ব্যাকগ্রাউন্ড

ফেইসবুকে!

আমার বন্ধু

আমি কেঁদেছিলাম।খুব করে কেঁদেছিলাম।সেদিন।
যেদিন আমার বন্ধুকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো।
আমার বন্ধুও খুব কেঁদে ছিল।তবে তা খুব শান্তভাবে।শুধু চোখ দিয়ে পানি ফেলেছিল নিরবে।
আমার
সে সব সৃতি খুব করে মনে পড়ে ।

আমি
তখন ৬ষ্ট শ্রেনীর ছাত্র।বয়স দশ,বার বছরের ফাঁক দিয়ে।
এ বয়সের ছেলে মেয়েরা খেলা করে সময় পার করে।
আমি তাই করতাম।
বাপের বোকাবোকি তে মাঝে মাঝে পড়তে বসতাম।
সে সময় বাপকে ভিলেন মনে হত।
মনে হত।তিনি আমারে ভালবাসে না।তিনি আমার জীবনের কাল।শুধু কষ্ট দেয়।কিন্তু
এখন বুঝি বাপের ভিলেনগীরি করার প্রকৃত মানে বা অর্থ।
যাকগে
সে সব ছাড়ুন।
বাপ আমার বাপরে বাপ।বাপকে দেখে প্রচন্ড ভয় পাইতাম।
মাঝে মাঝে ভয় পাবার কারনে বুকে পিঠে ঝারা ফু দিয়ে পিতলের থালা লাগাই থুতে হইত।

বাড়ির আশেপাশের ছেলেদের সাথে আমাকে খেলতে দিত না।
তবুও
পলায়ন করে চুপি চুপি খেলতাম।
বাপের সাথে দেখা হলেই,কানে ধরে নিয়ে এসে পড়ার টেবিলে বসাই দিতো।
আর বলিত বাপ ধন।পড়াটা মন দিয়া পড়।কিন্তু এসব আমার মাথায় ঢুকিত না।
তাই সেই ছোট অন,বড় অন থেকে আমার বাড়িতে প্রাইভেট মাস্টার
রাখিয়া ছিল আমার বাপ জানে।
আমার শ্রদ্ধেহ ভাজন গুরুজনের নাম ছিল শ্রী বিমল চন্ড বসাক।গুরুজন অনেক ভালো ছাত্রছিলেন।মানুষ হিসেবে অনেক ভালো।সেই আমলের যে পরিস্থিতি ছিলো,সেইখানে যুদ্ধ করে ১৯৯০ সালে মেট্রিক মাস করেছিলেন।অনেক বড় পাশ দিয়েছিলেন।হিন্দু পরিবারে তার জন্ম।আর্থিক সমস্যা। শিক্ষা প্রতিষ্টানের অভাব।পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হলে ২০/২৫ কিলোমিটার দূরে গিয়ে কলেজে পড়িতে হইবে।তাছাড়া বাংলাদেশি হিন্দু পরিবারে বিভিন্ন সমস্যা থাকে। তাই আর পড়াশোনা শেষ করতে পারিনি।
আমার বাপের সাথে ভাল খাতির।বাপেরে কাকা বইলা ডাকে।বাপে বলাতে তিনি আমারে প্রাইভেট পড়াইতে রাজি হয়।
তিনি আমায় যা শিখায়তেন তাহাই আমি সৃতি থেকে হারাই ফেলিতাম।
মনে হত।বাপ জানে আমায় মাইরা ফালাইতে বই আর মাস্টার দিয়া বসাই রাখছে।
একবার পারিলে, দ্বিতীয়বার বলিয়া দেয়।
কিন্তু আমি যদি দশ বারেও ঠিক মত না বলিতে পারি।
তবে ত আমার পিঠে গুড়ি জুটিবেই।

হ্যাঁ।এমনি হত।
আমি কিছুই বলিতে পারিতাম না।ক্লাস থ্রিতে শ্রদ্ধেহ দাদা(স্যার)।
গুড়াই লাত্থাই একখানা ছড়া মুখস্থ করাই ছিল। যা এখনো মনে আছে।



"আমাদের ছোট গাঁয়ে ছোট ছোট ঘর
থাকি সেথা সবে মিলে নাহি কেহ পর।
পাড়ার সকল ছেলে মোরা ভাই ভাই
একসাথে খেলি আর পাঠশালে যাই। "



এইভাবে গুড়াই লাত্থাই যে কয়টা পড়াইছে।সে কায়টা সৃতির পাতায় এখন সেভ হয়ে আছে।
কিন্তু মাস্টার সাহেবও ত মানুষ।প্রত্যেকদিন চর থাপ্পর কিল দিতে দিতে নিজেই বেহুশ হয়ে যেতেন।
তাই আদর করে। মাঝে মাধ্যে খুব করে মারতেন।
আর
প্রত্যেকদিনের জন্য ফ্রি ফ্রি ঘার ঘুড়ানি থাকতোই।
ঐটা আমার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল।
বিমল দাদা অংক করতে গিয়ে খুব সুন্দর করে বুঝাইতেন।আর আমি বিরক্তে পিঠ চুলকাইতাম।
সাথে সাথে মাথা ধরে দুইটা ঘুরানিও দিয়ে দিত।
আমারে সতের আর পাঁচ এ কত হয়।বলিতে বলিলে মাথা চুলকাইয়া।পিঠ চুলকাইয়া কইতাম।স্যার বিশ।
সাথে সাথে পিঠে আমার ধোপাস ধোপাস পড়িতো।
স্যারের আর আমার বাপের এত খাটনিতেও আমি ভালো পারিতাম না।আমি বই নিয়া বসিয়া থাকিতাম।কিন্তু বইয়ে মন বসিতো না।

দেখা যেতো সারাদিন ধুলা বালিতে খেলাধুলা করে।সেই পাশের বাড়ির ছেড়াটাই আমার চেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছে।
এখবর বাপের কানে যাবার সাথে সাথে আমারে ধাবরাইয়া কাচা কন্চি পিঠের উপর ভাঙ্গিতো।
আমার ছোট বেলায় বড় অর্জন ছিল।আমি কথা শুদ্ধ বলিতে পারিতাম না।এখনও পারি না।।তবে উন্নতি হয়েছে।
আমি দুই বলিতে পারিতাম না।দুডো বলিতাম।
মদন ভাইকে মডন বলিতাম।

এ সব ছেলে খেলামীর মাঝে। বাপে এদিন কুড়ি হাজারের মধ্যে দারুন একখানা।
গাভী কিনা আনে।
দেখতে বলদের মত লাগিতো।
সাত মাসের গাভ ছিল। আমি ক্ষেতে খাওয়াইতে নিতাম।
মানুষে আমারে জিগায় তো।এটা বলদ নাকি বাবু.?

আমি বলিতাম দেখিতে পারেন না।চোখ নাই।যান আগে ডাক্তারে লগে দেখা কইরা আসেন।
তখন মানুষগুলা।আমার দিকে কেমন একটা দৃষ্টি নিয়া।কইতো।এল্লা হানি ছ্যাড়ার তেজ কত!
আমি কিছু না বলইলা। চইলা।যেতাম।
আর মনে হাসিতাম।ভাবিতাম লোকটা আমার সাহসের প্রশংসা করিয়া গেল!!
কি আর কইমু।
গাভীটা দেখতে বলদের মতই লাগে।সেইরাম হিস্টু পুস্টু।
মানুষ জিগায়বো না কেন কন.?

এর তিন মাস পরে আমাদের ঘরে নতুন অতিথী আইল।বলদ নামের গাভীর পেটে হওয়া বাছুর।
দেখতে কি রহম সুন্দর। বর্ননাতীত।
হিস্টু পুস্টু একদম ওর মায়ের মত।কালা কুচকুচা।তবে ওর মা ছিল ধোলা।
তাই ওর নাম আমি রাখলাম।কালু।

এই নাম রাখার পিছনে ইতিহাস আছে।
মায়ের কাছে শুনছি।
আমাদের বাড়িতে একটা আইড়া ছিল।যার নাম ছিল লালু।দেখতে নাকি লাল টকটকে ছিল।ঐ লালুকে নিয়ে মায়ের কাছে কত গপ্পই শুনতাম হিসেব নেই।
আমার বাপের আদরের গরু ছিল।
আমার বাপে যেইটা কইতো সেইটা শুনিতো।
একবার আমার বাপে ঔ আইড়া নিয়া আমার বড় চাচার বাড়িতে ঘুরতে গিয়েছিল।সেখান থেকে ফেরার পথে।
ঐ আইড়া সাথে লাড়াই লাইছিল দুইটা বড় বড় বলদ।যেগুলা দিয়া বহুত ওজনের গরুর গাড়ি চালায়।
এমন বড় বড় বলদের সাথে লড়াই করে লালু একাই জিতে গেছিল।
এমন কত গপ্পই মায়ে শুনাইছে তার কোন ইয়েত্তা নাই।
তাই আমি মিল রাইখা।এই নতিন অথিতীর নাম কালু রাখছিলাম।

আমার খেলা ধুলার জন্য এই নতুন সঙ্গী পেয়ে আমি খুব খুশি হইয়া ছিলাম।বাপ জানে এই একটা কাম ভালা করছিল।পাড়ায় ছেলেদের সাথে খেলতে না দিলেও।নতুন একটা সঙ্গী দিয়েছিল।

আমি কালু লগে খেলিতাম।হাসিতাম। কথা কইতাম।আমার দিন ভালোই কেটে যাচ্ছিল।কালু ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলো।
আমাদের বন্ধুত্বটা ততদিনে পাকা পক্ত হয়েছে।কালু শুধু আমারেই কাছে যেতে দিত।অন্য কেউ গেলে ঘুতাইয়া এক করইরা দিত।ফলে কেউ কাছে যেতে সাহস পাইতো না।
ঐ ঘুতাঘুতি শিখেছে আমার কাছ থেকেই।আমিও ওরে ঘুতাইতাম। ঐ কালু আমারে ঘুতাই ত তবে সেটা আদরে।যেন আমি ব্যথা না পাই।
আমি ক্লাসে সেভেনে উঠিবো।ক্লাস সিক্সে ফাইনাল পরিক্ষা দিয়েছি।
ততদিনে কালু অনেক বড় হয়েছে।
ওর শক্তির কাছে আমি কিছুই না।এক হেচ্কা টান দিলে আমি উইড়া ১০মিটার দুরে গিয়া পড়িমু।বাড়ি শুদ্ধা মানুষ কালুরে নিয়া চিন্তা করে।
ছুটে গিয়ে কখন কার কি ক্ষতি করে।
সংকর যাতের আইড়া।সেইরাম হিস্টু পুষ্টু। তারপর আবার কালা কুচকুচা।মানুষ দেখেই ভয় পায়।
মাঝে মাঝেই ছুটিতো।আমি ইচ্ছা কইরাই দেরি করে গিয়া ধরতাম।
সারাদিন বান্দা থাকে।মাঝে মাঝে ছুইটা একটু লাফাইলে কিসের সমস্যা।
আমি তো এসব বুঝিতাম।কারো ক্ষতি করবে কিনা।এসব ভাবিতাম না।আমার বন্ধু লাফাই লাফাই একটু শান্তি পাক।এটাই আমার কাছে ভালো ঠেকিতো।

প্রায় সন্ধ্যায় গোয়ালঘরে তুলিতে গিয়া।ছুইটা যেতো হাত থেকে।
আমি দড়ি ধরে সাথে সাথে দৌড়া দৌড়া উইড়া যাইতাম।কালু যে কালার কালা।আন্দার রাতে চোখে দেখা যাইতো না।আমি ছোট মানুষ ধরে বেশিক্ষন রাখিতে পারিতাম না।ছুইটা কোন গাছের সাথে গিয়া লড়াই করতো।
আমি লাইট নিয়ে পিছু পিছু দৌড়াইতাম।আমার এসব ভালোই লাগতো।কিন্তু আমি ছোট দেখে আমার মাও বাপে ভয় করতো।

একদিন সন্ধ্যায় কালু ছুটিলো।আমি পিছু পিছু দৌড়াইলাম।
ধরিতে পারিলাম না।
আসতে আসতে গিয়া দেখি লুতফা আপার বাড়িতে গিয়াছে।লুতফা আপা রাতের ভাত রান্দিতেছিল।
কালুকে যাইতে দেইখা।সবাই ঘরে উঠে দুয়ার দিয়ে দিয়েছে।
আমি তো গিয়া এসব দেখে হাইসা মরি।আমি কালুরে ধরিলাম।
তারপর
লুতফা আপুরে কইলাম।
কি আপু মনে আছে তোমার। ছোট বেলায় আমারে নাল মেঘের ডর দেখাই তা।আজ শোধ বোদ।আমার কালু তোমারে ভয় দেখাইয়া শোধ করে দিছে।
লুতফা আপু হাসিতে লাগিলো।

আপুটা দেখতে কি সুন্দর!
হাসিটাও কি সুন্দর!
কিন্তু সেই সুন্দর আপুটা ঠক দালালের তালে পড়েছিল।
দালালের সাথে বিয়ে হয়েছিল।পরে জানতে পারে সেই দালাল লুচ্চার আরেকটা বউ আছে।তাই আর স্বামীর বাড়ি যায়নি।বাপের বাড়িতেই থাকে।ছেলেপুলে নেই।একা মানুষ।কাম করে টাকা গোছানো টাকা দিয়ে বাড়ি কিনেছে।আপুর স্বামী মাঝে মাঝে আসিতো।এর মধ্যে যদি কোন ছেলেপুলে হত।তবে সেই সন্তানকে নিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারিতো।স্বামীটা বিয়ের ৪/৫বছর পরেই মরে গিয়েছে।বাপ ভাইয়ে আবার বিয়ে দিতে চেয়েছিল।কিন্তু আপুই আর বিয়ে টিয়ে বসে নি।

লাল মেঘ দেখিয়া আমি প্রচন্ড ভয় পেতাম।স্কুলে থাকিলে আমি ক্লাস থেকে বের হইয়া। মা বলিয়া ডাক দিতাম। আর চিক্কুর পারিতে পারিতে বাড়ি আসতাম।তখন আমি বড় ওয়ানে পড়িতাম।পড়িতাম ওয়াশিন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
হঠ্যাৎ একদিন আকাশে ঘুরুম ঘুরুম শব্দ হচ্ছিলো।আমি আমার ক্লাস থেকে বের হয়ে দেখিলাম।
আকাশটা লাল মেঘে টকটকে হইয়া আছে।
আমার ভেতরে কাপিতে শুরু করিয়া দিয়েছে।
আমি বই খাতা পত্র রেখে মাকে ডাকতে বাড়ির দিকে রওনা দিছি।
চিক্কুর পারিতে পারিতে।
আসিতে আসিতে মাঝ রাস্তায় লুতফা আপুর সাথে দেখা হইল।
একটু কান্না থামাই দিলাম।কিন্তু লুতফা আপু আমারে আরে বেশি ডর দেখায়।আমি চিক্কুর আরো বেশি করে পারিতে লাগিলাম।
আপু আমাকে কোলে নিয়ে দৌড়াইতেছিল।আর ভয় দেখাইতেছিল।
এদিকে আকাশের লাল মেঘের গুড়ুম গুড়ুম শব্দ।
ভীশন জোরে সাপোট বা ঝর আসিতেছে।
বাড়িতে পৌছাতে না পৌছাতেই অনেক বড় ঝর হইছিল সেদিন।
এলাকার অনেক ক্ষয়ক্ষতি হইছিল।কারো বাড়ির টিনের চাল উড়ে গিয়াছিলো।
খেড়ের চালের কোন হদিস ছিল না।আমাদের বাড়ির অনেক গাছ ভেঙ্গে গিয়াছিল।উপড়ে গিয়াছিল।কাঠাঁল গাছের অবস্থা ততো নয়-ছয় হয়াছিল।আম গাছের ছোট ছোট আমগুলা প্রায় সব ঝরে গিয়াছিল।সেদিন ঝরে মানুষের অনেক অনেক বেশি ক্ষতি হইয়াছিল।।
আমি বাড়ি আইসা সেদিন অনেকক্ষন কেঁদেছিলাম।প্রচন্ড ভয় পেয়েছিলাম বিধায়।পরের দিন আমাকে পিতলের থাল লাগাইতে হয়েছিল।

৬স্ট শ্রেনীর ফাইনাল পরিক্ষার রেজাল্ট তখনো দেয়নি।সময়টা ছুটিতে কাটতেছিল।
অনেকদিন হল মেঝো জেঠুর বাড়ি যাওয়া হয়না।আমাদের বাড়ি এখানে হলেও।জেঠুর বাড়ি একটু দুরে।

আমার দাদুর পরিবার অনেক ধন-সম্পত্তির মালিক ছিলেন।বাড়ি ছিল রাধাকান্তপুর।
দাদুর দাদা মরার আগেই দাদুর বাপে মরে যায়।আর এই রীতিতে দাদুকে বলা হয় মাজুল।

মাজুল বলতে,
দাদার আগেই বাবা মারা গেলে সেই নাতিকে মাজুল বলে সম্মোধন করা হয়।

আর মাজুলকে পরিবারের কোন সম্পত্তির ভাগ দেয়া হয়না।
তবুও দাদুর দাদু। বিশ বিঘা দান করেছিলেন।
আমাদের এই অঞ্চলে দাদু এসে দাদিকে বিয়ে করেন।
নতুনভাবে জীবন শুরু করেন।
সেই থেকে এই অঞ্চলে।অর্থাৎ পাহারতলি গ্রামে আমারদের বসবাস।

মেঝো জেঠু তার দাদার দেশে(অঞ্চল) বিয়ে করে মামাতো বনকে।
তখন থেকে মেঝো জেঠু ওখানেই বাড়ি ঘর,সংসার শুরু করেন।

শুনেছি,
আমার দাদু ছিলেন।বিশাল দেহের মানুষ।দেখতে লালটে ফর্সা।আর অনেক রাগি।আর সন্তান গুলাও মানে আমার বাপ ও তার ভাইয়েরা সবাই খুব রাগি।
যাই হোক
বাড়িতে বলে কয়ে।জোর যবর দস্তি করে গেলাম।
দুইদিন পার হতে না হতেই বাড়ি থেকে বড় ভাইয়ের কাছে ফোন বাবুকে বাড়িতে পাঠাই দে।কালুর কাছে কেও আগাইতে সাহস পাচ্ছেনা।
একদিন ছুটে গিয়েছিলো।আস্তাহার (আমার বাপের ছোট ভাই)।
ধরতে গিয়েছিল।তাকে ঘুতা দিয়া ফালাই দিছে।আর ওর কাকার হাত ভেঙ্গে গিয়েছে।
আস্তাহার কাকার মত শক্তিশালী বডিওয়ালা মানুষরে হাত ভেঙ্গে দিয়েছে।
এ কথা শুনার পর,
আমার বুকের মাঝে কেমন যেন ব্যথা অনুভব করলাম।
আর তখন ভাবছিলাম।এই কর্মকান্ডের জন্য কালুকে হয়তো আমি হারাতে যাচ্ছি।।
আমি জেঠুর বাসায় আর দেরি না করে।সেদিনই বাড়িতে ছুটে গেলাম।
ধীরে ধীরে যা জানতে পারলাম তা হলো,
কয়েকটা গরুর দালাল বাড়ির উপরে এসেছিল।বেঁচাকেনার কথা চলছে।
আমি বাপের কাছে দৌড়াই গিয়া কইলাম।কালুরে এখন বেচার কাম নাই।আমি আর কোথাও যামু না।
কিন্তু
আমার বাপ। একথার মানুষ।বেচবার চাইছে ত বেচবেই।
আমি কান্না করলাম।
আমার বাপে তখন কইলো।কালুরে বেচা লাগবি।কখন আবার কার ক্ষতি করে।তা তো বলা যাচ্ছে না।আর কইলো টাকার দরকার। বেচলে টাকার অভাবটা পুরোন হইবো।

তখন আমার মুখ দিয়ে আর কথা বের হইলো না।নীরবে একা কাঁদছি।কালুর গোলা ধরে কেদেছি।আমার সঙ্গীকে,আমার বন্ধুকে যে কোন দিনই হারাই ফেলিতে পারি।।

একটা তারিখ ঠিক করা হইলো।
একটা লোসিমন গাড়ি ঠিক হইলো।
কালুরে নিয়া যাওয়া হইবো।উল্লাপাড়া গ্যাস পাম্পের গরুর হাটে।
আমি একথা শুনার পর খাওয়ান উঠাই দেই।
সেই নির্দিষ্ট তারিখে চলে আসে।
সেদিন সকালে আমি ভাত খাইনি।অনেক বেলা হইয়া গিয়েছে।
ঘরের এক কোনায় বসে ফুপিয়ে কানতাছি।মায়ে কয়েকবার দেখে গেল।আমার মনের অবস্থা বুঝে কিছুই কইলো না।
মায়েরে দেইরা কান্না আরো বাড়াই দেই।
মায়ে আমারে এমন অবস্থা রেখে বাহির হইয়া গেলো।

তার কিছুক্ষণ পরেই বাপে আইলো।আইসা কইলো।
সকালে ভাত খেয়ে নাও।
আমি কানতে কানতে কইলাম,না।আমি খামু না।

তখন বাপের মনে একটু আবেগের আবিরভাব হইল,
ফলে তখন বলিয়া উঠিলো,বাপরে খাওয়ান শেষ কইরা রেডি হওও।তুমি সাথে চলো।বেচনোর আগ পর্যন্ত তোমার হাতেই কালুরে রাইখো।ততক্ষন তুমি ওর সাথে সাথেই থাইকো।
আমি কানতেছি।আর ভাবতেছি।কালুরে ত বেচবোই।বেচনোর আগে পর্যন্ত থাকতে পারবো।বাপে আমার প্রতি প্রসন্ন হইয়া উত্তম প্রস্তাবটাই দিয়েছে।আমি বাপের সাথে গিয়ে সকালের ভাতটা খাইলাম।
চোখের পানি যেন এমনিতেই পড়িতেছিলো।
কালুরে গাড়িতে তুলিতে গিয়া বাধিলো বিপত্তি। কেউ টানিয়া আর তুলিতে পারে না।কালুর চোখেও পানি টলটল করছে।
আমি গাড়ির উপরে উঠে।টেনে তুলিলাম।

গাড়ি চলতে শুরু করলো।আমি কালুর মাথার কাছে বসে।ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে লাগিলাম।
লসিমন গাড়ি লাফাতে লাফাতে উল্লাপাড়া গ্যাসপাম্পের গরুর হাটে পৌছাই গেলো।
কালুরে এক ঘন্টার মাঝে বেঁচাও হয়ে গেল।আমি কাঁদছি।বাপে তাকিয়ে দেখিতেছে।কিন্তু কিছুই বলছে না।
একটু পরে শুনলাম।কালুকে কোন এক কোসাইদের কাছে বেঁচা হইয়াছে। সামনের কোন এক হাটেই ওকে জোবাই করিবে।
এটা শুনে আমি আরো বেশি কানতেছিলাম।

যখন কালুৃর গোলার দড়ি আমার হাতে থেকে নিয়ে নিলো।
আমার কলিজা সেদিন চেলা মাছের মত লাফাইতেছিল।
কালুরে ওরা টানে।কালু সে জায়গা থেকে একটুও সরে না।কালুর চোখেও পানি।অনেক টানার পর।
কেও কোন কিছুই করিতে পারিলো না।একজন কালুরে লাঠি দিয়ে সোপাত করে একটা বাড়ি দিলো।আমি দেইখা চিক্কুর দিয়া কইলাম,একদম আমার কালুরে মারিবেন না।
লোকটা কিছু কইলো না।আমার বাপে লোকটার দিকে তাকিয়ে দেখিলো।লোকটার ভংকর চোখ।তারপর
তখন বাপে কইলো।আমার পোলাই গরুটারে পালছে।তাই দরুদ বেশি।
বাপ আবার আমারে কইলো।
যাও বাপ।কালুরে গাড়ীতে তুইলা দাও।
আমি সাথে গিয়ে গাড়িতে তুলিয়া দিলাম।
কালুকে নিয়ে কোসাই এর দল চলে যাচ্ছিল।আর চোখের জল প্রচন্ড বেগ পাচ্ছিল।আমি তাকিয়ে ছিলাম যতক্ষন কালুকে দেখা যায়।
আমি কান্না করতে করতে দুর্বল হয়ে গিয়েছিলাম।
জলিল দাদার কোলে মাথা রেখে ফুপাইতে ফুপাইতে পুরা রাস্তা চলে আসতেছিলাম।আর ভাবিতেছিলাম।

কোসাইরা আমার কালুকে জোবাই করিবে।মাংস বিক্রি করিবে।টাকা কামাবে আর তারপর আনন্দ করিবে।আর
আমি কালুর জন্য হৃদয়কোড়ে ব্যথা অনুভব করিবো।
আমার চোখের পানি প্রতিদিনই ঝরতে থাকবে।ঝরনার পানি শেষ হলেও আমার চোখের পানি শেষ হইবে না।
কালুর প্রতি আমার ভালবাসার ছিটে ফোটাও নষ্ট হইতে দেব না।

হ্যাঁ।সত্যি তাই।আমার সেদিনের ভাবনাগুলোই ঠিক ছিল।কালুর প্রতি আমার ভালবাসার একটুও কমতি হয়নি এখনো অবধি।
তার জন্য এ হৃদয়কোড়ে ব্যথা লাগে।
চোখ থেকে এখনো পানি ঝরে।
সে প্রকৃতির টানে পৃথিবী ত্যাগ কইরাছে,তবে আমার মধ্যে এখনো বাঁইচা আছে।
আমার সৃতির পাতায় এখনও সে দিনের বেলায়,
সন্ধ্যা বেলায় ছুটে চলে।
আর
আমি কালুর পিছু পিছু ছুটিয়া চলি.....

(১৮জানুয়ারি,২০১৬)

ছবি
সেকশনঃ গল্প
লিখেছেনঃ আমিনুল ইসলাম তারিখঃ 02/02/2017
সর্বমোট 2870 বার পঠিত
ফেসবুকের মাধ্যমে কমেন্ট করুণ

সার্চ

সর্বোচ্চ মন্তব্যকৃত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন