ব্যাকগ্রাউন্ড

ফেইসবুকে!

ঈশ্বরের ঈর্ষা
IMAGES



এসো, আবার রাস পূর্ণিমায়





মরিব, মরিব সখি, নিশ্চয়ই মরিব, কানু হেন কোন নিধি, কারে দিয়ে যাবো.....। আমার সর্ব অঙ্গে লিখে দিয়োগো, শুধু কৃষ্ণ কৃষ্ণ নাম।
শ্যামলা বর্ণের গোলগাল মুখখানা, সিঁথিতে সিঁদুরের আভা। ছড়ানো রূপালী বিছানায় অপলক দৃষ্টি বিনিময়। ওপর থেকে চাঁদের স্নিগ্ধ আলোতে শিহরিত রাধার এলো চুল বারবার আছড়ে পড়ছে কৃষ্ণের মুখমণ্ডলে। দু-জোড়া পায়ের সমষ্টিস্থলে মাত্র ১০ টি আঙ্গুল দৃশ্যমান। বাতাসের শণ শণ শব্দে তীব্র ঘন নিশ্বাস ছড়িয়ে গগনবিদারী চিৎকার। পাহাড়, সমুদ্র, জ্যোৎস্না আর ঢেউ পায়ে আছড়ে পরে অর্ঘ প্রদান করে বার বার ভক্ত পূজারী হয়ে, নম: নম: হে নর, নম: নম: হে নারী। তোমাদের এ আকিঞ্চন মিলনে আজ স্বয়ং বিধাতা ঈর্ষান্বিত। শ্রেষ্ঠত্বের পূজারী, আজ শ্রেষ্ঠত্বের ক্ষুদ্র চাদরে বসতেই পূজারীকুল ঈশ্বরের দিক হতে মুখ ফিরাইয়া নিয়ে মানব-মানবীর বন্দনায় মুগ্ধ। স্বয়ং ঈশ্বর সচকিত নয়নে ভেবেই পান না যে, এটা কি করে সম্ভব, “আমার পূজারী আজ মানব-মানবীর পায়ে বারবার আছড়ে পড়ে বলছে, নম: নম: হে, লও মোর অর্ঘ্য।“ আমি সদা উন্মুখ বিধাতা পূজারীর শ্রেষ্ঠত্ব বিচার করে হয় স্বর্গ নইলে নরক প্রদান করবো, আমি লালসায় ভরপুর না হলেও, ঈশ্বর হিসেবে আমার দাবি, সকল পূজা, সকল অর্ঘ্য আমারই প্রাপ্য। আমার শ্রেষ্ঠ পূজারী, মানব-মানবীর পায়ে বারবার আছড়ে পড়ে, অর্ঘ্য নিবেদন করছে। সে অর্ঘ্যে মনোনিবেশ নেই মানব-মানবীর !
ঈশ্বর স্বয়ং নেমে এলেন মর্তে। একেবারেই সামনে। তখনো সেই মানব-মানবির দৃষ্টি নিবদ্ধ, সুন্দরের দিকে। গ্রাস করছে, তপ্ত নিশ্বাস। এতক্ষণে ঈশ্বর বুঝলেন, এতো আমারই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ উপাদান প্রেম।
দৃষ্টি আকর্ষণের সকল চেষ্টায় ব্যর্থ ঈশ্বর, চাঁদকে বললেন আলো নিভিয়ে দাও, বাতাসকে বললেন আর চিৎকার করোনা, আছড়ে পড়া ঢেউকে বললেন থামো, তাদের পায়ে নয়, আমাতেই পূজা কর। ঈশ্বরের নির্দেশ উপেক্ষা করে, তাদের জবাব, মানুষে প্রেম করে যেই জন, সেই ঈশ্বর। আমরা ঈশ্বরের্ আরাধনায় ব্যস্ত।
ক্ষুব্ধ হয়ে ঈশ্বরের প্রস্থান ঘটলো বটে, বার বার পিছু তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলতে লাগলেন, এমন সৃষ্টি আমারই অপমান। আমি শোধ লইবো, লইবোই।
ঈর্ষান্বিত ঈশ্বরের আদিষ্ট হয়ে জলদেবতা বিশালাকার ঢেউ তুলে সব কেড়ে নিতে চাইলেন। ভয়ংকর গর্জনেও ভ্রুক্ষেপ না করে, যুগলবন্দী তারা নির্বাক হয়ে রইলেন। লজ্জায়, অপমানে জলদেবতা রণে ভঙ্গ দিয়ে ফিরে গেলেন ঈশ্বরের পদতলে। বললেন, “হে প্রভু, আমাকে ক্ষমা করো, আমি তাদের দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যর্থ হয়ে অনর্থ সাধন করার পথ ভুলে গিয়েছিলাম।“
ক্ষুব্ধ ঈশ্বর হুংকার দিয়ে বললেন, তব আমি স্বয়ং যাবো অনিষ্ট করতে। সমগ্র দেবকুলের, সৃষ্টিকুলের আকুলতা উপেক্ষা করে ঈর্ষান্বিত ঈশ্বর প্রলয় হয়ে আছড়ে পড়লেন তাদের গায়ে। ঈশ্বরের অট্টহাসিতে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এলো, চাঁদ থরথর কাঁপতে লাগলো, বাতাস আরো বেশি গর্জন করতে লাগলো। সবাই সমস্বরে বলতে লাগলো, হে ঈশ্বর এমন প্রলয় ধারণ করে, তুমি কোন সৃষ্টিকে ধরাশায়ী করতে চাও। আমরা যে পূজা করেছি, তাতেই তো তোমার স্বর্গে ধ্বনিত হবে লক্ষ্য যোজন বছর। ঈশ্বরের কৃপা হইলো না, প্রলয়ের তোড়ে যুগলবন্ধিকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলেন মাঝ সাগরে। অথৈ জল। সম্বিত ফিরে পেয়ে, রাধা আঁকড়ে ধরলো ভাসমান একটা অবলম্বন। ঈশ্বর অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন, আর দেবতাদের উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলেন, বুঝেছ কি এর রহস্য ? নির্বাক দেবকুল, ঈশ্বরের মহা প্রলয়ে। মাঝ সাগরে তলিয়ে গেল কৃষ্ণ। রাধা তার অবলম্বন ধরে সাগরের আর এক কিনারায়। শুভ্র বালু মাঠে বসে একা।
ঈশ্বরের আদিষ্ট হয়ে জলদেবতা, কৃষ্ণকে তুলে নিয়ে এলেন সেই পাথরের কাছে, এতক্ষণ যেখানে বসেই সকল অর্ঘ্য অগ্রাহ্য করেছেন। ঈশ্বরের কাছে রাধা জানতে চাইলেন, হে প্রভু এমন মহাপ্রলয়ের কারনে আমি যে সব হারালাম। হুংকার দিয়ে ঈশ্বর বললেন, সামনেই তো স্বর্গ। মর্ত, নাকি স্বর্গ ? বেছে নাও। আত্মার ক্ষয় আছে, আবার পূনর্জন্মের আশায় স্বর্গে প্রবেশ করে প্রার্থনায় বসলেন।
ছিন্নভিন্ন হয়ে সেই পাথরে বসেই থাকলেন কৃষ্ণ। অনন্তকাল, নির্বাক হয়ে। ঈশ্বরকে বারবার অভিশাপ দিয়ে বললেন, না ঈশ্বর তোমার এমন অধিকার নেই। তুমি হরণ করেছ। তুমি পাপ করেছ।
প্রশ্নবিদ্ধ ঈশ্বর, কৃষ্ণের অভিশাপে বিচলিত। বারবার বলছেন তোমাকে তো স্বর্গ দান করবো, তাইতো তোমাকে এখানে এনেছি।
জবাবে কৃষ্ণ, আবারো ফিসফিসিয়ে বললেন, হে প্রভু, তুমি ঈশ্বর, তুমি মহাপ্রলয়, তুমি সর্বভুক, তুমি পালন কর্তা। মর্তের এই স্বর্গের চেয়ে আমি আর স্বর্গে প্রসন্ন বোধ করছি না।
অভিযুক্ত, ঈর্ষান্বিত ঈশ্বর, বললেন, তব, তোর জন্যে এই মর্তের নরকই রইলো। দু-হাত তুলে কৃষ্ণ প্রসন্ন বোধে ঈশ্বরকে বললেন, আমি আদেশ মেনে নিলাম ঈশ্বর।
সেই হতে আজো হাজার বছর ধরে, সেই ধরা ধামে প্রার্থনারত, আমার রাধা, এসো, এসো আবার সেই রাস পূর্ণিমায়।
ঈর্ষান্বিত ঈশ্বরের কানে পৌঁছায়নি সে প্রার্থনা, স্বর্গবাসী রাধা সেখানেই স্বর্গসুখে নিমগ্ন। তারপরেও, প্রার্থনা, এসো, রাধা, আমার ঈশ্বর হয়ে, আমার পালন কর্তা হয়ে, আবার সেই রাস পূর্ণিমায়।
ঢেউ আছড়ে পড়ছে, দু-পায়ে, বাতাস শণ শণ করে দু-কান দাপিয়ে চলে যায়, চাঁদের আলোতে আবারো সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়ে। জলদেবতা বারবার জিজ্ঞাসা করে, হে বৎস্য, আবারো তোমার সেই ক্ষণ এসেছে। ঈশ্বরকে বলো, কৃপা করতে।
আবার সেই অস্ফুটস্বরে, “ হে জলদেবতা, তোমার সমস্ত বাণী, সত্য, তোমার ঈশ্বর সত্য, ঈশ্বরের সকল সৃষ্টি সত্য। তবে আমি এখনো বায়ু দেবতার শণ শণ শব্দে, নিশ্বাসের উষ্ণতা অনুভব করছি না। ক্ষমা করো, আমি সেই দিনই রণে ভঙ্গ দিবো, যেদিন তোমাদের ঈশ্বর হরণের দায় স্বীকার করবেন। বলবেন, তার সৃষ্ট এই ধরিত্রী সকল স্বর্গের অন্যতম স্বর্গ। তোমরা এই স্বর্গেই বসবাস করো, আমি অমরত্ব চাইনি, আমি আবার সেই রাস পূর্ণিমার রাতে দু-জোড়া পায়ের যুগলবন্দী ১০ আঙ্গুলের খুনসুটি, সেই তপ্ত নিশ্বাস ভক্ষণ, আর উজ্জ্বল জ্যোৎস্নায় লাল টিপ দেয়া শ্যামা রাধাকে চাই।
কথোপকথনে ঈশ্বর অট্রহাসি দিয়ে দেবতাদের উদ্দেশ্যে বললেন, মূর্খ কৃষ্ণ, স্বর্গকে উপেক্ষা করে, মর্তকেই স্বর্গ বলতে চায়। রাধাতো স্বর্গে ভালোই আছে।
দু-ফোটা অশ্রু বিসর্জন দিয়ে, আবারো অস্ফুট স্বরে নিবেদন, “হে প্রভু, সেই রাস পূর্ণিমার স্বর্গই তোমার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। আমি সেখানেই বসে আছি। ফিরে এসো, এই রাস পূর্ণিমায়।

ছবি
সেকশনঃ সাধারণ পোস্ট
লিখেছেনঃ আত্মা তারিখঃ 21/05/2015
সর্বমোট 3953 বার পঠিত
ফেসবুকের মাধ্যমে কমেন্ট করুণ

সার্চ

সর্বোচ্চ মন্তব্যকৃত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন