ দেয়,
"বাচ্চো লিয়ে আও ওও দুনো লাড়কি কো।"


সাধারন সৈনিক শাহিদার কাছে গিয়ে মেয়ে দুইটাকে ছাড়িয়ে আনতে যায়,
কিন্তু ছাড়াইতে পারে না।তিনটা মহিলার আহাজারী,চিৎকারে কান্নায় আকাশ যেন দুমদুম করে বাজতে শুরু করে।
ছাড়াতে না পারাতে শাহিদার বুকে লাত্থি দিয়ে ফেলে দেয়।
বড় মেয়ে তখন একজন সৈন্যের মুখের দিকে থুথু ফিকে দেয়।তখন সৈন্যটা বলে ওঠে, বাইনচোদকা ওলাদ।।


তারপর টানতে টানতে দুইটা মেয়েকে নিয়ে যায়।
পিছনে পিছনে শাহিদা বেগম ছুটতে থাকে।এই তিনটা নারীর চিৎকারে পৃথিবীর যেন থমকে গেছে।বাতাস বইছে না,
গাছের একটা পাতাও নড়ছে না।গ্রাম একদম শূন্য।জনমানবের চিহ্ন নেই।দুই একটা গৃহপালিত পশুপাখিগুলো দেখা যাচ্ছে।তবে সেগুলোও থমকে দাড়িয়ে আছে।পাখিগুলো গাছ থেকে উড়াল দিয়ে অন্য কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে।



পিছনে পিছনে ছুটে দেখে একটা সৈন্য দৌড়ে এসে আবার লাত্থি দিয়ে ফেলে রেখে যায়।তারপর মিলিটারি গাড়িতে কন্যা দুটো তুলে নিয়ে যায়।শাহিদার জানা নেই কোথায় নিয়ে যাবে।তাই তার আর কিছুই করার নাই।
পরে জানা গিয়েছে,দুজনকে নিয়ে গিয়ে শরীর ভোগ করেছে।যৌন নির্যাতন চালিয়েছে অনেকদিন।তারপর যখন একদম নাযেহাল অবস্থা হয়ে গিয়েছে তখন তাদের গুলি করে মেরে ভাগারে ফেলে রেখেছে।শাহিদা একথা শোনার পরে দৌড়ে গিয়েছিল সেই ভাগারে মেয়েদের খুঁজতে কিন্তু পাইনি।কোথায়? কি হয়েছে কেউ বলতে পারেনা।এর পর থেকে জুন মাস আসলেই এমন যন্ত্রণা দায়ক স্মৃতি বুড়ির মনে পড়ে যায়।




শাহাজাহান যুদ্ধ শেষে বাড়ি ফিরে আসে।আনন্দের বার্তা নিয়ে। হাতে দেশের লাল-সবুজের একটা পতাকা।এসে দেখতে পায় শাহিদা খোলা চুলে বসে আছে উঠানে মাটির মধ্যে।পাগলীর মত দেখাচ্ছে শাহিদাকে।
শাহিদা শাহজাহানকে দেখে উঠে দাড়িয়ে সামনে আসতে থাকে।শাহজাহান কিছু বুঝে ওঠার আগেই শাহিদা জোড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়।কান্না জড়ানো কন্ঠে বলতে থাকে,
"তোমার কলিজার টুকরা দুইটা নাই গো।


বদরা
তাদের মিলেটারিদের হাতে তুইলা দিছে।তাদের আর কোন খবর পাইনাই।"
শাহজাহান হৃদয়কে কাঠ করে বলে,
কাঁদছো কেন..?
তারা দেশের জন্য শহীদ হয়েছে।তারা এ পতাকার লাল অংশে বাসা বেঁধে।পৃথিবী যতদিন রবে তাদের আর কেউ অম্মান করতে পারবে না।হাত উচিঁয়ে তাদের সম্মান করবে।
আর পরকালে তো তাদের জান্নাত নসিব হবেই বেগম।তাই ভেঙ্গে পরছো কেন??
শাহজাহানের চোখের পানিগুলোও বাঁধা মানছে না।আর নিজেই সান্ত্বনা দিয়ে চলেছে।।
খবর পাওয়া গেছে, বদরা মুক্তিবাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে।।

এরপর চলতে হাতে তাদের পরবর্তী জীবন।পরবর্তীতে তাদের আর সন্তান হয়নি।।শাহজাহান গত হয়েছে ২৫বছর হলো।বুড়ি একাই এই বাড়িতে থাকছে এত বছর ধরে।
গ্রামের মানুষের খুব প্রিয় একজন পাত্র এই বুড়ি।তাই তার খাওয়ার কষ্ট হয়না।কারো না, কারো বাড়ি তার খাওয়ার ব্যবস্থা হয়ে যায়।জোর করে তাকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে খাওয়ায়।""""






আমি বুড়িকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে বললাম,
আরে বুড়ি, তুমি দেখছি বাচ্চা ছেলেমেয়ের মত কান্না জুড়ে দিলে।
তোমার মেয়ে দেশের জন্য প্রান দিয়েছে।এমন সৌভাগ্যবতী মা কয় জনে হতে পারে??
বুড়ি তুমি বাংলার শ্রেষ্ট মায়েদের একজন।তোমাকে আমরা!!আমরা বাঙ্গালী গভীরভাবে সম্মান করি,শ্রদ্ধা করি।।
বুড়ি এবার একটু শান্ত হলো।আমি বুড়িকে শান্ত করে বললাম,
বুড়ি আমি তবে এখন উঠি!!তুমি আমাদের বাড়ির দিকে যাইও গো বুড়ি।।আমি বাড়িতে বেশ কয়েকদিন থাকবো।
তারপর আমি বাসার দিকে চলে আসলাম।।।

ছবি
সেকশনঃ মুক্তিযুদ্ধ
লিখেছেনঃ আমিনুল ইসলাম তারিখঃ 01/03/2017
সর্বমোট 4870 বার পঠিত
ফেসবুকের মাধ্যমে কমেন্ট করুণ

সার্চ

সর্বোচ্চ মন্তব্যকৃত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন