২০১৬ সালে আত্মকথা/স্মৃতিকথা ক্যাটেগরিতে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন মার্কিন প্রবাসী লেখক নূরজাহান বোস। এটি একটি ভ্রমণ কাহিনী এবং লেখিকার দ্বিতীয় গ্রন্থ। গ্রন্থটি প্রকাশ পায় ২০১৬ সালের ৩১ মে। বইটির নাম 'যেতে যেতে পথে'। প্রকাশ করেছে 'সাহিত্য প্রকাশ' যার স্বত্বাধিকারী মফিদুল হক।
লেখালেখির জগতে হারিকেন জ্বালিয়েও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর এই পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখিকার প্রথম গ্রন্থ 'আগুনমুখার মেয়ে' প্রকাশিত হয় ২০১১ সালে। গ্রন্থটি ছিল আত্মজীবনীমূলক স্মৃতিগ্রন্থ। তিনি এই বইয়ের জন্যও পেয়েছিলেন 'অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার'।
লেখিকা জীবনে দুটি বই লিখে দুটিতেই পুরস্কার পেয়েছেন। এই সুমহান লেখিকাকে সশ্রদ্ধ অভিনন্দন। জাত লেখিকা না হয়েও একজন এনজিও কর্মীর এটা বিশাল সাফল্য। আমার জানা নাই এটা গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের মধ্যে যাবে কি না! যদি যায় তো সেটা হবে বাংলাদেশের জন্য আরও বিশাল গর্বের।
এই পুরস্কার প্রাপ্তির ইতিবৃত্ত জানতে একটু তথ্য জানা থাকা দরকার।
২০১৬ সালের ৩১ মে, শনিবার, বিকেল ৫টায় শাহবাগ পাঠক সমাবেশ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়েছিল নূরজাহান বোসের ভ্রমণ কথার বই 'যেতে যেতে পথে'-'র প্রকাশনা উৎসব। সে অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক জনাব শামসুজ্জামান খান। বইটির উপরে আলোচনা করেছিলেন প্রকাশক মফিদুল হক, অধ্যাপক সোনিয়া নিশাত আমিন, কবি-সাংবাদিক সোহরাব হাসান, লেখক জাহানারা নওশিন ও লেখক নূরজাহান বোস নিজে।
এর আগে ২০১৩ সালে লন্ডন প্রবাসী লেখিকা সালেহা চৌধুরীকে 'বাংলা একাডেমি প্রবাসী পুরস্কার' দিয়েছিলেন খান সাহেব। সালেহা চৌধুরী তার লন্ডনের বাসায় খান সাহেবের কন্যার থাকার জায়গা দিয়েছিল । সেখানে থেকে সে পড়ালেখা করে। শামসু সাহেবের তত্ত্বাবধানেই সালেহা চৌধূরী বইটি লেখেন বলে কথিত আছে।
দুষ্ট লোকেরা বলেন, বাংলা একাডেমির পুরস্কার পাওয়া কোন ব্যাপারই না, চটি লিখেও পুরস্কার পাওয়া যায় যদি সঙ্গে থাকেন শামসুজ্জামান খানের মত বন্ধুস্থানীয় বিশিষ্ট জন। আর যদি মফিদুল হকের মত প্রকাশক সঙ্গে থাকেন তাহলে তো তা সোনায় সোহাগা।
বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেতে প্রকৃত পক্ষে কোনো জুরি-বোর্ড লাগে না, অনেক ক্ষেত্রেই ওটা আই ওয়াশ। ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে প্রতিবছর কিছু লেখককে ডেকে এনে পুরস্কার দেওয়া হয়। ভালো করে একটু খোঁজ-খবর নিলে এর পেছনে আরও অনেক লেনদেন আর সম্পর্কের ব্যাপার-স্যাপার বেরিয়ে আসতে পারে, যা কেঁচো খুড়তে সাপ বেরোবার মত অবস্থা হতে পারে বলে লোকজন বলাবলি করে। সারা বছর এদের মধ্যে কোথায় কি কিভাবে ঘটে তা একটু চোখ কান খোলা রেখে খেয়াল করলেই নাকি পুরস্কার দেওয়া-নেওয়ার ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যায়।
অনামধন্য লেখিকা জীবনে দুইটা বই লিখে দুটোকেই কিভাবে বাংলা একাডেমির জুরি বোর্ডের সুনজরে নিয়ে এলেন সেটা নিশ্চয়ই দেওয়া-নেওয়ার একটা বিশাল আর্ট। পুরস্কার পেতে হলে এই আর্টকে রপ্ত করা দরকার, তা না হলে সারা জীবন ভাল লিখেও খান সাহেবদের নজরে আসা যাবে না, আর তা আসতে না পারলে পুরস্কারের গুড়ে বালি।
পুরস্কার যে ছেলের হাতের মোয়া, সেটা খান সাহেবদের সাথে সম্পর্ক থাকলেই বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব।
যথার্থ বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে সত্যিকারের ভাল লেখা পুরস্কার পাক সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।